একশো পঁচিশতম বর্ষে কবির প্রতি শ্রদ্ধায়:
কবিতা: চির-নবীন অমর কবি
কবিতা: চির-নবীন অমর কবি
মৃত্যু হয়নি তাঁর।
গোর দেওয়া হ’য়েছিল,
তাঁর শরীরটাকে শুধু …
জীবনমুখী আত্মার বিনাশ হয়না কখনও।
জীবনের উপলদ্ধি নিয়ে,
যে আত্মা পরিশুদ্ধ হয় …
পরিণত হয় চৈতন্যস্বরূপ স্বয়ংপ্রভায় …
ভাঙাগড়া মাজাঘষা ক’রে,
আত্মায় যে চৌম্বকশক্তি জেগে ওঠে,
তার আকর্ষণে ভূলোকবাসী মুগ্ধ হ’য়ে,
শ্রদ্ধায়, তাঁর গুণকীর্তন করে …
এই আকর্ষণ চিনিয়ে দেয় — ‘তাঁকে।’
বুঝিয়ে দেয় ভিন্ন শ্রেণীর এই ঋষি —
তাঁর উপলদ্ধির ঝলক কী ভাবে রেখেছে স্ব-ভাবের সৃষ্টিতে …
নব জাগরণের উদীর্যমাণ মন্ত্র নিয়ে শিক্ষকের ভূমিকায়,
উদ্দীপক হ’য়ে এক নতুন ধারার প্রবর্তনে …
নতুন এই ধারার সৃষ্টিই আমাদের উদ্বুদ্ধ করে।
সৃষ্টির এই মাদকতায় প্রেমবন্দী হ’য়ে,
অন্তরের শ্রদ্ধায় দেবতাজ্ঞানে
তাঁর আরাধনা ক’রি …
সৃষ্টি-ভাবের অনুচিন্তন-স্রোত —
ব’য়ে নিয়ে যায় আমাদের সংস্কৃতিসম্পন্ন ক’রে,
নিজেদের অচেনা-অজানা সংস্কৃতির পরিমণ্ডলে …
বাংলাভাষী বাঙালির জীবনে তুমি,
এক ঘুম ভাঙার গান…
মেরুদণ্ড সোজা রাখার সৎসাহস জাগাতে চেয়েছিলে,
বাঙালির মানসিক শক্তিতে …
দাসত্বের শৃঙ্খলে বন্দী হ’য়ে থাকা
বাংলাভাষী বাঙালিকে শিখিয়েছিলে,
দুর্বলতা ঝেরে ফেলে সোজা হ’য়ে দাঁড়াবার
ঐ মহামন্ত্র …
শিখিয়েছিলে প্রত্যক্ষ-পরোক্ষে প্রতিবাদী ভাষার
ঐ বীরমন্ত্র …
নিজের মস্তক নত হ’তে না দেওয়ার
ঐ নির্ভিক মন্ত্র …
‘বল বীর চির উন্নত মম শির’…
ঐদিন আমরা কতটা চিনেছিলাম!
কতটা বুঝেছিলাম তোমাকে, জানি না!
তোমার শাণিত লেখনীর ধার-য়ে
যাদের ভীত-বুক ও পাঁজর দ্বিখণ্ডিত ক’রেছিল,
তারই শুধু খোঁজ ক’রতে পেরেছিল
তোমার অন্তরের গুপ্ত বারুদের ভাণ্ডারটাকে…
আর, দিব্যদৃষ্টিতে তোমার তেজের পরিমাপ —
ক’রতে পেরেছিলেন কবিগুরু,
সাহিত্যের আকাশে চির উজ্জ্বল
ঐ নক্ষত্র — ‘দিবাকর’ স্বয়ং …
স্বতন্ত্র-মনের অত্যন্ত মনোযোগী
আধুনিক নিদর্শন তুমি।
তুমি জাতির এক কর্ণধার।
তুমি হুঁশিয়ারি অভিযানের ডাক দিয়ে,
মাতৃমুক্তি পণে বজ্রের ধ্বনি হ’য়ে
গর্জন ক’রতে শিখিয়েছিলে।
তুমি বন্দীত্বের যন্ত্রণা থেকে মুক্তির আহ্বানে —
কারার লৌহ কপাট ভেঙে ফেলার বীরত্ব জাগিয়েছিলে,
প্রতিটা বাংলাভাষী বাঙালির মনে।
তুমি উদ্ধারকারী হ’য়ে,
জাতির জীবনে এসেছিলে,
যারা ভেসে যাওয়ার সন্তরণ শেখেনি।
তুমিই প্রকৃত ইসলাম ধর্মাবলম্বী।
তুমি শক্তি উপাসক।
তুমি কৃষ্ণ প্রেমে মাতোয়ারা
এক সার্থক বৈষ্ণব।
অন্তরের প্রেমের প্রতীকীরূপ রেখে গেছ —
প্রেমালাপের হার্দিক উপস্থাপনায় …
সুরের মাধুর্যে তোমার গীতিকথা —
কোন্ ছন্দময়ীর ছন্দে দুলে!
সুরের স্রোতে ব’য়ে গেছে
কার প্রেমের টানে!
কার চরণ পানে …
হে কবি,
নক্ষত্রের আকাশে তুমি,
রবি দ্বারা আলোকিত —
আর এক রবিসম নক্ষত্র।
পদবন্দনা ক’রে তোমাকে জানাই,
আমার অন্তরের শ্রদ্ধা।
আমার প্রেমাঞ্জলি তোমার প্রতি দেবতাজ্ঞানে।
তোমার সৃষ্টির ভাবোচ্ছ্বাসে নিমজ্জিত হ’য়ে,
তোমার অনুসারী হওয়ার বাসনায়,
তোমার সম্প্রীতির ভাষায় —
আমিও আজ গাহি সাম্যের গান …