গল্প: ভালোবাসার লাল গোলাপ।। রবিউল করিম পলাশ।। রাজশাহী।। বাংলাদেশ - শৃণ্বন্তু গল্প: ভালোবাসার লাল গোলাপ।। রবিউল করিম পলাশ।। রাজশাহী।। বাংলাদেশ - শৃণ্বন্তু
সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৭:৫৮ অপরাহ্ন

গল্প: ভালোবাসার লাল গোলাপ।। রবিউল করিম পলাশ।। রাজশাহী।। বাংলাদেশ

আপডেট করা হয়েছে : মঙ্গলবার, ২১ মে, ২০২৪, ৩:০৪ পূর্বাহ্ন

গল্প: ভালোবাসার লাল গোলাপ 

লেখক: রবিউল করিম পলাশ


ভালোবাসার লাল গোলাপ 
১৪ ফেব্রুয়ারি ভালোবাসা দিবসে শিমুল রূপকথাকে দেবার জন্য কুড়িটা টকটকে লাল গোলাপ কিনেছে। ভালোবাসার লাল গোলাপ। তার জীবনের হৃদয়ের একটা লালিত স্বপ্ন  আজ বাস্তবে রূপলাভ করতে যাচ্ছে। একটা সময় শিমুল রূপকথাকে খুব ভালোবাসতো। কিন্তু রূপকথাকে “ভালোবাসি” শব্দটি বলার আগেই শিমুলের জীবন থেকে রূপকথা হারিয়ে যায়। এরপর থেকে শিমুল তার হৃদয়ে রূপকথা ছাড়া অন্য কাউকে জায়গা দেয়ার কথা ভাবেনি কখনো। জীবনের সোনালী দিনগুলো শুধু রূপকথার জন্য অপেক্ষায় কাটিয়েছে। সে মনে প্রাণে বিশ্বাস করতো রূপকথা একদিন তার জীবনে আবার ফিরে আসবে!
এভাবে শিমুলের জীবন থেকে অনেকগুলো বছর কেটে যায়।  কাকতালীয়ভাবে জীবন নদীর বাঁকে বছর কুড়ি পর সে তার হারিয়ে যাওয়া মানুষটিকে আবারো নতুন করে ফিরে পায়। কিন্তু ততদিনে জীবন নদীর স্রোতে বিলীন হয়েছে অনেকগুলো বছর, হারিয়ে গেছে সবকিছুই। শিমুল ও রূপকথা দু’জনারই এখন সংসার হয়েছে। এতো বছর পর রূপকথাকে ফিরে পেয়ে শিমুল তার মনের সব কথা তাকে খুলে বলে। রূপকথার প্রতি শিমুলের এতো ভালোবাসার কথা জানার পর শিমুলকে রূপকথা ভালোবাসতে শুরু করে। শিমুলের জীবনের অপূর্ণ সব স্বপ্ন পূরণ করবার প্রতিশ্রুতি দেয় রূপকথা। সে তার কাছ থেকে ভালোবাসা দিবসে ভালোবাসার লাল গোলাপ গ্রহণ করার কথা জানায়। যে অপেক্ষার অরণ্যে ভালোবাসি শব্দটি শোনার জন্য শিমুল একাকী এতোদিন অপেক্ষার প্রহর গুনছিল, বসন্তের কোকিল হয়ে ফিরে এসে রূপকথা সকাল-বিকেল শিমুলকে ভালোবাসি, ভালোবাসি বলে ডেকে ডেকে সেই বিষাদময় অরণ্যে নতুন করে বসন্ত ফিরিয়ে আনে। জীবন নদীর শুকনো বালুচরে ফিরে আসে নতুন প্রেমের জোয়ার। যতগুলো ফাগুন-বসন্ত শিমুলের জীবন থেকে হারিয়ে গেছে ততগুলো গোলাপ রূপকথা আসছে ভালোবাসা দিবসে শিমুলের কাছ থেকে উপহার হিসেবে গ্রহন করতে চায়। আজ সেই কাঙ্খিত দিন।
শিমুলের প্রচন্ড টেনশন কাজ করছে আজ। সে তার ভালোবাসার মানুষটাকে এই প্রথমবার লাল গোলাপ উপহার দেবে। শিমুল ও রূপকথা চাকুরীর সুবাদে এখন একই শহরে থাকে। অফিস শেষ করে একটি ফুলের দোকান থেকে বেছে বেছে শিমুল তরতাজা কুড়িটা লাল টকটকে গোলাপ কিনে নেয় রূপকথার জন্য। শিমুলের ইচ্ছেপূরণ হবে রূপকথাকে আজ ভালোবাসার লাল গোলাপ উপহার দেয়ার ভেতর দিয়ে। 
ঘড়ির কাটা বিকেল পাঁচটা ছুঁতে চলেছে। রাস্তায় প্রচণ্ড জ্যাম। অফিস ছুটির সময়টাতে যানবাহনও ঠিকমতো পাওয়া যায় না। পায়ে হেঁটেই রওনা দিলো শিমুল।রূপকথাকে একটা ফোন দিলো শিমুল। রূপকথা ফোন রিসিভ করতেই, কোথায় তুমি? আমি রওনা দিলাম, রাস্তায় অনেক জ্যাম বুঝলে। তুমি আগে পৌঁছালে আমার অপেক্ষায় থেকো প্লিজ। দেরী দেখে চলে যেওনা কিন্তু কেমন। রূপকথা, ওকে ঠিক আছে, তুমি টেনশন নিও না। আমিও অফিস থেকে রওনা দেবো এখন। শিমুল ও রূপকথা আজ শহরের একটি অভিজাত কফি হাউজে দেখা করবে। শিমুল আজ তার কাঙ্খিত ভালোবাসার লাল গোলাপ রূপকথার হাতে তুলে দিয়ে জীবনের লালিত স্বপ্ন পূরণ করবে, একসাথে কফি খাবে, অনেক গল্প করবে, আড্ডা দেবে।
রাস্তায় যেন যানজট ক্রমশ বেড়েই চলেছে। শিমুল টেনশনে ঘামতে শুরু করেছে। হঠাৎই একটি উবার বাইক পেয়ে গেলো শিমুল। সে যেন স্বস্তি ফিরে পেল। বাইকটাও যানজটের ফাঁক ফোকর দিয়ে খুব সহজেই সঠিক সময়ে গন্তব্যে পৌঁছে গেল। 
শিমুল কফি হাউজে পৌঁছানোর পর দেখল রূপকথা তখনও এসে পৌঁছায়নি। তার টেনশন আরও বেড়ে গেল। সে রূপকথাকে আবারও ফোন দিল। রূপকথা হেসে উঠে বলল, একটু ধৈর্য ধরো, আমি প্রায় চলে এসেছি। কিছুক্ষণ পর রূপকথা চলে আসলো। শিমুল রূপকথাকে দেখে অবাক হয়ে তাকিয়ে রইল। অনেকদিন পর তারা একে অপরকে কাছে পেয়েছে। তারা দু’জন দু’জনকে মন-প্রাণ,  দু’চোখ ভরে দেখতে লাগলো। কিছুক্ষণ পর শিমুল রূপকথাকে গোলাপ হাতে তুলে দিয়ে বলল, আজ আমার জীবনের লালিত স্বপ্ন পূরণ হল। আজ আমি সত্যিই খুব খুশি। রূপকথা শিমুলের দেয়া গোলাপগুলো হাতে নিয়ে একটি গোলাপ তার খোঁপায় গুঁজে দিল। শিমুল রূপকথার সৌন্দর্যরূপ উপভোগ করতে লাগল অবাক, অপলক দৃষ্টিতে। শিমুলের জীবনের অপূর্ণ ইচ্ছেটা আজ পূর্ণ হল। সে তার ভালোবাসার মানুষটাকে লাল গোলাপ তুলে দিতে পেরে এক অন্যরকম খুশির জোয়ারে ভেসে গেল। রূপকথা জানে, শিমুল ভাল কবিতা লিখে। সে শিমুলকে লেখালেখিতে উৎসাহ দিত। রূপকথা শিমুলকে তার লেখা একটি কবিতা শোনাতে বললো। শিমুল রূপকথা র চোখের দিকে তাকিয়ে তার লেখা একটি কবিতা শোনাতে শুরু করল…
ভেবেছিলাম,
জন্ম থেকে মৃত্যু অবধি
মধ্যিখানের উঠোনটুকু,
হেসে-খেলে পার হব-
তোমার হাত ধরে।
পাওয়া না পাওয়ার মাঝে,
সম্পূর্ণতা খুঁজে পাব-
তোমার সান্নিধ্যে।
ভোরের ঝরা শিউলি-
বকুল কুড়িয়ে এনে,
মেখে দেবো, তোমার সারা গায়ে।
কিন্তু সেসব শুধু স্বপ্নই থেকে গেল!
তুমিও সময়ের অপচয় না করে,
বেছে নিলে দাম্পত্য জীবন।
আজ তাই,
মাঝে মাঝে নিজেকে প্রশ্ন করি-
কেন সেদিন তোমাকে বলতে পারিনি,
আমার হৃদয় গহীণে লুকিয়ে রাখা,
অব্যক্ত তিনটি শব্দ-
আমি  তোমাকে  ভালোবাসি….
রূপকথা কফির পেয়ালাটা শিমুলের হাতে তুলে দিয়ে বলল, অসাধারণ তোমার কবিতা। শিমুল কফিতে চুমুক দিয়ে বলল রূপকথা, তোমাকে নিয়ে আমি অনেক কবিতা লিখেছি। রূপকথা, তাই নাকি! শিমুল হ্যাঁ, খুব শ্রীঘ্রই কবিতাগুলো দিয়ে একটা কাব্যগ্রন্থ প্রকাশ করব। রূপকথা, সত্যি আমি ভাগ্যবতী। আমাকে তুমি এতোটা ভালোবাস! শিমুল, সম্রাট শাহজাহান তার ভালোবাসার নিদর্শন হিসেবে তাজমহল তৈরি করে গেছেন। আমি সাধারণ মানুষ, আমিতো আর সেটা করতে পারবো না, তাই আমি তোমার জন্য আমার ভালোবাসার নিদর্শন হিসেবে একটা কবিতার বই লিখে গেলাম। রূপকথার চোখ দু’টো আবেগে ছলছল করে উঠল।
চারিদিকে অন্ধকার নেমে এসেছে। কফি হাউজে একসাথে কফি ও স্ন্যাকস খাওয়া শেষে এবার দু’জনার বিদায়ের পালা। শহরজুড়ে আলো ঝলমল করছে। আজ শহরের বুকে যেন পূর্ণিমা চাঁদ নেমে এসেছে! শিমুলের চারপাশে রূপকথার রূপের আলো ছড়িয়ে পড়েছে। কফি হাউজের টেবিলে রাখা লাল গোলাপ সুবাস ছড়াচ্ছে। শিমুল ও রূপকথা দু’জন দু’জনার হাতে হাত রেখে অপলক দৃষ্টিতে একে অপরের দিকে তাকিয়ে আছে…


আপনার মতামত লিখুন :

One response to “গল্প: ভালোবাসার লাল গোলাপ।। রবিউল করিম পলাশ।। রাজশাহী।। বাংলাদেশ”

  1. নামহীন says:

    বাহ্ চমৎকার

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগ থেকে আরোও
Theme Created By FlintDeOrient.Com
error: Content is protected !!
error: Content is protected !!