মেঘদূত সংখ্যা।। রবি ঠাকুরের প্রবন্ধ: নববর্ষা - শৃণ্বন্তু মেঘদূত সংখ্যা।। রবি ঠাকুরের প্রবন্ধ: নববর্ষা - শৃণ্বন্তু
সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৫:০২ পূর্বাহ্ন

মেঘদূত সংখ্যা।। রবি ঠাকুরের প্রবন্ধ: নববর্ষা

আপডেট করা হয়েছে : রবিবার, ২১ জুলাই, ২০২৪, ৭:১৫ অপরাহ্ন
মেঘদূত সংখ্যা।। রবি ঠাকুরের প্রবন্ধ: নববর্ষা

নববর্ষা

যৌবনে নিজের অন্ত পাই নাই, সংসারেও অন্ত ছিল না । আমি কী যে হইব না হইব, কী করিতে পারি না পারি, কাজে ভাবে অনুভাবে আমার প্রকৃতির দৌড় কতদূর, তাহা নির্দিষ্ট হয় নাই, সংসারও অনির্দিষ্ট রহস্যপূর্ণ ছিল ।

এখন নিজের সম্বন্ধে সকল সম্ভাবনার সীমায় আসিয়া পৌঁছিয়াছি, পৃথিবীও সেইসঙ্গে সংকুচিত হইয়া গেছে । এখন ইহা আমরাই আপিস-ঘর বৈঠকখানা-দরদালানের শামিল হইয়া পড়িয়াছে । সেইভাবেই পৃথিবী এত বেশি অভ্যস্ত পরিচিত হইয়া গেছে যে ভুলিয়া গেছি এমন কত আপিস-ঘর বৈঠকখানা দরদালান ছায়ার মতো এই পৃথিবীর উপর দিয়া গেছে, ইহাতে চিহ্নও রাখিতে পারে নাই ।

কত প্রৌঢ় নিজের মামলা-মকদ্দমার মন্ত্রগৃহকেই পৃথিবীর ধ্রুব কেন্দ্রস্থল গণ্য করিয়া তাকিয়ার উপর ঠেসান দিয়া বসিয়া ছিল, তাহাদের নাম তাহাদের ভস্মের সঙ্গে সঙ্গে বাতাসে উড়িয়া গেছে, সে এখন আর খুঁজিয়া পাইবার জো নাই —তবু পৃথিবী সমান বেগে সূর্যকে প্রদক্ষিণ করিয়া চলিতেছে ।

কিন্তু আষাঢ়র মেঘ প্রতি বৎসর যখনই আসে তখনই তাহার নতুনত্বে রসাক্রান্ত ও পুরাতনত্বে পুঞ্জীভূত হইয়া আসে । তাহাকে আমরা ভুল করি না, কারণ সে আমাদের ব্যবহারের বাহিরে থাকে । আমার সংকোচের সঙ্গ সে সংকুচিত হয় না ।

যখন বন্ধুর দ্বারা বঞ্চিত, শত্রুর দ্বারা পীড়িত, দুরদৃষ্টের দ্বারা বাধাপ্রাপ্ত হইয়াছি, তখন যে কেবল হৃদয়ের মধ্যে বেদনার
চিহ্ন লাগিয়াছে, ললাটের উপর বলি অঙ্কিত হইয়াছে, তাহা নহে —যে পৃথিবী আমার চারি দিকে স্থির হইয়া দাঁড়াইয়া আছে, আমার আঘাতের দাগ তাহার উপর পড়িয়াছে ।

তাহার জলস্থল আমার বেদনায় বিক্ষত, আমার দুশ্চিন্তায় চিহ্নিত । আমার উপর যখন অস্ত্র আসিয়া পড়িয়াছে তখন আমার চারি দিকের পৃথিবী সরিয়া দাঁড়ায় নাই ; শর আমাকে ভেদ করিয়া তাহাকে বিদ্ধ করিয়াছে । এমনি করিয়া বারংবার আমার সুখদুঃখের ছাপ লাগিয়া পৃথিবীটা আমারই বলিয়া চিহ্নিত হইয়া গেছে ।

মেঘে আমার কোনো চিহ্ন নাই । সে পথিক, আসে যায়, থাকে না । আমার জরা তাহাকে স্পর্শ করিবার অবকাশ পায় না । আমার আশানৈরাশ্য হইতে সে বহুদূরে ।

এইজন্য, কালিদাস উজ্জয়িনীর প্রাসাদশিখর হইতে যে আষাঢ়র মেঘ দেখিয়াছিলেন আমরাও সেই মেঘ দেখিয়াছি, ইতিমধ্যে পরিবর্তমান মানুষের ইতিহাস তাহাকে স্পর্শ করে নাই । কিন্তু সে অবন্তী, সে বিদিশা কোথায় ? মেঘদূতের মেঘ প্রতিবৎসর চিরনূতন চিরপুরাতন হইয়া দেখা দেয় — বিক্রমাদিত্যের যে উজ্জয়িনী মেঘের চেয়ে দৃঢ় ছিল, বিনষ্ট স্বপ্নের মতো তাহাকে আর ইচ্ছা করিলে গড়িবার জো নাই ।

মেঘ দেখিলে “সুখিনোহপ্যন্যথাবৃত্তিচেতঃ “ সুখীলোকেরও আনমনা ভাব হয়, এইজন্যই । মেঘ মনুষ্যলোকের কোনো ধার ধারে না বলিয়া, মানুষকে অভ্যস্ত গণ্ডির বাহিরে লহিয়া যায় । মেঘের সঙ্গে। প্রতিদিনের চিন্তা-চেষ্টা-কাজকর্মের কোনো সম্বন্ধ নাই বলিয়া সে আমাদের মনকে ছুটি দেয় ।

মন তখন বাঁধন মানিতে চাহে না, প্রভুশাপে নির্বাসিত যক্ষের বিরহ তখন উদ্দাম হইয়া উঠে । প্রভুভৃত্যের সম্বন্ধ, সংসারের সম্বন্ধ ; মেঘ সংসারের এই-সকল প্রয়োজনীয় সম্বন্ধগুলাকে ভুলাইয়া দেয়, তখনই হৃদয় বাঁধ ভাঙিয়া আপনার পথ বাহির করিতে চেষ্টা করে।

মেঘ আপনার নিত্যনূতন চিত্রবিন্যাসে, অন্ধকারে, গর্জনে, বর্ষণে, চেনা পৃথিবীর উপর একটা প্রকাণ্ড অচেনার আভাস নিক্ষপ করে ; একটা বহুদূরকালের এবং বহুদূরদেশের নিবিড় ছায়া ঘনাইয়া তোলে ; তখন পরিচিত পৃথিবীর হিসাবে যাহা অসম্ভব ছিল তাহা সম্ভবপর বলিয়া বোধ হয়।

কর্মপাশবদ্ধ প্রিয়তম যে আসিতে পারে না, পথিকবধূ তখন এ কথা আর মানিতে চাহে না । সংসারের কঠিন নিয়ম সে জানে, কিন্তু জ্ঞানে জানে মাত্র ; সে নিয়ম যে এখনো বলবান আছে, নিবিড় বর্ষার দিনে এ কথা তাহার হৃদয়ে প্রতীতি হয় না ।

সেই কথাই ভাবিতেছিলাম —ভোগের দ্বারা এই বিপুল পৃথিবী, এই চিরকালের পৃথিবী, আমার কাছে খর্ব হইয়া গেছে। । আমি তাহাকে যতটুকু পাইয়াছি তাহাকে ততটুকু বলিয়াই জানি, আমার ভোগের বাহিরে তাহার অস্তিত্ব আমি গণ্যই করি না । জীবন শক্ত হইয়া বাঁধিয়া গেছে, সঙ্গে সঙ্গে সে নিজের আবশ্যক পৃথিবীটুকুকে টানিয়া আঁটিয়া লইয়াছে । নিজের মধ্যে এবং নিজের পৃথিবীর মধ্যে এখন আর কোনো রহস্য দেখিতে পাই না বলিয়াই শান্ত হইয়া আছি ; নিজেকে সম্পূর্ণ জানি মনে করি এবং নিজের পৃথিবীটুকুকেও সম্পূর্ণ জানিয়াছি বলিয়া স্থির করিয়াছি । এমন সময় পূর্বদিগন্ত স্নিগ্ধ অন্ধকারে আচ্ছন্ন করিয়া কোথা হইতে সেই শত-শতাব্দী পূর্বেকার কালিদাসের মেঘ আসিয়া উপস্থিত হয় । সে আমার নহে, আমার পৃথিবীটুকুর নহে ; সে আমাকে কোন্ ‌ অলকাপুরীতে, কোন্‌ চিরযৌবনের রাজ্যে, চিরবিচ্ছেদের বেদনায়, চিরমিলনের আশ্বাসে, চিরসৌন্দর্যের কৈলাসপুরীর পথচিহ্নহীন তীর্থাভিমুখে আকর্ষণ করিতে থাকে । তখন পৃথিবীর যেটুকু জানি সেটুকু তুচ্ছ হইয়া যায়, যাহা জানিতে পারি নাই তাহাই বড়ো হইয়া উঠে, যাহা পাইলাম না তাহাকেই লব্ধ জিনিসের চেয়ে বেশি সত্য মনে হইতে থাকে । জানিতে পারি, আমার জীবনে আমার শক্তিতে অতি অল্পই অধিকার করিতে পারিয়াছি, যাহা বৃহৎ তাহাকে স্পর্শও করি নাই । আমার নিত্যকর্মক্ষেত্রকে, নিত্য

পরিচিত সংসারকে, আচ্ছন্ন করিয়া দিয়া সজলমেঘ-মেদুর পরিপূর্ণ নববর্ষা আমাকে অজ্ঞাত ভাবলোকের মধ্যে সমস্ত বিধি- বিধানের বাহিরে একেবারে একাকী দাঁড় করাইয়া দেয় ; পৃথিবীর এই কয়টা বৎসর কাড়িয়া লইয়া আমাকে একটি প্রকাণ্ড পরমায়ুর বিশালত্বের মাঝখানে স্থাপন করে ; আমাকে রামগিরি-আশ্রমের জনশূন্য শৈলশৃঙ্গর শিলাতলে সঙ্গীহীন ছাড়িয়া দেয় ।

সেই নির্জন শিখর এবং আমার কোনো
এক চিরনিকেতন, অন্তরাত্মার চিরগম্যস্থান, অলকাপুরীর মাঝখানে একটি সুবৃহৎ সুন্দর পৃথিবী পড়িয়া আছে মনে পড়ে ; —–

নদীকলধ্বনিত সানুমৎপর্বতবন্ধুর জম্বুকুঞ্জচ্ছায়ান্ধকার নববারিসিঞ্চিতযূথীসুগন্ধি একটি বিপুল পৃথিবী । হৃদয় সেই পৃথিবীর বনেবনে গ্রামেগ্রামে শৃঙ্গে শৃঙ্গে নদীর কূলে কূলে ফিরিতে ফিরিতে, অপরিচিত সুন্দরের পরিচয় লইতে লইতে, দীর্ঘ বিরহের শেষ মোক্ষস্থানে যাইবার জন্য মানসোৎক হংসের ন্যায় উৎসুক হইয়া উঠে

মেঘদূত ছাড়া নববর্ষার কাব্য কোনো সাহিত্যে কোথাও নাই । ইহাতে বর্ষার সমস্ত অন্তর্বেদনা নিত্যকালের ভাষায় লিখিত হইয়া গেছে । প্রকৃতির সাংবৎসরিক মেঘোৎসবের অনির্বচনীয় কবিত্বগাথা মানবের ভাষায় বাঁধা পড়িয়াছে ।

পূর্বমেঘে বৃহৎ পৃথিবী আমাদের কল্পনার কাছে উদ্‌ঘাটিত হইয়াছে । আমরা সম্পন্ন গৃহস্থটি হইয়া আরামে সন্তোষে অর্ধনিমীলিতলোচনে যে গৃহটুকুর মধ্যে বাস করিতেছিলাম, কালিদাসের মেঘ ‘ আষাঢ়স্য প্রথমদিবসে ‘ হঠাৎ আসিয়া আমাদিগকে সেখান হইতে ঘরছাড়া করিয়া দিল ।

আমাদের গোয়াল ঘর-গোলাবাড়ির বহু দূরে যে আবর্ত-চঞ্চলা নর্মদা ভ্রুকুটি রচনা করিয়া চলিয়াছে, যে চিত্রকূটের পাদকুঞ্জ প্রফুল্ল নবনীপে বিকশিত, উদয়নকথাকোবিদ গ্রামবৃদ্ধদের দ্বারের নিকটে যে চৈত্যবট শুককাকলীতে মুখর, তাহাই আমাদের পরিচিত ক্ষুদ্র সংসারকে নিরস্ত করিয়া বিচিত্র সৌন্দর্যের চিরসত্যে উদ্‌ভাসিত হইয়া দেখা দিয়াছে ।

বিরহীর ব্যগ্রতাতেও কবি পথসংক্ষেপ করেন নাই । আষাঢ়ের নীলাভ মেঘচ্ছায়াবৃত নদ-নদী নগর-জনপদের উপর দিয়া রহিয়া রহিয়া ভাবাবিষ্ট অলসগমনে যাত্রা করিয়াছেন ।

যে তাহার মুগ্ধ নয়নকে অভ্যর্থনা করিয়া ডাকিয়াছে তিনি তাহাকে আর ‘ না ‘ বলিতে পারেন নাই । পাঠকের চিত্তকে কবি বিরহের বেগে বাহির করিয়াছেন, আবার পথের সৌন্দর্য মন্থর করিয়া তুলিয়াছেন । যে চরম স্থানে মন ধাবিত হইতেছে তাহার সুদীর্ঘ পথটিও মনোহর, সে পথকে উপেক্ষা করা যায় না ।

বর্ষায় অভ্যস্ত পরিচিত সংসার হইতে
বিক্ষিপ্ত হইয়া মন বাহিরের দিকে যাইতে চায়, পূর্ব-মেঘে কবি আমাদের সেই আকাঙক্ষাকে উদ্‌বেলিত করিয়া তাহারই কলগান জাগাইয়াছেন, আমাদিগকে মেঘের সঙ্গী করিয়া অপরিচিত পৃথিবীর মাঝখান দিয়া লইয়া চলিয়াছেন ।

সে পৃথিবী ‘ অনাঘ্রাতং পুষ্পম্‌ ‘ তাহা আমাদের প্রাত্যহিক ভোগের দ্বারা কিছুমাত্র মলিন হয় নাই, সে পৃথিবীতে আমাদের পরিচয়ের প্রাচীর দ্বারা কল্পনা কোনোখানে বাধা পায় না । যেমন এই মেঘ তেমনি সেই পৃথিবী । আমার এই সুখদুঃখ- ক্লান্তি-অবসাদের জীবন তাহাকে কোথাও স্পর্শ করে নাই । প্রৌঢ়বয়সের নিশ্চয়তা বেড়া দিয়া, ঘের দিয়া, তাহাকে নিজের বাস্তুবাগানের অন্তরর্ভুক্ত করিয়া লয় নাই ।

অজ্ঞাত নিখিলের সহিত নবীন পরিচয়, এই হইল পূর্বমেঘ । নবমেঘের আর-একটি কাজ আছে । সে আমাদের চারি দিকে একটি পরমনিভৃত পরিবেষ্টন রচনা করিয়া —-
‘ জননান্তরসৌহৃদানি ‘ মনে করাইয়া দেয়, অপরূপ সৌন্দর্যলোকের মধ্যে কোনো-একটি চিরজ্ঞাত চিরপ্রিয়ের জন্য মনকে উতলা করিয়া তোলে ।

পূর্বমেঘে বহুবিচিত্রর সহিত সৌন্দর্যের পরিচিত এবং উত্তরমেঘে সেই একের
সহিত আনন্দের সম্মিলন । পৃথিবীতে বহুর মধ্য দিয়া সেই সুখের যাত্রা, এবং স্বর্গলোকে একের মধ্যে সেই অভিসারের পরিণাম ।

নববর্ষার দিনে এই বিষয়কর্মের ক্ষুদ্র সংসারকে কে না বলিবে নির্বাসন । প্রভুর অভিশাপেই এখানে আটকা পড়িয়া আছি । মেঘ আসিয়া বাহিরে যাত্রা করিবার জন্য আহ্বান করে, তাহাই পূর্বমেঘের গান; এবং যাত্রার অবসানে চিরমিলনের জন্য আশ্বাস দেয়, তাহাই উত্তরমেঘের সংবাদ ।

সকল কবির কাব্যেরই গূঢ় অভ্যন্তরে এই পূর্বমেঘ ও উত্তরমেঘ আছে । সকল বড়ো কাব্যই আমাদিগকে বৃহতের মধ্যে আহ্বান করিয়া আনে ও নিভৃতের দিকে নির্দেশ করে।

প্রথমে বন্ধন ছেদন করিয়া বাহির করে, পরে একটি ভূমার সহিত বাঁধিয়া দেয় । প্রভাতে পথে লইয়া আসে, সন্ধ্যায় ঘরে লইয়া যায় । একবার তানের মধ্যে আকাশ- পাতাল ঘুরাইয়া সমের মধ্যে পূর্ণ আনন্দে দাঁড় করাইয়া দেয় ।

যে কবির তান আছে, কিন্তু কোথাও শ্রম নাই — যাহার মধ্যে কেবল উদ্যম আছে, আশ্বাস নাই — তাহার কবিত্ব উচ্চকাব্য শ্রেণীতে স্থায়ী হইতে পারে না ।

শেষের দিকে একটা কোথাও পৌঁছাইয়া দিতে হইবে, এই ভরসাতেই আমরা আমাদের চিরাভ্যস্ত সংসারের বাহির হইয়া কবির সহিত যাত্রা করি ; পুষ্পিত পথের মধ্যে দিয়া আনিয়া হঠাৎ একটা শূন্যগহ্বরের ধারের কাছে ছাড়িয়া দিলে বিশ্বাসঘাতকতা করা হয় ।

এইজন্য কোনো কবির কাব্য পড়িবার সময় আমরা এই দুটি প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করি, তাঁহার পূর্বমেঘ আমাদিগকে কোথায় বাহির করে এবং উত্তরমেঘ কোন্ ‌ সিংহদ্বারের সম্মুখে আনিয়া উপনীত করে।


শ্রাবণ ১৩০৮

নববর্ষা
বিচিত্র প্রবন্ধ।
রবীন্দ্র রচনাসমগ্র।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগ থেকে আরোও
Theme Created By FlintDeOrient.Com
error: Content is protected !!
error: Content is protected !!