অনুগল্প: একটা অরাজনৈতিক প্রশ্ন।। সুদীপ্ত কুমার চক্রবর্তী।। মুর্শিদাবাবাদ - শৃণ্বন্তু অনুগল্প: একটা অরাজনৈতিক প্রশ্ন।। সুদীপ্ত কুমার চক্রবর্তী।। মুর্শিদাবাবাদ - শৃণ্বন্তু
সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৫:০২ পূর্বাহ্ন

অনুগল্প: একটা অরাজনৈতিক প্রশ্ন।। সুদীপ্ত কুমার চক্রবর্তী।। মুর্শিদাবাবাদ

আপডেট করা হয়েছে : মঙ্গলবার, ১৮ জুন, ২০২৪, ৮:০১ পূর্বাহ্ন
অনুগল্প: একটা অরাজনৈতিক প্রশ্ন।। সুদীপ্ত কুমার চক্রবর্তী।। মুর্শিদাবাবাদ

অনুগল্প: একটা অরাজনৈতিক প্রশ্ন

সুদীপ্ত কুমার চক্রবর্তী

একটা অরাজনৈতিক প্রশ্ন
শহরের একটা বিখ্যাত দোকান থেকে ডাস্ট উডের একটা দামী আসবাব কিনলাম। সেটি বাড়ি এসে পৌঁছল টুকরো টুকরো নানান অংশে বিভক্ত হয়ে। দোকান থেকে জানালো, যথাসময়ে দোকানের কর্মী বাড়ি চলে যাবে টুকরো অংশগুলোকে একত্র করে আসবাবটিকে সঠিক রূপ দেওয়ার জন্য। যাকে ইন্টারলকিং সিস্টেম বলে আর কি।
           বেশ সকাল সকাল এসে পড়ল ঝকঝকে চেহারার ছেলেটি। যে ঘরে আসবাবটি রাখা হবে সেঘরে ও কাজ শুরু করতেই আমি এসিটা চালিয়ে দিলাম। বড্ড গরম এখন!
      ছেলেটির বয়স জানলাম তিরিশের কোঠায়। অভ্যস্ত হাতে কাজ করে যাচ্ছিল সে, আর আমি অভ্যাসমতো ওর সঙ্গে বকবক করছিলাম। হঠাৎ ছেলেটি বলল, “ভাগ্যিস এই ঘরে এসি আছে! নইলে যা গরম, সহ্য করা মুশকিল।”
 আমি বললাম,” বাড়িতে এসি আছে?”
ছেলেটি বলল,” না না। এসি কেনার টাকা পাব কোথায়? তবে আমাদের দোকানটা তো বিরাট আর সেন্ট্রালি এসি। ফলে সকাল আটটা থেকে রাত আটটা পর্যন্ত আরামেই কেটে যায়।”
 জিজ্ঞাসা করলাম,” এই দোকানে কাজ করছো কত বছর ধরে?”
সে বলল,” প্রায় দশ বছর।”
“পরিবারে তুমি কি একাই রোজগেরে?” জানতে চাইলাম আমি।
সে বলল,” হ্যাঁ কাকা। যে রোজগারটুকু করি তাতেই চালাতে হয় সংসার।”
“কে কে আছে তোমার বাড়িতে?”
” বাবা, মা, বউ আর তিন ছেলে। ওরা সব স্কুলে পড়ে।”
 কথায় কথায় ছেলেটি বলল, “অভ্যাস কি অদ্ভুত জিনিস কাকা! আমি যখন বাড়িতে থাকতাম তখন গরম দিব্যি সহ্য হয়ে যেত। এই দোকানে কাজ করার পর থেকে এসিতে এমন করে অভ্যস্ত হয়ে গেছি যে গরম আর সহ্য করতেই পারি না।”
 আমি বললাম,” তাহলে রাত্রে ঘুমাও কী করে? বাড়িতে তো আর  এসি নেই।”
 ছেলেটি বলল,” আমি একটা ছোট্ট ঘরে শুই। বাকিরা অন্য ঘরে। শুধু রাতটুকুর জন্য আমার ঘরে আমি একটা ছোট পোর্টেবল এয়ার কুলার ভাড়া নিয়েছি। যারা ভাড়া দিয়েছে তারা সকাল হলেই খুলে নিয়ে যায়। অন্যত্র ভাড়া দেয়। আবার রাত্রিবেলায় লাগিয়ে দিয়ে যায়।ফলে রাতের ঘুমটা বেশ ভালো হয়।”
আমি বললাম,” বাহ্ খুব ভালো। বুদ্ধিমানের কাজ।”
 ছেলেটি ইন্টারলকিং এর কাজটা বেশ দক্ষতার সঙ্গেই করছিল। হঠাৎ একটা বেয়াড়া প্রশ্ন করে ফেললাম ওকে।বললাম,” দেশের যেমন কর্তা থাকে, রাজ্যের যেমন কর্তা থাকে, তুমিও তো পরিবারের কর্তা। তুমি নিজে আরাম ভোগ করছো আর তোমার উপর নির্ভরশীল পরিবারের অন্য সদস্যরা সেই আরামটা পাচ্ছে না। ভেবে তোমার কষ্ট হয় না?”
 প্রশ্নটা শুনেই ছেলেটি বেজায় চটে গেল। বলল,” এত বকবক করলে কী করে কাজ করবো, কাকা? আপনি বরং অন্য ঘরে যান। আমাকে আমার কাজ করতে দিন।”


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগ থেকে আরোও
Theme Created By FlintDeOrient.Com
error: Content is protected !!
error: Content is protected !!