মোঃ নূরুন্নবী মন্ডলের পাঁচটি কবিতা:
কবিতা:
১. দায়
শত সহস্রকালের এ মহাযাত্রা।
বিবর্তনের পথে
লড়েছি হিংস্র পশুর সাথে
থেকেছি গুহায়
সময়ের বুকে ফেলে এসেছি অগনিত ক্ষত
সিংহের থাবার স্পষ্ট টোটেম এখনো বলিষ্ট বাহুতে
কোষের ব্যবচ্ছেদে জিনে জিনে আজো প্রকট আদিমতার ছাপ।
মাংসের বুক চিড়ে লেখা এ লিপি
রক্তের দামে কেনা এ ইতিহাস।
মানুষ বদলেছে তার রূপ
সুটেট বুটেডে আজ সে মীমাংসার গোল টেবিলে।
আজো তুমুল লড়াই – কলমে কলমে
ছাপার কালিতে ঘুমিয়ে ন্যায্যতার লাল রক্ত
এখনো শোধ দেবার আছে
প্রজন্ম থেকে প্রজন্মের দায়
মহাকালের দায়।
২. মুখোশ
রুলিং পার্টি অতটা রাখেনিকো কথা
বেমালুম ভুলেছে ঢাউস ঢাউস অতীত ইশতেহার
জাতীয় মসনদে মঞ্চস্থ সততার সচেতন নাটক।
সর্বংসহা মা এবং তার মহিমান্বিত হাতদুটো
ভুলেছিল সংশুদ্ধ পথ-যখন সৎমা ছিলেন।
হৃদয়ের নোঙর ভিড়েছিল যে প্রমোদকাননে
প্রভঞ্জন যার সুরভী এনেছিল বয়ে
হৃদয় জাগরী প্রিয়তমা
সব ভুলে সেও প্রাক্তন -দিব্যি আরেক সাজানো সংসারে।
আসলে-কেউ অতটা নিরেট হয়না কখনো
সবাই পরিস্থিতির মুখোশ পরে!
৩. ছুরি
ছুরিটার জং ধরেছে গায়
ঘরের কোণে অন্ধকারে বড্ড অবহেলায়।
এটা কেমন জীবন হায়?
পুরো জনম যেথায় ক্ষয়।
তাই – লাজ ছেড়েছি, ভয় ছেড়েছি
সিনায় – ধার দিয়েছি, শাণ দিয়েছি।
ছুরিটা এখন ভরপুর ক্ষুরধার
সুযোগ পেলেই চিরবে মাংস-ছাড় দেবে না আর।
৪. বিষাদের গান
ও শূন্য হৃদয় কাঁদছো কেন?
এই আষাঢ়ের কালে
ঝরছো কেন সারাটা ক্ষণ?
ব্যর্থ অতীত জলে।
তুমি যে তার অযোগ সংখ্যা
বিয়োগ হতেই হবে,
কেন ভেবে কষ্ট বাড়াও?
তোমার কে হয়েছে কবে?
কাঁদছে কদম, কাঁদছে হিজল
কাঁদে দিনরাতে,
ওই নদীটাও কেঁদেছে হায়
বোন বেহুলার সাথে।
ঝরলে ঝরুক রক্তসবি
বাড়ুক হৃদয় ক্ষত,
মনটাকে হায় সাগর কর
লোনা কাঁদাক অবিরত।
৫. বট ও পরগাছা
বটের নিন্দে করিস কেনে?
তুই কি সম কর্ম-জ্ঞানে?
আগে বট সম তো হ
ছায়ায়-ফলে-অম্লজানে আগে জীবনতরী বহ।
তুই রে পাজি পরগাছা
কি নিজেরে ভাবিস বাছা?
একটু ঝেরে কাশ তো সাচা
তোর মগজ দেখি ভীষণ কাঁচা?
তুই বুজরুক বিরুৎ লতা
গায়ে গোটা দুয়েক পাতা
তাতেই ভাবিস বড় নেতা?
বংশের চিন নাই রে হেতা
ওরে খবিশ-একটা কথা
তোর মাথার উপর কাহার ছাতা?
শাণ দে মনে ওরে ভোঁতা
মানির মানের মারিস খেতা?
এত সাহস পাস রে কোথা?
বড় যদি হতেই চাস? কথা কম ক
বিশাল বড়, মনটা কর,যেমন শিরের উপর খ
বটের মূলে, অহং ভুলে, কদমবুচি ল
ওরে কপট, নচ্ছার তুই, আগে যোগ্যতম হ
আগে বট সম তো হ
বট গাছ হ।