ধারাবাহিক থ্রিলার: গোলাপ কাঁটা।।মুহাম্মদ সেলিম রেজা।। দ্বিতীয় পর্ব - শৃণ্বন্তু ধারাবাহিক থ্রিলার: গোলাপ কাঁটা।।মুহাম্মদ সেলিম রেজা।। দ্বিতীয় পর্ব - শৃণ্বন্তু
সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৮:০৫ অপরাহ্ন

ধারাবাহিক থ্রিলার: গোলাপ কাঁটা।।মুহাম্মদ সেলিম রেজা।। দ্বিতীয় পর্ব

আপডেট করা হয়েছে : বৃহস্পতিবার, ১৮ জুলাই, ২০২৪, ১২:২১ অপরাহ্ন
ধারাবাহিক থ্রিলার: গোলাপ কাঁটা।।মুহাম্মদ সেলিম রেজা।। দ্বিতীয় পর্ব

দ্বিতীয় পর্ব

গোলাপ কাঁটা

হোটেলে নিজেদের রুমে পৌঁছে পোষাক পরিবর্তন করার অবসরে আকাশ আর্তনাদ করে উঠল, আমার মোবাইল!

  • কোথায় রেখেছিলি? জিজ্ঞাসা করল দেবু। আমজাদ বলল, ব্যাগট্যাগ ভালো করে দেখ। আছে কোথাও নিশ্চয়।

আর একপ্রস্থ সার্ট প্যান্টের পকেটে দেখে নিল আকাশ। তারপর ব্যাগের সাইড পকেটের চেন খুলে হাত ঢুকিয়ে দিয়ে বলল, আমি কখনো ব্যাগে মোবাইল রাখি না। সাধারণত প্যান্টর পকেটে থাকে। কিন্তু আজ….

  • মনে করতে পারছিস না? ওই হয়, গোলমাল হবে সেদিন কোনকিছু ঠিকঠাক হবে না। বলল আমজাদ।

এক এক করে ব্যাগের সবকটা পকেট হাতড়ে দেখে না পেয়ে আকাশ মনে করার চেষ্টা করে শেষ কখন মোবাইল ব্যবহার করেছে। টোটোয় চেপে বাসস্ট্যান্ডে আসার পথে রবিঠাকুরের গান শুনেছে স্পষ্ট মনে আছে। লাঞ্চ সেরে হোটেল থেকে বেরোনোর পথে রোজের মেসেজ এসেছিল, উত্তর দিয়ে‌ছে। আর‌ কোন কল এসেছিল কিংবা সে কাউকে কল করেছে? স্মৃতি হাতড়ে কোন উত্তর পেল না।

ততক্ষণে আমজাদ আকাশের নম্বরে কল দিতে শুরু করেছে। পরপর কল করে যাচ্ছে সে। প্রতিবার একই রিপ্লাই আসছে – আপনার ডায়াল করা নম্বরটি বর্তমানে সুইচ অফ রয়েছে।

একসময় হাল ছেড়ে দিয়ে সে বলল, না আর কোন সম্ভাবনা নেই।

  • কী আর করা যাবে! দুদিন আমাদের ফোনে কাজ চালা। বাড়ি ফিরে একটা নতুন সেট কিনে নিবি। বলল দেবু।

সময়ের নিরেখে মোবাইল জীবনযাত্রার অপরিহার্য অঙ্গ। মুখভাষ্য আদানপ্রদান শুধু নয়, বিনোদন থেকে বাণিজ্য, এমন কোন কাজ নেই ছোট্ট এই যন্ত্রটি করতে পারে না। অনেকে ব্যক্তিগত তথ্য সঞ্চয় করে রাখে, সেক্ষেত্রে মোবাইল হারালে তথ্যের অপব্যবহার হবার ভয় থাকে। আকাশ সেদিক থেকে সেফ, গুরুত্বপূর্ণ তথ্য মোবাইলে রাখে না সে। কিন্তু যা ছিল তাইবা কিসে কম? শুটিং ক্যাম্পের কর্তা কোচ অফিসিয়ালদের কন্টাক্ট নম্বর মজুত ছিল ফোনে, সেগুলো আবার জোগাড় করতে হবে। খুব একটা কঠিন কাজ নয়, গুগল সার্চ দিলেই পাওয়া যাবে। কিন্তু….

বন্ধুর চঞ্চল ভাব আমজাদের চোখ এড়িয়ে যায় না। সে বলল, ভাবছিস রোজের সঙ্গে কীভাবে যোগাযোগ রাখবি?

  • হ্যাঁরে। মোবাইলটা থাকলে ও বাংলোয় পৌঁছালো কিনা জানতে পারতাম।
  • আপাতত রোজ থাক। খিদেয় পেট চুঁইচুঁই করছে, কিছু খেতে হবে।

দেবু তাড়া দিলে একে একে তিনজনে বাথরুমে গিয়ে ফ্রেস হয়ে এল। তারপর একসঙ্গে হাঁটা দিল গ্রাউন্ড ফ্লোরের উদ্দেশ্যে।

গ্রাউণ্ড ফ্লোরের‌ অর্ধেকটা নিয়ে ডাইনিং স্পেস। কম করে হলেও চার সিটের বিশখানা টেবিল পাতা আছে। কোণের দিকের একটা টেবিল বাদে সব ভরে উঠেছে। সবার সামনে প্লেট ভর্তি খাবার। কেউ কেউ মন দিয়ে খেলেও সেন্ট পারসেন্ট মানুষের দৃষ্টি নিবদ্ধ টিভি স্ক্রিনে। কী ব্যাপার!

সকালের ঘটনার কথা তারা জানে না। ট্রেন-বাস করে ব্যস্ততার মাঝে সময় অতিবাহিত হয়েছে। পথে এ নিয়ে কাউকে কোনরূপ আলোচনা করতে শোনেনি। অথবা আলোচনা হয়ে থাকলেও, শোনার মানসিকতা না থাকায় তাদের কানে‌ ঢোকেনি।

  • ওহ গড! নিজের অজান্তে আকাশের মুখ দিয়ে আর্তধ্বনি নির্গত হল।

ততক্ষণে দেবু ও আমজাদ চেয়ারের দখল নিয়েছে। আকাশকে আর্তনাদ করতে শুনে আমজাদ বলল, আবার কী হল?

  • সিএমের উপর প্রাণঘাতী হামলা হয়েছে।
  • সেকি! কখন? দেবু-আমজাদ একসঙ্গে টিভির দিকে চোখ ফেরাল।
  • সকালের ঘটনা। আপনারা এখন শুনছেন? বেয়ারা মেনুকার্ড হাতে কখন এসে দাঁড়িয়েছে কেউই খেয়াল করেনি। তার প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে আকাশ বলল, কই দেখি আজকের মেনু কী?

বেয়ারার থেকে মেনু কার্ড নিয়ে নিজের নিজের পছন্দের খাবার অর্ডার করল তিনজনে। তারপর ঝাঁপিয়ে পড়ল টিভি স্ক্রিনে।

  • কতদিন বাদে দেশ একজন সৎ ও সত্যিকারের সিএম পেয়েছে। নেই কোন বাগাড়ম্বর, মিথ্যে প্রতিশ্রুতি। নিঃশব্দে কাজ করে চলেছেন। পাশের টেবিলের এক ভদ্রলোক মন্তব্য করলে আর একজন বললেন, দেশের আর্থিক পরিকাঠামো ধীরে ধীরে মজবুত হচ্ছে। তৈরী হচ্ছে কলকারখানা, বাড়ছে কর্মসংস্থান।
  • কৃষিজীবী মানুষের অনুকূলে ভালো কাজ হচ্ছে। আগের সরকার সার-পেট্রল-ডিজেলে ভর্তুকি তুলে নিয়েছিল, এখন আবার দেওয়া হচ্ছে। বেঁধে দেওয়া হয়েছে কৃষিজ ফসলের মূল্য। তাতে করে কৃষক ফসল বেচে লাভ পাচ্ছে। পাবলিককে অতিরিক্ত মূল্য দিয়ে নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কিনতে হচ্ছে না। বললেন আগের ভদ্রলোক।

তৃতীয় আর একজন পিছনের টেবিল থেকে বললেন, সরকারি দপ্তরগুলো কর্মীর অভাবে কোমায় যেতে বসেছিল। ধীরে হলেও কর্মী নিয়োগের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। আমার পাড়ার দুটো ছেলে স্কুল শিক্ষকের পরীক্ষায় পাশ করেও নিয়োগ পাচ্ছিল না। গতমাসে ওরা জয়েন করেছে।

আরও অনেকে অনেক রকম মন্তব্য করছে। আকাশ চুপচাপ শুনছিল। সে এবার মুখ খুলল, রাজনীতি থেকে ধর্মকে বিসর্জন দেওয়া, সিএম স্যারের এই কাজে আমি সবচেয়ে বেশি প্রভাবিত হয়েছি। বিগত কয়েক বছর আমরা মন্দির-মসজিদ কাজিয়া করে শক্তি ক্ষয় করেছি। উঃ! কী দুঃসহ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছিল? মানুষ মানুষের প্রতি বিশ্বাস হারিয়ে ফেলছিল ক্রমশ। সবার মনে ভয়, এই বুঝি বিধর্মীর খড়গ আছড়ে পড়ল গর্দানে।

  • ঠিক বলেছেন ভাই। মন্দির কিংবা মসজিদ কখনও মানুষের জীবনের থেকে মূল্যবান নয়। বললেন প্রথম ভদ্রলোক।

ইত্যাবসরে এক যুবক এসে আকাশের পাশের চেয়ারে বসল। পরনে জিন্স টি-সার্ট। মাথাভর্তি কোঁকড়ানো চুল, মুখে চাপদাড়ি। ঘোলাটে চোখ। ডানহাতের কব্জিতে লোহার বালা। বসে বসেই সে চিৎকার দিল, বেয়ারা একমগ ব্ল্যাক কফি দাও। তারপর আকাশের কানের গোড়ায় মুখ লাগিয়ে আস্তে করে উচ্চারণ করল, মিস্টার আকাশ।

চারশ চল্লিশ ভোল্টের কারেন্ট খেল যেন আকাশ। – কে আপনি? আমার নাম জানলেন কী করে?

  • শুধু নাম কেন? তোমার সমন্ধে অনেককিছুই জানি আমি। তবে এখন যা বলতে এসছি মন‌ দিয়ে শোন।

আকাশ জিজ্ঞাসু দৃষ্টি নিয়ে তাকালে সে পুনরায় বলল, রোজ ম্যামের সঙ্গে একদম ঘনিষ্ট হবার চেষ্টা করবে না।

  • এতো কথা ছেলেটা জানল কীভাবে? অবাক না হয়ে পারল না আকাশ। চট করে‌ তার‌ মুখ দিয়ে কথা সরল না। সে বলতে‌ থাকল, যা বললাম মনে থাকে যেন। নাহলে কিন্তু পরিনাম ভালো হবে না।

বেয়ারা খাবার‌ দিয়ে গেল। কোনদিকে না তাকিয়ে দেবু-রা হামলে পড়েছে, যেন কতদিন না খেয়ে আছে। আকাশ প্লেট থেকে একপিস স্যাণ্ডউইচ তুলে নিয়ে ছোট করে কামড় দিল। চিবোতে চিবোতে যুবকের দিকে কাত হয়ে বসল। তারপর বলল, একথা বলতে রোজ তোমাকে পাঠিয়েছে এখানে?

  • না।
  • তাহলে?
  • রোজ ম্যাম আমার বসের হবু স্ত্রী। তিনি চান না তুমি তার সঙ্গে দেখা কর।
  • আমি তোমার বসের অধীন নই। আমি কার সঙ্গে মেলামেশা করব তিনি ঠিক করে দেবার কে? চাপা অথচ দৃঢ়কন্ঠে বলল আকাশ।
  • তুমি তাকে চেন তাই….
  • তাকে চিনতে আবার বয়ে গেছে। রোজ চাইলে তবেই আমি বিরত হব। আদারওয়াইজ..

আকাশের শেষ কথাগুলি আমজাদের কানে গিয়ে থাকবে। সে জিজ্ঞাসা করল, কী হয়েছে রে?

  • কিছু না। তুই খা। একথা বলে আকাশ সেই যুবকের উদ্দেশ্যে আবারও বলল, এখন তুমি আসতে পার। আমি খাব।

স্যাণ্ডউইচে দ্বিতীয় কামড় দিল আকাশ। যুবক ক্ষুব্ধ হলেও বিস্ফোরিত হল না। হিমশীতল কন্ঠে হিসহিস করে বলল, এই তোমার শেষ কথা?

  • হুম! গিয়ে বল তোমার বসকে।

ছেলেটি কী বুঝল‌ সেই জানে। কথা না বাড়িয়ে উঠে চলে গেল।

  • ছেলেটা কে রে? রোজের ব্যাপারে কী বলছিল? দেবু নিয়েছে তন্দুরি চিকেন। দেখে মনে হচ্ছিল তার কোনদিকে খেয়াল নেই, খেতে ব্যস্ত। এক্ষণে তার কথায় বোঝা গেল সে সব খেয়াল করেছে।
  • এখানে ও নিয়ে আর কোন কথা হবে না। তাড়াতাড়ি খেয়ে নিয়ে ঘরে চল।
  • হুম! সেই ভালো। আকাশকে সমর্থন করে বলল আমজাদ ।

রুমে ফিরে ভিতর থেকে দরজা লক করে দিয়ে খাটের উপর গোল হয়ে বসল তিনজনে। বিষয়টা নিয়ে কাটাছেঁড়া করা দরকার। আমজাদ প্রসঙ্গ উত্থাপন করে বলল, তোদের সব কথা শুনতে পায়নি। কী বলছিল ছেলেটা খুলে বল?

  • আমার এখানে আসার কারণ বাসে ওঠার আগে পর্যন্ত তোরা জানতিস না?
  • না। দেবু আমজাদ একসঙ্গে মাথা নাড়াল।
  • রোজও জানে না আমি এখানে আসছি। অথচ তার হবু স্বামী জেনে বসে আছে। হাউ ইট পসিবল?
  • সম্ভবত বাসে এমন কেউ ছিল যে লোকটার পরিচিত। রোজের ব্যাপারে আলোচনা করতে শুনে….

দেবুর মুখের কথা কেড়ে নিয়ে আমজাদ বলল, রোজ নামের মেয়ে দুনিয়ায় একটাই আছে বুঝি? আমরা যাকে নিয়ে আলোচনা করছিলাম সে-ই যে তার রোজ, ও ব্যাটা বুঝলো কী করে? থামল আমজাদ। তারপর বলল, আকাশের মোবাইল চুরি, তারপর এই হুঁশিয়ারি। সমীকরণ খুব সহজ নয় ফ্রেন্ড।

  • তাহলে বলছি রোজকে মিট করব না?
  • মিট করার কথা উঠছে কেন? তুই না বলেছিলি দূর থেকে….

আমজাদ কথা শেষ করতে পারল না, দেবুর মোবাইল চিৎকার করে উঠল। আননোন নম্বর। কল রিসিভ করলে ওপ্রান্তের লোকটা হিসহিস করে বলল, গোলাপ তুলতে এসেছ, কাঁটার খোঁচা সহ্য করতে পারবে তো?


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগ থেকে আরোও
Theme Created By FlintDeOrient.Com
error: Content is protected !!
error: Content is protected !!