আমেরিকান সাহিত্য ও সাহিত্যিক।। অষ্টম পর্ব।। প্রদীপ মাশ্চরক।। এই পর্বে জন স্টাইনবেক - শৃণ্বন্তু আমেরিকান সাহিত্য ও সাহিত্যিক।। অষ্টম পর্ব।। প্রদীপ মাশ্চরক।। এই পর্বে জন স্টাইনবেক - শৃণ্বন্তু
সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৭:৫৮ অপরাহ্ন

আমেরিকান সাহিত্য ও সাহিত্যিক।। অষ্টম পর্ব।। প্রদীপ মাশ্চরক।। এই পর্বে জন স্টাইনবেক

আপডেট করা হয়েছে : সোমবার, ৮ জুলাই, ২০২৪, ১১:১৩ পূর্বাহ্ন
আমেরিকান সাহিত্য ও সাহিত্যিক।। অষ্টম পর্ব।। প্রদীপ মাশ্চরক।। এই পর্বে জন স্টাইনবেক

John Ernst Steinbeck (1902-1968)
জন আর্নস্ট স্টাইনবেক (১৯০২১৯৬৮)

জন স্টাইনবেক (১৯০২-১৯৬৮) একজন আমেরিকান সাহিত্যিক যার লেখায় আমরা ক্যালিফোর্নিয়ার চাষবাসের কাজে রত migrant farmerদের জীবনের প্রতিচ্ছবি দেখতে পাই। প্রধানত মেক্সিকো থেকে আসা এই মানুষগুলো মধ্য ক্যালিফোর্নিয়ার Salinas উপত্যকায় বিশাল কৃষিভিত্তিক অর্থনীতির মূল মেরুদণ্ড হলেও ইউরোপিয়ান উপনিবেশকারিরা এদের বরাবর সামান্য মজুরি দিয়ে হাড়ভাঙ্গা খাটুনি খাটিয়ে নেয়। এই শোষণ চলেছে আজ ১৫০ বছরের ওপর। অশিক্ষিত গরীব মানুষগুলো থাকে নোংরা বস্তিতে, সামান্য মজুরির বিনিময়ে এরা দিনে ১২ ঘণ্টা শীত, গ্রীষ্ম, বর্ষায় মাঠে কাজ করে যায়। এদের জীবনযাত্রার মান আজও খুব নিচু। স্টাইনবেক এই অবহেলিত মানুষদের গল্প লিখে গেছেন তার বিভিন্ন বইয়ে। আমি মধ্য Salinasক্যালিফোর্নিয়ায় পাহাড়ের পশ্চিম পারে সমুদ্র উপকূলে থাকি। এখান থেকে ৩০ মাইল দূরে পাহাড়ের ওপারের উপত্যকার Salinas শহরে ১৯০২ সালে এক নিম্নবিত্ত জার্মান-আইরিশ পরিবারে জন স্টাইনবেক জন্মগ্রহণ করেন। এই উপত্যকা অঞ্চলের ক্ষেত খামারেই তার ছোটবেলা কাটে। আর সেই কারণে স্টাইনবেক তার বেশির ভাগ গল্পের প্রেক্ষাপট হিশেবে Central আর Salinas valleyকেই বেছে নিয়েছেন। এই অঞ্চল আমার খুব চেনা আর ভীষণ প্রিয়।


Salinas উপত্যকার মাটি ভীষণ উর্বর, সবজি আনাজ, বিভিন্ন ফল ও বেরি, সব কিছুই প্রচুর পরিমাণে উৎপাদন করা যায়। এই উপত্যকায় এক ছোট খামার বাড়িতে থাকা কালীন কিশোর জন migrant farmerদের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে মাঠে চাষের কাজ করেছেন। এই সময়ে তিনি খুব কাছ থেকে মানুষগুলোর কঠোর জীবন আর মালিকের নির্মম শোষণ দেখে বড় হয়েছেন। এছাড়া Spreckels শহরে চিনির কারখানায় কাজ করার সময় শ্রমিকদের সাথে মালিকের অমানুষিক ব্যবহারের সঙ্গেও তার পরিচয় হয়। ১৯২৫ সালে স্টাইনবেক Stanford ইউনিভার্সিটিতে ইংরাজি সাহিত্য নিয়ে পড়া শেষ না করে নিউ ইয়র্ক শহরে চলে যান। কিন্তু সেখানের সাহিত্যিক মহলে সুবিধা করতে না পেরে তিনি আবার Salinasএ ফিরে আসেন এবং কাছের সমুদ্র উপকূলে Monterey শহরে তার ভাইয়ের cottageএ থেকে লেখার কাজে পুরোপুরি মনোনিবেশ করেন। এই সময় বন্ধু Ed Rickettsএর বায়োলজি ল্যাবরেটরিতে স্টাইনবেক marine ecology নিয়েও বেশ কিছুদিন পড়াশোনা করেন।

জন স্টাইনবেক (১৯০২১৯৬৮)


স্টাইনবেক তার সাহিত্যিক জীবনে সর্বসমেত ৩৩টি বই সম্পূর্ণ করেন। এর মধ্যে ১৬টি নভেল, ৬টি ভ্রমণ কাহিনী (খানিকটা documentary স্টাইলে লেখা), ও দুটি ছোটগল্প সঙ্কলন পাঠক সমাজে বিশেষ ভাবে সমাদৃত। উল্লেখযোগ্য কয়েকটি বইয়ের নাম The Red Pony (১৯৩৩, ছোটবেলার স্মৃতিচারণ), Tortilla Flat (১৯৩৫, কৌতুক কাহিনী), Of Mice and Men (১৯৩৭, শ্রমিক ও চাষিদের নির্যাতিত জীবনের কাহিনী), Cannery Row (১৯৪৫), East of Eden (১৯৫২, এক epic নভেল)। এছাড়া স্টাইনবেক তার নিজের বইয়ের বেশ কয়েকটি চলচ্চিত্রের screen playও লিখেছিলেন।


স্টাইনবেকের The Grapes of Wrath (১৯৩৯) বইটি তার সর্বশ্রেষ্ঠ গ্রন্থ হিশেবে স্বীকৃত। Pulitzer Prize-winning এই বইটি আজ পর্যন্ত ১৪ মিলিয়ন কপি বিক্রি হয়েছে! মজার কথা, এই বইটিতে Salinas ও তার আশেপাশের উপত্যকার migrant workerদের ওপর মালিক সম্প্রদায়ের শোষণ ও নির্যাতনের প্রাণবন্ত বর্ণনা থাকার কারণে প্রকাশনের পর বইটি ক্যালিফোর্নিয়ার অনেক অঞ্চলেই কয়েক বছরের জন্য নিষিদ্ধ করে দেওয়া হয়। নির্যাতিত মানুষের প্রতি সহানুভূতির কারণে স্টাইনবেককে কম্যুনিস্ট বলে গালি ও জীবন নাশের হুমকিও দেওয়া হয়। অবশ্য সময়ের সাথে সাথে The Grapes of Wrath বিভিন্ন পুরস্কারে (National Book Award, Pulitzer prize) সম্মানিত হয়। John Fordএর পরিচালনা আর Henry Fonda অভিনীত এই বইয়ের চলচ্চিত্রে রূপায়ন (১৯৪০) Hollywoodএর ক্লাসিক ছবির তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়েছে।


নিজের জীবনের আরও অন্যান্য অভিজ্ঞতা নিয়ে স্টাইনবেক কয়েকটি বই লেখেন। যেমন, বন্ধু Ed Rickettsএর সঙ্গে Gulf of Mexico অভিযানের বর্ণনা রয়েছে তার Sea of Cortez (১৯৪১) বইটিতে। ১৯৪৩ সালে New York Herald Tribuneএর প্রতিনিধি হয়ে তিনি দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের প্রত্যক্ষ বিবরণ একত্রিত করেন তার Once There was a War বইয়ে। এই যুদ্ধে আহত ও অবনমিত হয়ে ক্যালিফোর্নিয়ায় ফিরে এসে তিনি তার পুরনো দিনের জীবন স্মরণ করে Cannery Row বইটি লেখেন। বইটি তার Monterey শহরের উদ্দেশে লেখা এক প্রেমপত্র। এই শহরের ইতালিয়ান মাঝিরা হাজার হাজার টন সার্ডিন মাছ ধরে নানা canneryতে টিন ভর্তি করে দেশের নানাদিকে রপ্তানি করত। সেই কারখানার জীবনের গল্প রয়েছে এই বইটিতে। ১৯৪৮ সালে ফটোগ্রাফার বন্ধু Robert Copaর সঙ্গে রাশিয়া ঘুরে এসে স্টাইনবেক লেখেন তার A Russian Journal.


স্টাইনবেকের epic নভেল East of Eden তার প্রিয় Salinas উপত্যকার মানুষের গল্প। এক বছরের ওপর সময় নিয়ে তিনি এই বইটি লিখেছিলেন। লেখকের লেখার প্রতি ভালবাসার এক অমূল্য নিদর্শন এই বই। গল্পটি চলচিত্রে রূপায়িত করেন আইকনিক অভিনেতা James Dean. স্টাইনবেকের শেষ নভেল The Winter of our Discontentএ লেখক আমেরিকার তৎকালীন মানসিক অবনতির কথা নিয়ে অনেক দুঃখ করেছেন। সমালোচকদের মতে, এই বইয়ে “he holds his position as an independent expounder of the truth with an unbiased instinct for what is genuinely American, be it good or bad”।


স্টাইনবেক ১৯৬২ সালে সাহিত্যে নোবেল প্রাইজ পান। এই নির্বাচন নানা দেশে (বিশেষ করে আমেরিকায়) সমালোচনার ঝড় তোলে। এই সমালোচনার অন্তর্নিহিত কারণ লেখকের দরিদ্র নির্যাতিত মানুষের প্রতি সহানুভূতি। “Nobel Academy’s biggest mistake” কাগজের হেডলাইন ছাপা হয়। এমনকি New York Times লেখে “author of limited talent”! কিন্তু Nobel Committeeর মতে এই প্রাইজ স্টাইনবেকের উপযুক্ত “for his realistic and imaginative writings, combining as they do sympathetic humor and keen social perception”। স্টাইনবেককে সেসময় একজন রিপোর্টার প্রশ্ন করে “Do you deserve this award”? স্টাইনবেকহেসে উত্তর দেন, “Frankly, No”। মানুষটা আজীবন সাধারণ হয়ে বাঁচতে চেয়েছিলেন। ১৯৬৪ সালে প্রেসিডেন্ট Johnson তাকে The President Medal of Freedom দিয়ে সম্মানিত করেন। আজীবন তামাক সেবনে আসক্ত স্টাইনবেক মাত্র ৬৬ বছর বয়েসে conjestive heart failureএ মারা যান। তার শেষ ইচ্ছে মত তার শবদাহের অবশেষ Salinasএর এক ছোট কবরস্থানে সমাধিস্থ করা হয়।


এবার স্টাইনবেকের লেখায় আসি। আমার আলোচনায় স্টাইনবেকের প্রথম বই The Grapes of Wrath। আমেরিকার Great Depression (১৯২৯-১৯৩৯)এর প্রেক্ষাপটে লেখা গল্পটিতে আমরা ভাগচাষি Joad পরিবারের সাথে পরিচিত হই। এই সময় Oklahoma স্টেটের বহু অভিবাসী (যাদের Okles বলা হতো) দীর্ঘ খরা আর ধুলোর ঝড় থেকে রেহাই পাবার জন্য ক্যালিফোর্নিয়ায় চলে আসে। তারা সবাই এসেছিল সামান্য কোন জীবিকা বা চাষের একটু ভাগজমি, আর সুদিনের খোঁজে। গল্পের শুরুতে Oklahomaয় খুনের দায়ে অভিযুক্ত Tom Joad জেল থেকে ছাড়া পেয়েছে, পুরনো পাদ্রি বন্ধু Jim Casyর সাথে তার বাড়িতে ফিরে এসে সে দেখে গ্রামের প্রায় সব চাষিরাই জলের অভাবে ফসল ফলাতে না পেরে ঋণে জর্জরিত হয়ে বাড়িঘর জমিজমা সব হারিয়ে অন্য কোথাও চলে গেছে। নিজের পরিবারের স্বল্প জিনিশপত্র এক ভাঙ্গা ট্রাকে তুলে Tom আর তার পরিবার Casyকে নিয়ে Route 66 ধরে ক্যালিফোর্নিয়ার দিকে রওয়ানা হয়। রাস্তায় হাজার Oklesর ভিড়, রাস্তার ধারের জমায়েতে নানা গুজব কানে আসে, সবাই কি সুদিনের মুখ দেখতে পাবে? তবে আশার হাতছানিতে সবাই চলেছে ক্যালিফোর্নিয়ার দিকে। রাস্তার ধকলে প্রথমে বুড়ো ঠাকুরদা মারা যায়, তারপর ঠাকুরমা। দুজনকেই Tom খোলা মাঠে কবর দেয়। এর পর Tomএর বড় ছেলে Noah আর Tomএর গর্ভবতী মেয়ে Roseএর স্বামী Connie দল ছেড়ে পালায়। সংসারের বাকি মানুষগুলো আগে এগিয়ে যায়। ক্যালিফোর্নিয়ায় পৌঁছে Joad পরিবার দেখে সবখানেই কাজের লোক উদ্বৃত্ত, মজুরি এতই কম যে দুবেলা খাওয়া জোগানো ভার। মারপিট লেগেই আছে, আর পুলিশ সব সময় জমির মালিকদের পক্ষে। এক পলাতক চাষিকে পুলিশ গুলি করে মারতে যাচ্ছে দেখে পাদ্রি Casey তাকে ধাক্কা দিয়ে মাটিতে ফেলে দিলে পুলিশ Caseyকে গ্রেফতার করে। চাষিদের দালালরা যে পারিশ্রমিক দেবার প্রতিশ্রুতি দেয়, কাজ শেষ হলে তা দেয় না। গভর্নমেন্টের ক্যাম্পে সুযোগ সুবিধা বেশি, কিন্তু পুঁজি না থাকায় সবাইকে ক্যাম্পে নেওয়া যায় না। এক কথায় খাবার আর রুজিরোজগারের পথ ভীষণ সীমিত।

জন স্টাইনবেকের স্মরণে ডাকটিকিট


জেল থেকে ছাড়া পেয়ে Casey মালিকের শোষণের বিরুদ্ধে এক শ্রমিক ইউনিয়ন গড়ে তোলার চেষ্টায় ব্যস্ত হয়। এদিকে Joad পরিবারের মানুষরা পীচ বাগানে ফল তোলার কাজ পায়। সারাদিন হাড়ভাঙ্গা পরিশ্রমের পর তাদের হাতে যে পারিশ্রমিক আসে তাতে রাতের খাবারটুকুও কেনা যায় না। পরের দিন বাগানের মালিক সেই পারিশ্রমিকও অর্ধেক করে দেয়। Caseyএ নেতৃত্বে সবাই স্ট্রাইক করলে মালিকের গুন্ডারা Caseyকে কোদাল দিয়ে কুপিয়ে মেরে ফেলে। Tom রাগের মাথায় সেই গুন্ডাকে মেরে ফেলে চুপচাপ সে এলাকা থেকে পালিয়ে যায়। এর পর তারা কাজ নেয় এক তুলোর ক্ষেতে, যদিও Tomএর ভয় তাকে মালিকের লোকজন পিটিয়ে পুড়িয়ে মারবে। পরিবারের অন্য মানুষগুলোকে বাঁচাবার জন্য Tom পরিবার ছেড়ে চলে যায়, বাকি সদস্যরা মুখ বুজে খেটে যায় আগের মত। এর মধ্যে Rose এক মৃত শিশু প্রসব করে, শীতের বৃষ্টিতে তাদের বাড়ি ভেসে যায়, ভাঙ্গা গাড়ি হয় অচল। সংসারের মা সবাইকে সামলে নিয়ে এসে ওঠে জীর্ণ খামার বাড়িতে। সেখানে এক রুগ্ন অভুক্ত মানুষ মাটিতে পড়ে ধুঁকছে, সাতদিন সে কিছু খায় নি। গল্পের শেষে Rose মানুষটার মাথা তুলে নেয় তার কোলে, অভুক্ত মরণাপন্ন মানুষটাকে সে তার নিজের বুকের দুধ খাওয়ায়। গল্প এখানেই শেষ, কিন্তু Salinas উপত্যকার সেই মানুষগুলোর অভাব আর কষ্টের তিক্ত দিনগুলোর কথা মনে গেঁথে থাকে কাঁটার মত। স্টাইনবেক বইটি লেখার সময় বলেছিলেন। “I want to put a tag of shame on the greedy bastards who are responsible for the Great Depression and its effects”। তিনি জানেন,“ I’ve done my damnedest to rip a reader’s nerves to rags”। সত্যিই তাই, বইটি পড়ার সময় সামাজিক নিপীড়নের নির্মম বিবরণ পাঠকের স্নায়ু ক্ষতবিক্ষত করে দেয়। ১৯৬২ সালে Nobel Committeeর চিঠিতে The Grapes of Wrathএর বার বার উল্লেখ রয়েছে।
১৯৩৭ সালে প্রকাশিত Of Mice and Men বইটিতে স্টাইনবেক George Milton আর Lennie Small নামে দুই বাস্তুচ্যুত ভবঘুরে মানুষের গল্প বলেছেন। আমেরিকার Great Depressionএর সময় তারা ক্যালিফোর্নিয়ার নানা অঞ্চলে জীবিকার খোঁজে ঘুরে বেড়ায়। গল্পের টাইটেল স্টাইনবেক Robert Burn’s এর “To a Mouse” কবিতা থেকে নিয়েছিলেন, “The best laid schemes of mice and men/Often go awry”। বইটির ভাষা কিছুটা অশ্লীল, তাই অনেক স্কুলে একসময় বইটি নিষিদ্ধ ছিল। George Milton অশিক্ষিত কিন্তু বাস্তব বুদ্ধি রাখে, Lennie Smallএর বড়সড় চেহারা, কিন্তু মানসিকভাবে অক্ষম। একদিন Soledad নামের শহরে যাবার পথে তারা স্বপ্ন দেখছে যে তাদের একটা ছোট খামার বাড়ি হয়েছে। Lennie চায় খরগোস পুষতে, তার ছোট সুন্দর জন্তু ভারী প্রিয়। মানুষটা আধাপাগল, একবার এক মহিলার সুন্দর স্কার্ট আঁকড়ে ধরার অপরাধে তার নামে রেপ করার শমন জারি হয়, George প্রায়ই তাকে সেকথা মনে করিয়ে দেয়। বস্তুত Georgeকে ছাড়া Lennieর কাজকর্ম করা অসম্ভব। কপালগুণে তাদের এক খামারে চাকরি জোটে। কিন্তু খামারের মালিকের বদমেজাজি ছেলে Curlyর সাথে এই জুটির বনে না। ছোটখাটো চেহারার Curlyর রাগ বিশাল চেহারার মানুষ Lennieর ওপর। তার ওপর উজবুক Lennie Curlyর বাচাল বউয়ের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে পড়েছে। এই সময় খামারের এক কর্মী Candy তার কুকুর Slimএর একটা বাচ্চা Lennieকে দেয় এবং তারা একে অপরের বন্ধু হয়ে যায়। এর পর Candy দুই বন্ধুকে প্রস্তাব দেয় যে সে ৩৫০ ডলার দিয়ে তাদের সাথে একটা খামার বাড়ি কিনবে ও তারা একসঙ্গে থাকবে। সব প্ল্যান প্রায় ভেস্তে যায় যখন Lennie মারপিট করে Curlyর হাত ভেঙ্গে দেয়।


এরপর একদিন George শহরে গেছে, Lennie ঘোড়াশালের তত্ত্বাবধায়ক Crooksএর সাথে আড্ডা মারছে, সেখানে হাজির হয় Candy. যখন তারা তিনজন খামার বাড়ি কেনার প্ল্যানে ব্যস্ত, Curlyর বাচাল বউ সেখানে আসে আর কৃষ্ণকায় Crooks কে ব্যাঙ্গ করে ধমকি দেয় যে সে তাকে পিটিয়ে পুড়িয়ে মারবে। এই ঘটনার পরের দিন ঘোড়াশালে আবার Lennieর সাথে Curlyর বাচাল বউয়ের দেখা হয়। Lennie বউয়ের মাথার চুলে হাত দিতে গেলে সে চেঁচিয়ে ওঠে আর ঘাবড়ে গিয়ে অসুর Lennie তার ঘাড় মটকে ফেলে। খামারের অন্যান্য মানুষ আর পুলিশ যখন Lennieকে খোঁজায় ব্যস্ত George আর Lennie লুকিয়ে এক জায়গায় দেখা করে। তারা জানে তাদের স্বপ্ন আর পূরণ হবে না। এদিকে পুলিশ ও মানুষের দল সেখানে যখন প্রায় পোঁছে গেছে, George Lennieকে গুলি করে মারে। সে জানে ওই ক্ষিপ্ত জনতার হাতে নির্যাতন আর যন্ত্রণার মৃত্যুর চেয়ে গুলি খেয়ে মরা অনেক বেশি বাঞ্ছনীয়। জনতা ঘটনাস্থলে পোঁছবার পর শুধু Slimই বুঝল George কেন এই কাজ করেছে। এই বইটিতে স্টাইনবেক মানুষের জীবনে কিছু চাওয়ার আকুলতার ওপর পাঠকের দৃষ্টিপাত করিয়েছেন। George চায় নিজের খামার বাড়ি, Lennie চায় শুধু বন্ধু Georgeএর সাথে থাকতে আর নরম ছোট জন্তু ঘাঁটতে, Candy চায় তাদের নিজেদের খামারে একজন কেউকেটা হতে, অসুখী Curleyর বউ খামারের অন্যান্য পুরুষের সঙ্গ চায়। Crooksএর মুখে স্টাইনবেক আমাদের একাকীত্বর জ্বালাও মনে করিয়ে দিয়েছেন, “A guy goes nuts if he ain’t got anybody. Don’t make any difference who the guy is, long’s he’s with you”। গল্পের শেষে পাঠক অনায়াসেই হৃদয়ঙ্গম করে আর্থিক কারণে অক্ষম মানুষের জীবনে কোন প্ল্যানই কাজ করে না!


এবার স্টাইনবেকের epic উপন্যাস East of Edenএর কথায় আসা যাক। স্টাইনবেক ১৯৫২ সালে প্রকাশিত এই বইটিকে তার magnum opus (masterpiece) বলে চিহ্নিত করেছেন, “It has everything in it I have been able to learn about my craft or profession in all these years”। এই বইয়ে Trask আর Hamilton পরিবারের সাথে আমাদের পরিচয় হয়; Hamilton পরিবার স্টাইনবেকের দাদুর পরিবারের অনুসরণে বর্ণিত। গল্পের প্রেক্ষাপট প্রথম বিশ্ব মহাযুদ্ধের পরের Salinas উপত্যকা। বইয়ের প্রথম দিকে স্টাইনবেক পাঠকদের নিয়ে যান আমেরিকার নিউ ইংল্যান্ড অঞ্চলের Connecticut আর Massachusetts ষ্টেটে যেখানে Adam Trask, তার ভাই Charles, বাবা Cyrus আর বউ Cathy Ames জীবনের প্রথম ভাগ কাটিয়েছে। তারপর আসল গল্পের শুরু যখন এই পরিবার ক্যালিফোর্নিয়ার Salinasএ এসে বসবাস করতে শুরু করে।


মূল গল্পের শুরুতে Adan Trask, পিতার মৃত্যুর পর অনেক সম্পত্তির মালিক, গর্ভবতী বউ Cathyকে নিয়ে Salinasএ এসে তাদের নতুন জীবন শুরু করে। Cathyর এই জায়গা মোটেই পছন্দ নয়, স্বামীকে না জানিয়ে সে গর্ভপাত করার চেষ্টা করে, আর স্বামীকে পরিষ্কার জানিয়ে দেয় যে সে Salinas ছেড়ে চলে যাবে। যথাসময়ে Cathy দুই যমজ ছেলে হয়, আর তারপর Cathy মরিয়া হয়ে Adamকে গুলি করে পালিয়ে যায়। বাড়ির চাকর Lee আর প্রতিবেশী Samuel Hamilton আহত Adamকে সারিয়ে তোলে। দুই ছেলে Aaron আর Calebকে নিয়ে Adamএর নতুন জীবন। সময়ের সাথে সাথে Leeএর সাথে আলোচনায় Adam আর Samuel বাইবেলের নানা গল্প ও তাদের অন্তর্নিহিত তথ্য জানতে পারে, যেমন তারা জানতে পারে যে হিব্রু ভাষায় tinsel শব্দটির অর্থ হোল “thou mayest”, মানুষ নিজেই নিজের ভাগ্যের বিধাতা। এদিকে Cathy তার জীবন বেছে নিয়েছে Salinasএর এক বিখ্যাত বেশ্যালয়ে, তার নতুন নাম Kate Albey, আর আস্তানার মালিককে খুন করে সে নিজেই এখন বেশ্যালয়ের মালিক। তার ডেরায় অকথ্য ধর্ষকাম আর ধনী খরিদ্দারের ব্ল্যাকমেল চলে দিনরাত।


Adamএর দুই ছেলে Aaron আর Calebএর স্বভাবে একেবারে বিপরীত, Aaron ধার্মিক ও কর্তব্যপরায়ণ আর Caleb ডানপিটে আর অবাধ্য। কিশোর Aaron এলাকার এক সম্ভ্রান্ত পরিবারের মেয়ে Abra Baconএর প্রেমে পড়ে যায়। শহরে Cathyকে নিয়ে অনেক গুজব দুই ভাই শুনেছে, কিন্তু তারা জানে না যে Kateই তাদের মা। এই সময় Samuelএর বুদ্ধি নিয়ে Adam এক ব্যবসায়ে নেমে তার সব ধনসম্পত্তি হারায়, শহরের সবাই তার নির্বুদ্ধিতা নিয়ে হাসাহাসি করে। স্কুল পাশ করে Aaron Stanford ইউনিভার্সিটির ধর্মীয় স্কুলে পড়তে যায়, সে এক Priest হবে। Caleb চাষবাস করার জীবন বেছে নেয়। সে তার নিজের ব্যর্থতায় নিজের ওপরেই ক্ষুব্ধ, অস্থিরমনা, মানুষের সাথে তার বনে না। সে রাতের বেলায় একা একা রাস্তায় ঘুরে বেড়ায়। এই ভাবে ঘুরে বেড়াবার সময়ই সে আবিষ্কার করে যে তার মা সেই বেশ্যা Kate। মার সাথে দেখা করলে Calebকে মা তার বাউন্ডুলে জীবন নিয়ে উপহাস করে।


এর পর মন ঠিক করে Caleb Samuelএর ছেলে Willএর মটরগাড়ির ব্যবসায়ে যোগ দেয়। তার সঙ্গে ক্ষেতের ফসল বেচে বিশ্বযুদ্ধের মওকায় সে ১৫ হাজার ডলার জমিয়ে ফেলে। তার ইচ্ছে বাবাকে Thanksgivingএর দিন সেই টাকা উপহার দেবে। কিন্তু এই প্ল্যানে বাদ সাধলো Aaron, সে স্কুল ছেড়ে বাড়ি চলে এসেছে। ভালমনে Caleb তাকে টাকাটা দিতে গেলে সে ব্যঙ্গ করে বলে, যে চাষিদের ঠকিয়ে পাওয়া টাকা সে যেন তাদেরই ফিরিয়ে দেয়। রাগে মাথা গরম Caleb তখন Aaronকে নিয়ে যায় Kateএর কাছে। ঘৃণায় কুঁকড়ে যাওয়া Aaronকে দেখে Kate নিজের সব সম্পত্তি তার সাধু ছেলেকে দিয়ে আত্মহত্যা করে। জীবনের এইসব তোলপাড় দেখে বিক্ষিপ্তমন Aaron বিশ্বযুদ্ধে যোগ দেয় আর সেই যুদ্ধেই তার মৃত্যু হয়। Leeএর মুখে ছেলের মৃত্যু সংবাদ শুনে Adamএর স্ট্রোক হয়। Caleb ঝামেলা এড়াবার জন্য ভাইয়ের প্রেয়সী Abraকে নিয়ে পালাতে চাইলে Abra তাকে নিরস্ত করে। মৃত্যুপথযাত্রী Adam তার সেবক Leeএর অনুরধে তার একমাত্র ছেলে Calebকে শুধু বলে যায় “timshel”! এখন Calebই শুধু পারে তার পাপের পথ থেকে নিজেকে ফিরিয়ে আনতে। এই বিশাল উপন্যাসটিতে মানুষের ভালবাসা, তাদের মনের অন্ধকার, তাদের নিজেকে কুপথে নিয়ে যাওয়ার প্রবণতা, তাদের অপরাধবোধ, তাদের দোষ ক্ষমা করে নেওয়ার ক্ষমতা, আর সবার ওপর ন্যায় ও সৎপথে চলার শক্তি আর সাহসের কথা বলা আছে এক নিটোল কাহিনীর মোড়কে। বাইবেলের অনেক উপদেশ আর গল্পের আভাষও রয়েছে এই ৬০০ পাতার epic নভেলে।


স্টাইনবেকের ছোটগল্পের সংগ্রহ থেকে দুটি গল্পের উল্লেখ করছি। The North American Reviewএ ১৯৩৪ সালে প্রকাশিত “The Murder” গল্পটি আমি অনেকদিন আগে এক গল্প সঙ্কলনে পড়েছিলাম। এই গল্পের শুরু যখন ক্যালিফোর্নিয়ার এক পশুপালক Jim Moore আর ইউগোস্লাভিয়ার আভিবাসী Jelka Sepickএর বিয়ের আসরে মাতাল Jelkaর বাবা Jimকে জানায় যে তার মেয়েকে অনুগত আর বাধ্য রাখার জন্য তাকে নিয়মিত মারধর করতে হয়। এই উপদেশ Jim কানে নেয় না। বিয়ের পর Jelka সংসারের কাজকর্ম ঠিকঠাক করে গেলেও Jimএর সাথে তার তেমন মনের কোন মিলন হয় না। সে ক্রমেই Jimএর কাছে আরও বিচিত্র আর দূরের মানুষ হয়ে ওঠে। হতাশ Jim এর পর Monterey শহরের বেশ্যা পাড়ায় যাওয়া শুরু করে। এই সময় একদিন মাঝরাতে বাড়ি ফিরে Jim Jelkaকে তার দূর সম্পর্কের এক আত্মীয়র সাথে বিছানায় আবিষ্কার করে। রাগে অন্ধ হয়ে Jim ঘুমন্ত পুরুষটিকে গুলি করে হত্যা করে। পুলিশ সমস্ত ঘটনা শুনে Jimকে খালাস করে দেয়। সেসময়ের ক্যালিফোর্নিয়ার আইন কানুন এমনই ছিল। এর পর গল্পের ক্লাইম্যাক্স; পরের দিন সকালে Jim Jelkaকে গোয়ালে নিয়ে গিয়ে নির্দয় ভাবে চাবুক দিয়ে পেটায়। অবাক কথা, পরদিন সকালে শান্ত Jelka আনন্দিত মনে Jimএর প্রাতরাশ তৈরি করে, তার মুখেচোখে স্বামীর প্রতি ভালবাসা উপচে পড়ে। আপাত দৃষ্টিতে গল্পটি যদিও পুরুষের নারীজাতির ওপর আধিপত্য ও দুর্ব্যবহারের এক নির্মম উপাখ্যান বলে মনে হয়, প্রখ্যাত সমালোচক Warren Frenchএর ভাষায়,
“Place the story in its historical context (1930’s Salinas valley) and note the sexual double standard in light of the husband’s frequent enjoyment of prostitutes. We identify the story as more of a parody than an expression of ethnophobia. It is another of Steinbeck’s mordantly ironic commentaries on the lack of sympathetic communication between human beings”.
গল্পটি ১৯৩৪ সালে O. Henry পুরস্কার পায়। পুরস্কার কমিটির মতে, “We note the immense cathartic effect of Jim’s crime which is amazingly expressed in Steinbeck’s breathtaking description of the crucial scene।”


আমার দ্বিতীয় স্টাইনবেকের গল্প The Snake। গল্পটি ১৯৩৫ সালে The Monterey Beacon পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। গল্পের প্রধান চরিত্র Dr. Phillip তার বায়োলজি ল্যাবরেটরিতে জীবজন্তু নিয়ে গবেষণা করেন। এক সন্ধ্যে বেলায় ল্যাবরেটরির এক কোনে স্টোভে নিজের খাবার তৈরির ফাঁকে ফাঁকে তিনি তার rattlesnakes, সাদা ইঁদুর, আর কয়েকটি বেড়ালের তত্বাবধান করছিলেন। হঠাৎ দরজায় কড়া নেড়ে হাজির হোল এক গভীর কালো চোখের তরুণী। তার পোশাক কালো, মাথার চুল কালো। Dr. Phillip “আমি ব্যস্ত” বলা সত্বেও সে ঘরে ঢুকে পড়ে। প্রথমে সে Dr. Phillipএর পেট্রি ডিশে তারামাছের ডিম্বাণু আর শুক্রাণুর মিলন দেখে মন দিয়ে, এর পর অস্থির পায়ে এদিক ওদিক তাকিয়ে ঘুরে সে চলে আসে rattlesnakeএর বয়োমগুলোর দিকে আর আচমকা জানায় যে সে একটা rattlesnake কিনতে চায়। সে আরও বলে যে তার কেনা সাপটা এই ল্যাবরেটরিতেই থাকবে, সে রোজ এসে তাকে খাওয়াবে। সে শুধু চায় যে তার নিজের একটা ভয়ঙ্কর সাপ আছে। এর পর সে নিজে Dr. Phillipএর একটা সাদা ইঁদুর নিয়ে সাপটার বয়োমে ফেলে সাপের সেই ইঁদুর ছিঁড়ে খাওয়ার দৃশ্য উপভোগ করে। হতভম্ব Dr. Phillip তাকে কফির আমন্ত্রণ জানালে সে জানায় তার সময় নেই এবং সে আবার কাল আসবে ওই সাপটিকে খাওয়াতে বলে বিদায় নেয়। এই ঘটনার পর এলাকায় অনেক খুঁজেও Dr. Phillip সেই বিচিত্র তরুণীর দেখা পান নি। এই গল্পে আমরা কালো পোশাক পরিহিতা এক তরুণীর মনের dark desire আর impulseএর আভাস পাই। সে বিপজ্জনক এক প্রাণীকে (rattlesnake) তার নিজের আয়ত্তে আনতে চায়, তার নিজের নিয়ন্ত্রণে রাখতে চায়। গল্পটিতে মানুষের যৌন লালসার ইঙ্গিতও রয়েছে যখন মেয়েটি তারামাছের বীর্যপাত দেখে মন দিয়ে, তারপর সাপের যৌনাঙ্গ নিয়ে Dr. Phillipএর সাথে আলোচনা করে। স্টাইনবেক ইচ্ছাকৃত ভাবে গল্পটিকে রহস্যময় করে রেখেছেন। অন্ধকার রাত্রে কাল পোশাক পরা এই তরুণী কে, সে কি Dr. Phillipএর পরিচিত, তার নাম কি, সে এলো কোথা থেকে, কিছুই বলা নেই। তরুণী অন্ধকারের এক প্রতিমূর্তি, সে এসেছে অন্ধকারের মধ্যে, সে মিলিয়েও গেছে অন্ধকারে। গল্পটির psychological undertone অনস্বীকার্য। সমালোচকদের ভাষায়, “The Snake is perhaps the most frustratingly symbolic and oblique”।
নিজের লেখক জীবনে জন স্টাইনবেকের লেখা ছিল বিতর্কিত।
উদাহরণ স্বরূপ, The Grapes of Wrath বইটি পাঠককে যেমন আকৃষ্ট করে তেমনই পাঠকের মনোযোগ বারবার ব্যাহত করে। গল্পের মানুষগুলোর দুর্বিষহ জীবনের বর্ণনা এতই নিদারুণ, যে পাঠক পরের অধ্যায় শুরু করার আগে একটু থমকে যায়। কিন্তু সে বইটি ছাড়তে পারে না। ১৯৪০ সালে ক্যালিফোর্নিয়ার এক labor camp পরিদর্শনের পর First Lady Eleanor Rooseveltকে সাংবাদিকরা জিজ্ঞেস করে যে Grapes of Wrath বইটিকে তিনি অতিরঞ্জিত মনে করেন কিনা। প্রশ্নের উত্তরে Eleanor বলেন, “I never believed that The Grapes of Wrath was exaggerated”। Of Mice and Men পড়ার পর Eleanor সমালোচকদের বলেছিলেন, “Now I must tell you that I have just finished a book which is an unforgettable experience in reading”। এককথায় স্টাইনবেকের লেখার অনুরাগী পাঠকের কখনোই অভাব হয় নি।



আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগ থেকে আরোও
Theme Created By FlintDeOrient.Com
error: Content is protected !!
error: Content is protected !!