গল্প: ঢেউ।। বিষ্ণু সরকার।। হাবড়া।। উ: ২৪ পরগণা - শৃণ্বন্তু গল্প: ঢেউ।। বিষ্ণু সরকার।। হাবড়া।। উ: ২৪ পরগণা - শৃণ্বন্তু
সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৮:০৬ অপরাহ্ন

গল্প: ঢেউ।। বিষ্ণু সরকার।। হাবড়া।। উ: ২৪ পরগণা

আপডেট করা হয়েছে : বুধবার, ২৯ মে, ২০২৪, ৮:২২ পূর্বাহ্ন
গল্প: ঢেউ।। বিষ্ণু সরকার।। হাবড়া।। উ: ২৪ পরগণা

গল্প: ঢেউ

বিষ্ণু সরকার

ঢেউ
ফাঁকা বিচ জুড়ে দুপুরের তপ্ত রোদ ছড়ানো। তার মধ্যেই হাঁটছিল ওরা। ছেলেটা দুষ্টুমি করে মেয়েটার খোঁপা খুলে দিতে চাইছিল। দারুণ হাওয়া এসে ওর সঙ্গ দিচ্ছিল। মেয়েটাও দৌড়ে গিয়ে কুড়িয়ে আনতে চাইছিল ঝিনুক। যেন ফিরে পাওয়া মেয়েবেলা। মেয়েটার শাড়ির আচল প্রবল হাওয়ায় উড়িয়ে নিচ্ছিল। সিঁথির লাল সিঁদুরটাও এলো চুলে লুকোচুরি খেলছিল বারবার। অনুরাধা দূর থেকে একমনে দেখছিল ওদের। কিভাবে ওরা হাঁটছিল, পা ফেলছিল। এগিয়ে আসছিল ঢেউ আর নোনা জলকে বাঁচিয়ে রেখে!
আজ ভোরের ট্রেনে পুরী এসে পৌঁছেছে অনুরাধা। কতগুলি দিন পেরিয়ে আবার এদিকে আসা। অনুরাধা প্রথমে রাজি হতে চায়নি। শেষে বৃষ্টি এসে এমন ভাবে চেপে ধরল। মেয়েটার মুখের ওপর আর না বলতে পারেনি। অনুরাধা জানে বৃষ্টি ওর কেউ নয়। কোন রক্তের সম্পর্কও নেই। তবু প্রতিবেশী হওয়ার সূত্র ধরে নিয়মিত খোঁজখবর নেয়। কোন কিছুর প্রয়োজন হলে এটা-ওটা এনে দেয়। কদিনেই বৃষ্টি কেমন এক অলিখিত সম্পর্কে জড়িয়ে নিয়েছে।
আজ অনুরাধা এসেছে সেই এসি থ্রি টায়ারে, যেমনটা নিয়মিত আসত এখানে। নেমেছে সেই চেনা স্টেশনটায়। চারদিকে তখনও কুয়াশা জড়ানো ভোর। অল্প আলো ফুটতেই প্লাটফর্ম পেরিয়ে বাইরে এসে গাড়ি নিয়ে ছুটেছে সেই ফেলে রাখা পথ ধরে। আরও কিছুটা এগিয়ে সমুদ্রটাকে দেখা। সেই চেনা ঢেউ, জানালার কাচ পেরিয়ে ভেসে আসা সেই গর্জন। একটার পর একটা ঢেউ আছড়ে পড়ছিল পাড়ে। কতদিনের পুরনো ঢেউগুলি যেন জমাট বাঁধা ছিল এতদিন! ফিরে এসেছে। অনুরাধার মনে হচ্ছিল, এতদিনে কিছুই যেন পাল্টায়নি। সেই নোনা জলে ভেসে আসা ঝিনুক। কিংবা লাল কাঁকড়র দল। কতবার কুড়িয়ে এনেছিল।
হোটেলে ঢোকার পর সবাই যে যার রুমে ছড়িয়ে গেছে। এমনকি বৃষ্টিও। একসময় ওই আবার ফিরে এসে অনুরাধাকে এই খোলা বারান্দাটায় বসিয়ে দিয়ে গেছে। বারান্দার মুক্ত এই জায়গাটায় বসে সি-বিচটা পরিষ্কার ফুটে উঠেছে চোখের সামনে। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বিচকে ঘিরে উত্তাপ বেড়েছে। লম্বা বিচটা তাই একদম ফাঁকা। একপাশে প্ল্যাস্টিকে মোড়া বিকেলের ছোট ছোট দোকানগুলি ছড়ানো। তার মধ্যেই ছেলেটা আর মেয়েটাকে দেখতে পাওয়া।
ওদেরকে দেখে অনুরাধার এই মুহূর্তে কত কথাই না মনে পড়ছে। সব যেন পুরনো অ্যালবাম ঘাঁটার মত। সাদাকালো ছবিগুলো চোখের সামনে ভেসে উঠছে পরপর। মনে পড়ছে শেষবার পুরীতে আসার কথা। সেবার ও আর সৈকত মিলে ট্যুরটা করেছিল। সৈকত রান্নার লোকজন, বাজার-হাট, গ্যাস-ওভেন, এদিক-ওদিক ঘুরতে যাওয়া গাড়ির বন্দোবস্ত করছিল। আর অনুরাধা ক্যাশ সামলানোর পাশাপাশি খেয়াল রাখছিল কার কি প্রয়োজন, খুঁটিনাটি সুবিধা-অসুবিধাগুলি। সেবার সৈকতের অফিসের কলিগ, তাদের বউ-বাচ্চা, সবমিলিয়ে দশ-বারোটা ফ্যামিলি এসেছিল। অনুরাধার তারও আগে বেশ কয়েকবার পুরীতে আসা। প্রথমবার বিয়ের পরপরই। তারপর থেকে আর শুধু দুজনে নয়, বন্ধু-বান্ধব, পাড়া-প্রতিবেশী নিয়ে একেবারে হৈ হৈ করে দল বেঁধে আসা। অথচ বিয়ের আগে নিজের পাড়া পড়শির বাইরে তেমন কিছুই চিনতো না অনুরাধা। সৈকত সেবার বলেছিল, ‘ভাগ্যিস আমার সঙ্গে বিয়েটা হয়েছিল তোমার, নাহলে তো সারাজীবন ওই চার দেওয়ালেই বন্দী থেকে কাটিয়ে দিতে।’ অনুরাধাও ওর ইঙ্গিতটাকে স্পষ্ট ধরতে পেরে জবাব দিয়েছিল,‘আর ভাগ্যিস আমার মত একটা বউ পেয়েছিলে। নাহলে তো তোমাকেও সারা জীবন অফিসের ওই ডেবিট-ক্রেডিটের হিসেব মিলিয়ে কাটাতে হত। তখন কি আর বিনা বেতনের এমন বিশ্বস্ত অ্যাসিস্ট্যান্টকে পেতে।’ আর কথা বাড়ায়নি সৈকত। কথাটা তো একেবারে মিথ্যে নয়। অনুরাধা না থাকলে কি ও এতটা ভরসা পেত কখনও? এভাবে যখন-তখন ছুটে আসা হত?

 

সেই অনুরাধা কি জানত, ওদের বিয়ের বছরটাও একদিন ঘুরতে ঘুরতে পঞ্চাশের দোরগোড়ায় এসে দাঁড়াবে। পঞ্চাশটা বছর! এতগুলি বছর কিভাবে যে একসঙ্গে কেটে যাবে। এতগুলি দিন। মাঝে মধ্যে ভাবতে বসলে বড় অবাক হয় অনুরাধার। আরও অবাক হয় নিজেকে নিয়ে। নিজের কথা ভেবে। গঙ্গা পেরিয়ে উত্তরপাড়া থেকে দমদমের এই বাড়িটায় উঠে আসা। সৈকতের চাকরির বয়স তখন সবে দু’মাস। জামসেদপুরে পড়াশুনো শেষ করতে না করতেই ব্যাঙ্কের চাকরিটা পেয়ে গিয়েছিল। ওদের বিদেশি কোম্পানির শাখাটা সবে তখন কলকাতায় খুলেছে। ঝা-চকচকে অফিস। সুযোগ-সুবিধার দিক থেকেও অন্যান্য ব্যাঙ্কগুলোর থেকে অনেকটা এগিয়ে। এমনকি বেতনও বেশ ভালো। বাবা-মা আর অপেক্ষা করতে চায়নি। একমাত্র ছেলে উচ্ছন্নে যেতে পারে ভেবেই হয়তো ভালো একটা মেয়ে দেখে গলায় ঝুলিয়ে দিতে চেয়েছিলেন। আর কেমন করে যেন সেই জামসেদপুরে, তাদের হাতে পৌঁছে গিয়েছিল অনুরাধার একটা ছবি। যা দেখে মত দিয়েছিল ওর বাবা-মা।
এরপর এক বিকেলে, মায়ের দেওয়া গয়না আর নতুন বেনারসী জড়িয়ে দমদমের বাড়িটায় এসে পৌঁছেছিল। ঘোমটার আড়াল থেকে সেদিন বাড়িটাকে ভালো করে বুঝতে চেয়েছিল। ঢুকতেই প্রথম নজরে নেমপ্লেটে গোটাগোটা অক্ষরে লেখা নামটা পড়েছিল অতনু দত্ত। সিঁড়ি ধরে উপরে উঠেছিল পরিচিতদের হাত ধরাধরি করে। তার পর দরজা পেরিয়ে ভিতরে ঢুকে দাঁড়াতেই মনে হয়েছিল, এটাই কি ওর নিজের জগৎ? এতদিনে কি সে পৌঁছতে পারল নিজের গন্তব্যে? যেখানে হাত বাড়িয়ে দাঁড়িয়ে ছিল সাজানো গোছানো নতুন এক জগৎ। যেখানে ও আর অতনু ছাড়া আর কেউ ছিল না। এমনকি শ্বশুড়-শাশুড়ি দিনকয়েকের মধ্যেই ফিরে যাওয়ার পর ওদের নতুন সংসার নিজের হাতে গোছাতে শুরু করেছিল অনুরাধা।
মাস ছয়েকের মধ্যেই সৈকতের প্রমোশন হয়েছিল দিল্লিতে। ওদের মেইন ব্রাঞ্চে। অতনু সেবার মজা করে বলেছিল, ‘বুঝলে অনু, এইসব ব্যাঙ্কগুলোতে চাকরির এই একটা সুবিধে। যতদিন চাকরি আছে, ততদিন যত পারো গুছিয়ে নাও। চাকরি গেলে অবশ্য ওরা কিন্তু আর তোমার দিকে ফিরেও তাকাবে না।’ অনুরাধা আঁতকে উঠেছিল কথাটা শুনে, ‘সেকি! তাহলে তোমার রিটায়ারমেন্টের পর আমাদের আর কোন ভবিষৎ থাকবে না?’
‘তা কেন। এই যে যতদিন চাকরি আছে, সব সুযোগ-সুবিধাই তো দিচ্ছে ওরা।’
সেদিনের পর থেকে অনুরাধার শুরু একটু একটু করে গুছিয়ে নেওয়া। সেই সঙ্গে নিজের শখ-আহ্লাদগুলিকে অল্প অল্প করে ডানা মেলতে শুরু করা।
এসবের মধ্যেই ঘটনাটা ঘটে গিয়েছিল আকস্মাৎ। ডাঃ হালদার স্পষ্টই জানিয়েছিল, মা হওয়া ওর পক্ষে সম্ভব নয়। সৈকতের পাশে বসে অনুরাধা তখন নীরব দর্শক। ভেতরটা যেন দুমড়ে মুচড়ে যাচ্ছিল। একসময় সেই নীরবতা ভেঙে শুধু একবারই জানতে চেয়েছিল, ‘কোনভাবেই কি সম্ভব নয় ডাক্তারবাবু?’ ডাঃ হালদার চশমাটা টেবিলে নামিয়ে রেখেছিলেন আরও নীরব হয়ে।
সেদিন থেকেই পৃথিবীটা কেমন বদলে যেতে শুরু করেছিল। অনুরাধার শরীর থেকে চনমনে ভাবটাই কোথায় হারিয়ে গিয়েছিল। হারিয়ে গিয়েছিল মনের ভেতরে সযত্নে লুকিয়ে রাখা এতদিনের স্বপ্নগুলো। যে স্বপ্ন ঘিরে নতুন জগৎ খুঁজে পাওয়ার যাত্রা শুরু হয়েছিল। লজ্জা, যন্ত্রণা, ভেতর থেকে একটা প্রবল হতাশাবোধ অনুরাধাকে ঘিরে ধরেছিল। দিন দিন কেমন নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছিল ক্রমশ। দিনগুলি কিভাবে যে পেরিয়ে যাচ্ছিল। এমনকি সৈকত দিল্লি থেকে ফিরে আসার পরেও। রাতে ঘুমতে গিয়ে কি একটা ব্যথা সবসময় গ্রাস করে নিচ্ছিল।
সৈকত চেয়েছিল অনুরাধাকে কদিনের জন্য উলুবেড়িয়ায় বাড়িতে রেখে আসতে। সেখানে পরিচিতজন, বাবার শরীরটাও ভালো যাচ্ছিল না। মায়ের হাই প্রেসার। কিন্তু অনুরাধা রাজি ছিল না কিছুতেই। বরং সেই মুহূর্তে সে সৈকতকে আরও প্রবলভাবে আকড়ে ধরতে চেয়েছিল। ডাক্তার হালদারই পরামর্শ দিয়েছিলেন কোথাও ঘুরিয়ে আনতে। অফিসের বন্ধুরাও বারবার বলছিল একই কথা। এই সময় বাইরে বেরলে নাকি বেশ পরিবর্তন আসে। সেই প্রথম পুরীতে আসা। হোটেলের রুমে ব্যাগটাকে ছুঁড়ে দিয়ে ওরা ছুটে গিয়েছিল সোজা বিচের ধারে। অনুরাধার কি হয়েছিল কে জানে, চোখের সামনে এত জল, দূর থেকে এত ছুটে আসা ঢেউ, সব যেন ওর পায়ের কাছে এসে গড়িয়ে পড়ছিল। আর শান্ত হয়ে ফিরে যাচ্ছিল। অবাক হয়ে দাঁড়িয়ে দেখেছিল অনুরাধা। ওর দুচোখ জুড়ে বিস্ময়।
চনমনে ভাবটা কিছুটা ফিরে আসছিল ক্রমশ। ডাঃ হালদার খুশি হয়ে বলেছিলেন, ‘দ্যাটস গুড।’ তার পর ওনার পরিচিত এক সাইক্রিয়াটিসের নাম ঠিকানা লিখে দিয়ে বলেছিলেন, ‘ওকে একবার দেখিয়ে নিন মিঃ দত্ত। আশা করি ভালো ফল পাবেন।’
সেবার পুরীর ট্যুরটা দারুণ ভাবে শেষ করেছিল ওরা। ফিরে আসবার পথে ট্রেন হাওড়ায় ঢোকার আগে থেকেই দলটা ভাগ হয়ে গিয়েছিল। যে যার সুবিধা মত নেমে গিয়েছিল নিজেদের গন্তব্যে। শেষে শুধু সৈকত আর অনুরাধা একটা ক্যাব নিয়ে দমদমে। রবিবার বিকেলে বাড়ি ফিরে সোমবার সকালে আবার অফিস জয়েন করেছিল সৈকত। আর ফোনটা এসেছিল সেদিন ঠিক দুপুরে।
টেলিফোনের ওপ্রান্তে মুখার্জিদার গলা। বলছিল, লাঞ্চ টাইমে খাবার খেতে খেতে টেবিলেই হঠাৎ পড়ে যায় সৈকত। সবাই ধরাধরি করে বসায়। চোখে মুখে জল দেয়। সেখান থেকে সোজা নার্সিংহোম।
এত দ্রুত ব্যাপারটা ঘটে যায়। এত তীব্র গতিতে। মুখার্জিদা গাড়ি পাঠাতে চাইলেও সেই মুহূর্তে এতটুকু সময়ও নষ্ট করতে রাজি ছিল না অনুরাধা। ফোনটা কেটে দিয়ে সোজা সিড়ি হাতড়ে নীচে নেমে এসেছিল। একটা ট্যাক্সি নিয়ে সোজা নার্সিংহোম। বেডে তখন সৈকত ঘুমচ্ছিল। একহাতে সুচ ফুটিয়ে বসানো সরু নলটা স্যালাইনের বোতলে থেকে ফোঁটা ফোঁটা গড়িয়ে পড়ছিল। অনুরাধার চোখ থেকেও গড়াচ্ছিল নোনা জল।
ডাক্তার এই সময়টুকুর মধ্যেই কতগুলি টেস্ট করিয়ে নিয়েছিল। সন্ধ্যের মুখে উঠে বসেছিল সৈকত। ধকলটা সামলে নিয়ে অনেকটা ভালো দেখাচ্ছিল ওকে। ঘুমের নেশাটাও অনেকটা কেটে গিয়েছিল। যদিও ডাক্তার রিপোর্টগুলো দেখে বলেছিল, আরও কটা দিন থেকে যাওয়া ভালো। আরও কয়েকটা টেস্টও করা প্রয়োজন। সৈকত তবু থাকতে চাইছিল না কিছুতেই। কাজপত্রে সই করে রাতেই বাড়ি ফিরে এসেছিল।
অনুরাধার চাপাচাপিতে আরও কয়েকটা টেস্ট। সমস্ত রিপোর্ট এসেছিল সপ্তাহখানেক পরে। সৈকতকে সঙ্গে নিয়ে সেবারও ডাক্তারের মুখোমুখি বসেছিল অনুরাধা। সেবারও শান্ত ভাবে প্রসঙ্গ ধরে এগিয়ে যাচ্ছিল ডাক্তার গুহ। অনুরাধা টের পাচ্ছিল, ওর পায়ের তলার মাটিটাই সরে যাচ্ছিল আবার। এতদিন যেটুকু ছিল, এবার সেটাও বেসামাল। যে কোন মুহূর্তে ধস নামবে। ধসে যাবে এই বেঁচে থাকা, এই জীবন। ধসে যাবে সৈকতকে নিয়ে গড়ে ওঠা দুজনের এই বাড়িটাই।
বাড়ি ফিরে আশ্চর্য রকম নীরব ছিল দুজনেই। কথারা সব হারিয়ে গিয়েছিল যেন। সেই নীরব মুহূর্তে অনুরাধার এলোমেলো ভাবনাগুলি ঠিক যেন সমুদ্রের ঢেউয়ের মত এসে আছড়ে পড়ছিল চারপাশে। যে ঢেউ চূর্ণ-বিচূর্ণ করে দিচ্ছিল সমস্ত ঘরটাকে।
ডাক্তার কথাগুলো ওর মাথার ভেতরে তখনও ঘুরপাক খাচ্ছিল ক্রমশ। ডাক্তার গুহ বলছিল, ‘এমনটা হওয়া প্রায় বিরল। আমাদের দেশে এমনকি বিদেশেও এই চিকিৎসার তেমন হদিশ নেই।’  আরও বলছিল, ‘এখন থেকে নিয়মিত মেডিসিন নেওয়ার পাশাপাশি প্রতি মাসে রুটিন চেক আপ জরুরি। তেমন হলে ব্লাডও নিতে হতে পারে।’
চাকরির মেয়াদ আরও দু-বছর ছিল সৈকতের। কিন্তু শেষের দিকে এসে অফিস করার সামর্থটাই হারিয়ে ফেলেছিল। জীবনটাকে নিয়ে কেমন হাঁপিয়ে উঠেছিল যেন। নুয়ে পরা শরীরটায় হাত দুটো অনবরত কেঁপে উঠত। চলতে ফিরতে সবকিছুতে অনুরাধার সাহায্যের প্রয়োজন হত। অফিসের সবাই পরামর্শ দিয়েছিল, ভিআরএস নিয়ে এবার বিশ্রাম নিতে। বলেছিল, ওদের তরফে সবরকম সাহায্যের আশ্বাস।
তার পর তো মাত্র কটা দিন। কাঁচে ঘেরা গাড়িটা ফিরে গেল সেই জ্যোৎস্না রাতে। ছড়িয়ে দিল আরও উঁচু লম্বা ঢেউ।
আরও একটা ঢেউ ছুটে এলো ওদের দিকেও। ছেলেটা আর মেয়েটাকে ভিজিয়ে দিয়ে ফিরে গেল মাঝ সমুদ্র বরাবর। এমনটা কি হওয়ার কথাই ছিল? এমন ঢেউ, এমন প্রবল জলোচ্ছ্বাস! এই ঢেউ। এভাবে আছড়ে পড়া। আবার শান্ত হয়ে ফিরে যাওয়া। শরীর-মনে লেগে থাকা ছাপ। ভিজিয়ে দেওয়া স্মৃতি।
ছেলেটা আর মেয়েটা এখন ভিজছে সেই জলে। অনবরত লুটোপুটি খাচ্ছে। অনুরাধা বিভোর হয়ে নিজেকে দেখছে।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগ থেকে আরোও
Theme Created By FlintDeOrient.Com
error: Content is protected !!
error: Content is protected !!