শৃণ্বন্তু দৈনিক সাহিত্য
১. নদীর শরীরে
সারারাত লিখে চলেছি ভাষা
কাত হয়ে শুয়ে আছে ভোর।
উন্মুক্ত স্বপ্ন নারীর নরম শরীর ছুঁয়ে কাঁদে
ব্রাত্য চরাচর সংসার মাঝে
জীবনের জলছাপ ভাসিয়ে দিয়েছে ছায়ায়
প্রকৃত হিন্দোল মাঝে খড়কুটো রঙিন প্রজাপতি
দেহপাঠে যাপনচিত্র রামধনুর রঙে বিলীন
চোখের জলে পুড়ে যায় নদী
শান্তির চোখ দুটি শূন্য প্রকৃতির
নগ্ন নদীর কাছে প্রযত্নের ছবি হয়ে
মেঘপত্রে সমকামী।
২. মহাশূন্যে
অনন্ত শব্দচ্ছটার মাঝে নিজেকে জড়িয়ে রাখছি
ধ্বনিত শব্দে দিবারাত্রি—
বুদবুদে ভরা জীবন চলচ্চিত্র মাঝে
শব্দের অঙ্গার ভাঙে।
রহস্য রোমাঞ্চতায় ফুল ফলে পরিণত শব্দবীজ
শরীরে অনুরণন বইতে থাকে।
প্রকৃতির ঠোঁট থেকে শব্দ ঝরে পড়ে সংবাদে—
দুধসাদা জলের আয়নায় রহস্য রোমাঞ্চময় জীবন
লীন হয়ে যাচ্ছে ক্রমশ মহাশূন্যে।
৩. মৃত্যু
অনন্ত শূন্য!
মহাজাগতিক রূপ ছুঁয়ে দেখলাম
ধ্যানেমগ্ন বিশ্বপিতা।
একটা পাথরের টুকরো এসে বুকে লাগতেই
মৃত্যুর আনন্দধ্বনি বার্তা পৌঁছয়।
দুঃসাহসিক মন নিয়ে বসুন্ধরার সামনে এসে দাঁড়ালাম।
অনন্ত শূন্য!
শুধু মৃত্যুই জেগে রয়েছে।
সে কাছে এসে বলল—
কতকাল তোমাকে দেখিনি
স্পর্শে ক্ষুধায় অনুভবে—
৪. কবিতার জন্য রাত্রি
একটা কবিতা আমায় রাত জাগিয়ে রাখতে পারে।
একটা কবিতার সাথে আবদ্ধ হতে পারি সারা রাত।
কবিতা! — সে কী বিষম বস্তু।
তৃতীয় নয়ন খুলে দেখলে সেও
কথা বলে আমার সাথে।
সময়ের দাবিতে সে এগিয়ে রয়েছে সবার আগে।
একটা ভালো কবিতার অপেক্ষায় আমি
আর রাত জাগা পরছায়ায়…
চিলেকোঠার ঘর বাঁচিয়ে রাখে স্বপ্নগুলো
ব্ল্যাক অ্যান্ড হোয়াইট ফ্রেমে বন্দি যে জীবন ছিল
আজ তা কালারফুলে আবদ্ধ।
চারিদিকটায় তাকালে রঙিন সব প্রজাপতি
রঙিন স্বপ্নের ভেলায় ভিড় সমাবেশে।
চোখও ক্রমশ রঙিন চশমা ফ্রেমে আবদ্ধ হচ্ছে প্রতিনিয়ত।
লোভাতুর সমাজ শুধুই রঙিন বাঁধানো ফ্রেমে আবদ্ধ।
চিলেকোঠার ঘর বাঁচিয়ে রাখে স্বপ্নগুলো
কেউ দেখে না সেভাবে।
সেখানে যে শান্তি রয়েছে
অনির্বাণ আলোয় জলছবিতে।
৫. দুটো টব
দুটো টবে প্রতিনিয়ত লক্ষ আমার
একটা সোজা হয়ে দাঁড়াতে শিখেছে
আরেকটা ভারসাম্যহীন কাউকে জড়িয়ে
আঁকড়ে ধরে এগোতে চায়।
আমি নিজেকে আয়নার অবয়বে দেখি
আর ছায়াশরীর বলে আমার কোনটা তুমি ?
সোজা হয়ে দাঁড়াতে যে শিখেছে
না পরনির্ভরশীল!
আমি ফ্যালফ্যাল করে বোকার মতো
ছায়ার গোপনে উত্তরগুলো
আজো খুঁজে চলি!
৬. বাকিটুকু মায়া
শ্মশানের ছাই দিয়ে গেল কস্তুরী নাভি
গঙ্গা চেয়ে রয়েছে সূর্য ম্লান সারা হলে
দীর্ঘশ্বাস মৃত বৎসর আগামীর প্রতীক্ষা—
কিছু বলার ভাষা আজ মায়াডোরে দিয়েছে পাড়ি।
পিছন ফিরে পালাতে পারলে বাঁচি।
দুঃখগুলো সব বলছে পুরনো স্মৃতি!
গঙ্গা বয়ে চলেছে নীরবে।
ভাঙা পিলসুজ হাতড়ে বেড়ায় ভোর
যেখানে অস্তিত্ব মুছে গেছে
রয়েছে জৈব ভালোবাসার স্রোত।
আর রয়েছে মায়ায় অশ্রু নদী
জগৎ সংসার।
৭.ভালোবাসা এক প্রজাপতি
ঘাসের চাদরখানি উড়িয়ে দিয়ে
শূন্য বলয়ে মেঘের মধ্যবর্তী তোমার মুখহাসি।
মিথ্যে বসন্ত ধরা দিয়েছে ছন্নছাড়া আশকারায়
ইশারাতে বিকেলকে আরেকটু না হয় ধরে রাখা যায়
পায়ে পা মিলিয়েছি ভালোবাসো বলে।
রঙ মাখিয়েছি তোমার দু’গালে— সিঁথিতে
আকাশের নীলগুলো বাসা বেঁধেছে বুকে তোমায়
আরেকটু নিবিড় করে পাব বলে।
রামধনু রংগুলো তোমার ঠোঁটের পারিজাত বয়ে আনে
চোখের গহিন অন্তরালে।
হারিয়ে যেতে চাই তোমায় আমায়
পাশাপাশি ছায়ার বুননে।
ভালোবাসলে প্রজাপতি বিছিয়ে দেয়
স্বাদ পূরণের মিলন যাপনচিত্র।
শরীর পুড়ে যাচ্ছে ভয় থাকে
ভালোবাসা হলে…
৮. দেশলাই কাঠির মিছিল
আকাশটা আয়নার মতো স্বচ্ছ
ছায়াপথ আজ মিশে গেছে কবির সমুখপথে।
ম্যাজিকের মতো মানুষগুলো ব্যস্ততা গিলছে।
দেশলাই বাক্সের অন্ধকারে সাজানো রয়েছে বারুদ।
কাঠিগুলি সব মিশতে থাকে মিটিং-মিছিলে
অপেক্ষা ভিসুভিয়াস আগ্নেয়গিরি সমুখে
ঝুলন আজ লুপ্ত ম্যাজিকে।
লিলিপুট মানুষগুলো ব্যস্ত হাটেবাজারে…
৯. পোষা আয়নায়
গোপন কথারা ধরা দেয় ফেসবুকে
ইচ্ছে আর অনিচ্ছের চারপাশ ঘিরে রয়েছ তুমি।
নির্জনে তুমি আসো আমার পাশে
দাঁড়াও চোখের পাতায়।
অনির্বচনীয় ইচ্ছেগুলিকে আমি চাষ করি প্রতি রাতে
তুমি অনুভবে ধরা দাও আমার গোপন রাতে!
বিছানার ওপর জ্বর আসে
নিয়ন্ত্রণহীন জীবন শুধু খোঁজে তোমায়!
অন্তরালের আড়াল থেকে
তুমি সবসময় দেখে চলেছ!
মাস দিন বছর রাতগুলো চুরি হয়ে গেছে
হয়তো বোধের ঘরে।
আয়নায় ক্যানভাসে জলছবিতে তুমি বেরিয়ে আসো
আমার বুকের মধ্যে থেকে।
তোমাকে আমি রেখেছি আয়নায় জড়িয়ে…
১০. ছবিদের ছোটাছুটি
প্রতিদিন শুতে যাওয়ার আগে
অন্তর্বাস অনুধ্যান করি—
সেখানে হরিণেরা ছোটাছুটি করছে
ময়ূরেরা বর্ষায় পেখম মেলেছে
আয়নায় ধরা দেয় রঙিন শাড়ি
ইশারায় আমার দুচোখ বন্ধ হয়ে আসে
ভালোবাসার অ্যালবাম থেকে
খুঁজি প্রেমিকা—
চুম্বনে ধরা দেয় লোডশেডিং
বাইরে জোর বৃষ্টি
বিদ্যুতের ফ্যাকাশে কমলা মুখ
নগ্নতা শ্যাম্পেনে ভাঙচুর