মেঘদূত সংখ্যা।। কবি গোপাল পাড়ুই -এর নিবন্ধ - শৃণ্বন্তু মেঘদূত সংখ্যা।। কবি গোপাল পাড়ুই -এর নিবন্ধ - শৃণ্বন্তু
সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৫:০৩ পূর্বাহ্ন

মেঘদূত সংখ্যা।। কবি গোপাল পাড়ুই -এর নিবন্ধ

আপডেট করা হয়েছে : রবিবার, ২১ জুলাই, ২০২৪, ৭:২৪ অপরাহ্ন
মেঘদূত সংখ্যা।। কবি গোপাল পাড়ুই -এর নিবন্ধ

হে মেঘ — হে সখা

কবিবর, কবে কোন বিস্মৃত বরষে
কোন পুন্য আষাঢ়ের প্রথম দিবসে
লিখেছিলে মেঘদূত। মেঘমন্দ্র শ্লোক
রাখিয়াছে আপন আঁধার স্তরে স্তরে
সঘন সংগীত মাঝে পুঞ্জীভূত করে।

মেঘদূত গীতিকাব্যটি মহাকবি কালিদাসের এক অসামান্য কাব্য। এই কাব্যের বিষয় বস্তু বর্ষা ঋতু ও তার আগমনে প্রেয়সীর মনের আকুলতা। প্রিয় মানুষের সঙ্গে মিলনের আকাঙ্খা। কিন্তু প্রেয়সীর অদর্শনে বিরহের করুণ আর্তি।ও তার কাছে বার্তা পৌঁছানোর ব্যাকুলতা।১১৮টি
শ্লোক নিয়ে রচিত, এই গীতিকাব্যের প্রধান চরিত্র যক্ষ ও তার পত্নী। মন্দাক্রান্তা ছন্দে রচিত। দুটি ভাগে বিভক্ত, পূর্ব মেঘ ও উত্তর মেঘ। পূর্ব মেঘের শ্লোক সংখ্যা ৬৪,ও উত্তর মেঘের শ্লোক সংখ্যা ৫৪।
মেঘ এখানে বার্তা বাহক।যক্ষ মেঘদূত কাব্যের নায়ক।সে নির্বাসিত। দীর্ঘকাল পত্নীর অদর্শনে সে ব্যাকুল। আমরা জানি প্রাচীন কালে বার্তা পাঠান হত ঘোড়ার মাধ্যমে অথবা পায়রার মাধ্যমে। কিন্তু কবি এখানে মেঘকে বার্তা বাহক করলেন। তার এক অভিনব প্রয়াস। তিনি শুধু কবি নন ,এক মহান দার্শনিক। তার এই চিন্তা ধারা অবিস্মরণীয়।
আষাঢ় মাস। ঈশান কোণে এক টুকরো কালো মেঘ। সেই মেঘ যক্ষের অন্তরের অন্তঃস্থলে গোপন কামনা জাগিয়ে তুলল।যক্ষ কুরুচি ফুল দিয়ে মেঘকে অভ্যর্থনা করল।
মেঘ যাবে রামগিরির রস সিক্ত বেত বিতান থেকে হিমালয়ের অলোকাপুরীতে। এখানেই যক্ষের বাসস্থান।
এই যাত্রা পথের বর্ণনায় তিনি ভারতের নদ নদী, পর্বত, কৃষি,অরণ্য,পশু পাখি, ফুল ফল, অর্থাৎ একটা দেশের সামাজিক ও ভৌগলিক অবস্থান তুলে ধরেছেন। যেটা আমরা রামায়ণ মহাভারতে দেখতে পাই। ভারতের ধর্ম কৃষ্টি কোন কিছুই ছেড়ে যায়নি।
মেঘ যে সব জায়গার উপর দিয়ে যাবে,তার মধ্যে বিদিশা, উজ্জয়িনী, অবন্তী, প্রভৃতি।যে সব পর্বত দেখা যাবে বিন্ধ্য ,কৈলাশ ,নিচৈঃ,কৌচরন্ধ,আম্রকূট, হিমালয়।যে সব নদ নদী ছুঁয়ে যেতে হবে,বেরা,বেত্রবতী, নির্বিন্ধা, সিন্ধু, গন্ধর্ববতী, গম্ভীরা, সরস্বতী, গঙ্গা। এছাড়া বহু গাছ ফুল ফলের বর্ননা আছে। যেমন কেতকী,কদম, যুথিকা,কুরুবক,রক্তাশোক, বকুল।
কামকলা আর বৈভব বিলাসে অলোকাপুরী।
এ এক প্রেমের হৃদয় ক্ষরণের কাহিনী। তৃষিত হৃদয়ের বিরহ আর্তনাদ। কালিদাসের এই কাব্য থেকে তার পরবর্তী অনেক কবি অনুপ্রাণিত হয়েছেন এবং এখনও হচ্ছেন। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর নিজেই লিখেছেন মেঘদূত কবিতা ও প্রবন্ধ। বুদ্ধদেব বসু মেঘদূত বাংলায় অনুবাদ করেছেন। উইলিয়াম জোন্স কালিদাসকে প্রাচ্যের শেক্সপিয়ার আখ্যা দিয়েছিলেন।
শুরু করেছিলাম রবীন্দ্রনাথ কে দিয়ে, শেষ করি তার মেঘদূত প্রবন্ধের অংশ দিয়ে।”হে নির্জন গিরিশিখরের বিরহী, স্বপ্নে যাহাকে আলিঙ্গন করিতেছ, মেঘের মুখে যাহাকে সংবাদ পাঠাইতেছ,কে তোমাকে আশ্বাস দিল যে,এক অপূর্ব সৌন্দর্যলোকে শরৎ পূর্ণিমা রাত্রে তাহার সহিত চির মিলন হইবে? তোমার তো চেতন অচেতনে পার্থক্য জ্ঞান নাই,কী জানি যদি সত্য ও কল্পনার মধ্যেও প্রভেদ হারাইয়া থাক।”


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগ থেকে আরোও
Theme Created By FlintDeOrient.Com
error: Content is protected !!
error: Content is protected !!