কলেজের করিডোরে
হাই স্কুলের গন্ডি পেরিয়ে সবেমাত্র কলেজে পা দিয়েছি। কলেজ ক্যাম্পাসের নতুন বন্ধুদের সাথে ক্লাস , আড্ডা দেয়া, অবসরে কলেজ ক্যাম্পাসের ছায়াঘেরা সবুজ ঘাসের গালিচায় বসে বাদাম খাওয়া- সবমিলে এক অন্যরকম অনুভূতি! এমনি করে কেটে গেল বেশ কিছুদিন।
হঠাৎ একদিন ক্লাস শেষে, ক্লাসরুম থেকে বেরিয়ে আসার পথে কলেজের করিডোরে এক অপরূপা লাবণ্যময়ী মেয়ের সাথে আমার চোখাচোখি হয়ে গেল। মেয়েটির যেমন দুধে আলতা গায়ের রং, তেমনি সুন্দর মুখশ্রী, গোলাপি অধর, সমুদ্রের উত্তাল তরঙ্গের মতো ঢেউ খেলানো রেশমি চুল, আর চোখ দু’টো যেনো যাদুকরী নেশায় জড়ানো। আমি অবাক দৃষ্টিতে তার রূপমাধুরী উপভোগ করছিলাম! যখন সে আমাকে পাশ কাটিয়ে চলে গেল, আমার চারিপাশটা যেন আলোকিত, সুবাশিত হয়ে গেল। আমি কিছুক্ষণ বাকরুদ্ধ হয়ে গেলাম। মানুষ এতোটা সুন্দর হতে পারে!
এরপর প্রায়শই কলেজের করিডোরে মেয়েটির সাথে আমার চোখাচোখি হত। আমি অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকতাম মেয়েটির দিকে! মেয়েটি যখন আমাকে পাশ কাটিয়ে দূরে চলে যেত, আমি তখন দু’চোখ বন্ধ করে ওর পরিচিত পারফিউম আর রেশমী চুলের সুগন্ধ নিতাম। একদিন জানতে পারলাম অপরূপা সেই মেয়েটির নাম মৃদুলা। প্রায় প্রতিদিন কলেজের করিডোরে আমাদের চোখাচোখি হতে লাগল। মৃদুলাও আমাকে দেখলে মুচকি হেসে পাশ কাটিয়ে চলে যেত। মনে মনে আমি মৃদুলাকে ভালোবেসে ফেললাম। যাকে বলে ওয়ান সাইড লাভ আর কি। মৃদুলাকে নিয়ে একদিন রাত জেগে একটি কবিতাও লিখে ফেললাম। এভাবেই মৃদুলাকে নিয়ে কাব্য লিখে ফার্স্ট ইয়ার শেষ হয়ে গেল। তবুও তাকে বলতে পারলামনা আমার মনের কথা- মৃদুলা, আমি তোমাকে ভালোবাসি!
কলেজ জীবনে আমি তার কাছে জানতেও চাইনি কোনদিন, পাশ কাটিয়ে চলে যাবার সময় তার সেই মুচকি হাসির অর্থ বা রহস্য কি? এভাবেই মৃদুলার সাথে চোখাচোখি আর দেখাদেখির ভেতর দিয়ে একটা সময় আমার কলেজ জীবনেরও সমাপ্তি ঘটে গেল। মৃদুলাকে আমি হারিয়ে ফেললাম চিরতরে!
এরপর জীবন থেকে হারিয়ে গেছে অনেকগুলো বছর। তবুও কেন জানিনা আজও মৃদুলার সেই মিষ্টি মুখখানি হঠাৎই চোখের সামনে ভেসে ওঠে! নাকে ভেসে আসে তার প্রিয় পারফিউম আর রেশমি চুলের সুগন্ধ। মুহূর্তেই আমি কল্পনায় ফিরে যাই, সেই কলেজের করিডোরে! মনে পড়ে, মৃদুলার কথা। জানিনা এখন সে কোথায় আছে? কেমন আছে? হয়তো কারও জীবনসঙ্গিনী হয়ে সুখে সংসার জীবন কাটাচ্ছে। মাঝে মাঝে মনে হয়, আমার মতো করে মৃদুলারও কি কখনো মনে পড়ে আমার কথা…..?