যদি বৃষ্টি নামে।। ধারাবাহিক উপন্যাস।। রাজ কুমার শেখ।। - শৃণ্বন্তু যদি বৃষ্টি নামে।। ধারাবাহিক উপন্যাস।। রাজ কুমার শেখ।। - শৃণ্বন্তু
সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৫:০৩ পূর্বাহ্ন

যদি বৃষ্টি নামে।। ধারাবাহিক উপন্যাস।। রাজ কুমার শেখ।।

আপডেট করা হয়েছে : রবিবার, ১৮ আগস্ট, ২০২৪, ৪:০৪ অপরাহ্ন
যদি বৃষ্টি নামে।। ধারাবাহিক উপন্যাস।। রাজ কুমার শেখ।।

যদি বৃষ্টি নামে (পঞ্চম পর্ব)।। রাজকুমার শেখ।।

কি গো নিবিড়দা, ওরা তো এ মুখো হয় না? আমি তো কান কাটার ভয়ে ভয়ে থাকি।
তুই একটা পাঁঠা। ওরা আসবে কিরে? কবাডি খেলা হল। আর কান কাটা হেরে গেল। আমি গাঁয়ের ছেলে। ও শালা আমাকে পারে? দিলাম ভালো করে। এ মুখো আর হবে না।
তুমি খুব সাহসী।
আমি আবার সাহসী হলাম কই?
তা না হলে বদমাশগুলোকে এমন দিলে যে আর আসবে না। বাঁচলাম বাবা। কলির কাছে ফিরলে বাঁচি।
ছুটি নে। কলির সঙ্গে কোথাও ঘুরে আয়।
তুমি যে কি বল নিবিড়দা! কলিকে তুমি কিছুই চেন না। ও যাবে আমার সঙ্গে ঘুরতে! ওর মধ্যে সে ভাব-ভালোবাসা আছে নাকি? শুধু পয়সা চেনে। এ বেলা ও বেলা ফোন করে টাকা চায়। দিতে পারলে ভালো। না দিতে পারলেই নানান কথা।
আরে বউটা আছে বলেই তো চায়।
ওর দিনকে দিন সাজগোজ বাড়ছে। আচ্ছা বলোতো দাদা, বুড়ি মাগির সাজগোজের অত কি?
চোপা করিস না লালু।
মুখ ফসকে বেরিয়ে গেছে।
কলি এ সব শুনলে তোর খবর আছে।
না গো নিবিড়দা, ও সাজে অন্য জনের জন্য। হাবুর জন্য।
সে আবার কে?
আছে ওর মটকা নাঙ। আমাকে লুকালে হবে কি? আমি সব জানি।
তুই একটা কাপুরুষ। কলিকে সামলাতে পারিস না। তাহলে আর কি করলি জীবনে? যা খাবার নিয়ে আয়। খিদে পেয়েছে।
যাই দাদা।
এমন সময় লালুর ফোন বেজে ওঠে রিনরিন করে।
চলে এলো দাদা। কথা শেষ করলাম না আর ফোন। লালু বিরক্ত হয়ে ফোনটা ধরে।
হ্যাঁ— বল!
ও পাস থেকে কলি বলে, কাল টাকা লাগবে। এখানে মেলা বসেছে।
তোর টাকা ছাড়া কথা হয় না?
ও– লো! এ আবার কি কথা? সাধ করে চাইছি। নাঙকে দেব বলে।
এই মাগি, করিস তো নাঙ। তোর চোপা ভেঙে দেব। মাগি কতিকার!
লালু ক্ষেপে যায় কলির কথাতে। ও ফোনটা রেখে গজ গজ করে। বিড়বিড় করে গাল দিতে থাকে। নিবিড় ওদের ঝামেলা দেখে বেশ মজা পায়। আছে বেশ।
ওরে অত রাগ করিসনি। কলি ঠিক আছে। আসলে তোকে রাগানোর জন্য এ সব বলে।
না দাদা, মাগি হারামি আছে। ওকে আমি বিশ্বাস করি না।
বিশ্বাস না করলে সংসার করবি কেমন করে? যা। মাথা ঠান্ডা কর। আজ জমিয়ে দুজনে খাবো। তোর যা ভালো লাগবে নিয়ে আয়।
লালু হোটেল চলে গেল। চাঁদটা আজও আছে আকাশে। গা টা ব্যথা করছে। কাল কবাডি খেলতে গিয়ে এমন হল। শালা কান কাটা মনে করে তার ওপর দিয়ে কেউ নেই। ওরা দলে পাঁচজন ছিল। নিবিড় এমন মার দিয়েছে যে আর এ এলাকাতে আসবে না। ধাবার মালিক খুব খুশি। নিবিড়কে সঙ্গে সঙ্গে ঠান্ডা এনে দেয়। নিবিড় নেয় না। চলে আসে ও। তাজনূর সব শুনে বলে, নিবিড়দা, ওদের সঙ্গে কেউ এমন করলে কেন? পুলিশ ছিল। আমি সব ঠিক করে দিতাম।
ও ভাবে সব কাজ হয় না। দরকার এ সবের।
তাই বলে তুমি! যদি কিছু হত?
হত। কি আর করার।
আমি আসছি কাল।
এসো।
তাজনূর ফোন রাখে। নিবিড় আর কথা বাড়ায় না। ও এসে শুয়ে পড়ে।

নিবিড় চাঁদ দেখছিল। আজও ওর সাহেব বাঁধে যেতে মন করছে। জোছনা যেন ওকে ডাকছে। লালু এলেই ও যাবে। আজ হাতগুলো ব্যথা করছে। কান কাটা আর তার কাছে আসবে না। নিবিড় অনেক দিন পর কবাডি খেললো। তাজনূর কাল আসবে। এখানে এসে পুলিশকে বলবে সব। নিবিড়ও যাবে সঙ্গে। লালু আজ ভয়ে ভয়ে হোটলে গেছে। ওর সবতে ভয়। কলিকেও ভয় পায়। ওর যে কি হবে! এমন সময় লালু এলো। ওর চোখে মুখে কেমন এক ভাব। খাবার রেখেই বলে, নিবিড়দা, তুমি হীরো হয়ে গেলে। তোমার জন্য আজ হোটেলে পয়সা নিল না। রুটি মাংস জোর করে দিল। আমি নিতে চাইনি। ওরা বলে, কান কাটাকে তাড়ানোর জন্য ওরা খুব খুশি। ও নাকি এদের খুব জ্বালাতন করতো।
তুই একটা কিরে? যা রুটি ফেরত দিয়ে আয়।
যাবো?
যাবি মানে! যা। টাকা দিয়ে আয়। বলবি, দাদা বিনা পয়সায় খায় না।
লালু মুখটাকে চাঁদা মাছ বেয়ারার মতো করে অগত্যা গেল। নিবিড় সত্যি করে আবার হীরো হয়ে গেল নাকি?
ও মনে মনে হাসে। মানুষ পারে বটে। এখানে না এলে অনেক কিছুই ওর অজানা থেকে যেত। এ সব নিয়ে কখনো ও লিখবে। তাজনূর ওকে কাজটা না দিলে এ সবের মুখোমুখি হতে হতো না। ওর এবার সত্যি খিদে পেয়েছে। লালু এলে এক সঙ্গে খাবে। আজ রাতে আবার বের হবে ও। কথাদের ওখানে একদিন যেতে হবে। কই ও তো আর আসে না? কথা কি আর আসবে না? ওর বাপটা রোজ কাজে আসে। দুপুরের খাবার নিয়ে আসেন। এখানকার কাজ শেষ হলে তাকেও ফিরতে হবে। কথার সাথে আর দেখা হবে না। দেখা হবে না কান কাটার সঙ্গেও। কথাকে ও মনে রাখবে। মিষ্টি কথা ওর। সহজে আলাপ করতে পারে। মেয়েটিকে মানুষ করে তুলেছেন বেশ। ওর স্কুলে একদিন যাবে ও। সাহেব বাঁধের গায়ে স্কুলটি। কথাকে চমকে দেবে। এখানে বেশির ভাগ মানুষ মাছ ধরে জীবন চালায়। শীতের মরসুমে পুঁটি মাছের শুটকি দেয়। বেশ চড়া দামে বেচে। কিন্তু সব বছর ভালো মাছ ওঠে না। নদীর বুকে তেমন মাছ আর হয় না। এ সব তথ্য কথার বাপ একদিন বলছিলেন জল খাবার খেতে খেতে। তিনিও কাজ না থাকলে মাছ ধরতে যান নদীতে। নিবিড় এর জীবনের সঙ্গে ওতোপ্রোতো ভাবেই জড়িয়ে আছে এ সব জেলে জীবনের কথা। সে নদী ভালো বাসে। তাই তো সে রোজ সময় পেলেই নদীর পাড়ে গিয়ে দাঁড়ায়। নদী দেখে। জেলেদের সঙ্গে কথা বলে। তাদের হাতে লেগে থাকা জলজ গন্ধ। মাছের আঁশটে গন্ধ। এ সব ওর খুব ভালো লাগে। তাদের সঙ্গে ও মিশে যেতে চায়। জীবনের বাঁকে লুকিয়ে থাকা আলো খুঁজে চলে। নিবিড় বসে বসে এ সব ভাবছে।
লালু এলো একটু দেরি করেই। হয়তো কোথাও দাঁড়িয়ে বিড়ি ফুঁকছিল। ওর সামনে লালু বিড়ি খায় না। নিবিড় এর ভালো লাগে এ বিষয়টা। ওকে সম্মান করে। লালু দিল খোলা ছেলে। কলি এত কিছু বলে। তা শুনেও রাগ করে না। ও ভুলে যায়। সব কাজ মন দিয়ে করে। যা বলা যায় তা ও মুখ বুঝে করে। নিবিড় ওকে সবই ছেড়ে দেয়। যদিও অফিসের কালুদা সব খবর রাখেন। হিসেব নিবিড়কে-ই দিতে হয়। মাঝে মাঝে শহরে যায় ও। তাজনূরের কেবিনে গিয়ে যা বলার ও বলে। মিলন এখানে আসবো বলেছে। ও এলে একপ্রস্ত হবে ওর সঙ্গে নিবিড়ের। ওকে ফাঁসিয়ে বেশ আছে। এক বারও ফোনও করে না। কি যে করে বেড়ায়!
নিবিড় রাতের খাবার খেয়ে বেরিয়ে পড়ে। চাঁদের আলো ঢলে পড়েছে। চরাচর যেন ভেসে যাবে। ও আজ এই মায়াবী আলো গায়ে মেখে ঘুরে বেড়াবে। খুঁজে ফিরবে হারিয়ে যাওয়া মনের কথাগুলোকে। ভাববে বসে বসে।

লালু ঘুমিয়ে গেলে ও বের হয়েছিল। ফুরফুরে হাওয়া। মনটা ভালো হয়ে যায়। সারারাত জাগার পর চাঁদও ঘুমোতে যায়। কিন্তু নিবিড় ঘুমোতে পারে না। তার রাত জাগা অনেক দিনের অভ্যেস। কত রাত জেগে বই পড়ে। লেখে। আকাশ দেখে। ওর মাকে মনে পড়ে। কপালে হাত দিয়ে তাকে দেখে। খোকা ঠিক আছে তো? এ সব অনুভূতির স্বাদ আজও ও ভুলতে পারে না। মা নেই অনেক দিন। কিন্তু সেই বড়ো আপেল ও আর দেখতে পায় না। জীবনে হয়তো আর দেখতেও পাবে না। সময় চলে যাবে আপন নিয়মে। দুপাশের চেনা জানা মানুষ গুলোও একদিন যে যার পথে চলে যাবে। আসলে কিছুই ফিরে আসে না। শুধু ফিরে আসে ভালো বাসার মানুষের ভালোলাগা কথাগুলো। এমন কি কষ্টগুলোও। সে সব মনে করে শুধুই কষ্ট পাওয়া। নিবিড় ভুলতে পারে না। ওর জীবনেও তেমন কত আপনজন এসেছে আবার হারিয়েও গেছে। কিন্তু তাদের কথাগুলো এখনো দাগ রেখে গেছে।
নিবিড় নদীটার দিয়ে তাকিয়ে এ সব ভাবছিল। কাজ শেষ হলেই ও এখান থেকে চলে যাবে। কথাকেও আর দেখবে না। ওর সঙ্গে দেখা করা হল না। কথা আর আসে না। মেয়েটি খুব ভালো। মিষ্টি করে কথা বলে। নিবিড় একদিন যাবে হাতে সময় নিয়ে। কথার সঙ্গে দূরে হেঁটে যাবে। নদীর বাঁধের ওপর দিয়ে। নদীর শূন্য নৌকোতে বসে গল্প করবে। জল ছোঁবে হাত দিয়ে। কথাকে শোনাবে তার কথা।
নিবিড় একটা সিগারেট ধরিয়ে টানতে থাকে। কখনো কখনো খেতে ইচ্ছে করে। ইচ্ছে হলে খায়। রাতে নৌকো করে জেলেরা জাল ফেলে মাছ ধরছে। টিমটিমে আলো জ্বলছে। বাতাসে নৌকো দুলছে। রাতের এই মায়াবী পরিবেশে সহজে ঘুম আসবে না। এখানে এসে তার খুব ভালো লাগছে। সাধারণ মানুষের সঙ্গে মিশতে পারছে। কত ধরনের মানুষ আসে কাজের জন্য। সে সব লালু সামলায়। রাত গভীর হচ্ছে। এখন কত রাত হবে কে জানে।
নিবিড় বসে থাকে। চাঁদটা ওকে ড্যাব ড্যাব করে দেখছে। শিশির ঝরে পড়ছে গাছের পাতা থেকে। হিমেল বাতাস। চাঁদটা ঘুমোতে গেলে তবে ও উঠবে। আজ সারারাত জেগে থাকবে ও। নিবিড় গুন গুন করে গান গায়।

সে আমার কবিতা
সে আমার মন পাখি
উড়ে গেলে
সব ফাঁকি…                                (ক্রমশ:)


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগ থেকে আরোও
Theme Created By FlintDeOrient.Com
error: Content is protected !!
error: Content is protected !!