কবিতা: ভাগ্যিস সুভাষ ফেরেনি
ভাগ্যিস সুভাষ ফেরেনি
আর যা মাড়িয়ে যাও বন্ধু,
নালা- নর্দমার পঙ্কিলতা
খুব একটা দুর্গন্ধময় হবে না।
আস্তে পা’ চালাও বন্ধু!
আর যা মাড়িয়ে যাও;
ষাঁড়ের গোবর, মুমূর্ষু রোগীর বমি, শেয়াল কুকুরের বিষ্ঠা কিম্বা, শূকরের মল!…
খুব একটা দুর্গন্ধময় হবে না।
আস্তে পা’ চালাও বন্ধু।
যতখানি বিকট দুর্গন্ধ আজ বেরোচ্ছে ঐ ‘নেতা’ শব্দটি থেকে!..
আসলে,‘নেতাজি’একজনই হন। নেতা শত শত।
ভাগ্যিস সুভাষ ফেরেনি। এলে কি দুঃখটাই না পেতেন। লজ্জায় মুখ ঢাকতেন কোথায়?
খচ্চর, ভেড়া কিম্বা,পাঁঠার গা’ থেকে এমন বোঁটকা দুর্গন্ধ বোধহয় বেরোয় না।
তাই, আর যাই মাড়িয়ে যাও বন্ধু, আজকের নেতাদের ছায়া টুকু পর্যন্ত মাড়িয়ে যেও না।
কল্পনা ও করো না ওদের স্পর্শ সুখ। গা’য়ে লেগে অসংখ্য শুয়োপোকার কাঁটা। ওরা প্রজাপতির খুনে উৎসব করে।
গঙ্গার সমস্ত জল দিয়ে ধুয়ে ওদের শুদ্ধ করা যাবে না। আকণ্ঠ দুর্গন্ধে ডুবে গেছে আজ ‘নেতা’ নামক শব্দটি।
ভাগ্যিস সুভাষ ফেরেনি।
আর যা মাড়িয়ে যাও বন্ধু! ‘নেতা’ শব্দটির ভেতর আজ যেভাবে বোঁটকা দুর্গন্ধ জমাট বেঁধেছে!
সমস্ত পারফিউম কোম্পানি গুলোও হার মানবে ঐ পচা দুর্গন্ধ ঢাকতে।
ভাগ্যিস সুভাষ ফেরেনি!
আস্তে পা চালাও বন্ধু!
‘নেতা’ শব্দটি তে রয়েছে বিশ্বগ্রাসী হাঙর ক্ষুধা!
এরা সব খায়। পাথর খায়! খাদানের বালি খায়!
সমুদ্রের জল!… এমনকি, গো-ভক্ষক ও।
মিডডে মিলের চাল খয়। রিলিফের গম খায়!
নারীকেও খায়! জনতার ভোট এঁদের প্রিয় খাদ্য। পৃথিবীর সমস্ত ভোগের পাত্র এঁদের জন্য উৎসর্গীকৃত। ভোগ বলাসী, মেকী দেশ সেবক। ছিনে জোঁকও। স্বর্গরাজ্য দাপিয়ে বেড়ানো অসুর রাজ।
ভাগ্যিস সুভাষ ফেরেনি!
দেশ, সমাজ, রাষ্ট্র, মাটি- মানুষের প্রতি এঁদের গদগদ ভক্তি দেখলে কেঁদেই ফেলতেন সুভাষ। হতবাক হতেন,‘সেবা’ শব্দটি এঁদের কাছে বন্ধ্যা দেখে। ‘নেতা’ মানেই আত্ম সেবা! আত্মানাং সিদ্ধি!
যেখানে, এঁদের আত্মাটাই শুদ্ধ নয়। সেখানে,‘সেবা’ শব্দটিই হাস্যকর!
এঁরা, রাজমিস্ত্রীর রূপ ধরে কেবল করে চলে শিলান্যাস। আবার, দর্জির বেশে ফিতে কাটেন!
রাজধর্ম পালনে নানান উৎসব। খেলা- মেলায় জনগন কে নাচিয়ে রাখেন। মোমবাতি জ্বালিয়ে মিছিলে ডাক দেন। ধর্মতলা, ব্রিগেডের মাঠে-ময়দানে এঁদের ডাকে শতশত মানুষের ঢল নামে। জনতা এঁদের পোষ্য। তারও চেয়ে পোষ্য
পুলিশ-প্রসাশন। উন্নয়নের বন্যায় জনতার নাভিশ্বাস। জনতাকে শাসক নেতা ‘‘দাস’ ভেবে লড়াই বাধিয়ে যুদ্ধের বলি করেন। মৃত লাশ নিয়ে করেন টানাটানি। শেয়াল-কুকুরেরা দেখে লজ্জা পায়। শ্মশানে দলের পতাকা পুঁতে জানায় গদগদ ভক্তির ছটা। এমন ‘নেতা’ তৈরিতে আম জনতা প্রতি পাঁচ বছরে হন বলির শিকার।
আর, সেই ‘নেতা’ কুম্ভীরাশ্রুতে সাপের মুখে চুমু খেয়ে ওঝা হয়ে ঝাড়েন। গিরগিটি ও মুখ লুকোতে ব্যস্ত! …
ভাগ্যিস সুভাষ ফেরেনি!
তাই, আজও হা-হুতাশে সারা দেশবাসী খুঁজে বেড়ায় ‘নেতা’ নয়, একজন সত্যি কারের খাঁটি দেশপ্রেমিক, ক্ষমতা, পদ লোভহীন মানবদরদী সেই ‘নেতাজি’কে।