অনুগল্প: কালুয়া।। মহম্মদ সফিকুল ইসলাম - শৃণ্বন্তু অনুগল্প: কালুয়া।। মহম্মদ সফিকুল ইসলাম - শৃণ্বন্তু
সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৮:১৬ অপরাহ্ন

অনুগল্প: কালুয়া।। মহম্মদ সফিকুল ইসলাম

আপডেট করা হয়েছে : শুক্রবার, ১২ জুলাই, ২০২৪, ৭:৪৫ পূর্বাহ্ন
অনুগল্প: কালুয়া।। মহম্মদ সফিকুল ইসলাম

কালুয়া

ষাটের দশকে কালুয়া নামে এক ছিঁচকে চোর শিমুলগাছি গ্রামে বাস করত।সে দিনেরবেলা আয়েশ করে ঘুমিয়ে রাতেরবেলা চুরি করতে বের হতো। দেহের রঙ মিশকালো, চেহারা বেঁটেখাঁট সাঁট্টাগোট্টা। শরীরে অগাধ জোর।ছুটত তীর বেগে।

কালুয়া রাতে চুরি করতে বের হওয়ার আগে সারাগায়ে তেল মেখে নিত।পরনের লুঙ্গি মালকোচা মেরে বামহাতে বস্তা, ডানহাতে সিঁদকাঠি নিয়ে গভীর রাতে খালি গায়ে চুরি করতে বেরিয়ে পড়ত।

শীতকালে গ্রামের লোক তাড়াতাড়ি শুয়ে পড়ে।লেপ,কাঁথা মুড়ি দিয়ে ঘুমোয়।বাইরে শব্দ হলেও  কাঁথা  ছাড়তে মন চায় না। এসময় চোরের দৌরাত্ম্য বাড়ে।

কালুয়া একরাতে তেল জবজবে হয়ে বেরিয়ে পড়ে। মাঝের পাড়ার সুরাবুদ্দিন মল্লিকের ছেলের বিয়েতে দান দেহাজে ঘর ভরে ওঠে। এ খবর কালুয়ার কাছে পৌঁছে যায়। সব শুনে কালুয়া ভাবে বিরাট দাঁও মারতে পারবে। অমাবস‍্যার ঘুটঘুটে আঁধার রাত। রাস্তাঘাট সুনসান। গাঁয়ের ধুলোময় রাস্তায় নিজের পায়ের শব্দ কালুয়া নিজে  শুনতে পায়। তালগাছের নীচে দাঁড়িয়ে একটা শব্দ শুনে ভয়ে তার বুকটা কেঁপে ওঠে।এর আগে কতবার সে চুরি করতে বেরিয়েছে,কোনবার এমন হয়নি। কলেমা পড়ে বুকে তিনবার ফুঁ দিয়ে নেয়।বুকে সাহস নিয়ে চলতে শুরু করে।

একসময় সুরাবুদ্দিন মল্লিকের বাড়ির পাঁচিলের সামনে হাজির হয়। পাঁচিলের প্রবেশ পথে বাঁশের তৈরি গেট লাগানো।কালুয়া গেটে হাত দিয়ে টান দিতেই ক‍্যাঁচ করে শব্দ হল। সে আস্তে করে ভিতরে ঢুকে গেল। সুরাবুদ্দিনের বৃদ্ধ পিতা খবিরুদ্দিন হাঁপের রোগী।সারারাত কাশি হয়, ভালো করে ঘুমুতে পারেন না।

কালুয়া গুরুবিদ‍্যা নেবার সময় গুরু সাবুর আলির কাছে জেনেছিল, যে বাড়িতে পরকীয়া নারী কিংবা বৃদ্ধ কেশোরোগী থাকে সেই বাড়িতে চুরি করা নিষেধ। ঢুকলেই ধরা পড়বার ভয়।সে কিছুক্ষণ ঘাপটি মেরে থেকে বস্তায় দুই চারটে পিতল, কাঁসার জিনিস খুটখাট শব্দ করে ঢোকাতেই আধাজাগ্রত খবরুদ্দিন “চোর চোর” বলে  চ‍্যাঁচাতেই লাফিয়ে হাথিনার বাইরে পড়ল দড়াম করে। গাঁয়ে যত কুকুর ছিল ঘেউ ঘেউ করে দৌড়ে এসে কালুয়াকে কামড়ে আঁচড়ে আধমরা করে দিল। মানুষে কুকুরে হুলস্থুল কান্ড বেধে গেল।সুরাবুদ্দিনের বাড়ির লোক ও প্রতিবেশিরা ওঠার আগে রক্তাক্ত কালুয়া পালিয়ে গেল।  মালকাঁচামারা লুঙ্গি ও যন্ত্রপাতি ফেলে। পলায়ন সেইবার প্রথম ও শেষবারের মতো।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগ থেকে আরোও
Theme Created By FlintDeOrient.Com
error: Content is protected !!
error: Content is protected !!