ফ্রান্সিস স্কট ফিটজেরাল্ড, আমেরিকান ঔপন্যাসিক, প্রাবন্ধিক ও ছোটগল্প লেখক, তার লেখা আমেরিকার অভিজাত সমাজের জাঁকজমক ও সমারোহের বিস্তীর্ণ বর্ণনার জন্য বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। এছাড়া তার Tales of the Jazz Age শীর্ষক ছোটগল্প সঙ্কলনটির প্রকাশের পর “Jazz Age” কথাটি আমেরিকার শব্দকোষের অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। তার সংক্ষিপ্ত লেখক জীবনে তিনি ৪টি উপন্যাস আর ১৫০টি ওপর ছোটগল্প লেখেন। যদিও তার জীবনকালে স্কট যথেষ্ট জনপ্রিয়তা ও আর্থিক সাফল্য অর্জন করেন, তার মৃত্যুর পর স্কট ফিটজেরাল্ডের খ্যাতি আরও ছড়িয়ে পড়ে এবং তিনি আমেরিকার সাহিত্যের এক বিশিষ্ট লেখক হিসেবে গণ্য হন।
১৮৯৬ সালে Minnesota ষ্টেটের Saint Paul শহরে এক মধ্যবিত্ত পরিবারে স্কট জন্মগ্রহণ করেন। তার জীবনের প্রথম ভাগ New York ষ্টেটেই কাটে। Princeton ইউনিভার্সিটিতে পড়াকালীন এক ব্যর্থ প্রেমের কারণে ১৯১৭ সালে তিনি স্কুল ছেড়ে প্রথম বিশ্বমহাযুদ্ধে আমেরিকার সৈন্যবাহিনীতে যোগ দেন। Alabama শহরে মিলিটারি ক্যাম্পে বাস করার সময় তার সাথে Montgomery শহরের অভিজাত পরিবারের কন্যা Zelda Sayreএর পরিচয় হয়। যদি প্রথম দিকে স্কটের আর্থিক ভবিষ্যতের কথা ভেবে Zelda তার বিবাহের প্রস্তাব নাকচ করে দেয়, This Side of Paradise (১৯২০) বইটি প্রকাশের পর তার জনপ্রিয়তার নজির দেখে সে বিবাহে সম্মতি দেয়। এই উপন্যাস সেই সময় পাঠক সমাজে বিপুল সাড়া জাগায় আর এবং স্কট ফিটজেরাল্ড আমেরিকার বিশিষ্ট লেখকের তালিকার অন্তর্ভুক্ত হন।
স্কটের দ্বিতীয় উপন্যাস The Beautiful and Dammed (১৯২২) প্রকাশের পর তার নাম সমাজের উচ্চ অভিজাত মহলে ছড়িয়ে পরে। স্কট নিজেও সমৃদ্ধশালী মানুষের জীবনযাত্রার পক্ষপাতী ছিলেন। আয়বৃদ্ধির জন্য এই সময় তিনি The Saturday Evening Post, Esquire ও অন্যান্য ম্যাগাজিনে গল্প লেখা শুরু করেন। এর সাথে সাথে কয়েকবার ইউরোপ ভ্রমণকালে তার স্থানীয় আধুনিক লেখক সম্প্রদায় এবং প্রবাসী আমেরিকান লেখক (যেমন আরনেস্ট হেমিংওয়ে) সমাজের সঙ্গেও পরিচয় হয়। ১৯২৬ সালে স্কটের সমৃদ্ধ জীবনযাত্রায় ভাঁটা পড়ে যখন তার তৃতীয় উপন্যাস The Great Gatsby তেমন প্রশংসা ও আর্থিক সাফল্য লাভ করতে সক্ষম হয় না। যদিও বর্তমানে এই বইটি “Great American Novel” শিরোনামে সম্মানিত, সাময়িক অনটন আর দুর্ভাবনা স্কটের জীবনে অশান্তি নিয়ে আসে। দুর্ভাগ্যক্রমে এই সময় তার স্ত্রী schizophreniaর কারণে মানসিক আরোগ্যনিকেতনে ভরতি হন। সাময়িক দুঃসময়ের ইতি হবার পর ১৯৩৪ সালে স্কট তার চতুর্থ উপন্যাস Tender is the Night সম্পূর্ণ করেন।
আমেরিকার Great Depressionএর সময় উপার্জন বাড়াবার জন্য স্কট হলিউডে চলে আসেন এবং সিনেমার স্ক্রিন প্লে লেখার কাজ নেন। এই কাজে তার সফলতা আসে না, আর স্কট মদ্যপানে আসক্ত হয়ে পড়েন। হৃদরোগে আক্রান্ত রিক্ত মানুষটি মাত্র ৪৪ বছর বয়েসে হার্ট অ্যাটাকে মারা যান। মৃত্যুর পর বন্ধু Edmund Wilsonএর সহায়তায় তার শেষ উপন্যাস The Last Tycoon(১৯৪১) প্রকাশিত হয়।
এবার স্কটের লেখায় আসা যাক। স্কটের প্রথম উপন্যাস This Side of Paradise পাঠক সমাজে বিপুল সাড়া জাগায়। ১৯২০ সালে প্রকাশিত এই বই Jazz Ageএর সময়ে আমেরিকান যুবসম্প্রদায়ের জীবনধারা ও নিতিবাদের এক অন্তর্দৃষ্টিপূর্ণ চিত্রায়ন। বইটির টাইটেল Rupert Brookesএর Tiare Tahiti কবিতার একটি লাইন। গল্পের মুখ্যচরিত্র Princeton ইউনিভার্সিটির সাহিত্যের ছাত্র Amory Blaine বেশির ভাগ সময় চটুল মেয়েদের সাথে প্রেম করে বেড়ায়। তার লক্ষ্য ধনী মেয়েরা, আর প্রেমের পেছনে রয়েছে তার অর্থলাভের সাথে সাথে উচ্চবিত্ত সমাজে প্রবেশের দুরাশা। আমেরিকার মধ্য অঞ্চল থেকে আসা এই ছেলেটি ভাল স্কুল থেকে এক ক্যাথলিক Priestএর তত্ত্বাবধানে শিক্ষালাভ করে আর Princeton ইউনিভার্সিটিতে এসে তার ধারনা হয় যে তার ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল। কলেজে ছুটির সময় Minneapolis শহরে বাড়ি আসার পর তার সাথে এক ধনী পরিবারের মেয়ে Isabelle Borgeএর দেখা হয় এবং কয়েকদিনের মধ্যে সে তার প্রেমে পড়ে। Princetonএ ফিরে আসার পর Amory তার প্রেমিকাকে কে অসংখ্য চিঠি আর কবিতা পাঠায় কিন্তু বছর খানেকের পর Isabelle সেই প্রেমের ইতি টানে। Amory পড়া শেষ করে আমেরিকার সৈন্যবাহিনীতে যোগ দেয়। প্রথম বিশ্বমহাজুদ্ধে ইউরোপের যুদ্ধক্ষেত্রের পশ্চিম সীমানার পরিখাতে বসে সে চিঠিতে জানতে পারে যে তার মা মারা গেছে এবং তাদের পরিবারের সমস্ত ধনসম্পত্তি ভুল ব্যবসায়ে লগ্নির কারণে অন্তর্হিত হয়েছে।
যুদ্ধ থেকে ফিরে Amory নিউ ইয়র্ক শহরে এসে বাসা বাধে। তখন Jazz Ageএর নব উন্মাদনায় শহর উদ্বেলিত। Amory এক বিজ্ঞাপনের কোম্পানিতে কাজ করে যদিও সে কাজটি মন থেকে ঘৃণা করে। এর মধ্যে Rosalind Connage নামের এক চতুর মহিলার সঙ্গে তার পরিচয় হয়। Rosalind লোভী মানুষ, সে গরীব Amoryকে আরও উপার্জনের জন্য খোঁচাতে আর এক ধনী Dawson Ryderএর সাথে প্রেম শুরু করে। মরিয়া Amory তার অফিসের কাজ ছেড়ে মদের ব্যবসায়ে নামে, কিন্তু কপালদোষে তিন সপ্তাহের পর সারা দেশে সুরা পান ও প্রস্তুতি নিষিদ্ধ (Prohibition Ban) হয়ে যায়। এই সব দুর্ঘটনার মধ্যে সে খবর পায় যে Rosalind তার সেই ধনী প্রেমিক Dawsonকে বিয়ে করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে আর তার স্কুলের সেই ক্যাথলিক Priest মারা গেছেন। দিকভ্রান্ত হয়ে একদিন Princetonএ ঘুরতে যাবার পথে এক ট্যাক্সিতে তার সাথে ড্রাইভারের রাজনৈতিক আলোচনা হয় এবং সে socialism নিয়ে অনেক আলোচনা করে। সে ভাবতে শুরু করে তার চারপাশের সমাজে মানুষের নৈতিক অবনতির কথা আর স্থির করে সে যেই মানুষ বা মানুষেরা এই দুর্নিবার বেপরোয়া জীবনযাত্রার বিরুদ্ধে লড়বে, সে তার সাথে যোগ দেবে। ট্যাক্সির অন্য যাত্রী, এক ধনী ব্যক্তি, Amoryর এই ঘোষণার দৃঢ় প্রতিবাদ করে। কথার মধ্যে যখন Amory জানতে পারে যে সেই ব্যক্তি তার Princetonএর এক পুরনো বন্ধুর বাবা আর সেই বন্ধু যুদ্ধে মারা গেছে, সে চুপ করে যায়। ট্যাক্সির কথোপকথনের শেষে সে উপলব্ধি করে যে Princetonএর সেই উচ্চ আশাবাদী ছাত্রটির স্বপ্নভঙ্গ হয়েছে, এখন সে এক ব্যর্থ মানুষ যে চারপাশের উন্মাদনার থেকে বিদায় নিতে চায়। একা হেঁটে Princetonএর ক্যাম্পাসে এসে সে তাকিয়ে থাকে স্কুলের বিশাল gothic স্তম্ভগুলোর দিকে আর শান্তমনে ভাবে, “I know myself … but that is all”। প্রকাশের পর প্রথম বছর বইটির ৪০,০০০ কপি বিক্রি হয়।
এই বইটি স্কট তার নিজের জীবনের প্রথম ধনী অভিজাত পরিবারের মেয়ে Ginevra Kingএর সাথে প্রেমের বছর আর স্ত্রী Zeldaর আর্থিক স্বাচ্ছল্যতার প্রতি বিপুল আকর্ষণের কথা মনে রেখে লিখেছিলেন; গল্পের Isabelle Borge আর Ginevra King একই মানুষ। This Side of Paradise প্রকাশের পর Chicago Tribune পত্রিকার সাহিত্য সমালোচক পাঠকদের সতর্ক করে দেন এই বলে, “make a note of the name, F. Scott Fitzgerald. It is borne by a 23 year old novelist who will, unless I am much mistaken, be much heard of hereafter”। সমালোচকেরা আরও বলেন, “this novel bears the impress, it seems to me, of genius. It is the only adequate study that we have had of the contemporary American in adolescence and young manhood”।
১৯২৫ সালে প্রকাশিত তার বিখ্যাত বই The Great Gatsbyএর প্রেক্ষাপট নিউ ইয়র্ক শহরের কাছে Long Island এলাকা, সময় আমেরিকার Jazz Age, ১৯২০ থেকে ১৯৩০ সাল যখন Jazz মিউজিক আর নাচ সারা দেশ, এমনকি সারা পৃথিবীকে মাতিয়ে রেখেছিলো। গল্পটি Nick Carraway নামের এক মানুষের বলা, সে তার রহস্যময় কোটিপতি বন্ধু Jay Gatsbyর পুরনো প্রেমিকা Daisy Buchananকে আবার ফিরে পাওয়ার আকুলতার কাহিনী আমাদের শোনাচ্ছে। প্রথমেই বলে রাখা দরকার যে এই গল্পটিও লেখক তার নিজের কলেজ জীবনে শিকাগোর ধনী অভিজাত পরিবারের কন্যা Ginevra Kingএর সাথে প্রেমের ছায়ায় রচনা করেছিলেন। Ginevraর সাথে স্কটের Long Islandএর ধনী North Shore এলাকায় বিশাল সব প্রাসাদে বিভিন্ন পার্টিতে যাওয়ার অভিজ্ঞতা তাকে এই বই লেখার প্রেরণা যুগিয়েছিল। বইটি ১৯২২ সালে আমেরিকার আর্থিক স্বচ্ছলতা, ফ্যাশন, আর স্বাধীনচেতা ও কিছুটা বেপরোয়া সামাজিক আচারব্যবহারের এক অপরূপ ইতিহাস। এই সময়ে হুড-খোলা গাড়িতে পুরুষ ও নারী প্রকাশ্যে ঘনিষ্ঠ প্রেম নিবেদন করে, সুরার ওপর দেশজোড়া নিষেধাজ্ঞা থাকা স্বত্বেও বেআইনি মদের ব্যবসা করে প্রচুর অর্থ উপার্জন করে, বিশাল প্রাসাদোপম বাসগৃহে Jazz মিউজিক আর মাতাল বন্ধুর দল নিয়ে নিয়মিত পার্টি করে। এককথায় আমেরিকার ধনী বিভ্রান্ত মানুষ তাদের জীবনে আনন্দের জন্য সামাজিক নিয়মের সব বেড়া ভেঙ্গে এক ঘোরের মধ্যে দিয়ে দিন যাপন করে এই দশকে যার এক অপরূপ বর্ণনা আমরা পাই স্কটের The Great Gatsby বইটিতে।
গল্পের শুরুতে ১৯২২ সালের বসন্তে Yale ইউনিভার্সিটির ছাত্র Nick Carraway বন্ড সেলস্ম্যানের চাকরি নিয়ে নিউ ইয়র্ক শহরে আসে এবং Long Islandএর West Egg পাড়ায় এক বাংলো ভাড়া করে। এই বাংলোর পাশেই Jay Gatsby নামের এক রহস্যময় ধনী মানুষের প্রাসাদ যেখানে Jay নিয়মিত বিশাল সব পার্টির আয়োজন করে কিন্তু নিজে কখনো সেই পার্টিতে যোগ দেয় না! এক সন্ধ্যেবেলা Nick তার এক দূর আত্মীয়া Daisy Buchanonএর সাথে এলাকার অভিজাত রেস্তোরাঁয় ডিনারে আসে। Daisy Yale ইউনিভার্সিটির নামকরা ফুটবল প্লেয়ার Tom Buchanonএর স্ত্রী, আর Tom Nickএর বন্ধু। তারা Jayএর প্রাসাদের বিপরীতে জলের ওপারে শিকাগো শহরের এক প্রাসাদে বাস করে। শিকাগোর এই প্রাসাদে Nickএর সাথে Jordan Baker নামের এক লম্পটের পরিচয় হয় যে Nickকে জানায় যে Tomএর Myrtle Wilson নামে এক রক্ষিতা আছে যে এক নোংরা পাড়ায় থাকে। সন্ধ্যেবেলায় Nick প্রায়ই দেখে Gatsby একলা প্রাসাদের লনে দাঁড়িয়ে জলের ওপারে এক সবুজ আলোর দিকে একদৃষ্টে তাকিয়ে থাকে। Daisyর সাথে ডিনারের কয়েক দিন বাদে ঘটনাচক্রে Nick মাতাল Tomকে নিয়ে ট্রেনে চড়ে নিউ ইয়র্ক শহরে আসে। রাস্তায় এক গ্যারাজের মেকানিক Georgeএর বউ সেই Myrtleকে নিয়ে তারা তিনজন এক হোটেলের ভাড়া ঘরে ফুর্তি করতে আসে। সেখানের পার্টিতে Myrtle Daisyর সম্পর্কে কোনো মন্তব্য করলে মাতাল Tom চাঁটি মেরে Myrtleএর নাক ভেঙ্গে দেয়। এই ঘটনার পর এক বিকেলে Gatsbyর প্রাসাদে এক পার্টিতে নিমন্ত্রিত হয়ে Nick তার প্রাসাদে আসে যদিও সে পার্টির কাউকে চেনে না। পার্টিতে প্রচুর মদ খাবার পর তার দেখা হয় Myrtleএর সাথে। তার সঙ্গে আড্ডা মারার সময় সেখানে এক মানুষের আবির্ভাব হয় যে নিজেকে Jay Gatsby বলে পরিচয় দেয়। সেই মানুষটি বারবার জোর করে Nickকে বলে যে সে আর Nick যুদ্ধে একই সেনাবাহিনীতে কাজ করতো। এইভাবে Gatsbyর পুরনো পরিচয় গড়ে তোলার চেষ্টার পর Nick পার্টি থেকে বিদায় নেয়, কিন্তু সে লক্ষ্য করে Gatsby তাকে মন দিয়ে দেখছে।
জুলাই মাসে Nick আর Gatsby শহরের এক বেআইনি পানশালায় খেতে যায়। সেখানে আবার Gatsby তার যুদ্ধের গল্প আর Oxfordএ পড়াকালীন অভিজ্ঞতার গল্প শোনায়। এই ঘটনার পর Myrtleএর সঙ্গে এক মুলাকাতের সময় Myrtle Nickকে জানায় যে Gatsby Daisyকে ১৯১৭ সালে দেখার পর তার প্রেমে পড়ে, কিন্তু Gatsby যুদ্ধে চলে গেলে Daisy বাধ্য হয়ে Tomকে বিয়ে করে নেয়। Gatsby এখন চায় যে তার ঐশ্বর্য আর রঙ্গিন পার্টির টানে Daisy আবার তার কাছে চলে আসে। এরপর Nickএর সাহায্যে Gatsby Daisyর সাথে প্রেমে মত্ত হয়ে যায়। সেপ্টেম্বর মাস্ নাগাদ এই প্রেম Tomএর গোচরে আসে আর তার সাথে Gatsbyর নিউ ইয়র্কের Plaza হোটেলে তুমুল ঝগড়া বাধে। Gatsby জানায় যে Daisy কখনোই Tomকে ভালবাসে নি, আবার Daisy বলে যে সে Tom আর Gatsby দুজনকেই ভালবাসে। ঝগড়ার সময় Tom সবাইকে জানিয়ে দেয় যে Gatsby বেআইনি মদের ব্যবসা করে তার বিপুল অর্থ উপার্জন করেছে। এরপর Gatsby Daisyকে তার গাড়িতে নিয়ে বাড়ির পথ ধরে। West Egg যাবার পথে Daisy গাড়ির ড্রাইভার, রাস্তায় Georgeএর গ্যারাজের কাছে এক দুর্ঘটনায় সে Myrtleকে ধাক্কা দিয়ে মেরে ফেলে। Tom Georgeকে গোপনে জানায় যে গাড়ি Gatsbyর, আর সেই দুর্ঘটনার সময় গাড়ি চালাচ্ছিলো। George ভাবে Gatsby হয়ত তার বউয়ের প্রেমিক আর প্রেম জানাজানি হবার ভয়ে সে তাকে শেষ করেছে। রাগের মাথায় George পরদিন প্রাসাদের সুইমিং পুলে Gatsbyকে গুলি করে মেরে নিজে আত্মহত্যা করে। গল্পের শেষে বিতৃষ্ণ Nick নিউ ইয়র্ক ছেড়ে মধ্য আমেরিকার কোথাও চলে যাবার সিদ্ধান্ত নেয়। যাবার আগে শেষবারের মত Gatsbyর প্রাসাদে গিয়ে সে জলের ওপারে Daisyর প্রাসাদের ঘাটের সেই সবুজ আলোর দিকে অনেকক্ষণ তাকিয়ে থাকে। The Great Gatsby প্রকাশের পর New York Timesএর সমালোচক লেখেন, “the novel is a mystical and glamorous tale of the Jazz age”। Los Angeles Timesএর মতে “the novel is a revelatory work of art that leaves the reader in a mood of chastened wonder”।
স্কট ফিটজেরাল্ড তার লেখক জীবনে অনেক ছোটগল্প লিখেছিলেন। এই গল্পগুলিতেও আমরা আমেরিকার Jazz Ageএর সামাজিক, অর্থনৈতিক ও নৈতিকতার তোলপাড়ের সাথে পরিচিত হই। যেমন স্কটের Bernice Bobs Her Hair গল্পটির কথাতেই আসা যাক। বিংশ শতাব্দীটির প্রথম ভাগে আমেরিকার মহিলাদের সাজ পোশাক এবং চুলের ফ্যাশনের বিশাল পরিবর্তন হয়। এই সময় Wisconsin ষ্টেটের Eau Claire নামের এক ছোটো শহর থেকে এক আধা-আদিবাসী আধা-সাদা মেয়ে Bernice Minnesota ষ্টেটের বড় শহর Saint Paulএ তার অভিজাত সাদা ধনী ভাগ্নি Marjorieর কাছে বেড়াতে এসেছে। সুন্দরী Marjorieর সাজপোশাক আর চুলের স্টাইল দেখে এক পার্টিতে Bernice ঘোষণা করে যে সে তার লম্বা চুল কেটে “বব” করে নেবে। কিন্তু এই সিদ্ধান্ত নাজানা অনেক ঝামেলার সৃষ্টি করে যা নিয়ে এই গল্প।
Marjorieর সাথে এক শনিবার নাচের পার্টিতে গেলে Marjorie লক্ষ্য করে যে কোনো সুদর্শন ছেলে Berniceএর সাথে নাচার প্রস্তাব দেয় না। এই ব্যাপারটা Marjorieর পছন্দ হয় না। এর পর বাড়িতে এক সন্ধ্যায় Bernice আড়াল থেকে শুনতে পায় যে Marjorie তার মাকে বলছে, ‘এই Bernice একেবারে গেঁয়ো। লোকের সাথে মেশার সময় তার অস্বস্তিকর ব্যবহার আর স্মার্ট কথা বলতে না পারার কারণ ওর শরীরে আমেরিকার আদিম অভিবাসীর রক্ত বইছে। ওই অধিবাসী সম্প্রদায়ের মহিলারা তো শুধু বসে থাকে আর কদাচিৎ কথা বলে”। পরদিন সকালে Bernice প্রথমে রেগে শহর থেকে চলে যাবার হুমকি দিয়েও যখন Marjorieর সাড়া পায় না তখন অগত্যা সে Marjorieর সাহায্যে এক “society girl” হবার সিদ্ধান্ত নেয়। এরপর Marjorie Berniceকে কিভাবে ইন্টারেস্টিং কথা শুরু করতে হয়, কি করে ছেলেদের ফ্লার্ট করে বশে আনতে হয়, আর কিভাবে ভাল নাচতে হয় তার তালিম দেওয়া শুরু করে। পরের পার্টিতে Bernice আবার Marjorieকে হতাশ করে যখন অনেক ভেবে সে পার্টির সবাইকে জানায় যে সে তার চুল বব করবে আর সবাই সেই চুল কাটা দেখবে। গণ্ডগোল এরপর আরও বাড়ল যখন পাশের বাড়ির ছেলে Warren যে আগে Marjorieকে ছোট বয়স থেকেই ভালবাসত, সে হঠাৎ করে Berniceএর প্রেমে পড়ে যায়। Marjorie এবার প্রকাশ্যে Berniceকে অপদস্ত করার প্ল্যান নেয়।
প্ল্যান অনুযায়ী প্রথমে Marjorie ক্লাবের সব ছেলেদের আগে থেকে জানিয়ে রাখে যে Berniceএর চুল কাটা শুধু তাদের দৃষ্টি আকর্ষণের ধান্দা। এরপর Marjorie ক্লাবের ছেলের দল, Bernice, আর তার নতুন প্রেমিক Warrenকে নিয়ে নাপিতের দোকানে হাজির হয়। নাপিত চুল বব করার পর Bernice লক্ষ্য করে যে ছেলেরা সবাই তার নতুন চেহারা একেবারেই পছন্দ করছে না আর তখনই Bernice বুঝতে পারে যে Marjorie তাকে অপদস্থ করার জন্যই চুল কাটতে উৎসাহ দিয়েছে। বাড়িতে ফিরে এলে Marjorieর মা Berniceএর এই রূপ দেখে তাকে জানায় যে বাড়িতে আগামী পার্টির আগেই Marjorie ও বাড়ির সকলের সম্মান বাঁচানোর জন্য Bernice যেন বাড়ি ছেড়ে চলে যায়। সেই রাতে নিজের জিনিশ গুছিয়ে Bernice পরের দিন সকালের ট্রেন ধরার জন্য তৈরি হয়। সবার শেষে গভীর রাতে Bernice নিঃশব্দে Marjorieর ঘরে ঢুকে ঘুমন্ত Marjorieর সুন্দর বেণী দুটি কেটে নেয়। সেই বেণী আর তার সুটকেস নিয়ে বাড়ি ছেড়ে স্টেশন যাবার রাস্তায় সে Marjorieর বেণী দুটি Warrenএর বাড়ির বারান্দায় ছুঁড়ে ফেলে দেয় আর চিৎকার করে বলে “আমার উচিত ছিল ওই মেয়ের মাথা ন্যাড়া করে দেওয়া”। এরপর জ্যোৎস্না রাতে তার সুটকেস হাতে Bernice দৌড় দেয় স্টেশনের পথে। গল্পটিতে আমরা Jazz ageএর উদ্দাম দিকভ্রান্ত তরুণ তরুণীর কথা বলার ধরন আর তাদের সমাজে “ফিট” করার অসীম আকাঙ্ক্ষার কিছু উদাহরণ পাই। স্কটের এই গল্প Saturday Evening Post ম্যগাজিনে প্রকাশিত হয়। পত্রিকার সেদিনের মলাটের ছবি নিচে রইল। লেখক Bernice নামটি নিয়েছেন ইজিপ্টের কিংবদন্তি Bernice IIএর গল্প থেকে। কথিত আছে যে এই Bernice ii তার বহু সাধের লম্বা বেণী দেশের যুদ্ধে জয়লাভের জন্য ঈশ্বরকে দান করে। ঈশ্বর এই বলিদানে সন্তুষ্ট হয়ে সেই চুলের বেণী স্বর্গের Coma Berenices নক্ষত্রপুঞ্জে সাজিয়ে দেন।
স্কট ফিটজেরাল্ডের The Curious Case of Benjamin Buttonগল্পটি আমার খুব প্রিয়। এক মানুষের বড় থেকে বয়েসের উল্টো দিকে গিয়ে ছোট হয়ে যাবার এই কাহিনীটি ১৯২২ সালে Collier’s ম্যাগাজিনে প্রকাশিত হয়। ২০০৮ সালে এই গল্প নিয়ে যে চলচিত্র তৈরি হয় তাতে ব্র্যাড পিট অসাধারণ অভিনয় করেন। গল্পে Benjamin Button ১৮৬০ সালে Baltimore শহরে যখন জন্মগ্রহণ করে তখন তাকে দেখতে ৭০-বছরের এক বৃদ্ধের মতন, আর সে কথা বলতে পারে। Benjamin বড় হবার সময় তার বাবা তাকে ছোটদের খেলনা দেয়, সে বিরক্ত হয়। Kindergartenএর ক্লাসে সে ঘুমিয়ে পড়ে, কারণ এই ছোট ছেলেমেয়েদের পড়ায় তার মন নেই। ১৮ বছর বয়েসে Benjamin Yale কলেজে ভর্তি হয় কিন্তু কলেজ কর্তৃপক্ষ তাকে এক ৫০ বছরের বুড়োর মত ব্যবহারের জন্য বাড়ি পাঠিয়ে দেয়। Benjaminএর যখন ২০ বছর বয়স তখন পরিবারের সবাই বুঝতে পারে যে সে আসলে বয়েসের সাথে উল্টো দিকে চলেছে। পরিবারের Roger Button & Coএর ব্যবসা তার হাতে তুলে দেওয়া হয়। এই সময় সে
Hildegarde Moncrief নামের এক মহিলাকে বিয়ে করে। Hildegarde তাকে Benjaminএর বড় ভাই Roger Button বলে ভুল করে আর যেহেতু সে বয়স্ক মানুষই বেশী পছন্দ করে, বিয়েতে কোন সোরগোল হয় না। Benjaminএর এই শারীরিক অবস্থার কথা তার অজ্ঞাত থেকে যায়।
সময়ের সাথে সাথে Benjamin যত ছোট হয়, Hildegarde কেবল বুড়ি হয়ে যায়। তার ঘ্যানঘেনে স্বভাবে অতিষ্ঠ হয়ে তরুণ Benjamin Spanish-American যুদ্ধে যোগ দেয়। যুদ্ধে অসাধারণ বীরত্ব দেখিয়ে মেডেল নিয়ে সে বছর দুয়েক বাদে বাড়ি ফিরে আসে। ১৯১০ সালে যখন তাকে ২০ বছরের যুবকের মত দেখায়, Benjamin তখন ছেলের হাতে ব্যবসা তুলে দিয়ে Harvard ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি হয়। প্রথম বছর সেখানে সে ফুটবল খেলায় নাম করে আর প্রতিদ্বন্দ্বী Yale কে (যারা তাকে কলেজ থেকে বাড়ি পাঠিয়ে দেয়) হারায়। মুশকিল হয় দুবছর পর যখন তার আসল বয়স ১৮, সেই কিশোরের গায়ে ফুটবল খেলার শক্তি নেই। কোন ক্রমে পড়া শেষ করে সে বাড়ি ফিরে আসে। বাড়ি এসে সে শোনে যে তার বউ ইটালিতে চলে গেছে। বাড়িতে কড়া কাকার শাসনে তাকে থাকতে হয়, বয়েসে বড় হলেও তাকে কাকা বলে ডাকতে হয়। এরপর ক্রমে Benjamin খামখেয়ালী কিশোর থেকে এক ছোট ছেলেতে পরিণত হয়। কাকার ছেলের সাথে সে Kindergartenএ পড়তে যায়। এরপর Benjamin তার স্মৃতিশক্তি হারায়, ছোট থেকে আরও ছোট এক শিশুতে পরিণত হয়। বাড়িতে নার্স ছাড়া কাউকে সে আর চিনতে পারে না। এরপর সব কিছু আবছা হয়ে তার সব শেষ হয়ে যায়।
মানুষ যদি বড় থেকে ছোট হয় তাহলে আমাদের চারপাশে কিরকম অভাবনীয় গণ্ডগোল বাঁধবে তাই নিয়ে স্কট এক মনোরম গল্প শুনিয়েছেন। সেই উলটপুরাণ জীবনের বিচিত্র দৃষ্টিকোণ গল্পের প্রধান আকর্ষণ। সমালোচকদের কথায় গল্পটি “A whimsical odyssey in reverse” আর “a chronicle of one odd branch of a family tree”। তাই তাদের অভিভাবন, “Much like Kafka’s Metamorphosis, it requires the reader to suspend a certain amount of disbelief but the payoff ends up being just as good”।
পরিশেষে স্কট ফিটজেরাল্ডের লেখার স্টাইল নিয়ে কিছু বলা দরকার। স্কটের সব লেখায় একটা চিন্তাধারা বা আইডিয়ার সাথে আর একটা ধারার সংঘর্ষের সমাধান কিভাবে হয় তার অপরূপ বর্ণনা রয়েছে। এই ধারাগুলি তার লেখাতে বিভিন্ন চরিত্রে রূপে পাঠকের সামনে হাজির হয়, যেমন Amory Blaine, স্কটের প্রথম নভেলের নায়ক, এক সুদর্শন মেধাবীছাত্র, The Great Gatsbyর মুখ্য চরিত্র Jay Gatsby এক ধনী সুপুরুষ, নতুন অর্থে বলিয়ান। এরা সবাই সমসাময়িক কোন এক বিশিষ্ট ধারার প্রতিনিধি, তাদের সংগ্রাম নতুন ভাবধারার সঙ্গে। এর সাথে সাথে তার লেখা আমেরিকায় Jazz Ageএর সময়কালে নবীন সমাজের সামাজিক ও নৈতিক ভাবধারা আর দৈনন্দিন জীবনের তোলপাড়ের এক মূল্যবান ইতিহাস হয়ে রয়েছে।