আমেরিকান সাহিত্য ও সাহিত্যিক: ষষ্ঠ পর্ব।।
এই পর্বে: এমিলি ডিকিন্সন
Emily Dickinson (১৮৩০-১৮৮৬)
Emily Dickinson (১৮৩০-১৮৮৬)
এই পর্বে আমরা উনবিংশ শতাব্দীর আমেরিকান কবি এমিলি ডিকিন্সনের লেখার সাথে পরিচিত হব। এই রহস্যময়ী মহিলা তার জীবিত জীবন লোকচক্ষুর আড়ালে প্রায় অজানা হয়েই কাটিয়ে দেন। ভাবলে অবাক লাগে, যদিও এমিলি ১৮০০র ওপর কবিতা লেখেন, জীবিতকালে তার মাত্র ১০টি কবিতা প্রকাশিত হয়। মৃত্যুর পর তার বোন Lavinia দিদির রাশি রাশি কবিতা আবিষ্কার করে এবং বন্ধুবান্ধবের প্রচেষ্টায় এমিলির প্রথম কবিতা সঙ্কলন ১৮৯০ সালে প্রকাশিত হয়। বর্তমানে এমিলি ডিকিন্সন আমেরিকার কবিদের মধ্যে অন্যতম, তার কবিতা পাঠ্যপুস্তক থেকে রিসার্চের বিষয়, সবখানেই সমাদৃত।
এমিলি ডিকিন্সন
এমিলি ১৮৩০ সালে Massachusetts ষ্টেটের Amherst শহরে এক ধনী পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। ছোট থেকেই এমিলি স্বল্পভাষী, সে একা থাকতে ভালবাসে, বাড়িতে অতিথি এলে সম্ভাষণ পর্যন্ত করে না। খ্রিস্টান স্কুল শেষ করে এমিলি Seminaryতে (গির্জার মিনিস্টার হওয়ার শিক্ষালয়)ভর্তি হন। কিন্তু আট মাসের মধ্যেই এমিলি বাড়ি চলে আসেন। বেশির ভাগ সময় তার পোশাক সম্পূর্ণ সাদা বা কালো, আর নিজের ঘর থেকে কদাচিৎ এমিলি বাইরে আসতেন। প্রতিবেশীরা তাকে উদ্ভট আর ছিটগ্রস্থ বলে সন্দেহ শুরু করে।
ডাকটিকিটে এমিলি ডিকিন্সন
এমিলির কবিতা একেবারে অন্য স্টাইলে লেখা। কবিতার লাইন ছোট, বেশির ভাগ কবিতারই টাইটেল নেই, যতিচিহ্নের অভাব, আর কবিতার গতি অলস। কবিতার বিষয় আধ্যাত্মিকতা, প্রকৃতি, মৃত্যু, আর মানুষের অমরত্ব। ১৯৫৬ সালে এমিলির কবিতার সম্পূর্ণ সংস্করণ প্রকাশের সময় New York Times ইনফ্রা-রেড কারিগরির সাহায্যে কবির মূল লেখা পরীক্ষা করে আবিষ্কার করে যে এমিলির বোন ও বন্ধুরা মূল লেখাগুলির সামান্য পরিবর্তন (যেমন অপভাষা সংশোধন) করেছিলেন। বিশেষ করে অনেক কবিতা থেকে Susan শব্দটি সাবধানে মুছে ফেলা হয়। এই Susan এমিলির বৌদি, সংসারের অনেকেই সন্দেহ করতো যে এমিলি তাকে ভালবাসে। এমিলির অবিবাহিত জীবন এই সন্দেহকে সমর্থন করে।
এবার এমিলির কবিতায় আসা যাক। আমার পছন্দের কয়েকটি কবিতা আর তাদের কয়েকটা লাইন এখানে উল্লেখ করবো। প্রথম কবিতাঃ I Taste a Liquor never Brewed
কবিতার কয়েকটি লাইন:
I taste a liquor never brewed – �
From Tankards scooped in Pearl – �
Not all the Frankfort Berries�
Yield such an Alcohol!
……
When “Landlords” turn the drunken Bee�
Out of the Foxglove’s door – �
When Butterflies – renounce their “drams” – �
I shall but drink the more!
এই কবিতায় কবি জীবনের আনন্দে মাতাল হওয়ার কথা বলছেন, সুরা নয়। গ্রীষ্মের এক সোনালি সকালে কবি প্রকৃতির সৌন্দর্য উপভোগ করছেন গভীর ভাবে।
দ্বিতীয় কবিতাঃ Dear March – Come In-
প্রথম কয়েকটি লাইন :
Dear March—Come in—�
How glad I am—�
I hoped for you before—�
Put down your Hat—�
You must have walked—�
How out of Breath you are—�
Dear March, how are you, and the Rest—�
Did you leave Nature well—�
Oh March, Come right upstairs with me—�
I have so much to tell—
কবি এখানে অপরূপ ভাষায় বসন্তকে আবাহন করছেন, বসন্ত এখানে একজন অতিথি। দীর্ঘ শীতের নিষ্ঠুর দিনগুলো পার করে সেই অতিথি দৌড়ে এসেছে, তাই সে হাঁপাচ্ছে!
তৃতীয় কবিতাঃ There is a pain-so utter
There is a pain — so utter —�
It swallows substance up —�
Then covers the Abyss with Trance—�
So Memory can step�
Around — across — upon it —�
As one within a Swoon —�
Goes safely — where an open eye —�
Would drop Him — Bone by Bone –
কবির বেদনা এখানে দুর্বার, সে এমন এক শক্তি যে শরীর আর মনকে অবশ করে দেয়, নিয়ে যায় এক অতল গহ্বরে যেখানে স্মৃতি খুব সাবধানে আসা যাওয়া করে।
চতুর্থ কবিতাঃ I’m Nobody! Who are you?
প্রথম চারটি লাইন:
I’m Nobody! Who are you?�
Are you – Nobody – too? �
Then there’s a pair of us! �
Don’t tell! they’d advertise – you know!
কবিতাটি এক নিঃশব্দ অনুশীলন, কবির একেবারে নিজস্ব। কবি “কেউ না” হতে চান, তিনি সেই নাম-না-জানা সম্প্রদায়ের একজন। শিশুসুলভ ভাষায় তিনি এক “কেউ না” হওয়ার খেলায় মেতেছেন এই কবিতায়।
পঞ্চম কবিতাঃ A Long-Long Sleep :
A long, long sleep, a famous sleep�
That makes no show for dawn�
By strech of limb or stir of lid, – �
An independent one.��
Was ever idleness like this? �
Within a hut of stone�
To bask the centuries away�
Nor once look up for noon?
কবির ভাষায় ঘুম এক চিরন্তন প্রশান্তি, জাগ্রত অবস্থায় জীবনের একটানা পরিবর্তনের ঘূর্ণিঝড়ের দাপট থেকে সে মানুষকে আড়াল করে রাখতে পারে, ঘুমের মধ্যে শতাব্দীও নিঃশব্দে পেরিয়ে যায়।
এমিলির সবচেয়ে বিখ্যাত কবিতা Hope
কবিতার কয়েটি লাইন :
“Hope” is the thing with feathers.
That perches in the soul –
And sings the tune without the words-
And never stops – at all –
………
I’ve heard it in the chillest land –
And on the strangest Sea –
Yet – never – in Extremity,
It asked a crumb – of me.
কবি সীমাহীন আশায় বিশ্বাসী। ছোট্ট পাখির মত নরম পালকে জড়ানো তার আশা মানুষের আত্মায় বাস করে আর জীবনে যা ঘটছে তাকে মোকাবিলা করার শক্তি যোগায়।
পাঠক সমাজে এমিলি ডিকিন্সন বহুদিন এক “difficult poet” নামে অভিহিত ছিলেন। এক সমালোচক তার লেখাকে বিদ্রূপ করে লিখেছিলেন, “it sometimes seems as if in her work a cat came at us speaking English”। বস্তুত, এই সমালোচনা স্ত্রীদ্বেষী। সময়ের সাথে সাথে আমরা বুঝতে শিখেছি এমিলির সম্পূর্ণ ভিন্ন মননশীলতার কারণে তার লেখা দ্রুতপঠনের জন্য নয়, একটু জিরিয়ে আপন মনে তাকে উপভোগ করার জন্য। সম্প্রতি Madeline Olnekএর তৈরি Wild Nights with Emily মুভিতে তাকে এক সন্ন্যাসিনীর রূপে দেখান হয় নি, এমিলি এখানে এক নারীবাদী বিদ্রোহিণী, যে তার সমকামী ভালবাসার স্বীকৃতি চায়, সে চায় তার লেখা যেরকম, পাঠক ঠিক সেই ভাবেই তাকে গ্রহণ করুক। তার মতে, “Instead of wanting to get to the bottom of poetry, I propose that poetry should take your top off”। এমিলি আসলে সময়ের অনেক আগে এগিয়ে ছিলেন, তাকে মানুষ সেই সময়ে বুঝতে পারে নি।
নিজের লেখায় পুরোপুরি নিমগ্ন থাকার উদ্দেশ্যে এমিলি তার একাকী জীবন বেছে নিয়েছিলেন। পাছে Susanএর সাথে তার মেলামেশা চারপাশের মানুষের উপহাসের কারণ হয়ে দাঁড়ায় সেই ভয়ে এমিলি তার নিজের ঘরে নিজেকে বন্দি করে রাখেন। তার নিজের শারীরিক কষ্টও ছিল একটি কারণ। লেখায় নিমগ্ন থাকার জন্য অনেক লেখকই একা থেকেছেন, যেমন Henry David Thoreau, George Orwell, Ernest Hemingway। তাদের মানুষ কথনো উদ্ভট আর ছিটগ্রস্থ বলে মনে করে নি। এই কারণেই আমার মতে এমিলির বেশির ভাগ সমালোচনা স্ত্রীদ্বেষী। না বুঝে ভুল সমালোচনায় মানুষ কত নিষ্ঠুর হতে পারে সাহিত্য সমালোচক Harold Mono তার এক বিশিষ্ট উদাহরণ। ১৯২০ সালে Harold এমিলি সম্পর্কে লেখেন “she is a half-idiotic school girl …. Who was intellectually blind, partially dead, and most dumb to the art of poetry”. তবে যে সব পাঠক এমিলির লেখা বুঝতে পারে তারা বার বার বলেছে “Emily Dickinson is one of our most original writers, a force destined to endure in American letters”. সত্যিই তাই, মানসিক প্রসারের পর বর্তমান পাঠক সমাজ এই উপেক্ষিত আর বহু বিতর্কিত কবিকে এক “self-aware genius” বলে মনে করে। এই ভবিতব্য হয়ত এমিলি জানতেন, তাই This is my letter to the World কবিতায় লিখে যান
This is my letter to the world
That never wrote to me-
The simple News that Nature told-
With tender Majesty
Her Message is committed
To Hands I cannot see-
For love of her-sweet-countrymen-
Judge tenderly – of me.
নিবন্ধের শেষে এমিলি ডিকিন্সন সম্পর্কে কয়েকটি তথ্য জানাই।
◑ এমিলি ও তার ভাই একই মহিলাকে ভালবাসতেন।
◑ এমিলি রহস্যময় কোনো এক মানুষকে চিঠি লিখতেন।
◑ আমেরিকার গৃহযুদ্ধের সময় তিনি ৯০০টি কবিতা লেখেন।
◑ এমিলি বাগান করতে খুব ভালবাসতেন।
◑ ১৮৮৬ সালে মারা যাওয়ার চার বছর বাদে তার প্রথম কবিতার সঙ্কলন প্রকাশিত হয়।
◑ জীবনের শেষের দিকে এমিলি তার ঘরের বন্ধ দরজার ওপার থেকে অতিথিদের সঙ্গে কথা বলতেন।
◑ এমিলির অনুরোধে তার সাদা পোশাকে ঢাকা মৃতদেহ এক সাদা কফিনে ভরে তাকে কবর দেওয়া হয়।
আমার প্রিয় এমিলির দুটি লাইন (১) The brain is wider than the sky আর
(২) I am out with lanterns looking for myself। এই দ্বিতীয় লাইনটির তুলনা নেই!
সারা জীবন প্রায় একাকী কাটিয়ে মাত্র ৫৫ বছর বয়েছে এই রহস্যময়ী কবি মারা যান। ডাক্তাররা মনে করেন এমিলি neurasthemiaর (chronic fatigue syndrome) রুগী ছিলেন। অসীম ক্লান্তির সাথে, দুঃখ, আর ঋতুবদলের অজানা মানসিক প্রভাব তাকে সারা জীবন কষ্ট দিয়েছে।
এমিলি আজীবন মৃত্যু নিয়ে ভেবেছেন। Because I could not stop for death কবিতায় এমিলি বলছেন
Because I could not stop for Death—�
He kindly stopped for me—�
The Carriage held but just 0urselves—
And Immortality.
We slowly drove—He knew no haste�
And I had put away�
My labor and my leisure too,�
For His Civility—
….
মৃত্যু এক ভদ্র মানুষের মত অপেক্ষা করে, তার তাড়া নেই। আমরা যখন তৈরি, তখনি সে আমাদের তার রথে চড়িয়ে নিয়ে যায়। কবি বারবার তার লেখায় বলেছেন “Eternity is so dark”, তিনি অমরত্বকে ভয় পান, তার কথায় “ It seems as if Death which all so dread because it launches us upon an unknown world would be a relief to so endless a state of existence”!