মুক্তগদ্য: ভাগুয়ালিদের তিনপুরুষ (ছত্তিসগড়ের এক বৃদ্ধের জীবনের এক চিলতে)।। সেখ নূর মেহেদী।। দত্তপুকুর।। উ: ২৪ পরগণা - শৃণ্বন্তু মুক্তগদ্য: ভাগুয়ালিদের তিনপুরুষ (ছত্তিসগড়ের এক বৃদ্ধের জীবনের এক চিলতে)।। সেখ নূর মেহেদী।। দত্তপুকুর।। উ: ২৪ পরগণা - শৃণ্বন্তু
সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৫:০২ পূর্বাহ্ন

মুক্তগদ্য: ভাগুয়ালিদের তিনপুরুষ (ছত্তিসগড়ের এক বৃদ্ধের জীবনের এক চিলতে)।। সেখ নূর মেহেদী।। দত্তপুকুর।। উ: ২৪ পরগণা

আপডেট করা হয়েছে : বুধবার, ২২ মে, ২০২৪, ৮:১৭ অপরাহ্ন
মুক্তগদ্য: ভাগুয়ালিদের তিনপুরুষ  (ছত্তিসগড়ের এক বৃদ্ধের জীবনের এক চিলতে)।। সেখ নূর মেহেদী।। দত্তপুকুর।। উ: ২৪ পরগণা

মুক্তগদ্য: ভাগুয়ালিদের তিনপুরুষ 

লেখক: সেখ নূর মেহেদী

ভাগুয়ালিদের তিনপুরুষ (ছত্তিসগড়ের এক বৃদ্ধের জীবনের এক চিলতে):
১।।

ভাগুয়ালিদের তিন পুরুষ মাথায় খড়ের আঁটি কাঁধে ঘাসের বোঝা বাঁধা লাঠি।
রাস্তার ধার ঘেঁষে হাঁটে ভাগুয়ালি।
নয়নজুলি আর পুকুর থেকে কেটেছে সে ঘাসগুলি। আসে শঙ্করদা থেকে ধামতারি – সাড়ে চার কিমি তো হবেই। সব মিলিয়ে প্রতিদিন আঠারো কিমি পথ হাঁটা। এ যেন ম্যারাথন কিংবা মরুতীর্থ হিংলাজের জাঠা।

ওই পথে আমিও হাঁটছিলাম। নাম ধাম কাম জানতে প্রশ্ন তাকে করি, কোথায় যাবে? নাম কি তোমার? নিম্নস্বরে বলি। ভেবেছে বলেছি মন্দ কিছু। তাই বলে,
লোকের কান বাঁচিয়ে বলো। আমার প্রাণ বাঁচিয়ে বলো। কম শুনি। আস্তে নয়, একটু চেঁচিয়ে বলো। বলতে চাইলে আমার সাথে ধীরে সুস্থে চলো। কথায় কথায় জানিয়ে দিল ধামতারি হাটে ঘাস খড় বেচে যা পায় তাই দিয়ে সবজি কেনে আর তাতেই দুটো খাদ্য সংস্থান। এই ধামতারিতেই তার স্বর্গের অবস্থান। ভালো বাজার পেলে দিনে দু’বার যাওয়া আসা এই সত্তরেও। ন্যুব্জ।তবু কাঁধে তুলে তার লাঠি – তৃতীয় চরণ, কষ্টের পথ চলা। প্রৌঢ়-প্রৌঢ়ীর বার্ধক্য ভাতা সাড়ে তিনশ’ হিসাবে মাসে সাত শ’। এই দুর্মূল্যের বাজারে তা অবসিত এক হপ্তায়  তাও ন’মাস ছ’মাসে পায়। বাকি দিন তারা কি খায়?

ভাগুয়ালির বাপ ছিল নিরক্ষর। কৃষি শ্রমিক। সেও নিরক্ষর। তার ছেলে ধনীরামও নিরক্ষর। তবু সে সাইকেল চেপে ঠিকাদারের অধীন আড়াইশো টাকা রোজগারে কাঁধে নিয়েছে কিছুটা সংসারের বোঝা। তার দুই ছেলে – প্রথম পুরুষ, স্কুল যাওয়া নিয়মিত তাদের। সকাল সন্ধ্যায় বসে পাঠ চক্কর। শুনে আমার এটাই বড় ভালো লেগেছে। এবার যদি ভাগুয়ালিদের আঁধার ঘরে জ্বলে পিদিমের আলো! পিতামহী খাদিন সাহু সযতনে পুত্রগণে পৌঁছে দেয় বই খাতা সহ তাদের প্রিয় পাঠভবনে।
২।।
জমি নেই। ঘর নেই। খিদের আগুন জ্বলে পেটে। তাই ভগুয়ালি কতকাল থেকে পথ হাঁটে – কতকাল! সরকার বদলেছে। বদলায়নি ভাগুয়ালির চার আঙ্গুলের কপাল। জোটেনি প্রধানমন্ত্রীর আবাস যোজনার ঘর। জীবনের শ্রেষ্ঠ সময় ব্যয় করে সে গুছিয়েছে সমাজ সংসার। অনেক কিছুর বদল দেখেছে সত্তুরে ভাগুয়ালি। তবু তার ছেঁড়া জামায়, খড়ের ছাওয়ায় পড়েইনি কোন তালি। ভাগুয়ালি দেখেছে সারদা নারদা কাটমানি। দেখেছে ভোট যুদ্ধের কোঁদলামি ও প্রহসন। ভাগুয়ালি কাট মানি দিতে পারেননি। তাই একটা ঘর পায়নি। বলতে গেলে মুখের ফেজ বদলে দেবে কাটমানিদের আর্দালি। আরো কত রঙ্গ দেখেছে ধামতারির এই ভাগুয়ালি। আজও মাটির কুঁড়ে ঘরই তার বাসস্থান। তার গ্রামের নাম ধামতারি। সে বোঝেনা অত দুনিয়াদারি দু নম্বরি।
৩।।
সভ্যতার লুদ্ধ আগ্রাসন, পাশব পরাক্রমের ভয়ে কাঁপন লাগা কঙ্কালসার মানুষের জীবন্ত চিত্র সে। আনপড় ভাগুয়ালি মানব সভ্যতায় গ্রহণ লাগার সংজ্ঞাত হুঁশিয়ারি। সে আনপড় ভাগুয়ালি। অতশত বোঝেনা সে সভ্যতার অবলীঢ় চতুরালি। বাতাসের কানে কে দিয়ে গেল চরম দুঃসংবাদ! যেন

গ্রহণ লাগার আগেই সভ্যতা করেছে আত্মহনন।

৪।।
শারদীয়া চৌদিকে। ফুল্ল মেজাজে আছে গ্রাম গ্রামান্তর। ভাগুয়ালির পরিপার্শ্বে নেই ভাবান্তর। স্বপরিস্থিতি জিয়ানো। মাইক বাজছে। আলো ঝলমল করছে। অলীক এক প্যারাডাইস থেকে ভেসে আসছে নির্মল সুর। সম্রাট নিরো নাকি বাজাচ্ছেন তাঁর সেই প্রাচীন পিয়ানো…


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগ থেকে আরোও
Theme Created By FlintDeOrient.Com
error: Content is protected !!
error: Content is protected !!