ধুলা
কখনো কখনো অবাক বৃষ্টিতে
নীরবে একাএকা ভিজে যাই
তবু জামা কাপড় শুষ্ক থাকে,
কখনো পাথরের বাগানের
দিকে তাকাই,
ফেলে আসা সময়
আমাকে সেখানে বসতে বলে,
সামনে যেতে যেতে থেমে যাই,
আমি এক রঙিন অন্ধকারে থমকে দাঁড়াই
রঙের পর্দা ওড়ে ধুলার দরজায়।
আমাকে উড়িয়ে নিয়ে যায় রৌদ্রদগ্ধ দিন।
বাতাসে ঘুরতে ঘুরতে
আমি যেখানে এসেছি এখানে না আছে
কোন ফুল, না আছে কোন কাঁটা
কেবল এক নির্মম তরোয়াল
বাতাসে চমকায়,
রক্তের চিহ্ন না রেখে
সবকিছু নিঃশেষ করতে চায়।
তবু আমাকে নিঃশেষ করা কঠিন,
নিজেকে হারাতে হারাতে
আমি এক অস্তিত্বহীন অনুপস্থিতির শহরে চলে যাচ্ছি,
কোথায় কখন যে রাত্রি কাটে
তারকারা পর্যন্ত খবর রাখে না,
পাথরের রঙিন বাগান আমাকে কিভাবে
জানবে?
আমার রক্তাশ্রুতে যে বাগান
লাল ফুলে ভরে উঠেছে,
সে কিভাবে বুঝবে
মানুষের হৃদয় কোন যন্ত্র নয়,
অর্থ কিংবা প্রলোভন নয়,
বড় বাড়ি কিংবা
কোন কপটের কর্মক্ষেত্র নয়, যে
সেটাকে ইচ্ছা হলেই
যে কোন সময় কিনে নেওয়া যাবে।
ইচ্ছা হলেই যে কোন সময়
বিক্রি করে দেওয়া যাবে।
আমার ভালোবাসা,
আমার স্বপ্নের
আমার বিশ্বাসের কি এমন মূল্য আছে,
যা এই বাজারে কেউ চড়া দামে বিক্রি করতে পারে,
কিংবা কেউ কিনতে পারে।
আমি পথের ধুলার মত
কারো পায়ের অপেক্ষায় পথে পড়ে আছি।
আমাকে কেউ কিনতে চাইবে কেন?
আমাকে কেউ বেচতে চাইবে কেন ??
এই দুর্মূল্যের কেনাকাটার বাজারে
প্রাচুর্যের অহংকার আর প্রলোভনের স্বপ্ন মিশিয়ে যারা সস্তায় সবকিছু কিনতে চায়,
আমি তাদের বুকপকেটের নীচ থেকে
স্বার্থের স্পন্দন শুনতে শুনতে
বধির হয়ে গেছি,
আমি তাদের আবেগরুদ্ধ প্রতিশ্রুতির সমস্ত উচ্চস্বর উচ্চারণ থেকে নিজের শ্রবণ ইন্দ্রিয়কে দূরে সরিয়ে নিয়েছি ,
তারা আমার আর্ত চিৎকার শুনবে কেন ?
ও খরিদ্দারেরা এসো !
উদ্বেগ আর দুশ্চিন্তার বাজারে চৈত্র মাসের সেল চলছে,
এখানে সবকিছুই বিক্রিযোগ্য।
যারা তাদের স্বপ্নকে বিক্রি করতে এসেছিল
তারা এখন অন্যের নিদ্রা কিনে ঘরে ফিরে যাচ্ছে।
আমি এই অনিদ্রা আর উদ্বেগের অনড় শহরে
কারো স্বপ্ন কিনতে চাইনি,
আমি কারো স্বপ্নকে লুন্ঠন করতে চাইনি।
তবু আমার স্বপ্নকে যারা কিনতে এসেছিল
আমি তাদের নিঃশ্বাসের শব্দকে কিভাবে ভুলে যাবো?
আর আমার স্বপ্নকে কিভাবে বিক্রি করবো ?
স্বপ্ন দেখতে দেখতে আমি তো আমার চোখ দু’টিকেই বেমালুম হারিয়ে ফেলেছি।
স্বপ্নের হাত ধরে চলতে চলতে
যে ঘুম ভেঙে গেছে
তাকে ফিরিয়ে আনার জন্য কতরাত
নিষিদ্ধ নিদ্রার বাজারে ঘোরাঘুরি করেছি,
এখানে ক্রেতা আর বিক্রেতার মুখোশ দেখে হয়রান হয়ে গেছি।
যারা তাদের যুবতী কন্যাকে বাজারে বিক্রি করতে এসে মোটা টাকায় সম্পদশালী দাস কিনতে চায়,
আমি কিভাবে তাদের বোঝাবো, কোনো মানুষই বিক্রি যোগ্য নয়,
হোক সে সে নারী কিংবা পুরুষ
কিংবা অন্যকেউ।
যারা এখানে রূপের আয়না বেচতে এসেছিল, তারা ভাঙা কাঁচ কুড়িয়ে নিয়ে ফিরে যাচ্ছে,
যারা এখানে শরাব বেচতে এসেছিল
তাদের একদল মসজিদে আশ্রয় নিয়েছে,
একদল মন্দিরের চাতালে বিশ্রাম নিচ্ছে,
একদল টলতে টলতে জোৎস্না প্লাবিত রাত্রির রাজপথে হেঁটে যাচ্ছে।
কেবল আমি আমার জন্য কোন আশ্রয়কে নিশ্চিত করতে পারিনি।
স্তব্ধ রাত্রির বাজারে
বাসস্থানের আলোকিত বিজ্ঞাপন
আমার সমস্ত ঘাম রক্তকে শুষে নিয়েছে।
যে পাথরে মাথা নত করেছি সেখানেই
বিচূর্ণ হয়েছে আমার মস্তক।
তবু কোথাও আমার কোন আশ্রয় হয় নি,
কোন মন্দির আমাকে আশ্রয় দিতে পারেনি,
কোন মসজিদ আমাকে আশ্রয় দিতে পারেনি
পথই এখন আমার একমাত্র ঠিকানা !