মুহাম্মদ সেলিম রেজা রচিত ধারাবাহিক থ্রিলার: গোলাপ কাঁটা - শৃণ্বন্তু মুহাম্মদ সেলিম রেজা রচিত ধারাবাহিক থ্রিলার: গোলাপ কাঁটা - শৃণ্বন্তু
সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৫:০২ পূর্বাহ্ন

মুহাম্মদ সেলিম রেজা রচিত ধারাবাহিক থ্রিলার: গোলাপ কাঁটা

আপডেট করা হয়েছে : শুক্রবার, ১৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৪, ৬:২৮ পূর্বাহ্ন
মুহাম্মদ সেলিম রেজা রচিত ধারাবাহিক থ্রিলার: গোলাপ কাঁটা

           গোলাপ কাঁটা

                            পঞ্চম পর্ব 

একেই বলে পরিস্থিতির প্যাঁচে পড়ে ল্যাজেগোবরে হওয়া। কোথায় প্রেয়সীর কোলে মাথা রেখে রসালাপ করবে? সে সূযোগ তো পেল-ই না, উল্টে অঘটনের ঘনঘটায় জেরবার অবস্থা।

মোবাইল হারানো থেকে শুরু করে সকাল পর্যন্ত ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলি পরপর সাজিয়ে ময়নাতদন্ত করতে গিয়ে আকাশের মাথায় কয়েকটি প্রশ্নের উদয় হল, রোজের হবু বর কীভাবে জানল আমি এখানে এসেছি? জলাশয়ে পাওয়া মৃত মেয়েটির পরিচয় কী? তাকে খুন করা হয়েছে, না সুইসাইড কেস? গুণ্ডা ছেলেটির হাতের বালা এখানে এল‌ কীভাবে? 

  • এমন নয়তো সব ঘটনা এক সুতোয় বাঁধা! কিন্তু কীভাবে? হাঁটতে হাঁটতে এইসব কথা ভাবছিল আকাশ।  প্রশ্নগুলির উত্তর খুঁজতে গিয়ে কোন সুরাহায় পৌঁছানোর আগে অপর এক জিজ্ঞাসা এসে চেপে ধরল, রোজের এরূপ আচরণের কারণ কী?

অভিমানে আহত মেয়েরা অদ্ভুত সব কাণ্ড ঘটিয়ে থাকে, অনেক সময় তা পাগলামির পর্যায় অতিক্রম করে প্রাণ সংশয়ের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। সেক্ষেত্রে বাঁধন ততটাই মজবুত হওয়া চায়।

  • রোজের সঙ্গে আমার সম্পর্কের গভীরতা কী সে উচ্চতায় পৌঁছাতে পেরেছে? আমার পক্ষ থেকে এতটুকু খামতি রাখিনি। ভালোবাসি একথা বারবার বলেছি, জানতে চেয়েছি তার মতামত। সে এড়িয়ে গেছে। কিন্তু কেন?

বর্তমান প্রজন্মের শিক্ষিত, মডার্ন কালচারে অভ্যস্ত মেয়ে লোকলজ্জা বদনামের ভয় গুটিয়ে থাকবে একথা বিশ্বাসযোগ্য নয়। বিয়ে ঠিক হয়েছে বলেই পারত? তা না করে….

  • আমার কারণে কালপ্রিটটা তার উপর মানসিক টর্চার করছে নাতো? প্রশ্নটা মাথায় আসতে বিচলিত বোধ করল আকাশ। সঙ্গে সঙ্গে পিছন ঘুরে বলল, আমু রোজ।
  • কোথায়?
  • সেটাইতো জিজ্ঞাসা, মেয়েটা গেল কোথায়? তুই জলাশয়ের ওদিকটা দেখ, আমি অ্যাকুরিয়ামের দিকে যাচ্ছি।
  • কিন্তু….
  • রোজকে খুঁজে পেতেই হবে। হ্যারিআপ ডিয়ার দেরি করা চলবে না।

আকাশের আচরণে অবাক না হয়ে পারল না আমজাদ। হতভম্ব হয়ে কিছুক্ষণ সেখানেই দাঁড়িয়ে থাকল। আকাশ‌ ততক্ষণে অনেকটা এগিয়ে গিয়েছে, তাকে আর কিছু জিজ্ঞাসা করার অবকাশ নেই। অগত্যা দেবুকে ডেকে নিয়ে ডানদিকে অগ্রসর হল।  

রাস্তাটি ডানদিকে অগ্রসর হয়ে জলাশয়ের পাড়ে গিয়ে মিশেছে। দ্রুত হেঁটে গিয়ে তারা সেখানে পৌঁছালো।

লাশ জলাশয় থেকে তুলে এনে ভ্যানরিক্সার উপর শুইয়ে রাখা হয়েছে। তরুণীর বয়স কুড়ি-একুশের বেশি হবে না। মুখ বাদে সারা শরীরে বিছিয়ে দেওয়া হয়েছে সাদা চাদর। দুজন পুলিশ কনস্টেবল রয়েছে পাহারায়, তা সত্ত্বেও ভ্যানরিক্সা ঘিরে ভিড় জমে উঠেছে। ভিড় ঠেলে সামনের সারিতে চলে এল তারা। 

একটু বাদে দশাসয় চেহেরার মাঝবয়সী এক ভদ্রলোক হন্তদন্ত হয়ে ছুটে এলেন। দেবীপুর ফরেস্ট রেঞ্জের বড়কর্তা তিনি, পরিচয় ব্যক্ত করে পুলিশ অফিসারকে উদ্দেশ্য করে বললেন, আর বলবেন না স্যার নাকালের একশেষ। হায়ার অথরিটির ডাকে রাজধানীর উদ্দেশ্যে বেরিয়েছিলাম ভোর ভোর। খবর পেয়ে মাঝ রাস্তা থেকে ফিরছি। পথ্যিমধ্যে রেল ক্রসিংয়ের জ্যামে আটকে পড়ায় দেরি হয়ে গেল।

  • দ্যাটস ওকে।
  • কী মনে হচ্ছে স্যার মার্ডার না সুইসাইড কেস?
  • মার্ডার।
  • মাই গুডনেস! আর্তনাদ করে উঠলেন রেঞ্জ অফিসার।
  • শ্বাসরোধ করে খুন করা হয়েছে মেয়েটিকে। গলায় আঙুল চেপে বসার ছাপ রয়েছে। তাছাড়াও কপালে, কানের গোড়ায় কালসিটে ‌দাগ পাওয়া গেছে। হয়তোবা খুন করার পূর্বে….। পোস্ট মর্টেম রিপোর্ট না পাওয়া পর্যন্ত নিশ্চিন্ত করে কিছুই বলা যাচ্ছে না।

এরপর পুলিশ অফিসার রেঞ্জারকে অপেক্ষা করতে বলে, উপস্থিত মানুষজনদের জিজ্ঞাসাবাদ করে মেয়েটির পরিচয় ইত্যাদি সমন্ধে ধারণা পেতে ব্রতী হলেন। কেউ কোন হদিস দিতে পারল না। সবার এক কথা, মেয়েটিকে তারা আগে কখনও এখানে দেখেনি।

অফিসার লাশ মর্গে পাঠানোর নির্দেশ দিয়ে রেঞ্জারকে ডেকে, এখানকার নিয়মকানুন নিয়ে আলোচনা করতে লাগলেন।

একটা লোক ভ্যানরিক্সার পাশে চুপ করে দাঁড়িয়েছিল। পুলিশ তাকে কিছু জিজ্ঞাসা করেনি, সেও আগ বাড়িয়ে কিছু বলতে যায়নি। রেঞ্জারের সঙ্গে ডায়ালগ শেষ করে পুলিশ অফিসার গাড়িতে উঠে বসলে তিনি এগিয়ে গেলেন, স্যার মেয়েটিকে আমি গতকালের শেষ বাস থেকে নামতে দেখেছি।

  • এতক্ষণ একথা বলেননি কেন?
  • আসলে স্যার, মানে….
  • পুলিশি ঝামেলার ভয়ে?

গাড়ি থেকে নেমে দাঁড়ালেন অফিসার। ডায়েরি বের করে লোকটির নাম-ধাম-পেশা, ইত্যাদি টুকে নিলেন। তারপর জিজ্ঞাসা করলেন, মেয়েটি আপনার দোকানে আসে তখন‌ কী ওর সঙ্গে কোন লাগেজ, আই মিন ব্যাগট্যাগ কিছু ছিল?

  • দুটো ব্যাগ ছিল মেয়েটির সঙ্গে। একটা পিঠে আর একটা হাতে টানা ট্রলি ব্যাগ।
  • ব্যাগগুলো কী রঙের ছিল মনে আছে আপনার?

সঙ্গে সঙ্গে লোকটি কোন উত্তর দিল না। একটু সময় নিয়ে ভেবেচিন্তে বলল, ট্রলি ব্যাগের রং ডিপ গ্রীন। আর পিঠেরটা….! সম্ভবত ছাই কালারের, সঠিক মনে করতে পারছি না স্যার।

  • আর কিছু?
  • আর তেমন কিছু আমার বলার নেই। তবে….
  • বলুন।
  • ট্রলি ব্যাগের গায়ে ইংরেজি হরফে লেখা আছে আর-ও-এস-ই, রোজ।
  • এ আর নতুন কী! যে কোন প্রোডাক্টের প্যাকেটের গায়ে কোম্পানির লোগো সাঁটা থাকে। হতে পারে ওটা রোজ নামের কোম্পানির তৈরি ব্যাগ।
  • না হবার কিছু নেই। তবে কি জানেন স্যার….
  • হ্যাঁ বলুন।
  • দীর্ঘদিন এই ব্যবসার সঙ্গে জড়িয়ে আছি স্যার। অভিজ্ঞতা থেকে বলছি,যে কোন কোম্পানি লোগো দিতে ধাতব স্টিকার ব্যবহার করে, কখনই সূতো দিয়ে খোদাই করা থাকে না। 
  • হুম!

দোকানির মাল বেচা নিয়ে গরজ। খদ্দের কোথেকে আসছে, কী পরে আছে বা তার সঙ্গে কী সব জিনিসপত্র আছে, লক্ষ্য করার দায় নেই। তবুও তিনি খেয়াল করেছেন। বিশেষ কোন কারণ ছিল কী, নাকি যুবতী সুন্দরী বলে তার প্রতি আকর্ষিত হয়েছিলেন? অফিসার জানতে চাইলে লোকটা বলল, চেহেরা দেখে কী আর পেট ভরবে স্যার? আসলে সে সময় দোকানে অন্য কাস্টমার ছিলো না।

  • ওহ! 
  • এক বোতল বডি স্যাম্পু আর একটা স্পঞ্জ নিয়েছিল সে।
  • তারপর?
  • পয়সা মিটিয়ে দিয়ে ফরেস্ট বাংলোর দিকে হেঁটে যাচ্ছিল, তখন লেখাটা চোখে পরে আমার।
  • আপনার দোকান থেকে বাংলো কাছেই। মেয়েটিকে বাংলোয় ঢুকতে দেখেছিলেন নিশ্চয়?
  • স্যরি স্যার। দূরত্ব বেশি না হলেও আমার দোকান থেকে বাংলো যাবার পথে ছোট একটা বাঁক পরে, সরাসরি বাংলো দেখা যায় না।
  • ওকে, থ্যাংক য়ু। অফিসার গাড়িতে উঠে বসলেন। তারপর ড্রাইভারকে নির্দেশ দিলেন, ফরেস্ট বাংলোয় চল।

বেশকিছু উৎসুক মানুষ পুলিশ অফিসারের সঙ্গে দোকানির কথপোকথন শুনছিল। দেবু-রা ভিড়ে মিশে ছিল। পুলিশের জিপ চলে যেতে সেখান থেকে সরে এসে দেবু বলল, কি বুঝলি?

  • মে বী আকাশ যার পিছনে দৌড়াচ্ছে সে তার কাঙ্খিত রোজ নয়। একথা বলার পর আমজাদ হঠাৎ উদগ্রীব হয়ে উঠে বলল, দেবু তাড়াতাড়ি আয় আমার সঙ্গে। আকাশকে আটকাতে হবে।

বেলা হয়েছে অনেকটা। হোটেল থেকে বেরিয়ে এসে পর্যটকরা ঘুরতে শুরু করেছে। রাস্তার ধারের স্টলগুলো পসরা সাজিয়ে বসেছে – চা-বিস্কিট, ঘুগনি-পরোটা, মুড়ি-তেলেভাজা। ঘুরছে ফেরিওয়ালারা, কারো কাছে আছে ভাজা বাদামের ডালি, কারো কাছে ঝালমুড়ির টিন। ছোটদের খেলনাপাতি নিয়ে ঘুরতে দেখা গেল দুজনকে। রাস্তা এখন আর ততটা ফাঁকা নেই। দেখেশুনে পাশ কাটিয়ে এগোতে হচ্ছে।

অ্যাকুরিয়ামের কাছাকাছি এক ফেরিওয়ালা এগিয়ে এল, টাটকা ভাজা বাদাম আছে। দেব বাবু?

  • লাগবে না। মানা করে দিয়ে আমজাদ পাশ কাটিয়ে বেরিয়ে আসতে‌ চাইলে লোকটি পথ আগলে দাঁড়াল। তারপর আমজাদের কানের গোড়ায় মুখ লাগিয়ে ফিসফিস করে বলল, আকাশের বড়ো বিপদ। বন্ধুকে বাঁচাতে চান তাহলে এক্ষুনি জঙ্গলের বাইরে কুঠিবাড়িতে ছুটে যান।

আকাশের মাথায় যেন হাতুড়ির ঘা পড়ল। প্রথমত তার মুখ দিয়ে কোন কথা সরল না। তারওপর এই মুহূর্তে ঠিক কী করণীয় স্থির করতে না পেরে ভীষণ অসহায় বোধ করে সে। এই অবসরে ফেরিওয়ালা দ্রুত হেঁটে গিয়ে অ্যাকুরিয়ামের পিছনে অদৃশ্য হয়ে গেল।

পরের পর্বে…

গল্পকার: মুহাম্মদ সেলিম রেজা


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগ থেকে আরোও
Theme Created By FlintDeOrient.Com
error: Content is protected !!
error: Content is protected !!