মেঘদূত সংখ্যা।। সুবীর পালের গল্প - শৃণ্বন্তু মেঘদূত সংখ্যা।। সুবীর পালের গল্প - শৃণ্বন্তু
সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৫:০৩ পূর্বাহ্ন

মেঘদূত সংখ্যা।। সুবীর পালের গল্প

আপডেট করা হয়েছে : রবিবার, ২১ জুলাই, ২০২৪, ৭:১৫ অপরাহ্ন
মেঘদূত সংখ্যা।। সুবীর পালের গল্প

ম্যাট্রিমনি সাইট

এক্সকিউজ মি।

কফি শপে বসে একমনে ল্যাপটপে কিছু কাজ করছিলো সোহম। সামনে রাখা এক কাপ ক্যাপাচিনো। আনমনে আবার কানে এলো এক্সকিউজ মী। এবার মুখ তুলে তাকালো সোহম। সামনে দাড়িয়ে একটি সুন্দর মেয়ে। একটু অবাক হয়ে সোহম বললো, ” কিছু বলবেন”।

হ্যাঁ,  একটু ইতস্তত করে মেয়েটি বললো, আমি কি একটু বসতে পারি?

ও শিওর। বসুন না!

থ্যাংক ইউ, বলে মেয়েটি বসে পড়লো।

আপনি কি কিছু বলবেন? ল্যাপটপ বন্ধ করে জিজ্ঞেস করলো সোহম। রাত তখন প্রায় ৯ টা।


আমার নাম দর্শনা। আমি লেক টাউনে থাকি। আপনি সোহম বোস তো?

অবাক হলো সোহম। হ্যাঁ, কিন্তু আপনি কি আমাকে চেনেন ?

কিছুটা অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলো সোহম। খুব সুন্দরী এবং রুচিশীল পোশাকে মেয়েটিকে দেখে মনে মনে মেয়েটির তারিফ করছিলো সোহম।

আপনাকে কিছু বলার ছিল।

হ্যাঁ, বলুন না!

না মানে , আসলে আপনার অফিসের পাশের বিল্ডিং এ আমার অফিস। আমি টি সি এস এ আছি। আমতা আমতা করে মেয়েটি বললো।

খুব ভালো তো। আচ্ছা এবার বলুন আমাকে চিনলেন কি করে?

এবার মেয়েটি সোজাসুজি বললো , আপনার নাম কোনো ম্যাট্রিমনি সাইটে রেজিষ্টার করা আছে?

এবার কিছুটা অবাক হবার পালা সোহমের। হ্যাঁ, আছে; কিন্তু তার সাথে আপনার কি সমন্ধ!

প্লীজ আমাকে বলতে দিন। আমার বাবা কিছুদিন আগে ওই সাইটে আপনার প্রোফাইল দেখে আপনার বাবার যোগাযোগ করেছিল। আপনার বাবার সাথে আমার বাবার এই ব্যাপারে কথাও হয়েছে। আপনি কোন কোম্পানিতে আছেন , কি পোস্টে আছেন, আপনার কোয়ালিফিকেশন সব আমরা জানি। আমার বাবা আমাকে আপনার ছবি দেখিয়ে সব বলেছে।

ওকে, ওকে! দেখুন, এখন আপনাকে আমারও কিছুটা চেনা মনে হচ্ছে। আসলে আমার মা একদিন আমাকে আপনার ছবি দেখিয়েছিল। আপনার ছবি দেখিয়ে আমাকে জিজ্ঞেস করেছিল, দেখতো সোহম , মেয়েটাকে পছন্দ হয় কিনা!

ভালো লেগেছিলো ছবিটা সোহমের। মিষ্টি হেসে মাকে উত্তর দিয়েছিল, হ্যাঁ ,মা ;  ভালোই তো লাগছে।

খুশি হয়ে সোহমের মা তখন চলে গিয়েছিল। এরপর প্রায় মাস খানেক কেটে গেছে। আর কোনো কথা শোনেনি সোহম। মা বাবাকে কিছু জিজ্ঞেস ও করেনি। মনে মনে সেদিনের কথা ভাবছিলো সোহম।


কি ভাবছেন বলুন তো?

একটু অন্যমনস্ক হয়ে গেছিলো সোহম।

আপনার কফি তো ঠান্ডা হয়ে গেলো!

আমি খুব দুঃখিত।

না, না;  কি বলছেন! ইটস আলরাইট। আমি একটু ঠাণ্ডা করে খেতে পছন্দ করি। এনিওয়ে আপনার জন্য কিছু একটা বলি?

একটা ক্যাপাচিনো বলতে পারেন। থ্যাঙ্কস বলে দর্শনা একটু মিষ্টি হাসলো।

সোহম একটা কফি সাথে হালকা স্ন্যাকস অর্ডার করলো। আর মনে মনে মেয়েটিকে চেনার চেষ্টা করছিল। হ্যাঁ, ঠিক তো। এই মেয়েটার ছবিই তো মা দেখিয়েছিল। তবে ছবির চেয়ে সামনা সামনি আরো সুন্দর দেখতে লাগছে । মনে মনে ভাবলো সোহম।

দেখুন মিস্টার সোহম, বলে কিছু বলতে যাচ্ছিল দর্শনা। তার আগে ওকে থামিয়ে দিয়ে সোহম বলে উঠলো, নো মিস্টার, আমাকে সোহম বলে ডাকতে পারেন।

তাহলে আপনি আমাকে দর্শনা বললে আমি খুশি হব।

দর্শনার কথা শুনে খুশি হলো সোহম।

দেখুন আপনাকে আমি প্রায় দেখি অফিস ছুটির পর এখানে বসে থাকতে। তবে কোনোদিন ভাবিনি এই ভাবে আপনার কাছে এসে কথা বলবো। আজ আমরা তিন চারজন বন্ধু এখানে এসেছিলাম। তাও আপনার আসবার প্রায় এক ঘণ্টা আগে থেকে। হঠাৎ দেখলাম আপনি এসে ঢুকলেন। বাবার কাছ থেকে তো আপনার সমন্ধে অনেকটা জেনেছিলাম। ভাবলাম আজ আপনার সাথে পরিচয় করে নেবো। এদিকে রাত হয়ে যাচ্ছে দেখে বন্ধুরা সবাই চলে গেছে। আমাকেও ওদের সাথে যেতে বলছিলো, কিন্তু আমি আজ আপনাকে দেখে থেকে গেলাম। ওদের বলেছি যে আমার পরিচিত একজন আসবে , আমি ওর সাথে যাবো।

সোহম চুপ করে এতক্ষন দর্শনার সব কথা শুনলো।

এর মধ্যে কফি আর স্ন্যাকস এসে গেছে।

তো দর্শনা আপনি বাড়ি ফিরবেন কি ভাবে!

আমি ক্যাব ডেকে নেবো, দর্শনা বললো।

আপনি কোথায় থাকেন সেটা কিন্তু এখনও জানিনা। তবে যদি কিছু মনে না করেন তবে আপনাকে কি আমি আপনার বাড়ি ড্রপ করে দিতে পারি? যদিও জানিনা আপনি কোন অঞ্চলে থাকেন।

সোহমের কথা শুনে দর্শনা বললো , ম্যাট্রিমনি সাইটে দেওয়া আছে আপনি কোথায় থাকেন। বাবার কাছ থেকে জানতে পেরেছি। আপনি লেক টাউনে থাকেন তো? আমি একটু এগিয়ে চিনার পার্কে থাকি। কোনো অসুবিধে হবে না। অনেক ক্যাব পাওয়া যাবে। এরপর আর বেশি দেরি করেনি দর্শনা। আবার দেখা হবে বলে মিষ্টি হেসে বিদায় নিয়েছিলো।

দর্শনা চলে যাবার পর সোহম উঠে পড়ল। রাত হয়েছে। নিজের হণ্ডা সিভিক নিয়ে নিউটাউন হয়ে বাড়ির পথ ধরলো। এর মধ্যে মার ফোন এসে গেছে। রাতের খাবার রেডি হয়ে গেছে। গাড়ি গ্যারেজে পার্ক করে ঘরে ঢুকে সোজা মাকে জড়িয়ে ধরে বললো, মা , বাবাকে বলো এবার বিয়ের দিন ঠিক করে ফেলতে।

খাবার টেবিলে বসে হাসতে হাসতে পুরো ঘটনাটা বললো সোহম।


তাহলে আমাদের পছন্দ করা মেয়ে তোকে পছন্দ করেছে বল। সবাই হেসে উঠলো একসাথে।

ফোন নম্বর টা নেওয়া হয়নি বলে একটু আফসোস করছিলো সোহম। এমন সময় সোহমের বাবা এসে বললো, “তোর ফোন এসেছে, বলে নিজের মোবাইল টা এগিয়ে দিল সোহম কে।

ও প্রান্ত থেকে একটা চেনা মিষ্টি আওয়াজ ভেসে এল। কি তাহলে আমাকে ভালো লেগেছে তো? তাহলে বিয়েটা পাক্কা হয়ে গেলো তাইনা!

সোহম কিছু বলবার আগেই আবার দর্শনা বলে উঠলো , কাল দেখা হচ্ছে, গুড নাইট।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগ থেকে আরোও
Theme Created By FlintDeOrient.Com
error: Content is protected !!
error: Content is protected !!