প্রাবন্ধিক প্রদীপ মাশ্চরকের লেখা: আমেরিকান সাহিত্য ও সাহিত্যিক।। একাদশ পর্ব।। - শৃণ্বন্তু প্রাবন্ধিক প্রদীপ মাশ্চরকের লেখা: আমেরিকান সাহিত্য ও সাহিত্যিক।। একাদশ পর্ব।। - শৃণ্বন্তু
সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৮:৪১ অপরাহ্ন

প্রাবন্ধিক প্রদীপ মাশ্চরকের লেখা: আমেরিকান সাহিত্য ও সাহিত্যিক।। একাদশ পর্ব।।

আপডেট করা হয়েছে : বুধবার, ৩১ জুলাই, ২০২৪, ৭:৫০ পূর্বাহ্ন
প্রাবন্ধিক প্রদীপ মাশ্চরকের লেখা: আমেরিকান সাহিত্য ও সাহিত্যিক।। একাদশ পর্ব।।

আরনেস্ট হেমিংওয়ে (১৮৯৯- ১৯৬১)

Ernest Miller Hemingway (1899-1961)

প্রদীপ মাশ্চরক

আরনেস্ট হেমিংওয়ে (১৮৯৯- ১৯৬১) আমেরিকার এক প্রসিদ্ধ ঔপন্যাসিক যার লেখা পরবর্তী যুগে আমেরিকার বিভিন্ন লেখকের লেখার স্টাইলকে বিশেষ ভাবে প্রভাবিত করেছে। হেমিংওয়ে দীর্ঘদিন ধরে কয়েকটি নামকরা পত্রিকার সংবাদদাতা হিশেবে কাজ করেছিলেন, আর এই কারণেই তার লেখা স্পষ্টভাষী ও সহজ সরল। প্রথম ও দ্বিতীয় বিশ্বমহাযুদ্ধ এবং Spanish Civil Warএর ফ্রন্ট লাইন থেকে বিবরণী পেশ করার সময় ছাড়াও এই বেপরোয়া মানুষটি জীবনে নানা দুঃসাহসিক অভিযানে অংশগ্রহণ করেন এবং বারংবার গুরুতর রূপে আহত হন। এছাড়া তিনি তার জীবনে বিভিন্ন দেশের (যেমন, ইতালি, ফ্রান্স, স্পেন, ইংল্যান্ড এবং কিউবা) বিভিন্ন শহরে বাস করেন ও নানা লেখক, চিত্রকর এবং দার্শনিকের সংস্পর্শে আসেন। আর এই সব অভিজ্ঞতাই তার লেখার খোরাক। ১৯২০ দশকের মধ্যভাগ থেকে ১৯৫০ সাল পর্যন্ত হেমিংওয়ে সাতটি নভেল, ছ’টি ছোটগল্প সঙ্কলন আর দুটি তথ্যভিত্তিক বই প্রকাশ করেন। ১৯৫৪ সালে তিনি সাহিত্যে নোবেল প্রাইজ পান।


হেমিংওয়ের ছোটবেলা কাটে Illinois ষ্টেটের Oak Park শহরে। স্কুলে পড়াকালীন তিনি বক্সিং আর Water polo খেলায় দক্ষতা অর্জন করেন। স্কুল পাস করার পর তিনি কিছুদিনের জন্য The Kansas City Star পত্রিকার রিপোর্টারের শিক্ষানবিশ হয়ে কাজ করেন। এই সময় কাগজের অফিস থেকে হেমিংওয়ে ইংরাজি লেখার কয়েকটি tips পান, যেমন “use short sentences; use vigorous English, be positive”। আমরা এই লেখকের প্রায় সব লেখাতেই এই উপদেশের অনুশীলন দেখতে পাই। ১৯১৮ সালে প্রথম বিশ্বমহাযুদ্ধে Red Crossএর ড্রাইভার হয়ে ইতালির war frontএ সাহায্য করার সময় তিনি গুরুতর ভাবে আহত হন। তার এই যুদ্ধের তিক্ত অভিজ্ঞতা তিনি ১৯২৯ সালে প্রকাশিত A Farewell to Arms উপন্যাসে লিপিবদ্ধ করেন। আহত হবার পর তিনি লেখেন, “When you go to war as a boy you have great illusion of immortality. Other people get killed, not you…When you are badly wounded the first time you lose the illusion and you know it can happen to you”। যুদ্ধ থেকে ফিরে ১৯২১ সালে Hadley Richardsonএর সাথে বিবাহের পর তিনি Toronto Star পত্রিকার ইউরোপিয়ান সাংবাদিক হয়ে প্যারিসে বসবাস শুরু করেন। এই সময় হেমিংওয়ের সাথে প্যারিসের বিভিন্ন নতুন যুগের লেখক আর শিল্পীদের (যেমন Gertrude Stein, James Joyce, Ezra Pound, Pablo Picasso, Join Miró) পরিচয় হয়। বিংশ শতাব্দীর প্রথম ভাগে লেখক ও শিল্পীরা লেখা ও আঁকা নিয়ে নানা রকম পরীক্ষা নিরীক্ষা করছিলেন; তারা তাদের শিল্পে প্রচলিত দেশাচার আর নৈতিকতার পরিবর্তে বিমূর্ততা আর বিষয়গত অভিজ্ঞতাকে বিশেষভাবে জোর দেওয়া শুরু করেন। এই নতুন যুগের লেখকের দলে যোগ দিয়ে হেমিংওয়ে ১৯২৬ সালে তার The Sun Also Rises বইটি লেখেন। এছাড়া এই সময় Toronto Star পত্রিকার জন্য তিনি ৮০টিরও বেশি গল্প লেখেন। তার প্রথম বই Three Stories and Ten Poems প্যারিস থেকে ১৯২৩ সালে প্রকাশিত হয়। ১৯২৫ সালে প্রকাশিত হয় তার প্রথম ছোটগল্প সঙ্কলন, In Our Time.
প্যারিসে থাকাকালীন হেমিংওয়ে কয়েকবার স্পেনে যান এবং নিয়মিত ষাঁড়ের লড়াই (bull-fight, corrida in Spanish) দেখে এই দুঃসাহসিক স্পোর্টসের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে পড়েন। এছাড়া বক্সিংএও তার উৎসাহ ছিল। এইসব বিপজ্জনক স্পোর্টসের কয়েকটি গল্প একত্রিত করে ১৯২৭ সালে তার Man Without Women প্রকাশিত হয়। এইসঙ্গে ১৯২৯ সালে তিনি Death in the Afternoon বইটিও লেখেন। ষাঁড়ের লড়াই নিয়ে হেমিংওয়ে মন্তব্য করেন, “bullfighting is of great tragic interest, being literally of life and death”।

আরনেস্ট হেমিংওয়ে (১৮৯৯ – ১৯৬১)

১৯২৭ সালে Richardsonএর সাথে বিচ্ছেদের পর হেমিংওয়ে Vogue ম্যাগাজিনের সাংবাদিক Pauline Pfeifferকে বিবাহ করে Florida ষ্টেটের Key West শহরে এক বাড়িতে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন। ১৯৩৩ সালে Paulineএর সাথে আফ্রিকায় ১০ সপ্তাহের এক সাফারির গল্প রয়েছে তার Green Hills of Africa বইয়ে। ১৯৩৭ সালে প্রকাশিত To Have and Have Not সমালোচকদের সুখ্যাতি অর্জন করতে পারে নি, এই কারণে হেমিংওয়ের মেজাজ খুবই বিগড়ে যায়। Paulineএর সাথে বচসা আর দুর্ব্যবহার চরমে ওঠে। ১৯৩৯ সালে বিবাহ বিচ্ছেদের পর হেমিংওয়ে Cubaর Havana শহরে তার বাসস্থান ঠিক করে Spanish Civil Warএর সাংবাদিকের কাজ নিয়ে চলে যান। এই ফ্রন্টলাইনে তিনি সাংবাদিক হিশেবে দীর্ঘদিন কাজ করেছিলেন। তার এই সময়ের অভিজ্ঞতা ১৯৪০ সালে প্রকাশিত For Whom the Bells Toll বইটিতে অনবদ্য ভাষায় লেখা রয়েছে। এই বই কয়েক মাসের মধ্যে এক মিলিয়ন কপি বিক্রি হয়ে যায় আর লেখক হেমিংওয়ের নাম সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়ে। ফ্রন্টলাইনে কাজ করার সময় আর এক সাংবাদিক Martha Gellhornএর সাথে হেমিংওয়ের পরিচয় হয়। ১৯৪০ সালে তারা বিবাহসূত্রে আবদ্ধ হন (তৃতীয় স্ত্রী) এবং দুজনে Cubaর Havana শহরে এসে বাস শুরু করেন।
Cubaয় থাকাকালীন দ্বিতীয় বিশ্বমহাযুদ্ধের সময় হেমিংওয়ে রাজনৈতিক গোলযোগে পড়ে যান এবং আমেরিকার FBI তার ওপর নজর রাখা শুরু করে। এসবের কারণে হেমিংওয়ে বিষণ্ণতার কবলে পড়েন ও অতিরিক্ত মদ্যপান শুরু করেন। Marthaর সাথে তার বচসা তুঙ্গে ওঠে আর তিনি দ্বিতীয় বিশ্বমহাযুদ্ধের সংবাদ প্রতিনিধির কাজ নিয়ে Londonএ চলে যান। ১৯৪৫ সালে Londonএ যুদ্ধের সংবাদ প্রতিনিধি হয়ে কাজ করার সময় হেমিংওয়ের সাথে Mary Walshএর পরিচয় হয়। অল্পদিনের মধ্যেই তিনি Marthaকে ছেড়ে Maryর পাণিগ্রহণ (তার চতুর্থ স্ত্রী) করেন। এই ভবঘুরে মানুষটির দুঃসাহসের পরিচয় মেলে যখন Normandy Landingএ হেমিংওয়ে সৈন্যবাহিনীর সাথে উপকূলে নেমে যুদ্ধের প্রত্যক্ষদর্শী বিবরণ লিপিবদ্ধ করেন। এই সময়েই এক গাড়ির দুর্ঘটনায় তিনি আবার গুরুতর আহত হন। বিছানায় থাকাকালীন প্রকাশিত হয় তার The Garden of Eden, এই বিশাল ৮০০ পাতার বই তিনি এক বছরে লিখে শেষ করেন। ১৯৪৮ সালে এক কমবয়সী মেয়ের সাথে প্রেমের গল্প Across the River and into the Trees প্রকাশের পর পাঠক সমাজে বিরূপ মন্তব্যের ঝড় ওঠে। আহত ও ক্রুদ্ধ হেমিংওয়ে ৮ সপ্তাহের মধ্যে লিখে ফেলেন The Old Man and the Sea, তার ক্লাসিক বই যা সারা পৃথিবীতে সমাদৃত। বইটি সম্পর্কে তিনি লেখেন “the best I can write ever for all my life”। বইটি বছরের সেরা বই হিশেবে সম্মান লাভ করে এবং ১৯৫৪ সালে হেমিংওয়ে নোবেল পুরস্কার পান। সেই বছরই আফ্রিকা যাবার পথে এক প্লেন দুর্ঘটনায় হেমিংওয়ে গুরুতর রূপে আহত হন, তার মাথায় ভীষণ চোট লাগে। এই দুর্ঘটনার পর তার শরীর আর ভাল হয়ে নি। সারা শরীরে যন্ত্রণা নিয়ে তাকে তার শেষ জীবন কাটাতে হয়। ১৯৫৯ সালে হেমিংওয়ে Idaho ষ্টেটের Ketchum শহরে এক খামারবাড়িতে এসে ওঠেন। বার কয়েক শক থেরাপি নেবার পরও তার মাথা ঠিক মত কাজ করে না, তার লেখার কাজ একেবারে বন্ধ হয়ে যায়। ১৯৬১ সালে তিনি নিজেই বন্দুকের গুলিতে তার দুর্বিষহ জীবনের ইতি টেনে দেন।


এবার হেমিংওয়ের লেখার কথায় আসি। ১৯২৯ সালে প্রকাশিত A Farewell to Arms বইটির প্রেক্ষাপট প্রথম বিশ্বমহাযুদ্ধের সময়ের ইতালির ফ্রন্ট, উপন্যাসের মুখ্য চরিত্র Frederic Henry নামের এক আমেরিকান যে ইতালির আহত সৈন্যদের হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার এম্বুলেন্সের ড্রাইভারের কাজ করে। এক আমেরিকান-ব্রিটিশ নার্স Catherine Barkleyর সাথে তার প্রেমের গল্প আমরা পাই এই বইয়ে। বইটি প্রকাশনের পরই best-seller হয়ে যায়, সমালোচকরা একবাক্যে বলেন, “The premier American war Novel from World War 1”। উপন্যাসটি পাঁচ ভাগে লেখা, Fredericএর মুখে গোটা গল্পটি বলা হয়েছে।

প্রথম ভাগঃ
শীতের শুরুতে উত্তর ইতালির ফ্রন্টে কলেরা মহামারীতে হাজার হাজার সৈন্য মারা যাচ্ছে, Fredericএর কাজ পড়েছে Gorizia শহরে। মহামারীর মধ্যেও শহরের দুটি বেশ্যালয় ভিড়ে জমজমাট দেখে সে বেশ অবাক হয়। ক্যাম্পে ফিরে গিয়ে সে তার সমবয়সী বন্ধু Surgeon Rinaldiকে তার অভিজ্ঞতার কথা বলে। এই সময় Rinaldi তাকে এক ব্রিটিশ হাসপাতালে নিয়ে যায় আর তার সাথে ব্রিটিশ নার্স Catherineএর সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়। প্রথম দর্শনেই Frederic তার প্রেমে পড়ে যায়। Catherine তাকে তার পুরনো প্রেমিকের গল্প বলে যে যুদ্ধে মারা গেছে। সে আরও বলে যে বৃষ্টি পড়লে তার ভীষণ অস্বস্থি হয়। এক বৃষ্টির দিনে Frederic Catherineকে চুমু খেতে গেলে সে Fredericকে চড় মারে, যদিও পরে সে মিটমাট করে নেয়। এরপর একদিন ফ্রন্টে Frederic আর তার সহকর্মীরা এম্বুলেন্স নিয়ে ঘোরার সময় সহকর্মী Passini মর্টারের আঘাতে মারা যায় এবং Frederic হাঁটুতে জখম হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়।

দ্বিতীয় ভাগঃ
সার্জন বন্ধু Rinaldi Frederikএর আঘাত পরীক্ষা করে তাকে মিলান (Milan) শহরের হাসপাতালে পাঠাবার বন্দবস্ত করে। হাসপাতালে Frederic পরিচিত পাদ্রিকে যুদ্ধের প্রতি তার বিরাগের কথা বলে। এদিকে যুদ্ধ ছড়িয়ে পড়েছে Austriaয়। Frederic এসে পড়ে মিলানের আমেরিকান হাসপাতালে যেখানে Catherineএর সাথে তার প্রেম আরও গভীর হয়ে পড়ে। গল্পের এই পর্বে দুই প্রেমিক নৌকো ভ্রমণে যায়, ঘোড়াদৌড়ের মাঠে যায়, হাসপাতালের এক কর্মীর সহায়তায় নিয়মিত মদ্যপানও করে। হাঁটু সেরে যাবার পর Frederic জন্ডিসে আক্রান্ত হয়। প্রধান নার্স Van Campen রুগীর ঘরে মদের বোতল আবিষ্কার করেন। তার সন্দেহ হয় যে যুদ্ধ এড়াবার জন্য Frederic মদ খেয়ে জন্ডিসে পড়েছে। এই রিপোর্টের ভিত্তিতে Frederikএর আবার যুদ্ধে যাবার ডাক আসে। এর সাথে Catherine জানায় সে অন্তঃসত্ত্বা। যুদ্ধের পর তাকে বিয়ে করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে Frederic ফ্রন্টে চলে যায়।

তৃতীয় ভাগঃ
Frederic আবার ফিরে আসে Goriziaয়। তার বন্ধু Gino তাকে জানায় অস্ট্রিয়ানদের কামানের জোর ইতালিয়ানদের তুলনায় অনেক বেশি। এক বৃষ্টির রাতে অস্ট্রিয়ানদের আক্রমণ শুরু হলে ইতালির সৈন্যরা Caporetto এলাকা থেকে পিছোতে থাকে। মহিলা আর শিশুদের ট্রাকে তোলা হয়, হাসপাতাল জনশূন্য। অন্ধকার রাতে বৃষ্টির মধ্যে বিশৃঙ্খলা চরমে ওঠে। চেনা রাস্তায় বোমারু বিমানের আক্রমণের ভয়ে সৈন্য ও জনবাহিনী জঙ্গলের রাস্তা ধরে, কিন্তু শীঘ্রই তারা রাস্তা হারায় আর ট্রাকের চাকা কাদায় বসে যায়। ড্রাইভার আর সৈন্যর দল এদিক ওদিক পালাতে শুরু করলে Frederic কয়েকজনকে গুলি করে মারে, কয়েকজন অস্ট্রিয়ানদের কাছে আত্মসমর্পণ করে। Frederic আর তার বন্ধু Piani কোন মতে পালিয়ে মুল পশ্চাদপসরণকারী জনতার সঙ্গে এসে জোটে এবং Tagliamento নদী পার হয়। নদীর ওপারে ইতালিয়ান বাহিনীর ছাউনিতে পালিয়ে আসা সৈন্যদের বিশ্বাসঘাতকতার বিচার শুরু হলে Frederic নদীতে ঝাঁপিয়ে পড়ে প্রাণ বাঁচায়। এর পর অনেক হেঁটে রেল লাইনের ধারে এসে এক ট্রেন ধরে সে চলে আসে মিলানে Catherineএর খোঁজে।

চতুর্থ ভাগঃ
মিলানে এসে Frederic শোনে যে Catherine দূরের এক শহর Stresaয় চলে গেছে। এক পরিচিত অপেরা গায়িকা Ralph Fredericকে সাধারণ মানুষের পোশাক পরিচ্ছদ দিয়ে Stresa যাবার ট্রেনে তুলে দেয়। Stresaয় পৌঁছে হোটেলের এক কর্মচারীর কাছ থেকে সে খবর পায় যে দুজন ব্রিটিশ নার্স ট্রেন স্টেশনের কাছের এক সস্তার হোটেলে এসে উঠেছে। Frederic সেখানে Catherineএর দেখা পায়। মুখ ফুটেও Frederic কাউকে যুদ্ধের কথা বলে না, তার ভয় সে যুদ্ধ থেকে পালিয়ে এসেছে, সে এক বিশ্বাসঘাতক ক্রিমিনাল। লোকমুখে সে শোনে যে ইতালিয়ান পুলিশ তাকে খুঁজছে। Catherine আর Frederic নৌকো চড়ে সুইটজারল্যান্ডে পালিয়ে যাবার জন্য তৈরি হয়। ঝড়ের রাতে দুজন পাগলের মত দাঁড় টেনে বহুকষ্টে মরণাপন্ন অবস্থায় সুইটজারল্যান্ডে পৌঁছোয়। সেখানে পুলিশ তাদের পরিচয়পত্র পরীক্ষা করে সুইটজারল্যান্ডে থাকার ভিসা দেয়।

পঞ্চম ভাগঃ
সুইটজারল্যান্ডে Lausanne শহরের এক হাসপাতালে Catherine ভর্তি হয়। দীর্ঘ প্রসব বেদনার পর ডাক্তাররা Cesarean অপারেশনের সিদ্ধান্ত নেয়। অনেক যন্ত্রণার পর Catherine এক মৃত সন্তান প্রসব করে। শুধু তাই নয়, Catherineএর রক্তক্ষরণ বন্ধ হয় না, পাগলপ্রায় Frederic হাসপাতালে Catherineএর হাত ধরে বসে থাকে। ঘণ্টা দুয়েক বাদে Catherine মারা গেলে Frederic নিঃশব্দে বৃষ্টির মধ্যে হেঁটে ফিরে যায় তার হোটেলে। এই ক্লাসিক যুদ্ধের গল্প এখানেই শেষ। Catherine বৃষ্টির দিন কখনোই পছন্দ করত না, সেই এক বৃষ্টির দিনেই অনেক যন্ত্রণার পর মৃত শিশু প্রসব করে সে মারা গেলো!

A Farewell to Arms (1932)
Turner Classic Movies

এই গল্পের বিভিন্ন চরিত্র হেমিংওয়ের পরিচিত মানুষজন। যেমন Agnes নামের এক নার্স আহত হেমিংওয়েকে ইতালির হাসপাতালে সেবা শুশ্রষা করে। হেমিংওয়ে তার প্রেমে পড়ে যান, কিন্তু তিনি আমেরিকায় চলে এলে Agnes ইউরোপেই থেকে যায়। এখানে বলে রাখা দরকার এই গল্পটি হেমিংওয়ের নিজের যুদ্ধের অভিজ্ঞতা নয়, তার এক বন্ধু Frederic Agate ইতালির ফ্রন্ট থেকে তার বউকে যে চিঠিপত্র লেখে তার ভিত্তিতে গল্পটি তৈরি হয়। প্রকাশের পর এই বইয়ের বিক্রির অর্থ হেমিংওয়েকে স্বাধীন লেখকের জীবন এনে দেয়।
হেমিংওয়ের প্রথম নভেল The Sun Also Risesএ লেখকের প্যারিসের তৎকালীন জীবনযাত্রা, তার বন্ধুমহল, তাদের ইতালির Pamplona শহরের ষাঁড়ের দৌড় (bull run festival) দেখা, এসবের এসবের বিবরণ রয়েছে। এই বইয়ের চরিত্রগুলি সবই লেখকের পরিচিত মহলের মানুষের অনুকরণে বর্ণিত হয়েছে, কিন্তু তার সাথে মিশেছে হেমিংওয়ের কল্পকাহিনী। ১৯২৬ সালে প্রকাশিত এই বইয়ের মুখ্য চরিত্র Jake Burnes যে যুদ্ধে আহত হওয়ার কারণে যৌন ক্রীড়ায় অক্ষম। Jake এক আমেরিকান সাংবাদিক, প্যারিসে বাস করে। এই মানুষটির সাথে ফষ্টিনষ্টিতে পটু Lady Brett Ashleyর প্রেমকাহিনী নিয়ে এই বই। Brett ১৯২০ সালের যৌন স্বাধীনতার প্রতীক, বার দুয়েক ডিভোর্সের পর সে যার তার প্রেমে পড়তে ভালবাসে। Jake আর Brettএর প্রেম বন্ধুমহলে উপহাসের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এরপর গল্প তিন অধ্যায়ে বলা হয়েছে। প্রথম অধ্যায়ে Jake তার বন্ধু Cohnএর সাথে টেনিস খেলে এক নাইট ক্লাবে যায়, যেখানে Brett তাকে কোনো এক একলা সময়ে জানায় যে সে তাকে সত্যিই ভালবাসে। বইয়ের দ্বিতীয় অধ্যায়ে Jakeএর সাথে আমেরিকা থেকে সদ্য আগত Bill Gorton আর Brettএর স্কটল্যান্ড থেকে আসা বর্তমান প্রেমিক Mike Campbellএর পরিচয় হয়। তারা সবাই মিলে Brettকে নিয়ে Pamplona শহরের উত্তর দিকের এক পাহাড়ি নদীতে মাছ ধরতে যায়। Cohn এক সময় Brettএর প্রেমিক ছিল, সে এই অভিযানে Brettকে Billএর সাথে প্রেমলীলায় মত্ত দেখে ক্ষেপে যায়। সবাই অতিরিক্ত মদ্যপান শুরু করে। Pamplonaর উৎসবে ষাঁড়ের দৌড় দেখার পর বন্ধুদের মধ্যে রেষারেষি খুব বেড়ে যায়। তার ওপর Pamplonaয় এক তরুণ matador Romeoর সাথে Brett ফষ্টিনষ্টির শুরু করে। Jake, Mike, Cohn আর Romeo সবাই Brettকে চায়। মারপিট শুরু হলে কলেজের বক্সিং চ্যাম্পিয়ন Cohn বাকি তিনজনকেই কাত করে। বইয়ের তৃতীয় অধ্যায়ে Pamplonaর উৎসবের পর তিন বন্ধু আবার শান্ত। Bill ফিরে যায় প্যারিসে, Mike থেকে যায় ইতালি আর ফ্রান্সের বর্ডারের শহর Bayonneএ, আর Jake চলে যায় স্পেনের উপকূলের শহর San Sebastianএ। বেশ কিছুদিন পর Jake প্যারিসে ফিরে এসে Brettএর এক টেলিগ্রাম পায়, Brett আকুল ভাবে সাহায্য চাইছে। এর মধ্যে Romeoর সাথে Brett মাদ্রিদ শহরে চলে গিয়েছিলো। সেখানে গিয়ে Jake তাকে এক সস্তার হোটেলে আবিষ্কার করে, Brett কপর্দকহীন, Romeo পলাতক। Jakeকে Brett জানায় যে সে প্যারিসে আবার Mikeএর কাছে ফেরত যেতে চায়। গল্পের শেষে আমরা দেখি Jake আর Brett এক ট্যাক্সিতে চলেছে, তারা কি হতে পারত তাই নিয়ে কথা বলছে।


সমালোচকের মতে হেমিংওয়ে The Sun Also Rises বইটিতে সেই সময়ের প্যারিসের বেপরোয়া জীবনযাত্রায় নৈতিকতার প্রশ্ন তুলেছেন, তাই বইটির নাম দিয়েছেন হিব্রু বাইবেলের এক উদ্ধৃতি দিয়ে। এই গল্পের প্রধান চরিত্র Jake সততা আর ভালবাসা খুঁজে চলেছে এক অনৈতিক চরিত্রহীন পতনশীল সমাজে। তবে গল্পের সব চরিত্রগুলোই বিশ্বমহাযুদ্ধের অরাজকতার শিকার; সবারই জীবনে কিছু না কিছুর অভাব, যেমন Brettএর জীবনে কোনো প্রকৃত ভালবাসার প্রতিশ্রুতি নেই। গল্পের নায়ক Jake সেই প্রজন্মের স্বপ্নভঙ্গের আর অক্ষমতার প্রতিমূর্তি।


এবার আসি আমার প্রিয় হেমিংওয়ের বই The Old Man and the Seaএর কথায়। ১৯৫২ সালে প্রকাশিত এই বইটি হেমিংওয়ের জীবনের শেষ উল্লেখযোগ্য লেখা। এই গল্পে লেখক Santiago নামের এক বুড়ো জেলের এক মস্ত marlin মাছ ধরার লড়াইয়ের বর্ণনা দিয়েছেন। এই ছোট্ট বইটি তিনি আট সপ্তাহের মধ্যে লিখে প্রথমে লেখাটি Life ম্যাগাজিনে প্রকাশ করেন। Lifeএর এই সংখ্যা দুদিনে ৫.৩ মিলিয়ন কপি বিক্রি হয়। এক সপ্তাহের মধ্যে লেখাটি বই রূপে প্রকাশ পায়। গল্পটি প্রথমে সংক্ষেপে পড়া যাক। Santiago ৮৪ দিন কোন মাছ ধরতে পারেনি, সে নিজেকে দুর্ভাগা ভাবতে শুরু করেছে। তার কমবয়সী শাগরেদ Manolin, যাকে Santiago নিজের হাতে মাছ ধরা শিখিয়েছে, তাকে তার বাবা মা এখন জোর করে অন্য জেলের সাথে মাছ ধরার কাজে লাগিয়েছে। তবুও Manolin সকাল বিকেল Santiagoকে জাল ঠিকঠাক করতে সাহায্য করে, সন্ধ্যেবেলায় খাবার এনে দেয়। তারা দুজন বেসবল নিয়ে গল্প করে। সারা রাত Santiago তার যৌবনের দিনগুলো স্বপ্নে দেখে। ৮৫ দিনের মাথায় Santiago ভোর ভোর বেরিয়ে পড়ে আর সমুদ্রের উষ্ণ স্রোতের এলাকায় চলে আসে। সারাদিনে দুয়েকটা ছোট মাছ ধরার পর সন্ধ্যের দিকে তার বঁড়শিতে ধরা পড়ে এক বিশাল marlin মাছ। কিন্তু সে মাছের জোর ভীষণ, সে নৌকো টেনে নিয়ে চলে গভীর সমুদ্রের দিকে। Santiago মাছের দড়ি ধরে সারা রাত বসে থাকে। পরের দিন সকালে সে প্রথম সেই মাছের বিশাল আয়তন দেখে, মাছটি তার নৌকোর থেকে বড়। বুড়ো Santiago তার প্রতিদ্বন্দ্বীকে দেখে বেশ চিন্তিত হয়। ধরা ছোট মাছ খেয়ে তার নৌকোর ওপর দিন কেটে যায়। আবার রাত আসে, আর বুড়ো দড়ি ধরে বসে থাকে। পরের দিন সকালে মাছটা নৌকোর চারিদিকে ঘুরতে শুরু করে, মরিয়া হয়ে Santiago হারপুন দিয়ে মাছটাকে গেঁথে নৌকোর সাথে বেঁধে ফেলে। আহত মাছের রক্তের গন্ধে এবার নৌকোর পাশে হাজির হয় এক মাকো হাঙ্গর। প্রথম কামড়ে সে মাছটার প্রায় ৪০ পাউন্ড খাবলে নেয়। হারপুন দিয়ে এই প্রথম হাঙ্গরকে শেষ করলেও আরও হাঙ্গর তার নৌকোর চারপাশে হাজির হয়। বুড়োর আর হারপুন নেই, তাই হাতের ছুরিটা নৌকোর দাঁড়ের সঙ্গে বেঁধে সে এক অস্ত্র তৈরি করে। মরণ পণ করে হাঙ্গরের সাথে লড়ে সে তিনটে হাঙ্গরকে শেষ করে। এরপর ছুরি যায় ভেঙ্গে, দিনের শেষে এই হাঙ্গরের দল নৌকোর সাথে বাঁধা marlin মাছটা খাবলে প্রায় সবটাই খেয়ে ফেলে। Santiago চিৎকার করে তাদের গালি দেয়, মাছটার অবশেষটুকু বাঁচাবার চেষ্টা করে। সন্ধ্যের সময় হাতের মোটা লাঠি দিয়ে সে আরও দুটো হাঙ্গরকে ঘায়েল করে। রাতের অন্ধকার নেমে এলে বুড়ো পরাজয় স্বীকার করে নেয়, হাঙ্গরের দল সব মাছটা খেয়ে ফেলে, নৌকোর সাথে বাঁধা পড়ে থাকে সেই মাছের বিশাল কঙ্কাল। রনক্লান্ত Santiago ভগ্ন হৃদয়ে তার কুঁড়েতে ফিরে এসে ঘুমিয়ে পড়ে। জলের ধারে তার নৌকো আর মাছের বিশাল কঙ্কাল পড়ে থাকে। পরদিন সকালে Manolin কফি নিয়ে এসে বুড়োর পাশে বসে থাকে, বুড়োর ঘুম ভাঙলে সে তাকে বলে এর পর থেকে সে তার সাথেই মাছ ধরতে যাবে। পাড়ার জেলেরা কঙ্কাল মেপে দেখে সেই মাছের দৈর্ঘ্য ছিল ১৮ ফুট। ক্লান্ত Santiago আবার ঘুমিয়ে পড়ে আর স্বপ্ন দেখে যে সে আফ্রিকায় সিংহ শিকার করতে গেছে।


Cubaয় থাকাকালীন ১৯৩০ সালে হেমিংওয়ে তার গাইড Carlosএর মুখে এক বুড়ো জেলের marlin মাছ ধরার এই গল্পটি শুনেছিলেন। হেমিংওয়ে নিজেও সমুদ্রে মাছ ধরেছেন, তার এই ব্যাপারে উৎসাহ ছিল। এই কারণেই The Old man and the Sea তিনি আট সপ্তাহে লিখে ফেলেছিলেন। বুড়ো জেলে Santiagoর খারাপ কপাল, হঠাৎ করে পাওয়া এক বিশাল মাছ, হাঙ্গর দলের সাথে তার মরণপণ লড়াই, আর সবার শেষে সব হারানোর হতাশা আর আক্ষেপ এই গল্পে অসাধারণ ভাষায় বর্ণিত আছে।

“But man is not made for defeat,” he said. “A man can be destroyed but not defeated.”
– Ernest Hemingway
The Old Man and the Sea

সমালোচকদের মতে বইটির “scholarship is focused upon the naturalized tragedy, the parable of art and the artist, and even the autobiographical mode”। জীবনের অসংখ্য বাঁধাবিপত্তির বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষের সাহস ও মর্যাদার সঙ্গে লড়াইয়ের এক অপরূপ প্রতীক এই Santiago, যে এখনো সিংহ শিকারের স্বপ্ন দেখে।


হেমিংওয়ে তার লেখক জীবনে অনেক ছোটগল্প লিখেছিলেন। তার মধ্যে থেকে দুটি গল্প এখানে উল্লেখ করছি। প্রথম গল্প Man Without Women বইয়ে বক্সিংএর গল্প Fifty Grand। গল্পটি প্রথম Atlantic Monthly পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। প্রতিদ্বন্দ্বী Jimmy Walcottএর সাথে লড়াইয়ের জন্য বক্সার Jack Brennanএর প্রস্তুতি নিয়ে এই গল্প। আমেরিকার New Jersey শহরের ট্রেনিং ক্যাম্পে গল্প শুরু হলেও তার শেষ হয় New York শহরে। ক্যাম্পে ট্রেনার Jerry Doyle চ্যাম্পিয়ান Jackকে তার লড়াইয়ের জন্য তৈরি করছে; এই Jerryই আমাদের গল্প বলছে। Jackএর শরীরএখন আর তেমন মজবুত নেই, তার ওপর বউ এই পেশা একেবারেই পছন্দ করে না। Jackএর মতো ট্রেনার Jerryরও ধারনা যে Jack আদপেই লড়াইয়ের জন্য তৈরি নয়। Jack স্বীকার করে যে তার রাত্রে ঘুম হয় না, সে তার বউকে miss করে। লড়াইয়ের দিন এগিয়ে আসে, Jackএর মাথায় চিন্তা তার বাড়ি নিয়ে, সংসার নিয়ে। লড়াইয়ের আগের দিন সে ট্রেনিংএ কিছুতেই মন দিতে পারে না। সেদিন বিকেলে ক্যাম্পে দুজন দামি পোশাক পরিহিত দুই ভারিক্কি মেজাজের লোক দেখা করতে এলো Jackএর সাথে। তারা ঘর থেকে Jerry আর ম্যানেজার Johnকে বার করে দিয়ে Jackএর সাথে কিছুক্ষণ কথা বলে। তারপর সেই দুই হোমরাচোমরা সবাইকে ঘরে এনে মদ খাওয়া শুরু করে। Jerry লক্ষ্য করে যে মদের আড্ডায় Jack চুপচাপ, আর সে একেবারেই মদ্যপানে উৎসাহী নয়। দুই আগন্তুক বিদায় নেবার পর বাকি দিন নীরব থেকে সন্ধ্যের সময় Jack প্রচুর মদ্যপান করে আর Jerryকে Walcottএর ওপর লড়াইয়ের বাজি ধরতে বলে। সে জানায় নিজেও সে পঞ্চাশ হাজার ডলার বাজি ধরেছে Walcottএর ওপর, আর সে বলে, “আমি তো হারবো, কাজেই এই লড়াইয়ে আমরা কিছু টাকা উপায় করে নি”। এর পর মাতাল Jack ঘুমিয়ে পড়ে।
লড়াইয়ের দিন সকালে Jack আর Jerry New York শহরে যায়। Jack হোটেলে এক ভাল ঘর বেছে নেয়, বন্ধুদের সঙ্গে বাজি ফেলে cribbage খেলে, খুশি মনে ভাল করে খাওয়া দাওয়া করে, আর সময় উপস্থিত হলে মঞ্চে লড়াইয়ের জন্য প্রস্তুত হয়। মঞ্চের ধারে Walcottএর সঙ্গে সে মস্করাও করে। Jack প্রকৃতপক্ষে এক পাকা বক্সার, তাই লড়াইয়ের প্রথম কয়েক রাউন্ড Walcottএর মুখে সে দারুণ ঘুষি চালায়। কিন্তু ক্রমে তার শরীর ভারী হয়ে আসে আর Walcott তাকে বেশ কয়েকবার ভাল করে আঘাত করে। এগারো রাউন্ডের মাথায় John Jackকে জানায় যে লড়াই Walcottএর দিকে যাচ্ছে, কিন্তু Jack বলে যে সে আর এক রাউন্ড সামলাতে পারবে। এই রাউন্ডে Walcott আচমকা Jackএর তলপেটে এক ঘুষি মারে। প্রচণ্ড ব্যাথা স্বত্বেও Jack দাঁড়িয়ে থাকে কারণ সে পড়ে গেলে সেই জিতে যাবে Walcottএর ফাউলের কারণে আর তার পঞ্চাশ হাজার ডলার জেতা হবে না। এরপর Jack এগিয়ে গিয়ে ইচ্ছাকৃত ভাবে Walcottএর তলপেটে বারদুয়েক ঘুষি মারে। Walcott মাটিতে পড়ে যায় আর ফাউলের কারণে সেই ম্যাচ জিতে যায়। ড্রেসিংরুমে হাতের দস্তানা খুলতে খুলতে Jack হেসে বলে “যখন অনেক টাকার ব্যাপার, মাথা সত্যিই খুব তাড়াতাড়ি কাজ করে”! সরাসরি লড়াইয়ে হেরে গেলে সে সামান্য টাকা পেত, তার বদলে হেরে গিয়ে সে সে এখন পঞ্চাশ হাজার ডলারের মালিক! গল্পটিতে কৌতুকের আভাষ থাকলেও বক্সিংএর code কোথাও লঙ্ঘন করা হয় নি, সমালোচক Robert Weeksএর ভাষায়, “Jack has done much more than protect his fifty grand: he has, through his quick-wittedness and stoicism, prevailed without loss of his self-respect”.


হেমিংওয়ের দ্বিতীয় গল্পটির নাম The Snows of Kilimanjaro। ১৯৩৬ সালে Esquire ম্যাগাজিনে প্রকাশিত এই গল্পে আফ্রিকায় Harry নামের এক ঔপন্যাসিকের শরীরের আঘাত বিষাক্ত হয়ে মারা যাবার সময়ের বিবরণ রয়েছে। Mount Kilimanjaro আফ্রিকার সর্বোচ্চ পর্বত শৃঙ্গ। মাসাই উপজাতির মানুষরা এই শৃঙ্গকে ঈশ্বরের আবাস বলে মানে। লোকথায় আছে মানুষ বা পশু মৃত্যুর পর পৌঁছে যায় ওই তুষার শীতল পর্বতের শৃঙ্গে। গল্পের শুরুতে আমরা আহত Harry ও তার সহযাত্রী Helenএর সাথে পরিচিত হই। তারা দুজন আফ্রিকান সাফারিতে এসে এক ক্যাম্পে আটকে পড়েছে, তাদের ট্রাকের ইঞ্জিন পুড়ে গেছে। Harryর ক্ষততে পচন ধরেছে, সে মৃত্যু পথযাত্রী। তার মরণ নিয়ে ব্যঙ্গাত্মক কথাবার্তা, দিনরাত খিটিমিটি, বেপরোয়া মদ্যপান, Helenকে বিরক্ত করতে শুরু করেছে।

Harry তার জীবনে নামকরা লেখক হতে পারেনি, তার এখন মনে হয় সারাজীবন ধনী মহিলা বিয়ে করা তার ভুল হয়েছে। তার মনে পড়ে যৌবনে যুদ্ধের সময় ইউরোপ ভ্রমণকালে সে কেমন এক ভাঙ্গা কুঁড়েঘরে লুকিয়ে থাকতো, জঙ্গলে শিকার করে খেত, বরফে ঢাকা পাহাড়ে স্কি করতে যেত, কাছের ট্রেন লাইনে ট্রেনের অস্ট্রিয়ান সৈন্যদের কাছে বোমারু বিমান আক্রমণের গল্প শুনত। ইদানীং সন্ধ্যে বেলায় Helen শিকার থেকে ক্যাম্পে ফিরে এলে Harry ভাবে এই মহিলা স্বামী আর পুত্র হারিয়ে তার কাছে এসেছে শুধু এক নামকরা লেখকের সাথে বাস করার জন্য, তাদের মধ্যে ভালবাসা নেই। সপ্তাহ দুয়েক আগে এক হরিণের ছবি তুলতে গিয়ে Harryর পায়ে কাঁটা লাগে, তক্ষুনি সে ক্ষততে আইওডিন লাগায় নি। সাফারিতে তাদের সাথে আর কোন ওষুধ না থাকার ফলে সেই ক্ষত সঙ্ক্রামিত হয়ে এখন তাতে পচন ধরেছে।
বিকেলে Helenএর সাথে মদ্যপান করতে করতে Harry আবার তার চিন্তায় ডুবে যায়। তার মনে পড়ে প্যারিসে তার প্রথম প্রেমে পরা, আবার ঝগড়ার পর তার ছেড়ে যাওয়া। তার মনে পড়ে কনস্টান্টিনোপল শহরে এক আর্মেনিয়ার পতিতা যাকে নিয়ে তার সাথে এক ব্রিটিশ সৈন্যের মারপিট হয়। রাতের খাওয়ার পর Harryর চারপাশে আবার ভিড় করে তার পুরনো স্মৃতি। তার ঠাকুরদার কাঠের কেবিন পুড়ে যাওয়া, জঙ্গলের নদীতে মাছ ধরতে যাওয়া, তার প্যারিসের গরীব পল্লির প্রতিবেশীর দল। Harry ভাবে সেই ছেলেটার কথা যাকে সে পুলিশের হাতে তুলে দেয় যদিও সে Harryর ঘোড়ার খাবার চুরির চোরকে গুলি করে। এই রকম কত গল্প তার মাথায় রয়েছে, লেখা হয় না! Harry তার আসন্ন মৃত্যুর কথাও ভাবে, তার মনে পড়ে এক বোমায় আহত সৈন্যকে সে কিভাবে মুখে মরফিন ট্যাবলেট গুঁজে দিত। এখন অন্তত ওই মানুষটার মত তার নিজের অত ব্যথা নেই! অন্ধকার ক্যাম্পের বিছানায় শুয়ে Harry তার চারপাশে মৃত্যুর গন্ধ পায়, ক্যাম্পের আশেপাশে হায়েনার ঘোরাফেরা তার চোখে পড়েছে। গল্পের শেষ রাতে Harry স্বপ্নে দেখে Compton নামের এক বৈমানিক এসেছে তাকে এই ক্যাম্প থেকে উদ্ধার করতে। সেই ছোট প্লেনে শুধু পাইলট আর তার নিজের জায়গাটুকু আছে। প্লেন আকাশে উঠলে সে নিচে তাকিয়ে দেখে আফ্রিকার জঙ্গল ক্রমশ আবছা হয়ে মিলিয়ে যাচ্ছে। তার সামনে তুষারাবৃত Mount Kilimanjaro যেখানে এই ছোট প্লেন তাকে নিয়ে যাচ্ছে। হায়েনার ডাকে Helenএর ঘুম ভেঙ্গে গেলে সে Harryকে ধাক্কা দিয়ে দেখে যে তার কোন সারা নেই! গল্প এখানেই শেষ, Harry মারা গেছে কি না, তা বলা নেই! সাফল্যহীন লেখকের জীবনের হতাশা, আক্ষেপ, আর নানা দ্বিধার এক অপরূপ বিবরণ রয়েছে এই গল্পে। আর রয়েছে মৃত্যুর জন্য অপেক্ষায় থাকা মানুষের অন্তর্বেদনা। Harryর ক্ষতর পচন তার লেখক জীবনের ব্যর্থতার প্রতীক, আর Kilimanjaroর শীতল তুষার তার আসন্ন মৃত্যুর প্রতীক। হেমিংওয়ে তার বেপরোয়া জীবনে নিজের মৃত্যু নিয়ে অনেক ভেবেছেন, এই গল্পে আমরা তার আভাস পাই।

হেমিংওয়ে অসুস্থতার কারণে Stockholmএ নোবেল প্রাইজ নিতে যেতে পারেন নি। তার পরিবর্তে তিনি যে চিঠি লেখেন (যা পড়ে শোনান হয়) তাতে তিনি তার নিজের জীবনের প্রতিলিপি লিখেছেন, “Writing, at its best, is a lonely life. Organizations for the writers palliate the writer’s loneliness but I doubt if they improve his writing. He grows in public stature as he sheds his loneliness and often his work deteriorates. For he does work alone and if he is a good enough writer, he must face eternity, or the lack of it, each day.”


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগ থেকে আরোও
Theme Created By FlintDeOrient.Com
error: Content is protected !!
error: Content is protected !!