কবিতা: গদ্য-পদ্য দ্বন্দ্ব পাঁচালী
ড.চঞ্চলকুমার মণ্ডল
গদ্য-পদ্য দ্বন্দ্ব পাঁচালী
ধোঁয়াশাময় গদ্য কাব্য অমৃত সমান,
অর্থ খুঁজতে ব্যর্থ মাথার যন্ত্রনা পান।
কাব্য ভাষার মানে খুঁজতে চুল ছিঁড়ে যান!
গদ্য সৃজন কত যে কঠিন,এটাই তার প্রমাণ!!
অমিয়, সুধীন, বিষ্ণুদে, জীবনানন্দের দেশে,
আধুনিকতার নামে কবিতা ধোঁয়াশায় মেশে।
কবিশেখর, কুমুদ রঞ্জন কিংবা জসীমউদ্দীন,
ম্যাড়মেড়ে প্রাচীন ছন্দ,চলবে না ওসব বাদ দিন।
কবিতার ভাব,অর্থ যা সহজেই দিল ধরা;
সে কি আর কবিতা হলো? সামান্য শিশু ছড়া।
ধোঁয়াশাময় রহস্যে যদি কাঁপে পাঠকের ভুরু,
সেই তো সার্থক গদ্যকাব্য নতুন পথের শুরু।
মাথায় কত কি যে ঘোরে, লিখি সর্বক্ষণ!
উঠতে-বসতে, খেতে-শুতে লিখে কবি মন।
গ্রীষ্মে রচেন বর্ষার গান,বর্ষায় বসন্ত;
ছন্দে-সুরে,পদ্য রচেন যাঁরা তাঁরা কবি নন অন্ততঃ!!
বিদ্যাপতি, চণ্ডীদাস, কাশী, হেম, নবীন;
সেই কবে গিয়েছে বিদায় ছন্দ বোনার দিন।
আজও যাঁরা পদ্য রচেন হয়ে আলাওল,
জানেন কি তাঁরা গদ্যকবিতা পাল্টে দিয়েছে ভোল।
মধু কবি ও অমিত্রাক্ষর ছন্দ গেলেন রচে,
কালের স্রোতে যায়নি হারিয়ে তার ভাব ভাবনা মিছে।
“পুনশ্চে”র গদ্য কাব্যে দিয়েছিলেন হাত,
ভাবে,ভাষার সারল্যে অতি পৃথিবীর কবি রবীন্দ্রনাথ।
পদ্য হোক,গদ্য হোক তাই নেবেন না চাপ।
ভাবে ভাষায় নয় দুর্বোধ্য,থাক তাতে উত্তাপ!
পদ্যকবি- গদ্যকবির দ্বন্দ্ব কে দেবে রুখে?
কবিও কবিতায় ছয়লাপ আজ মোবাইল- ফেসবুকে।
রহস্যময় গদ্যে যত লিখুন হিজিবিজি,
সারল্যময় ছন্দ-বর্ষায় নিজে নিজেই ভিজি।
না বুঝে, না জেনে চিনে ফুল ফোটান মালি,
ফুলের গন্ধ না পেয়ে কি তবে দেব হাতের তালি?
মালিকে করবে খুশি,এমন অন্ধ কে আর?
কেন জানি না ভালো লাগে মদনমোহন তর্কালঙ্কার।
জীবনে না ছন্দ থাকুক,কবিতায় খুব দরকার।।
ভালো কি লাগে বক্তব্যের না বুঝে কোন মানে?
সত্যি বলো সারল্যময় ছন্দ কার মন না টানে?
চেনা-জানা হয় যেটা সেটাই সুন্দর,
সালঙ্কারিক ছন্দে রচনা রায়গুণাকর।
চিনি না জানি না যা, বুঝতে না পারি,
মগজে ঢোকে না যা, সে তো অতিমারি!
লাখো লাখো কবি তবু মজে ফেসবুকে,
লিখে চলেন রোজ কত যে যার মনের সুখে।
এ বলে আমায় দ্যাখ,ও বলে আমায়-
তাঁদের ঘিরে কিছু প্রকাশক, অর্থ কিছু কামায়।
যাঁরাই লিখেন তাঁরাই পড়েন,পড়ে না তো কেউ আর;
এ ওকে, সে তাঁকে দেয় নানান পুরস্কার!
পরস্পরে হাততালি দেন, ঈর্ষায় বাঁকান ভুরু;
কবির লড়াইয়ে বোঝাই দায় কে কার শিষ্য-গুরু।
এই টেক্কার শেষ কোথায়? কোথায় বা শুরু।
জানা নেই থামবে কি এই ঘোড়া-রেস?
ফুটছে কি কবিতায় সমকাল-দেশ?
শাসকের রক্ত চোখে ও জানি, লেখনী নয় ভীত;
কবি ও কবিতা তবু দেখি হয় বিজ্ঞাপিত।
উত্তরীয়-স্মারক, মোমেন্টো যত খ্যাতির মোহ,
শাসকের শোষনেও তাই কে হয় রাষ্ট্রদ্রোহ?
বরং লেখনী মুখে চলকে গড়িয়ে যায় তেল,
ভণ্ড রচি সাধু কবি যুগের আঁতেল!
উলঙ্গ রাষ্ট্র দেখেও হয় না বিন্দু মাত্র লজ্জা,
লেখনী বিক্রি, বিক্রি বোধ,বিবেক, অস্থি-মজ্জা!
“গেল গেল দেশ!” যাঁরা বলেন হন্যে হয়ে;
তাঁরাই বলেন: “হচ্ছে বেশ!” শাসকের ভয়ে।
এ ও তো দারুণ আর্ট,ধরে ছলাকলা;
পাঁকে থেকেও পাঁকাল মাছ ,গা’ বাঁচিয়ে চলা।
যতই বলি, “লিখি সে তো নিজের জন্য নয়!
দেশ-কাল-সমাজের যদি কিছু উপকার হয়!”
আসলে, লেখনী ধরার পিছে লুকিয়ে রয় মোহ;
নইলে কেন গর্জায় না লেখনী? করে না বিদ্রোহ?
বিশ্বজুড়ে কবির লেখনী পাক বিদ্রোহের মন্ত্র,
পৃথিবীর সব কালি নিংড়ে লেখা হোক, শোষণহীন রাষ্ট্র তন্ত্র।। ..