সিলভিয়া প্ল্যাথ (Sylvia Plath, ১৯৩২-১৯৬৩) বিংশ শতাব্দীর আমেরিকান সাহিত্যের এক অন্যতম লেখিকা ও কবি। এই লেখিকা তার সংক্ষিপ্ত জীবনে খুব বেশি না লিখে গেলেও তার স্বীকারোক্তি ভিত্তিক কবিতা (confessional poetry) আমেরিকান সাহিত্যে এক নতুন ধারার প্রবর্তন করে। ১৯৫০-৬০এর দশকে নিজের জীবনের ব্যাক্তিগত ও পারিপার্শ্বিক অভিজ্ঞতা, অশান্তি, আঘাত, মানসিক অসুস্থতা এবং আত্মঘাতী ক্রিয়াকলাপ নিজের লেখায় প্রকাশ করার এই নতুন ধারা সাহিত্যের পাতায় সেই সময়ে আমেরিকার বিক্ষিপ্ত যুবসমাজের উথালপাতাল মানসিকতার এক ঐতিহাসিক দলিল হয়ে রয়েছে। বিংশ শতাব্দীর মধ্যভাগে দ্বিতীয় বিশ্বমহাযুদ্ধ, জার্মানিতে গণহত্যা, পৃথিবীর দুই পরাশক্তির (রাশিয়া ও আমেরিকা) স্নায়ুযুদ্ধ এবং পারমাণবিক অস্ত্রের প্রসার স্বভাবতই যুবসমাজকে ভীষণ ভাবে হতাশ ও মরিয়া করে তোলে। সিলভিয়ার মৃত্যুর পর প্রকাশিত The Colossus and Other Poems কবিতা সঙ্কলনটিতে এই ধারার লেখা ১৯৮২ সালে Pulitzer Prize for Poetry পুরস্কারে সম্মানিত হয়।
সিলভিয়া ১৯৩২ সালে Massachusetts ষ্টেটের বস্টন শহরে জন্মগ্রহণ করেন। তার জার্মান কীটতত্ত্ববিদ পিতা Otto Plath বস্টন ইউনিভারসিটির প্রফেসর ছিলেন। তিনি ডায়াবিটিস রুগী, আর ধার্মিক বিশ্বাসের কারনে চিকিৎসায় বিরূপ ছিলেন। সিলভিয়ার যখন আট বছর বয়স, সেই রোগের কারণেই Ottoর মৃত্যু হয়। জীবনের শেষ লেখা Ocean 1212-W বইটিতে সিলভিয়া নিজের জীবনের প্রথম নয় বছর সম্পর্কে মন্তব্য করেন, “these nine years were sealed themselves off like a ship in a bottle -beautiful, inaccessible, obsolete, a fine, white flying myth”।
সিলভিয়ার আট বছর বয়েসে তার প্রথম কবিতা Boston Herald পত্রিকার কিশোর বিভাগে প্রকাশিত হয়। এই সময় থেকেই তার কবিতা বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশিত হতে শুরু করে। এছাড়া ছবি আঁকাতেও তার হাত খুব ভাল ছিল। এগারো বছর বয়েস থেকে সিলভিয়া ডায়ারি লেখা শুরু করেন। ১৯৫০ সালে স্কুলের পড়াশোনা শেষ করে তিনি Smith Collegeএ ভর্তি হন। এই সময় Christian Science Monitor ম্যাগাজিনে তার লেখা পাঠকের বিশেষ দৃষ্টি আকর্ষণ করে।
কলেজ জীবনে পড়াশোনায় সাফল্যের সঙ্গে সঙ্গে সিলভিয়ার লেখার কাজ দ্রুত এগিয়ে যায়। কলেজের Smith Review পত্রিকার সম্পাদিকা হিশেবে তার কাজ প্রশংসা অর্জন করে। শুধু তাই নয়, কলেজের তৃতীয় বছরে সিলভিয়া প্রথম সারির Mademoiselle ম্যাগাজিনের আমন্ত্রিত সম্পাদকের শহরবাসের তিক্ত অভিজ্ঞতা তিনি তার বিখ্যাত উপন্যাস The Bell Jarএ লিপিবদ্ধ করে যান।
যৌবনের বেশির ভাগ সময় সিলভিয়া মানসিক বিষণ্ণতায় কষ্ট পেয়েছেন। কলেজে পড়াকালীন তার প্রিয় বিভিন্ন খ্যাতনামা লেখক ও কবির সাথে যোগাযোগ না করতে পেরে তিনি পরপর দুবার আত্মহত্যার চেষ্টা করেন। প্রথমবার তার প্রিয় কবির সাথে দেখা করতে না পেরে তিনি তার পায়ের শিরা কেটে ফেলেন এবং দ্বিতীয়বার Harvard ইউনিভারসিটিতে আর এক বিখ্যত কবির সেমিনারে আমন্ত্রিত না হওয়ার কারণে তিনি লুকিয়ে তার মায়ের ঘুমের ওষুধ খেয়ে প্রাণহানির চেষ্টা করেন। এই কারণে তাকে বার কয়েক electroconvulsive থেরাপি নিতে হয়। আত্মহত্যার এই প্রচেষ্টার পর সিলভিয়া লেখেন, “I blissfully succumbed to the whirling blackness that I honestly believed was eternal oblivion”। এইসব দুর্ঘটনার পর সিলভিয়াকে McLean হাসপাতালে বেশ কয়েকবার ইনসুলিন আর ইলেকট্রিক শকও নিতে হয়। এই হাসপাতালের বিধ্বংসী অভিজ্ঞতাও তার The Bell Jar বইটিতে পাওয়া যায়।
মানসিক রোগের কবল থেকে সাময়িক মুক্তিলাভ করার পর সিলভিয়া কলেজে ফিরে আসেন এবং তার থিসিস (The Magic Mirror: A Study of the Double in Two of Dostoyevsky’s Novels) সম্পূর্ণ করেন। সর্বোচ্চ সম্মান নিয়ে কলেজ পাশ করার পর Fulbright স্কলারশিপ নিয়ে তিনি Cambridge ইউনিভার্সিটির মেয়েদের Newnham কলেজে পড়তে যান। এই সময় তিনি লেখার কাজে পুরোপুরি মনোনিবেশ করেন এবং ইউরোপের বিভিন্ন দেশ পরিদর্শন করেন। ১৯৫৬ সালে সিলভিয়া নামকরা কবি Ted Hughesকে বিবাহ করেন। বিবাহিত জীবনের প্রথমভাগে দুজনই জ্যোতিষশাস্ত্র ও অতিপ্রাকৃত জীবন নিয়ে নানা পরীক্ষা নিরীক্ষা চালান।
১৯৫৭ সালে এই দম্পতি আমেরিকায় ফিরে আসেন এবং সিলভিয়া Smith কলেজে পড়ানোর চাকরি নেন। কিন্তু কাজের চাপে লেখালেখির কাজ ব্যহত হয়ওার কারণে তারা বস্টন শহরে চলে আসেন এবং সিলভিয়া হাসপাতালের মানসিক বিভাগে এক সামান্য কাজ নিয়ে আবার তার লেখালেখির কাজ শুরু করেন। এই সময়ের লেখায় সিলভিয়া তার মানসিক বিষণ্ণতা এবং আত্মহত্যার চেষ্টা খোলাখুলি ভাবে এক মহিলার দৃষ্টিকোণ থেকে আলোচনা করেন। তার কথায়, “I learned to be true to my own weirdnesses” আর এই কারণেই তার লেখায় নিজের জীবনের গভীর নিজস্ব অনুভূতির এক যন্ত্রণাকর স্বীকারোক্তি বারবার প্রতিফলিত হয়েছে।
১৯৬০ সালে লন্ডন শহরে বসবাস কালীন সিলভিয়ার প্রথম কবিতা সঙ্কলন The Colossus and Other Poems প্রকাশিত হয়। এরপর ১৯৬১ সালে তার একমাত্র আত্মজীবনীমূলক উপন্যাস The Bell Jar প্রকাশ পায়। দুর্ভাগ্যবশত স্বামী Ted অন্য এক মহিলার প্রেমে আসক্ত হয়ে পড়ায় এরপর তাদের বিবাহ জীবনের সমাপ্তি ঘটে। এই সময় সিলভিয়া আর একবার গাড়ির দুর্ঘটনা ঘটিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন। দুই সন্তানকে নিয়ে একা লন্ডন শহরের জীবন, অর্থাভাব, তীব্র শীতের দাপট, জীর্ণ ফ্ল্যাটে তার অবহেলিত জীবন, নিদ্রাহীন রাত্রি, সব নিয়ে সিলভিয়া আবার তার মানসিক অসুস্থতার শিকার হন। বার কয়েক আত্মহত্যার প্রচেষ্টার পর তিনি ঘুমের কড়া ওষুধ খেয়ে মাত্র ৩০ বছর বয়েসে মারা যান। ১৯৭২ সালে সমালোচক Al Alvarez তার আত্মহত্যার ওপর লেখা Savage God বইটিতে লেখেন, “Plath’s suicide was an unanswered cry for help. The failure to recognize Plath’s depression and offer her emotional support is shameful।” ইংল্যান্ডের Heptonstall শহরে সিলভিয়ার কবরের শীর্ষদেশে স্থাপিত শ্বেতপাথরের ফলকে ভাগবতগীতা থেকে নেওয়া একটি লাইন খোদিত আছে, “Even amidst fierce flames the golden lotus can be planted।” এই অসামান্য বুদ্ধিমতী মানসিক রোগে আক্রান্ত মহিলা কবির সাথে শুধু এক স্বর্ণপদ্মেরই তুলনা করা যায়।
লেখিকা জীবনে সিলভিয়ার নয়টি বই প্রকাশিত হয়। তার আত্মজীবনী মূলক উপন্যাস The Bell Jar ছাড়া Crossing the Water (কবিতা সঙ্কলন), Jonny Panic (ছোটগল্প সঙ্কলন), The It-Doesn’t-Matter Suit and Other Stories (গল্প সঙ্কলন), আর Winter Trees (ফিকশন) বিশেষ ভাবে উল্ল্যেখযোগ্য। তার মৃত্যুর পর Ariel নামের কবিতা সঙ্কলনটি প্রকাশিত হয়।
এবার সিলভিয়ার লেখার কথায় আসি। The Colossus and Other Poems সঙ্কলনটিতে ৪০টি কবিতা রয়েছে। আমার প্রিয় দুটি কবিতার উল্লেখ করব এখানে। প্রথম কবিতা The Colossus.। এই কবিতাটি সিলভিয়া তার পিতার মৃত্যুর পর লেখেন।
I shall never get you put together entirely,
Pieced, glued, and properly jointed.
Mule-bray, pig-grunt and bawdy cackles
Proceed from your great lips.
It’s worse than a barnyard.
…….
A blue sky out of the Oresteia
Arches above us. O father, all by yourself
You are pithy and historical as the Roman forum.
I open my lunch on a hill of black cypress.
Your Fluted bones and acanthine hair are littered.
কবি এখানে The Colossus of Rhodes, এক বিশাল গ্রীক সূর্য দেবতা Heliosএর মূর্তির কথা বলছেন যা ২২৪ সালে এক ভূমিকম্পে ভেঙ্গে চুরমার হয়ে যায়। তিনি এই মূর্তির ভেঙ্গে পড়ার সাথে তার নিজের মৃত পিতার সঙ্গে সম্পর্কের চুরমার হয়ে যাওয়ার তুলনা করেছেন।
আমার দ্বিতীয় প্রিয় কবিতা Two Views of a Cadaver Room।
…..
The day see visited the dissecting room
They had four men laid out, black as burnt turkey,
Already half unstrung. A vinegary fume
Of the death vats clung to them;
The white-smocked boys started working.
The head of his cadaver had caved in,
And she could scarcely make out anything
In that rubble of skull plates and old leather.
A sallow piece of string held it together.
In their jars the small-nosed babies moon and glow.
He hands her the cut-out heart like a cracked heirloom.
কবিতার সঙ্গে জীবনানন্দর “লাশকাটা ঘরে” কবিতার মিল রয়েছে।
সিলভিয়ার অন্যান্য কবিতার ঝাঁপি থেকে আরও দুটি কবিতার কথা বলা যাক। Tulip কবিতায় কবি তার দীর্ঘ হাসপাতাল জীবনের বর্ণনা দিয়েছেন এই ভাবেঃ
The tulips are too excitable, it is winter here.
Look how white everything is, how quiet, how snowed-in.
I am learning peacefulness, lying by myself quietly
As the light lies on these white walls, this bed, these hands.
I am nobody; I have nothing to do with explosions.
I have given my name and my day-cloths up to the nurses
And my history to the anesthetist and my body to surgeons.
The tulips are too red in the first place, they hurt me.
Even through the gift paper I could hear them breathe
Lightly, through their white swaddling, like an awful baby.
Their redness talks to my wound, it corresponds.
They are subtle: they seem to float, though they weigh me down,
Upsetting me with their sudden tongues and their color,
A dozen red lead sinkers round my neck.
কবির ভয় হাসপাতালে দিয়ে যাওয়া টিউলিপ ফুল নিয়ে, কারণ সেই লাল রঙের ফুল তাকে তার ক্ষতর কথা মনে করিয়ে দেয়, তার মনে হয় কাগজের মোড়কের আড়ালে তারা শ্বাস ফেলছে, অপেক্ষা করছে কখন তার গলায় ভারী লাল পাথরের মালা হয়ে তাকে মৃত্যুর অতল আঁধারে টেনে নিয়ে যাবে।
কম বয়েসে পিতার মৃত্যু সিলভিয়াকে ভীষণ নাড়া দিয়েছিল। পিতার Winthrop Cemeteryর কবর পরিদর্শনের পর তিনি Electra on Azalea Path কবিতাটি লেখেন। Otto তার ডায়াবিটিস ক্ষত বিষাক্ত হয়ে যাবার ফলে মারা জান। সিলভিয়া কবিতার শেষে বলছেন
…..
The stony actors poise and pause for breath.
I brought my love to bear, and then you died.
It was the gangrene ate you to the bone
My mother said; you died like any man.
How shall I age into that state of mind?
I am the ghost of an infamous suicide,
My own blue razor rusting in my throat.
O pardon the one who knocks pardon at
Your gate, father – your hound-bitch, daughter, friend.
It was my love that did us both to death.
এবার আমরা সিলভিয়ার The Bell Jar বইটির কথায় আসি। গল্পের নায়িকা Esther Greenwood কলেজের ছাত্রী, সে স্বপ্ন দেখে কবি হবার। এক গ্রীষ্মের ছুটিতে এক মাসের ইন্টার্নশিপ নিয়ে সে নিউ ইয়র্ক শহরে Ladies’ Day magazineএর আমন্ত্রিত সম্পাদিকার কাজ নেয়। কিন্তু Estherএর নিজের ব্যক্তিগত পরিচয় আর সামাজিক চলাবলার সাথে শহরের সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রার বিবাদের কারণে তার সেই স্বপ্ন কিভাবে অপূর্ণ থেকে যায় তা আমরা জানতে পারি এই বইটিতে। গল্পে Estherএর মানসিক অসুস্থতার সাথে সিলভিয়ার জীবনের ভীষণ মিলে রয়েছে। বইটি ১৯৭১ সালে আমেরিকায় প্রথমবার আত্মপ্রকাশ করে এবং প্রকাশের সাথে সাথেই Best Seller তালিকার শীর্ষে উঠে যায়। The Bell Jar এখন বহু শিক্ষায়তনে পড়ানো হয়, আর এই বইয়ের সাথে আমার পরিচয় হয় সেইভাবেই।
গল্পের মুখ্য চরিত্র ১৯ বছরের কলেজের ছাত্রী Esther Greenwood বস্টন শহর থেকে নিউ ইয়র্ক শহরে আসে এক নামি ম্যাগাজিনের আমন্ত্রিত সম্পাদিকার কাজ নিয়ে। স্বল্প সময়ের মধ্যেই অফিসের সহকর্মীদের ফ্যাশন, অলস মনোভাব, এবং বড় শহরের মানুষের জীবনধারা সব কিছুই Estherকে নিরুৎসাহ করে দেয়। তার কাজেও সে তেমন প্রেরণা পায় না। এর কারণে অশান্তি আর উদ্বেগ তাকে ক্লান্ত করে ফেলে। আর এক ইন্টার্ন Doreen যদিও একটু অন্যরকম, তার হাবভাব বা ফ্যাশনের সাথে তার মেলে না। একমাত্র সান্তনা Philomena Guinea, এক খ্যাতনামা লেখিকা জিনি Estherকে তার কলেজে পড়ার সুযোগ করে দিয়েছেন।
অফিসের কাজে Estherএর যাদের সংস্পর্শে আসতে হয় তারাও তাকে বিরূপ করে। যেমন Doreen আর Esther এক বিখ্যাত রেডিও কথকের ইন্টারভিউ নিতে গেলে সেই কখক সরাসরি তাদের সাথে ডেট করার প্রস্তাব দেয়। Esther তাতে রাজি না হলেও Doreen কথকের সাথে ডেটে যায়। আর এক বার অফিসের পার্টিতে খাদ্যে বিষক্রিয়ার অভিজ্ঞতা Estherকে আরও হতোদ্যম করে দেয়। গল্পে এই সময় Esther তার পুরনো বয়ফ্রেন্ড Buddyর কথা ভাবে, এবং বারবার আনমনে মৃত্যু, মানুষের হিংস্রতা, আর তৎকালীন সমাজে নারীর ভূমিকা নিয়ে চিন্তা করে। ইন্টার্নশিপের শেষদিন এক ক্লাবের পার্টিতে তার সাথে Marco নামের এক ধনী পেরুভিয়ান পুরুষের পরিচয় হয় যে তার সাথে শুধু অপব্যবহারই করে না, তাকে রেপ করার চেষ্টাও করে। ক্রুদ্ধ Esther ঘুষি মেরে তার নাক ভেঙ্গে দিয়ে হোটেলে ফিরে আসে আর তার সব ফ্যাশনের জামাকাপড় ছাতের থেকে রাস্তায় ফেলে দেয়।
Esther আবার Massachusettsএ তার বিধবা মার কাছে ফেরত চলে আসে। এই সময় তার আশা ছিল যে সে এক বিখ্যাত কবির ক্লাসে পড়ার সুযোগ পাবে, কিন্তু তার মা জানায় যে Esther সেই ক্লাসের জন্য মনোনীত হয়নি। গ্রীষ্মের বাকি দুমাস সে এক উপন্যাস লেখার চেষ্টা করে, কিন্তু সেকাজ তার তেমন এগোয় না। কোনদিকেই সাফল্যের মুখ না দেখে সে কলেজে থেকে বেরিয়ে কি করবে এই চিন্তায় দিশেহারা হয়ে যায়। সে মাতৃত্বের বোঝা ঘাড়ে নিতে চায় না আবার অফিসে মহিলা টাইপিস্টের কাজও করতে চায় না। ক্রমে Esther মানসিক বিষণ্ণতার কবলে পড়ে, তার রাতের ঘুম হারায়। এলাকার মানসিক রোগের ডাক্তারের পরামর্শে electroconvulsive থেরাপি নেওয়ার পর তার মানসিক অবস্থা আরও খারাপ হয়ে পড়ে।
এরপর Esther প্রথমে সমুদ্রে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করে; সেকাজে সফল না হলে মাকে চিঠিতে “আমি বহুদূরে কোথাও যাচ্ছি” লিখে সে বাড়ির নিচে মদের অন্ধকার সেলারে লুকিয়ে বেশকিছু ঘুমের ওষুধ খায়। প্রথমে গুজব রটে Esther নিখোঁজ হয়েছে; কিছুদিন বাদে তাকে আবিষ্কার করার পর আবার তাকে মানসিক হাসপাতালে পাঠান হয়। এই সময় Philomena তাকে এক নামকরা মহিলা ডাক্তার Nolanএর কাছে নিয়ে আসে। তার বেশি ডোজে ইনসুলিন দিয়ে শক থেরাপির বর্ণনা দেবার সমর সিলভিয়া Estherএর অবস্থা বেলজারে চাপা দেওয়া ইঁদুরের শ্বাস নেবার জন্য আকুল ছটফটানির সাথে তুলনা করেছেন। চিকিৎসায় সামান্য ফল হবার পর Esther সেই বেলজার থেকে মুক্তি পায়। হাসপাতালে থাকার সময় Estherএর সাথে Joan Gillingএর পরিচয় হয় যে একসময়ে Buddyর বন্ধু ছিল। Estherকে সমকামী Joan তার সঙ্গী হবার প্রস্তাব করলে সে আরও বিমুখ হয়ে যায়।
হাসপাতালে Esther ডাক্তার Nolanকে জানায় যে সে পুরুষের সঙ্গ চায় কিন্তু গর্ভবতী হয়ে চায় না। তার কথামত ডাক্তার তাকে গর্ভনিরোধের জন্য প্রস্তুত করে দেন। পরিচিত এক পুরুষের সাথে সহবাসের পর Esther আবার অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়। এই সময় সে খবর পায় যে এক বদ মানুষের সাথে সহবাসের পর গর্ভবতী Joan আত্মহত্যা করেছে। এর পর পুরনো বন্ধু Buddy হাসপাতালে তাকে দেখতে এলে Esther তাকে জিজ্ঞেস করে সে কি করে Joan ও Esther দুজনের সাথেই প্রেমের অভিনয় করেছে? Buddy উত্তর দেয় যে সে মানসিক রুগী Estherকে কখনোই বিয়ে করতে রাজি নয়। গল্পের শেষে Buddyর উত্তরের পর আশ্বস্থ Esther ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করে আবার স্কুলে ফেরত যাবার জন্য প্রস্তুত হয়।
সমালোচকদের মতে “The Bell jar addresses the question of socially acceptable woman identity. It examines Esther’s quest to forge her identity, to be herself rather than what others expect her to be।” প্রকৃতপক্ষে বইটি সিলভিয়ার আত্মকাহিনী, ঠিক তার মতই “Esther feels she is a prisoner to domestic duties and she fears the loss of her inner self”।
সিলভিয়া প্ল্যাথ সম্পর্কে লিখতে গিয়ে শুধু তার মানসিক বিপর্যয়ের কথা বললে তার প্রতি অবিচার করা হবে। এই লেখিকার কোমল মনেরও পরিচয় পাওয়া যায় তার বিশেষ কয়েকটি লেখায়। এই ধরনের লেখার তালিকার মধ্যে সব চেয়ে উল্লেখযোগ্য হোল তার ছোটদের জন্য লেখা It-Doesn’t-Matter Suit নামের গল্পটি। এই অপূর্ব গল্প সিলভিয়া তার প্রথম সন্তানের জন্মের ঠিক আগে লিখেছিলেন। খ্যাতনামা জার্মান চিত্রকর Rotraut Susanne Bernerএর আঁকা ছবিতে ভরপুর এই ছোটদের বইটি সত্যিই মন ভোলায়। গল্পের মুখ্য চরিত্র Winkelburg শহরের সাত বছর বয়েসের ছেলে Max Nix। সাত ভাইয়ের এক ভাই Max সব সময় স্বপ্ন দেখে এক এমন স্যুটের যেটা সে সব অনুষ্ঠানেই পরে যেতে পারবে (it-doesn’t-matter suit)। সে ভাবে স্যুট পরে যখন সে ঘুরে বেড়াবে, গলির কুকুর বেড়াল সব তার পেছন পেছন যাবে, রাস্তায় সবাই তাকে দেখবে। একদিন হঠাৎ কোথা থেকে পোস্টে এক প্যাকেজ এলো যার মধ্যে রয়েছে এক সুন্দর চোখজুড়ান ঝকঝকে নতুন হলুদ রঙের it-doesn’t-matter স্যুট। Maxএর কোন ভাইদের গায়ে সেই স্যুট ফিট করে না। বেঁটে গোলগাল ভাই Johannএর জন্য মা এদিক ওদিক টেকে বোতাম ঘর সরিয়ে কোনমতে তার গায়ে ফিট করান। আর এক ভাই Ottoর কাঁধ পাতলা, তাই মা আবার সেলাই বদলে কোনমতে সেই স্যুট Ottoর গায়ে ফিট করালেন। সবার শেষে Maxএর পালা, তার উচ্চতা সব চেয়ে কম আর সে বেশ রোগা। কিন্তু মার হাতের সেলাইয়ের গুণে সেই স্যুট Maxকে দারুণ ফিট করে গেলো। এরপর Max আর সেই স্যুট গা থেকে নামায় না, সে স্কুলে যায় স্যুট পরে, মাছ ধরতে যায় স্যুট পরে, দুধ দোয়ায় স্যুট পরে, শিকার করতে যায় স্যুট পরে! অবাক কথা সবাই সবখানে Maxএর স্যুটের ভূয়সী প্রশংসা করে। Max ঘোষণা করলো সে এই স্যুট রোজ পরবে। স্কুলে Max সোজা হয়ে হাঁটে, ক্লাসের সবাই ভাবে তারা যদি এমন একটা স্যুট পেত। বস্তুত, সারা Winkelburg শহরে কারোরই এই রকম সুন্দর হলুদ স্যুট ণেই. কিন্তু IT DOESN”T-MATTER!
দিন কয়েক বাদে Max শিয়াল ধরতে গেছে জঙ্গলে। ঝোপের মধ্যে বসা শিয়াল তাকে একটা মোটাসোটা হলুদ মুরগি ভেবে কাছে আসতেই Max তাকে ধরে ফেলে। এমন কি কোটের একটি বোতাম ছিঁড়ে ঘাসের ওপর পড়ে গেলেও Max সে বোতাম কুড়িয়ে পেলো। শীতে জমে যাওয়া হ্রদের বরফের নিচে মাছ ধরতে গেলে মাছেরা সেই হলুদ রং দেখে তার কাছে আসে আর Maxএর অনেক মাছ ধরা হয়ে যায়। বৃষ্টির মধ্যে সাইকেল চালানোর সময় বৃষ্টির একফোঁটা জল সেই স্যুটে লেগে থাকে না। আর পাড়ার কুকুর বেড়ালগুলো পোষা জন্তুর মত Maxএর পেছন পেছন ঘোরে। এই সব কিছুর কারণ Maxএর সেই অদ্বিতীয় হলুদ রঙের IT DOESN’T-MATTER SUIT! গল্পটিতে সিলভিয়া মানুষের চারপাশে সবার মনোমত মতামত পাবার তীব্র আকাঙ্ক্ষার দিকে ইঙ্গিত করেছেন – তার নিজের জীবনের আত্মসচেনতার অন্তরদ্বন্দ এই লেখায় অপরূপ রূপে প্রতিফলিত হয়েছে।
স্বল্প জীবনের পরিসরে সিলভিয়া প্ল্যাথ বেশি কিছু লিখে যান নি। তা সত্ত্বেও এই প্রতিভাবান লেখিকা বিংশ শতাব্দীর আমেরিকান সাহিত্যের এক অন্যতম আসনে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। সমালোচক Nige Tassellএর কথায় “What horrified Sylvia most is the idea of being useless: well-educated, brilliantly promising and fading out into an indifferent middle-age”। এই অনুভূতির গভীর বেদনা সিলভিয়াকে আজীবন তাড়া করে ফিরেছে, তার লেখায় সে কথা তিনি বারবার লিখে গেছেন।