➤ রবীন্দ্রনাথ নামক মহাসমুদ্রের অনন্ত বাণীর অনন্ত ঊর্মিমালার লয় বাঙালি হৃদয়ে যখন কিছুটা ধীর কিছুটা শান্ত, ঠিক সেই সময় এক হাতে বাঁশের বাঁশরী অন্য হাতে রণ-তূর্য ধারণ করে যিনি প্রাণচঞ্চল তীব্র বেগের ঝর্ণাধারা নিয়ে এলেন বাংলা কাব্য প্রকৃতিতে তিনি আমাদের প্রাণের কবি নজরুল ইসলাম। তাঁর স্বভাবের জোরে, স্বকীয়তার প্রকাশে তিনি রবীন্দ্রনাথের প্রভাবমুক্ত হতে পেরেছিলেন। তাঁর হাতেই উড্ডীন হলো রবীন্দ্রপ্রভাবমুক্ত আধুনিক বাংলা কবিতার নিশান। নজরুলের প্রতি সমগ্র বাঙালি প্রাণের আবেগ প্রকাশ করেছেন আর এক প্রথিতযশা সাহিত্যিক অন্নদাশঙ্কর রায় এই বলে —
“আর সব কিছু ভাগ হয়ে গেছে
ভাগ হয় নি ক’ নজরুল”
এই প্রবাদ প্রতিম পংক্তি দুটিতে নজরুলের কবি প্রকৃতির বৈশিষ্ট্যটিও আমরা চিনে নিতে পারি। সত্যি, কবিকে ভাগ করা যায় নি তাঁর সাম্যবাদী চেতনা বা বোধের কারণে, সেই সাম্যবাদ প্রতিষ্ঠায় তিনি বিপ্লবী-বিদ্রোহীর ভূমিকায় অবতীর্ণ আর তাঁর অনন্য বিদ্রোহী চেতনার মূলে আছে স্বদেশ প্রেম ও মানব প্রেম। নজরুল একাধারে সাম্যবাদী কবি, বিদ্রোহী কবি ও প্রেমিক কবি। এই ত্রিবেণীর মুক্ত ধারা তাঁর কাব্যচেতনাকে চিরকালীন রূপ দান করেছে।
নজরুলের সাম্যচেতনা কোনো পুঁথিগত বা প্রচলিত বিদ্যার্জিত নয়। সে চেতনা বোধকরি তাঁর সহজাত, প্রকৃতিদত্ত। সেকারণে সমাজের সর্বস্তরেই শুধু নয়, মানব মনের সর্বস্তরেও তিনি সাম্যবাদকামী। তাঁর সাম্যবাদী চেতনার মূল কথা হলো —
” মানুষের চেয়ে বড় কিছু নাই, নহে কিছু মহীয়ান্ ” (মানুষ)
এ হেন বাণীর থেকে চিরন্তন সত্য বাণী আর কিছু বোধহয় হতে পারে না। যুগে যুগে কালে কালে মহা মানবেরা এই সত্য স্বীকারের কথাই তো আমাদের বলে গেছেন, যা আজ পর্যন্ত আমরা উপলব্ধি করে উঠতেই পারিনি।
মানুষে মানুষে মহামিলনের পথে, একতার পথে, সাম্যের পথে প্রধান বাহ্যিক বাধা যে তথাকথিত “ধর্ম” বা “ঈশ্বর ” এ কথা তিনি উপলব্ধি করেছেন অন্তর দিয়ে। তাঁর বলিষ্ঠ মত হলো –
“তোমাতে রয়েছে সকল ধর্ম সকল যুগাবতার,
তোমার হৃদয় বিশ্ব-দেউল সকলের দেবতার” (সাম্যবাদী) কিংবা,
“সকলের মাঝে প্রকাশ তাঁহার, সকলের মাঝে তিনি” (ঈশ্বর)
ধর্ম বা ঈশ্বর সম্পর্কে এই চেতনা তো আবহমান। সেক্ষেত্রে কবিকে মনীষী আখ্যা দেওয়া চলে।
ঈশ্বর তথা ধর্মের সঙ্গে মানুষের মধ্যস্থতাকারী ভন্ডদের সম্পর্কে তাঁর উক্তিটি কী আধুনিক এবং চিরকালীন! তিনি বলছেন –
“শিহরি উঠোনা, শাস্ত্রবিদেরে ক’রো নাক বীর, ভয়, –
তাহারা খোদার খোদ্ “প্রাইভেট সেক্রেটারী” ত নয়!” (ঈশ্বর)
কিংবা —
“তব মসজিদ মন্দিরে প্রভু নাই মানুষের দাবী !
মোল্লা-পুরুত লাগায়েছে তার সকল দুয়ারে চাবি! ” ( মানুষ )
পাঠ করে আজও অবাক হতে হয় আমাদের। এমন সংশয়হীন দৃপ্ত ঘোষণা হয়ত আজও বিরল!
সমাজের সর্বস্তরের জনগণকে তিনি তাঁর আধুনিক সংস্কারমুক্ত মন ও মনন দিয়ে আপন করে নিয়েছেন। সেক্ষেত্রে তাঁর মন শুচি-অশুচি দ্বিধান্বিত নয়। বারাঙ্গনাকে মাতা, পাপী তাপী এবং অতি দরিদ্র শ্রমজীবী মেহনতি মানুষদের তিনি ভাই বোন আখ্যা দিয়েছেন । “পাপ” কবিতায় বলছেন —
” সাম্যের গান গাই! —
যত পাপী তাপী সব মোর বোন, সব হয় মোর ভাই ! ” আবার,
“নাই হলে সতী তবু ত তোমরা মাতা-ভগিনীরই জাতি,
তোমাদেরই ছেলে আমাদেরই মত, তারা আমাদের জ্ঞাতি ” (বারাঙ্গনা)
কিংবা,
“হেথা সবে-সম-পাপী,
আপন পাপের বাটখারা দিয়ে অন্যের পাপ মাপি! ” ( পাপ)
সাম্য বোধের এমন নজির বিরল বলা চলে। আজকের দ্বিধাগ্রস্ত বাহ্যিকভাবে বা তথাকথিত আধুনিক সমাজে নজরুলকে অপ্রাসঙ্গিক বলা অসম্ভব । তাঁর আধুনিক মনস্বিতা শুধু যুগের থেকে এগিয়ে ছিলো না, ছিলো চিরকালীন এক আলোকশিখা স্বরূপ।
কবির চোখে “পুরুষ – রমণী কোনো ভেদাভেদ নাই “। এমন উক্তি কবির সাম্যবাদী চেতনার এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হয়ে আছে। বিশ্বের সমস্ত শুভ এবং অশুভ কর্মের মূলে রয়েছে নারী পুরুষের সমান সমান অবদান। ” নারী ” কবিতায় তিনি বলছেন —
” কোনো কালে একা হয় নি ক’ জয়ী পুরুষের তরবারী
প্রেরণা দিয়াছে, শক্তি দিয়াছে, বিজয়-লক্ষ্মী নারী !”
নারীকে এমন ভাবে ও ভাষায় চিরন্তন গৌরব দান নজরুল ছাড়া কে করবে ! এক্ষেত্রে তাঁর আসন পাতা রইলো চিরকাল বাঙালির মনে রামমোহন, বিদ্যাসাগরের ঠিক পাশেই।
নজরুল ইসলাম সমধিক পরিচিত “বিদ্রোহী কবি” নামে। কারণটি তাঁর রচিত ” বিদ্রোহী ” কবিতা। কবিতাটির প্রকাশকাল (১৯২২, বিজলী পত্রিকা) একশো বছর অতিক্রান্ত। ১৩৯ পংক্তির এই কবিতাটির মাধ্যমেই সূচনা হয় রবীন্দ্রনাথ প্রভাব মুক্ত আধুনিক কবিতার পথ চলা।
বিশ্বের ইতিহাসে তখন প্রথম ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের মধ্যবর্তী সময় আর ভারতে চলছে স্বাধীনতা আন্দোলন। এ হেন অস্থির সময়ে কবিমানস জন্ম দিলো ” বিদ্রোহী”। শোনা যায়, কবিতাটি নাকি লেখা হয়েছিল পেন্সিলে। সেটি দোয়াতে কলম ডুবিয়ে লেখার যুগ। হয়তো, কলম, কবি মানসের তীব্র গতির সঙ্গে তাল মেলাতে পারবে না ভেবেই পেন্সিল ব্যবহার। অনেক নজরুল গবেষক মনে করেন যে নজরুল কবিতাটি রচনা করেন নি, কবিতাটি নজরুলের উপর ভর করেছিলো। কবি মনের ভাবগুলি উত্তাল তরঙ্গায়িত সমুদ্রের বিক্ষুব্ধ ঢেউয়ের মতো কবিতার প্রতিটি পংক্তিতে আছড়ে আছড়ে পড়েছে ।
কী আছে কবিতাটিতে? এক কথায় বলা যায় কবিতাটি আত্ম জাগরণের মহাকাব্য। কবিতাটি একবার পাঠ করলেই বিষয়টি বোধগম্য হবে। তরুণ সজীব প্রাণের আত্ম উপলব্ধি, আত্মবিকাশ ও আত্মপ্রকাশ এর মূল কথা। তৎকালীন পরাধীন ভারতবর্ষে কবিতাটি অদ্ভুত উন্মাদনা এনে দিয়েছিল প্রতিটি বাঙালি তরুণ মনে। কবিতার প্রথম চরণ —
” বল বীর —
বল উন্নত মম শির !
শির নেহারি আমারি, নত-শির ওই শিখর হিমাদ্রির ! ”
শেষ চরণ —
” আমি চির বিদ্রোহী বীর —
আমি বিশ্ব ছাড়ায়ে উঠিয়াছি একা চির-উন্নত শির ! ”
কেন তাঁর এই আত্ম জাগরণ ? কবি বলছেন —
” মহা বিদ্রোহী রণ-ক্লান্ত
আমি সেই দিন হব শান্ত
যবে উৎপীড়িতের ক্রন্দন-রোল আকাশে বাতাসে ধ্বনিবে না,
অত্যাচারীর খড়্গ কৃপাণ ভীম রণ-ভূমে রণিবে না –”
এখানে কবি পরিস্কার বলছেন যে সমাজে যতদিন উৎপীড়িত – অত্যাচারী থাকবে ততদিন তিনি ও তাঁর কলম শান্ত হবে না । এই বিপ্লবী চেতনা যে ” যুগের হুজুগ ” নয়, চিরকালীন আবেদন নিয়ে আমাদের চেতনাকে এখনও সমানভাবে নাড়া দেয় এ কথা বলা বাহুল্য।
শুধু ” বিদ্রোহী ” নয়, ” কান্ডারী হুঁশিয়ার “, ” ছাত্রদলের গান “, ” সব্যসাচী “, ” পথের দিশা “, ” হিন্দু – মুসলিম যুদ্ধ “, ” অন্ধ স্বদেশ দেবতা ” প্রভৃতি তাঁর জাগরণের বা বিপ্লবের ধ্বজাধারী কবিতা। এখানে ” পথের দিশা ” থেকে একটু উদ্ধৃতি দেওয়া যাক —
” নর নারী আজ কন্ঠ ফেড়ে কুৎসা-গানের কোরাস্ ধরে
ভাবছে তারা সুন্দরেরই জয়ধ্বনি করছে জোরে”
এ ভাবনা আমাদের সমকালেও সমানভাবে প্রাসঙ্গিক। অগ্রপথিককে তিনি প্রশ্ন করছেন —
“মন্ত্র কি তোর শুনতে দেবে নিন্দাবাদীর ঢক্কানিনাদ?”
তবু শেষপর্যন্ত তার উপরেই আস্থা রেখেছেন —
” আনিস খবর, কোথায় আমার যুগান্তরের খড়্গপাণি ! “
বাংলা কাব্য জগতে বিপ্লবী চেতনার ক্রমবিকাশের ধারাটি শুরুই হয়েছে নজরুলের মতো বরফে ঢাকা গিরিশৃঙ্গের একাকী মাথা তুলে দাঁড়ানোর মধ্যে দিয়ে, যা থেকে পরবর্তীকালে অসংখ্য খরস্রোতা জন্মলাভ করে বাংলা কাব্য প্রকৃতিকে স্বতন্ত্রতা দান করেছে। সুভাষ চন্দ্র বসুর মতো ব্যক্তিত্বও নজরুলের বিদ্রোহী ভাবনাকে কুর্নিশ জানিয়ে বলেছেন যে, যুদ্ধক্ষেত্রে বা কারাগার বরণে নজরুলের বিপ্লবের গানই উজ্জীবন-মন্ত্র হয়ে উঠুক ।
নজরুল আজন্ম প্রেমিক কবি। তাঁর জীবনে, মননে, চেতনায়, বোধে তিনি পুরোদস্তুর প্রেমিক। জীবনের শেষ লগ্নে তাঁর স্বীকারোক্তি ছিলো যে, তিনি শুধুমাত্র ভালোবাসা দিতে ও পেতে এসেছিলেন। স্বদেশ প্রেম, মানব প্রেম ও নারী প্রেম ছিলো তাঁর প্রেমিক সত্তার তিনটি দিক। স্বদেশ প্রেম ও মানব প্রেম থেকেই যে তাঁর সাম্যবাদী ও বিদ্রোহী চেতনার বিকাশ – এ কথা আমরা সবাই জানি।
কিন্তু রোম্যান্টিক নারী প্রেম ও সে সম্পর্কিত রচনা – যা একসময় সমালোচিতও হয়েছে বার বার । “আমার কৈফিয়ত ” কবিতায় তিনি অভিমানী কন্ঠে বলছেন,
“গুরু কন, তুই করেছিস শুরু তলোয়ার দিয়ে দাড়ি চাঁছা ! “
অর্থাৎ, বিপ্লবের কলমে প্রেমের গান বা গজল রচনার বিষয়টি সমালোচিত হয়েছে। আবার অনেকে বিস্মিত হয়েছেন এই ভেবে যে, অমন যার বিদ্রোহী চেতনা, যে চেতনার উদ্গিরণে বার বার তিনি স্ববিরোধীতাকেও স্বীকার করেছেন, সেই মন ও মানস কিভাবে এমন প্রেমের মধুর বাঁশী বাজাতে পারে। সে প্রেম আত্মতেজে দীপ্ত, আলোকের ঝর্ণাধারা, অন্তঃসলিলা আবার মহাসমুদ্র ।
কবির ব্যক্তিগত জীবনে প্রেম এসেছে বার বার – এ কথা আমরা সবাই জানি। কিন্তু ব্যক্তিগত জীবনের দিকে না তাকিয়ে শুধু যদি তাঁর কবিতাগুলির দিকে তাকানো যায় তাহলে আমরা দেখবো, বিদ্রোহী চেতনার মাঝেও বিদ্যুৎ ঝলকের মতো প্রেম চেতনার স্ফূরণ । আপাত দৃষ্টিতে দুই চেতনা পরস্পর বিরোধী বলে মনে হলেও, এটুকু আমরা আমাদের সীমাবদ্ধ বুদ্ধিতে ঠিকই বুঝতে পারি যে, যে কোনো বিদ্রোহী চেতনার মূলে থাকে প্রেম। ঠিক যেমন দেশের প্রতি ভালোবাসাই জন্ম দিয়েছে পরাধীনতার শৃঙ্খল থেকে দেশকে মুক্ত করার বিপ্লব-পথের।
“বিদ্রোহী ” কবিতায় কবি বলছেন —
“আমি বন্ধন হারা কুমারীর বেণী, তন্বী নয়নে বহ্নি,
আমি ষোড়শীর হৃদি সরসিজ প্রেম উদ্দাম, আমি ধন্যি ! ” কিংবা —
“চিত চুম্বন চোর কম্পন আমি থর থর থর প্রথম পরশ কুমারীর ! ” কিংবা —
“আমি গোপন প্রিয়ার চকিত চাহনি, ছল করে দেখা অনুখন,
আমি চপল মেয়ের ভালোবাসা, তার কাঁকন চুড়ির কন কন”
এ জাগরণ শুধু আত্ম জাগরণ নয়, হৃদয় কমলে প্রেমেরও জাগরণ অস্বীকার করার কোনো উপায় নেই ।
” পূজারিণী ” প্রেম বিষয়ক এক দীর্ঘ কবিতা। এখানে প্রেম সম্পর্কে কবির সমস্ত রকম ধারণাই উঠে এসেছে। দেহগত আবেগকে প্রাধান্য দিলেও শেষ পর্যন্ত সেই প্রেমের মন্ত্রেই মৃত্যুঞ্জয়ী হতে চেয়েছেন এবং কবিতাটিও দেহাতীত লোকে উন্নীত হয়েছে —
” তব প্রেমে মৃত্যুঞ্জয়ী
ব্যথা বিষে নীলকন্ঠ কবি ! “
” অভিশাপ ” কবিতায় কবির অভিমানী মনটি শতদল পদ্মের মতো ফুটে উঠেছে । ” বিজয়িনী ” কবিতায় ” হার মানা হার ” ও ” জীবন দেবী ” শব্দ দুটি রবীন্দ্রনাথকে মনে পড়িয়ে দেয়। এছাড়াও, ” পিছু ডাক “, ” কবিরাণী “, ” বিদায় বেলায় “, ” দূরের বন্ধু “, ” চৈতী হাওয়া “, গোপন প্রিয়া “,” অ-নামিকা “, ” বধূবরণ ” (প্রেমিকা এখানে বধূরূপে) প্রভৃতি কবিতায় কবি মনের প্রেমিক সত্তাটি অপূর্ব দ্যুতিতে প্রতিভাত হয়েছে। আর একটি কবিতাকে পৃথকভাবে উল্লেখ না করলেই নয় — ” বাতায়ন পাশে গুবাক তরুর সারি “। বিরহী কবিপ্রাণের বেদনা যেখানে অশ্রু হয়ে ঝরে পড়েছে, সিক্ত করেছে পাঠক হৃদয়।
কবিগৃহের জানালার পার্শ্বস্থিত একসারি সুপারি গাছকে উদ্দেশ্য করে কবিতাটি রচিত হলেও কবিপ্রিয়ার ছায়াটি আমরা ঠিক চিনে নিতে পারি।
কবি-চেতনা প্রকাশের ভাষা ও ছন্দ সম্পর্কে দু এক কথা বলে যাওয়াও অবশ্য কর্তব্য। কবি আধুনিক যুগের সূচনা পর্বের কবি। কিন্তু কবি তাঁর কবিতাগুলি রচনা করেছেন অন্ত্যমিল যুক্ত ধ্বনিপ্রধান ছন্দে। অলংকারের বাহুল্যও সেখানে লক্ষ্য করা যায়। তবে, শব্দ ব্যবহারে তাঁর কোনো শুচিবায়ু ছিলো না। তৎসম, তদ্ভব, দেশি, বিদেশি — সমস্ত রকম শব্দ তিনি তাঁর কবিতায় ব্যবহার করেছেন, ব্যবহার করেছেন গতিময়তা আনতে। আসলে আধুনিকতা ছিলো তাঁর চিন্তা ও চেতনায়, নতুন বোধকে গ্রহণ করার ক্ষেত্রে।
নিজের কবিতার চিরকালীনতা বিষয়ে সংশয় ছিলো কবি মনে । ” আমার কৈফিয়ত ” কবিতায় তিনি বলেছেন —
“পরোয়া করিনা, বাঁচি বা না বাঁচি যুগের হুজুগ কেটে গেলে ”
কবির সংশয় থাকলেও আজ আমাদের মনে কোনোরূপ সন্দেহের অবকাশ নেই । নজরুল “যুগের হুজুগের” কবি নন। তিনি আমাদের চিরকালের প্রাণের উন্মাদনার কবি, হৃদয়াবেগের কবি। তাঁকে নিয়ে, তাঁর কবিচেতনা নিয়ে নব নব গবেষণার দিগন্ত উন্মোচিত হোক। কবি নজরুল ইসলামের ১২৫ তম জন্মদিবসে সশ্রদ্ধ চিত্তে তাঁকে প্রণাম জানাই ।