কবি প্রতিমা রায় বিশ্বাসের একগুচ্ছ কবিতা: - শৃণ্বন্তু কবি প্রতিমা রায় বিশ্বাসের একগুচ্ছ কবিতা: - শৃণ্বন্তু
সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৫:১৫ পূর্বাহ্ন

কবি প্রতিমা রায় বিশ্বাসের একগুচ্ছ কবিতা:

আপডেট করা হয়েছে : শনিবার, ১৭ আগস্ট, ২০২৪, ৮:০২ পূর্বাহ্ন
কবি প্রতিমা রায় বিশ্বাসের একগুচ্ছ কবিতা:

কবি প্রতিমা রায় বিশ্বাস

এক।।

ঘাতক তরঙ্গ

কখন যে ইয়ার্কি দুমুখ কাটা নটরাজ পেন্সিল হয়ে যায়,
বুঝতে না বুঝতেই আমি পৌঁছে যাই চটপাতা ইনফ্যান্টে।
পেন্সিল কাড়াকাড়ি করি।
আমাকে কাতুকুতু দিয়ে এক দৌঁড়ে পালিয়ে যায় বিভাস।

-দাড়া দিদিমণিকে বলছি।
-ক্যাচকলা! দিদিমণি কোথায়?
এই দ্যাখ তিনি এখন রোদ্দুর,
আমার পাওয়ারফুল চশমা …বল বল কি বলবি বল?

কী এক শূন্যতা… হাভাতে থালা পেতে রাখে শাপলাপাতায়।
জন্মজল ফুঁড়ে পৃথিবী দেখতে চাওয়া কুড়ির ভিতর তবু
কবিতার পোষা আহ্লাদ।
দিদিমণি নেই…দরকার নেই ।
তুই দুমুখ কাটা পেন্সিল এবার ভাগ করে দে ।
আমিও তবে পাথরের গায়ে… সভ্যতার শুরু লিখে যাই।
এঁকে যাই পাঁচ হাজার বছর , খুঁড়ে খুঁড়ে হয়ত তুলে নেবে প্রজন্ম
বেশ কয়েকটি প্রত্নতত্ত্বের ভাঁজ।
ওই ভাঁজে অনন্ত রাখুক আমাদের শৈশব।

তুইও আঁক তবে ধ্বংস।
ফসিল হয়ে উঠুক মৃত্যু।
জীবাশ্ম হয়ে উঠুক হিংসা ,বিদ্বেষ ,অহমিকা ,জিঘাংসার যত
ঘাতক তরঙ্গ ।

আমার ভিতরে সময় আমি নিজে।
আকাঙ্খার অন্ধকার নিয়ে পাশ ফিরে শুয়ে আছি দ্যাখ্।
আমার বিজুরি কোমরে হাত রেখে বুঝিয়ে দে এ এক উপত্যকা ।

পাহাড়ে পাহাড়ে ফুটুক আজ নীলাভ উন্মাদনা।
কানের পাশে আমার গুঁজে দে সেই পেন্সিলে আঁকা
বিদূষী মৃত্যু-ফুল।
হোক পৃথিবী আজ থেকে আকাশের ধ্রুব তারা।

দুই।।

‘ফলে আছে সব

খোলা মাঠ জুড়ে ‘ফলে আছে মাটি।
ফলে আছে গ্রীষ্মীয় রোদ্দুর, বৃষ্টি ও ফাল্গুন।
এখানে শীতেরা রাস্তার ধারে লটারি,
অনুভূতি সব নতুন টিকিটের বান্ডেল।

মনে চকচক ‘মরচে ধরা ভাগ্যে’র আঁকুতি।
শীত এলে ফুলের শরীরে রঙিন গ্রীষ্ম।
আমি চাইলেই ফলন্ত মাটির প্রাসাদ পরিধি
প্রদীপে প্রদীপে ফলাতে পারি সমস্ত পুজো।

কবিতারা আমার এক একটি স্বপ্নের পাতা।
উল্টে গেলে ও স্বপ্ন আসে না আর।
ফাল্গুনে তুলো বীজ তুলো তুলো ভাবনারা
উড়ে উড়ে ওরাই সাদা কুয়াশার।

শিমূলতলায় জমেছে তুলো,শীতের আচ্ছাদন।
ও গাছ জানে শীত এলে মানুষেরা কাঁতরায়।
আমি চাইলেই ফলাতে পারি না রোদ অথবা শ্রাবণ।
চাইলেই বুঝতে পারি না কষটে মাটির কি টান আগাছায়।

জানি না তুলো ফুটবার আগে রাঢ় কেন সমতল।
আরও কিছু ইঙ্গিত নিয়ে প্রকৃতি দাঁড়ায় রাস্তায়,
পথ কৃত্রিম;মানুষের যাতায়াতে যার প্রয়োজন
ভিজে গামছায় আগামীর বর্ষা ;আরও কিছু ইশারায়।

তিন।।

সুজাতাদি

সুজাতাদি আপনার উচ্চারণ থেকে শিখি
কিভাবে বেঁকে যায় গাছের ডাল,
কৌণিক খাঁজে শব্দরা কি করে আঁকে ফুলের পাপড়ি,
গ্রামীণ পথের বাঁক আপনার কথায় ঘুরে যায়।

সমাদৃত হয়েছে দেখেছি আপনার স্বরে সমস্যারা।
শান্ত পুকুরের উদিত শাপলায় স্নিগ্ধ মিমাংসা তার ,
তেজপাতা ফোঁড়ন দিয়ে দুপুরের ঘ্রাণ ;মুগডালে সমাধান সোমবারা,
সন্ধ্যায় ফিরে যায় রঙেরা
যে যার ঘরে বাজে উলু, জ্বলে প্রদীপে প্রদীপে প্রার্থনা।

সুজাতাদি ,আপনি জানেন না আঁচল আপনার ছড়িয়ে যায় ওই …আকাশী ছাপার শূন্যতায়
যেখানে লুকিয়ে থাকে প্রাগৈতিহাসিক বজ্রপাত,
ওখানেই বৃষ্টির বাড়ি, মেঘেরা যেখানে বৈশাখে উন্মাদ।

সুজাতাদি ,আপনি বুঝতে পারেন কি
আপনার চোখে ফুটে থাকে মন,
দাঁতের উপর হাসির টুকরোতে ভাসমান থাকে মায়া,
আপনার পদক্ষেপে ছড়িয়ে পড়ে হৃদয় উতরানো সুগন্ধী?
আপনি জানেন না।

আপনি জানেন না
আমি অজান্তেই সেসব কুড়িয়ে নিয়ে দেখি
এরাই ঈশ্বর চন্দ্রের সময়,
রবীন্দ্রনাথের বৌঠান থেকে খসে পড়া কাল,
দেখি ঋকবেদ ধুয়ে বইছে এক নদী
সন্তান বৎসল সরস্বতী; আবেগী শ্বাশ্বত জল।

চার।।

জৈব নক্ষত্র

সুদীপ্তাদি একঝাঁক চলন্ত বিকেল পোষা সময়ের মালিক তুমি।
উষ্ণতা নিভে আসা উড়ন্ত নিঃশ্বাসে
তোমারও আসে সন্ধ্যার প্রবণতা।

জেনে রাখো সুদীপ্তাদি
তোমার নিশ্বাসই মেঘের ডিম্বাণু ওই
নীলচে সাদায়।আকাশকাটা।
হে মেঘ-জননী
তোমার বিগত পদক্ষেপ দেখো উবে গেছে,
খুঁজে দেখো পাবে না কোথাও এতটুকু চিহ্ন সে যাত্রার।
তাই বলে নিষ্ফলও নয় তোমার এতটা হাঁটা।

সন্ধ্যার শালিকের ডানায় উড়ে গেছে দেখো
এখনই জ্বলে উঠবে ল্যম্পপোস্টের নীচে ওদেরই ছায়া,
না জ্বললে নিঃশ্বাস হয় না সুদীপ্তাদি,
না জ্বললে নিঃশব্দের ওই আলো ;
ছায়ারা তোমারও হয় না।

ফাগুনের মেঘ গেরুয়ায় বৈরাগী যখন
বুঝে নিও হাজার বিকেল গেঁথে নেওয়া আমরাই
অবশেষে বিকেল হই।
গন্তব্য স্থির করা মনের ভিতর কিছুটা সময় জারিত হলে
উপসংহার হতে আজও গর্ভবতী ভালোবাসারা।

টুপটুপ নিঙরে পড়া সময় হতে রাত।
ডানাভরা রাত নেমে আসে রাতের অঙ্গে।
আলোরা…আলো নিভিয়ে দিয়ে ওই
চাঁদফাটা লাবণ্যময়ী ওই জ্যোৎস্নারা।

জৈব-নক্ষত্র জ্বলজ্বল করে আজও
রাতজাগা দিনজাগা তোমার নিঃশ্বাসপ্রশ্বাসে।

পাঁচ।।

এক কোদাল জীবন

তোমাকে দেখার আগে আমি একটি গাছ হতে চাই।
এক কোদাল মাটির মধ্যে দেহ
উপরে আর সুনীল সুদীর্ঘ আকাশ।
একফালি চাঁদে ঘেরা একটি শিউলির উঠোন।
আমাকে দেখার আগে তুমিও একটি গাছ হয়ে নিও।

অদৃশ্য হবে না তাহলে বাতাসে এত কথা, এ উচ্ছ্বাস।
সবুজ বিশ্লেষণ করে দেখো
খুঁজে পাওয়া যাবে গ্রহণে ফুলে ওঠা এক নদী।
তার পাড়ে আমি কথা দিয়ে মেলেছি যেসব পাতা
তাপ তাপ গন্ধ নিয়ে এলে প্রজাপতি
আমি তখন এক মানুষ হয়ে যাব।

গতকাল এক কবিতার মতো স্বপ্নচর-
পাশে বইছে ক্ষিপ্র অচেনা ঘোলাটে নদী
ও গাঁয়েরই মেয়ে বলে গেল – “শোনো এ নদী অবিশ্বাসী কোনো এক কবি
অথবা ভেঙে যাওয়া ওই প্রাসাদের মতো খানিক।

ফিরে যাও। দূরে যাও।
মানুষ হবার আগে যদি পারো একটি গাছ হয়ে নিও।”


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগ থেকে আরোও
Theme Created By FlintDeOrient.Com
error: Content is protected !!
error: Content is protected !!