Jack London (1876-1916)
জ্যাক লন্ডন (১৮৭৬-১৯১৬)
জ্যাক লন্ডন আমেরিকার এক প্রসিদ্ধ ঔপন্যাসিক, সাংবাদিক এবং সমাজ সংগঠক। তিনি আমেরিকার প্রথম সাহিত্যিক যিনি বই লিখে সারা বিশ্বে জনপ্রিয় হয়েছিলেন আর তার সাথে সাথে প্রচুর অর্থও উপার্জন করেছিলেন। এছাড়া তিনি প্রথম বিজ্ঞান-ভিত্তিক কাহিনীর জন্মদাতা। স্বল্পায়ু এই মানুষটির গোটা জীবন বড় ভিন্ন সুরে বাঁধা। যেমন ১৮৭৬ সালে স্যান ফ্রানসিসকোতে জন্মগ্রহণ কালে তার নাম ছিল John Griffith Chaney। তার মা Flora Wellman Ohio স্টেট থেকে ক্যালিফোর্নিয়ায় এসে স্যান ফ্রানসিসকোতে বসবাস শুরু করেন। স্কুলে শিক্ষকতা করার সাথে সাথে তিনি জ্যোতিষবিদ্যার চর্চাও করতেন। আর এক জ্যোতিষ William Chaneyর সাথে বাস করার সময় Flora অন্তঃস্বত্বা হবার পর Williamএর সঙ্গে তার সন্তানের লালনপালনের ভার নিয়ে মনোমালিন্য হয়। এই কারণে Flora আত্মহত্যার চেষ্টা করেন কিন্তু সফল হন না। পুত্র John Chaney জন্মানোর পর Flora তাকে শহরের এক নামকরা পালিতা মাতা Virginia Prentissএর (যিনি আগে এক ক্রীতদাসী ছিলেন) কাছে রেখে আসেন। ১৮৭৬ সালের শেষের দিকে Flora আমেরিকার গৃহযুদ্ধ-ফেরত John Londonকে বিবাহ করে তার পুত্র সন্তানকে নিয়ে স্যান ফ্রানসিসকোর কাছে Oakland শহরে বাসা বাঁধেন। এই পরিবারে Johnএর নাম পরিবর্তন করে jack London রাখা হয় এবং এই নামেই আমরা মানুষটিকে জানি।
শৈশবে Oakland শহরে বড় হবার সময় জ্যাক নানা কাজে অকাজে জড়িয়ে পরেন। কিছুদিন এক Canneryতে কাজ করার পর তিনি সমুদ্র উপকুলের oyster চোরের দলে নাম লেখান। এই সময় মাছধরার জাহাজে চড়ে তিনি জাপানেও গিয়েছিলেন। শুধু তাই নয়, Oaklandএ ফিরে এসে জুটমিলে কাজ করার সময় তিনি কিশোর শ্রমিক আন্দোলনে যোগ দেন এবং কয়েকমাস জেলও খাটেন। এইসব অভিজ্ঞতা জ্যাকের পরবর্তী জীবনের লেখাতে প্রতিফলিত হয়েছে। জেল থেকে ফিরে কিশোর জ্যাক স্কুলে ভর্তি হন আর এই সময় শহরের লাইব্রারিতে Ina Coolbirth নামের এক মহিলার অনুপ্রেরণায় তার বিভিন্ন সাহিত্যিকের লেখার সাথে পরিচয় ঘটে। স্কুলজীবনের শেষের দিকে জ্যাক পাড়ার এক পানশালায় পার্টটাইম কাজ করার সময় বহু নাবিকের মুখে নানা গল্প শোনেন। স্কুল পাস করার পর পানশালার মালিকের কাছ থেকে টাকা ধার করে জ্যাক ইউনিভার্সিটি অফ ক্যালিফোর্নিয়ার Berkeley ক্যাম্পাসে ভর্তি হন। লাইব্রেরির পুরনো খবরের কাগজ খুঁজে এই সময় তিনি তার মার আত্মহত্যার চেষ্টার কথা জানতে পারেন। এর পর William Chaneyর (তখন শিকাগো শহরের বাসিন্দা) সাথে চিঠির মাধ্যমে যোগাযোগ করার পর তিনি জানতে পারেন যে William সন্তানের জন্ম দিয়ে অক্ষম। এই কারণেই তিনি জানতেন যে Floraর সন্তানের পিতা অন্য কোন মানুষ আর এই নিয়েই তাদের মধ্যে অশান্তির সৃষ্টি হয়। তিনি আরও জানান যে সেই সত্য চাপা দেবার উদ্দেশ্যেই Flora তার নামে গুজব ছড়িয়ে সম্পর্ক বিচ্ছেদ করেন। এই সত্য জানার পর মানসিক ভাবে বিধ্বস্ত জ্যাক পড়া ছেড়ে দিয়ে উত্তর কানাডার Yukon প্রদেশের Klondike অঞ্চলের তৎকালীন Gold rushএর ভিড়ে যোগ দেবার সিদ্ধান্ত নেন।
১৮৯৬ সালে উত্তর কানাডার Yukon অঞ্চলে সোনা অবিস্কারের খবব আমেরিকায় ছড়িয়ে পড়লে হাজার হাজার মানুষ নিজেদের ভাগ্য পরিবর্তনের আশায় Klondike অঞ্চলে ভিড় করে। দিগন্তহীন তুষারাবৃত মনুষ্যবাসের অযোগ্য এই দুর্গম অঞ্চলে সমস্ত প্রতিকূল অবস্থা উপেক্ষা করে হাজার হাজার মরিয়া মানুষ যন্ত্রপাতির বোঝা কাঁধে নিয়ে এই বিপদজ্জনক অভিযানে যায়। প্রধানত খাদ্যাভাবে আর শীতের প্রকোপে বহু মানুষ প্রাণ হারায়, পরস্পরের সাথে মারপিট করে আর চরম দুর্দশার মুখোমুখি হয়। মাত্র ২১ বছর বয়েসে অশান্ত জ্যাক ও তার দরিদ্র ভগ্নীপতি এই Klondike Gold rushএর সামিল হন। যদিও অভিযানের অমানুষিক পরিশ্রম আর খাদ্যাভাবের কারণে জ্যাক স্কার্ভি রোগে আক্রান্ত হয়ে ভীষণ শারীরিক কষ্ট পান, এই অভিযানের অভিজ্ঞতা জ্যাকের প্রথম বিখ্যাত গল্প To build a fireএর প্রেক্ষাপট। সমালোচকদের মতে এই গল্পটি তার সর্বশ্রেষ্ঠ রচনা।
আমার জ্যাক লন্ডনের লেখার সাথে প্রথম পরিচয় এই To build a fire গল্পটি দিয়ে। স্কুলে লন্ডনের এক গল্প সঙ্কলন প্রাইজ হিশেবে পেয়েছিলাম, সেই সঙ্কলনের এই গল্পটি আমার মনের মধ্যে গভীর দাগ কাটে। ১৯০৮ সালে প্রকাশিত এই গল্পের মুখ্য চরিত্র Yukon অঞ্চলে সদ্য আগত এক ভাগ্যান্বেশি পুরুষ, প্রেক্ষাপট হিমশীতল Yukonএর boreal জঙ্গল। প্রতিবেশীর সাবধানবানী অগ্রাহ্য করে সে তার কুকুরকে নিয়ে বন্ধুর আস্তানায় যাবার সিদ্ধান্ত নেয়, পথে আবহাওয়া ক্রমশই খারাপ হয়ে পড়ে, নিজেকে গরম রাখার জন্য সে আগুণ জ্বালায়, কিন্তু আগুণ নিভে যাবার পর সে শীতে জমে মারা যায়। এই ছোট্ট ঘটনাটির মধ্যে দিয়ে লেখক প্রতিকূল প্রকৃতির সাথে মানুষের লড়াইয়ের এক নিদারুণ বিবরণ দিয়েছেন। গল্পের শুরুতে আমরা জানতে পারি যে তুষারাবৃত জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে মানুষটি তার বন্ধুর আস্তানায় যাবার কথা ভাবছে সেই শীতের দিনে যখন তাপমাত্রা -৬০ ডিগ্রিতে নেমে গেছে। বস্তির সবাই তাকে এই আবহাওয়ায় একা যেতে বারণ করে। কথা কানে না নিয়ে সে তার মস্ত বড় লোমশ আলাস্কান কুকুরকে সঙ্গে নিয়ে রওয়ানা হয়। কুকুরটা তার সহজাত প্রবৃত্তির কারণে এই আবহাওয়ায় কোথাও যেতে চায়নি, লোকটা প্রায় জোর করেই তাকে সঙ্গে এনেছে, তার প্ল্যান সে সন্ধ্যের আগেই তার বন্ধুর ডেরায় পৌঁছে যাবে। দুজন জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে বরফে ঢাকা পায়ে-চলা পথ ধরে খুব সাবধানে এগোয়, তাদের ভয় পাতলা বরফে-ঢাকা গর্তে না পড়ে যায়। মাঝদুপুরে ক্লান্ত হয়ে লোকটা রাস্তায় থামে আর আগুণ জ্বেলে তার খাবার গরম করে খেয়ে নেয়। দুর্ভাগ্যবশত আবার কিছুটা এগোনোর পর সে বরফ ভেঙ্গে রাস্তার এক গর্তে পড়ে নিজের জুতোশুদ্ধু পা হিমশীতল জলে ভিজিয়ে ফেলে। বাধ্য হয়ে এক গাছের নিচে আবার আগুণ জ্বেলে সে নিজেকে শুকোতে বসে। গাছের শুকনো ডাল ভেঙ্গে আগুনে দেবার সময় এক বরফের চাঁই ওপর থেকে আগুনে পড়ে তার আগুণ নিভিয়ে দেয়। ঠাণ্ডায় তার হাত পা জমে যেতে শুরু করে, পাগলের মতো অবশ হাতে সে আবার আগুণ জ্বালাবার চেষ্টা করে। এই সময়ে সে বুঝতে পারে যে ভীষণ ঠাণ্ডা কি বিপদ ডেকে আনতে পারে। কোনমতে কাঁপা হাতে দেশলাইয়ের সব কাঠি খরচা করে সে আর একবার আগুণ জ্বালায়, দুর্ভাগ্যক্রমে আগুণের কাঠ নাড়াতে গিয়ে সে আগুন নিভিয়ে ফেলে। আর আগুন জ্বালাবার কোন উপায় নেই মানুষটার, সে ভাবতে শুরু করে যদি সে কুকুরটাকে হত্যা করে তার গরম রক্তে নিজের অবশ হাত দুটো গরম করতে পারতো! এই সময় গল্পের ভাষা মর্মস্পর্শী, সে কুকুরটাকে মরিয়া হয়ে কাছে ডাকে, কুকুর তার ডাকে সারা দেয় না। সে বিপদ বুঝে দূরে সরে যায়। আর কোন উপায় না দেখে শরীর গরম করার জন্য মানুষটা বরফের ওপর দিয়ে দৌড় শুরু করে তার বন্ধুর ডেরার দিকে। বার কয়েক বরফের ওপর মুখ থুবড়ে পড়ার পর তার শরীর ঠাণ্ডায় পুরোপুরি জমে যায়, তার হিমশীতল দেহ পড়ে থাকে সেই নির্জন বিস্তীর্ণ তুষারাবৃত জঙ্গলের মধ্যে। রাতের বেলায় বন্ধুরা খোঁজ নিতে এসে তার মৃতদেহ খুঁজে পায়, কুকুরটাকেও তারা উদ্ধার করে তাদের ক্যাম্পে নিয়ে যায়। এই গল্পটিতে মানুষের ওপর তীব্র শীতের নির্মম প্রভাব, মানুষের আসন্ন মৃত্যুর আশঙ্কা, আর বেপরোয়া মানুষের বাঁচার আকুল প্রচেষ্টার অসাধারণ বর্ণনা রয়েছে।
Klondike অভিযানের অভিজ্ঞতা নিয়ে জ্যাক লন্ডন দুটি উল্লেখযোগ্য বই লেখেন, The Call of the Wild (১৯০৩) আর White Fang (১৯০৬)। প্রথম বইটি লন্ডনের সর্বশ্রেষ্ঠ উপন্যাস। এই বইয়ে এক পাহাড়ি স্লেজ-ডগ কুকুরের তার পরিচিত বন্য প্রকৃতিতে ফিরে যাওয়ার এক হৃদয়স্পর্শী কাহিনী বলা হয়েছে। Klondike Gold Rushএর সময় স্লেজ-ডগের ভীষণ চাহিদা ছিল। গল্পের শুরুতে ক্যালিফোর্নিয়ার স্যান্টা বারবারা এলাকার Miller পরিবারের খামার বাড়ি থেকে ১৪০ পাউন্ড ওজনের Buck নামের এক সেন্ট বারনার্ড কুকুরকে মালী Manuel চুরি করে আলাস্কার দুই ফরাসি বনিককে তাদের স্লেজ-ডগ হিশেবে Buckকে বিক্রি করে দেয়। আলাস্কা যাবার পথে Buck অনেক নিপীড়ন আর অনাহারের শিকার হয়। আলাস্কায় পৌঁছানর পর সে প্রবল শীতের হাত থেকে বাঁচার কৌশল আর স্লেজের অন্যান্য কুকুরদের সঙ্গে থাকার শিক্ষা লাভ করে। এরপর স্লেজ টানার পথে Buckএর সাথে স্লেজের প্রধান কুকুর Spitzএর শত্রুতা শুরু হয়। Spitz এক বদমেজাজি ঝগড়াটে কুকুর। কিছুদিনের মধ্যেই এক লড়াইয়ে Buck spitzকে মেরে স্লেজের প্রধান কুকুরের পদ লাভ করে। কিছুদিন পরে সেই দুই ফরাসি বনিক তাদের স্লেজ এক মেলম্যানকে বিক্রি করে দেয়। এবার আরও দীর্ঘ পথে ভারী চিঠিপত্রর ব্যাগ পরিবহনের ভার পড়ে এই স্লেজের ওপর। স্লেজের ক্লান্ত কুকুরের দল কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই দুর্বল হয়ে পড়ে আর Buckএর চোখের সামনে দলের সবচেয়ে দুর্বল কুকুরটিকে মালিক গুলি করে মেরে ফেলে। বাকি মেলের স্লেজের দুর্বল কুকুরের দলকে সেই মানুষ এক ডাকসাইটে মহিলা Mercedesকে বিক্রি করে দেয়। মহিলার মুখচোরা স্বামী Charles আর ভাই Hal স্লেজ চালাতে জানে না, তাদের এই পরিবেশে থাকার অভ্যেস নেই। বসন্তের বরফ গলে যাওয়ার সময় স্লেজের রাস্তায় অনেক বিপদ, প্রতিবেশীর এই সাবধানবানী তারা কানে নেয় না। স্লেজের মাল বেশি ভারী হয়ে গেছে দেখে Mercedes আর Hal প্রয়োজনীয় মাল আর খাবার নামিয়ে দিয়ে একগাদা ফ্যাশনের জিনিশ তুলে স্লেজে ১৪টা কুকুর বেঁধে দুর গন্তব্যের দিকে রওয়ানা দেয়। রাস্তায় খাবারের অভাবে বেশির ভাগ কুকুর মারা যায়, স্লেজ যখন White নদীর ধারে আসে তখন Buck আর ৪টে কুকুর অবশিষ্ট আছে। এই সময় John Thornton নামের এক পথপ্রদর্শক দলের সাথে যোগ দেয়। যদিও কুকুরের অবস্থা দেখে Thornton আর এগোনোর বিরুদ্ধে মতামত দেয়, Mercedes আর Hal জোর করে নদীর ভঙ্গুর বরফের আস্তরণের ওপর দিয়ে সামনে এগিয়ে যাবার সিদ্ধান্ত নেয়। বিপদের আভাস বুঝে Buck এগোতে চায় না, Hal আর Thornton নির্দয় ভাবে চাবুক চালায়। তবু সে নড়ে না দেখে তারা Buckকে দড়ি কেটে মুক্ত করে দিয়ে চার কুকুরের স্লেজ নদীতে নামায়। প্রত্যাশিত ভাবে ভারী স্লেজ নদীতে ডুবে যায় আর Thornton বাদে সবাই হিমশীতল জলে সমাধিস্থ হয়।
গল্পের দ্বিতীয় পর্বে Thorntonএর যত্নে Buck সেরে ওঠে। সে প্রভুর ভীষণ অনুগত। এক দুর্বৃত্ত গুন্ডা Bartonএর আক্রমণ থেকে সে প্রভুকে রক্ষা করে, নদীতে ডুবে যাওয়ার সময়েও সে Thorntonকে বাঁচায়। এর পর নদীর জল থেকে সোনার কুচি ছেঁকে তোলার এক অভিযানে গিয়ে Buck ১০০০ পাউন্ডের ভারী স্লেজ টানার বাজি জিতে Thorntonকে ১৬০০ ডলার পুরস্কার পাইয়ে দেয়। কিছুদিনের মধ্যে Thornton আর তার শাগরেদদের সঙ্গে Buck নিয়মিত সোনার সন্ধানে যেতে শুরু করে। এই রকম এক অভিযানে গিয়ে মানুষের দল যখন সোনার খোঁজে ব্যস্ত, Buck জঙ্গলের দিকে থেকে হায়েনার ডাক শুনে হায়েনার দলে গিয়ে ভেড়ে। সেই সময় সে মুক্ত বন্য প্রকৃতির তীব্র আকর্ষণ অনুভব করে। এর পর থেকে Buck নিয়মিত হায়েনার দলের সাথে মিশে জঙ্গলে ঘুরে বেড়ায়। সে ক্রমে অনুভব করে যে সে এই প্রকৃতিরই অন্তর্ভুক্ত, মানুষের দলে নয়। এর পর তার মালিকের ডেরায় এলাকার অধিবাসীরা হামলা করার সময় সে প্রাণপণে লড়াই করে বেশ কিছু শত্রু নিধন করে। কিন্তু সেই লড়াইয়ের শেষে ক্যাম্পে কোন মানুষ বেঁচে নেই, Buck বোঝে যে মানুষের সাথে তার সব সম্পর্ক কেটে গেছে, প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিয়ে সে ফিরে যায় জঙ্গলে তার হায়েনার দলের কাছে। এর পর থেকে Yukonএর সেই অঞ্চলে এক ভুতুড়ে কুকুরের কিংবদন্তি রটে যায় যে প্রতি বছর Thorntonএর সেই পুরনো ক্যাম্পে পরিদর্শনে আসে, হায়েনার দলের সাথে তার চিৎকার দিকে দিকে প্রতিধ্বনিত হয়ে ফেরে।
দুর্গম অঞ্চলে অভিযানের এই গল্প প্রথমে কয়েক খণ্ডে The Saturday Evening Post ম্যাগাজিনে প্রকাশিত হয়, পরে Macmillan পুরো বইটি প্রকাশ করে। আজ পর্যন্ত বইটির অসংখ্য কপি বিক্রি হয়েছে, এই বই থেকে লন্ডন প্রচুর অর্থলাভ করেন। সমালোচকের মতে, “this book is untouched by bookishness … The making and the achievement of such a hero [Buck] constitute, not a pretty story at all, but a very powerful one”। বইটির সাফল্যর পর লন্ডন Macmillanকে জানান যে এবার তিনি এক দ্বিতীয় বই White Fang লিখবেন যেখানে এক নেকড়ে তার বন্য প্রকৃতি ছেড়ে মানুষের পোষ মেনে নেবে, The Call of the Wild বইয়ের বিষয়ের ঠিক উল্টো।
১৯০৬ সালে প্রকাশিত White Fang বইয়ের মুখ্য চরিত্র এক নেকড়ে কুকুর (যার নাম White Fang)। এই বইয়ে লন্ডন পশুরা কি চোখে তাদের নিজেদের হিংস্র পৃথিবীতে নিজেদের স্থান করে নেয় আর মানুষের সমাজ সেই পৃথিবীতে কিভাবে নিজেদের আধিপত্য বিস্তার করে, এই নিয়ে গভীর আলোচনা করেছেন। বন্য পশুর গৃহপালনের নৈতিকতা নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে এই বইয়ে।
১৮৯৮ সালে ক্যালিফোর্নিয়ায় ফিরে আসার পর লন্ডন তার অভিযানের লেখা ছাপাবার জন্য সচেষ্ট হন। প্রথম দিকে তেমন সাড়া না পেলেও ক্রমে বিভিন্ন স্থানীয় পত্রিকা তার গল্প ছাপতে শুরু করে। এই সময় নতুন ছাপার টেকনোলজি আবিষ্কার হওয়ার কারণে ছাপার খরচা কমে যায় এবং ছোটগল্প ছাপায় আগ্রহী পত্রিকার সংখ্যা বেড়ে যায়। যেমন এই সময় লন্ডনের Diable, A Dog গল্পটি প্রকাশ পায়। দুজন শয়তান, Black Leclere (এক ফরাসি মালিক) আর তার নেকড়ে কুকুর Batardএর এই গল্পে দুটি প্রাণী দুজন দুজনকে ভীষণ ভাবে ঘৃণা করে আর দুজনই দুজনকে মারার চেষ্টায় রত। গল্পের শেষে Batard তার মালিককে নিহত করে কিন্তু তার পর নিজেকেও শেষ করে দেয়। গল্পটিতে মানুষের পোষা পশুর প্রতি আচার ব্যবহারের কি প্রভাব সেই পশুর ওপর পড়ে তাই নিয়ে বিতর্ক রয়েছে এই গল্পে। ১৯০৩ সালে The Call of the Wild প্রকাশের পর জ্যাক লন্ডনের লেখক হিশেবে খ্যাতি ছড়িয়ে পড়ে। Oakland শহরের অভিজাত Piedmont এলাকায় লন্ডন তার স্থায়ী বাসা বাঁধেন এবং স্যান ফ্রানসিসকোর এক রেস্তোরাঁয় The Crowd নামে এক সাহিত্যিক গোষ্ঠীতে যোগ দেন। পরে এই গোষ্ঠী লন্ডনের বাড়িতেই তাদের সমাবেশ শুরু করে। এই আড্ডায় লন্ডনের সাথে তৎকালীন বহু প্রসিদ্ধ লেখক, শিল্পী, বাদক, ও গায়কের পরিচয় হয়।
এবার জ্যাক লন্ডনের লেখার কথায় আসি। লন্ডন তার ছোটগল্পের জন্য খ্যাত, সমালোচকদের মতে, “London’s true métier was the short story … London’s true genius lay in the short form, 7500 words and under, where the flood of images in his teeming brain and the innate power of his narrative gift were at once constrained and freed”। যেমন The Law of Life গল্পে আমেরিকার Inuit গোষ্ঠীচ্যুত এক অধিবাসী বৃদ্ধের জীবনের শেষ ৫ ঘণ্টার বর্ণনা মনে গভীর দাগ কেটে যায়। এই যাযাবর গোষ্ঠীর মানুষ খাবার আর বাসস্থানের খোঁজে স্থান বদলের সময় এই আধা-অন্ধ অশীতিপর বৃদ্ধকে ফেলে চলে যায়। এমনকি তার ছেলে নিজের পরিবার সামলানোর অজুহাতে তাকে ফেলে যাবার সিধান্ত নেয়। বুড়ো নিঃশব্দে সব মেনে নেয়, সে জীবনের নিয়ম জানে, সে জানে তার প্রয়োজন ফুরিয়ে গেছে। শান্ত মনে সে ভাবতে থাকে পুরনো দিনের কথা, সুদিন ও দুর্দিনের সব স্মৃতি তার চোখের সামনে স্পষ্ট ভেসে ওঠে, তার অভিজ্ঞতা তাকে তার এই অন্তিম শেষ মেনে নিতে সাহায্য করে। ৫ ঘণ্টা বাদে মানুষটা মারা যায়। আবার Love of Life নামে ছোট্ট গল্পটিতে মানুষের বাঁচার অদম্য ইচ্ছার এক নিদারুণ বর্ণনা রয়েছে। গল্পের প্রেক্ষাপট কানাডার সীমাহীন তুষারাবৃত রিক্ত তুন্দ্রাভুমি, সোনার খোঁজে আসা দুই ক্ষুধার্ত বিদেশী মানুষ পথ হারিয়ে পাগলের মত খাবার খুঁজে বেড়াচ্ছে। দুজনের মধ্যে একজনের নাম Bill, আর দ্বিতীয় জন্মের নাম লেখক অনুচ্চারিত রেখেছেন। এই নাম-না-বলা মানুষটিই গল্পের প্রধান চরিত্র। প্রতিকূল পরিবেশ আর দীর্ঘ অনাহারের জ্বালা আমাদের এই নায়কের শেষ সমস্যা নয়, বরফের ওপর হাঁটতে গিয়ে এবার তার পা মচকায়। তার অবস্থা দেখে বন্ধু Bill তাকে ছেড়ে পালায়। অসহায় মানুষটার বন্দুকে একটা গুলিও নেই। গল্পের শেষে এই মানুষটি আবার টলোমলো পায়ে উঠে দাঁড়ায় আর খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে এক অজানা অনিশ্চয়তার পথে হাঁটা শুরু করে।
জ্যাক লন্ডনের A Piece of Steak গল্পটি পড়ে আমি অনেকক্ষণ ছুপ করে বসে থাকি। এক খ্যাতিচুত্য বয়স্ক বক্সারের শেষ লড়াইয়ের এই গল্পে লন্ডন দরিদ্র মানুষের পুষ্টিকর খাবারের অভাবের প্রতি পাঠকের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন। ১৯০৯ সালে Saturday Evening Postএ গল্পটি প্রথম প্রকাশিত হয়। গল্পটির মুখ্য চরিত্র Tom King নামের এক বয়স্ক বক্সার যে তার বক্সিং জীবনের অন্তিমকালে এসে পৌঁছেছে। একসময় সে ছিল বক্সিং জগতের শ্রেষ্ঠ বক্সার, তার বিশাল খ্যাতি ছিল দর্শক মহলে। তার অর্থের অভাব ছিল না, সে নিজের ও পরের ওপর মন খুলে খরচা করতো। এখন সে কপর্দক শূন্য, পাড়ার দোকান তাকে ধারে এক পাউন্ড মাংসের স্টেক পর্যন্ত দেয় না। আমরা যেদিনের গল্প শুনছি সেদিন সে তার প্রতিদ্বন্দ্বী এক উঠতি যুবক বক্সার Sandelএর সাথে বক্সিং রিঙে মোকাবিলা করবে। লড়াইয়ের আগে বাড়িতে খেতে বসার সময় আমরা দেখি বেচারার প্লেটে শুধু শুকনো রুটি আর সামান্য গ্রেভি। সে জানে লম্বা লড়াইয়ে জিততে গেলে পেটে মাংস থাকা খুব দরকারি, তা না হলে হাতের ঘুষিতে জোর আসে না। আজ সে উপায় নেই, সামান্য সেই রাতের খাবার শেষ করে স্ত্রী আর অভুক্ত ছেলেমেয়েদের বিছানায় পাঠিয়ে সে বক্সিং ক্লাবের দিকে রওয়ানা হয়। এরপর গল্পে সেই বক্সিং লড়াইয়ের নিদারুণ বর্ণনা আছে যেখানে লড়াইয়ে অভিজ্ঞ Tomএর ক্লান্ত পেশী তরুণ Sandelএর সহনশক্তি আর মার খেয়ে ফেরত আসার ক্ষমতার কাছে ক্রমাগত হেরে যায়। লড়াইয়ের প্রথম দিকে প্রাণশক্তিতে ভরপুর Sandel তাকে ঘুষির পর ঘুষি মেরে যায়, ক্লান্ত Tom তার ভারী শরীর এদিক ওদিক সরিয়ে কিছু ঘুষি এড়িয়ে যায়, কিন্তু সে ঘুরে ঠিক ঘুষির জবাব দেয় না। দর্শকরা চিৎকার করে Tomকে উৎসাহ দেয়, কিন্তু সাবধানী Tom লড়াইয়ের পরের রাউন্ডের জন্য তার স্বল্প শক্তি বাঁচিয়ে রাখে, আর গুটিকয়েক ঘুষি চালিয়ে Sandelকে নড়বড়ে করে দেয়। তৃতীয় রাউন্ডে Tomএর এক সবল ঘুষি Sandelএর চোয়ালে এসে পড়ে আর Sandel মাটিতে পড়ে যায়। তবু রেফারির দশ গোনার আগেই সে উঠে পড়ে। পড়ের তিন রাউন্ডে Tom আরও বার দুয়েক Sandelকে ধরাশায়ী করে, Sandel কোনক্রমে উঠে দাঁড়ায়। দর্শকরা বুঝতে পারে যে অভিজ্ঞ Tom হিশেব করেই তার শক্তি বাঁচিয়ে রেখে রউন্ডগুলো পার করছে। Sandelএর উত্তেজনার ভাঁটা পড়ে, সে বুঝতে পারে Tom সত্যিই এক চ্যাম্পিয়ান। তা স্বত্বেও লড়াইয়ের শেষের দিকে Tom ভীষণ ক্লান্ত হয়ে পড়ে, সেই সুযোগে Sandel তার মুখের বাঁ দিকে পর পর জোর ঘুষি চালায়। গল্পের ভাষায়, “his (Tom’s) legs were heavy under him and beginning to cramp. He should not have walked those two miles to the fight. And there was the steak which he had got up longing for that morning. It was hard for an old man to go into a fight without enough to eat. And a piece of steak was such a little thing, a few pennies at best; yet it meant thirty quid to him”। একাদশ রাউন্ডে মরিয়া Tom তার শেষটুকু শক্তি প্রয়োগ করে নিখুঁত কায়দায় ঘুষি চালিয়ে Sandelকে বার বার ধরাশায়ী করে, দর্শকরা উল্লাসে তাকে বাহবা দেয়। কিন্তু Tom নিজেই বুঝতে পারে যে তার শক্তি দ্রুত কমে আসছে, তার দৃষ্টি ঝাপসা হয়ে আসছে, আর Sandelএর মার খেয়ে উঠে দাঁড়াবার সহনশক্তি সীমাহীন। মাটিতে লুটিয়ে থাকা Sandel রেফারির নয় সেকেন্ডের ওয়ার্নিংএ কোনোমতে টলমল পায়ে উঠে দাঁড়ানোর পর দর্শকদের কানফাটানো চিৎকারের মাঝে Tom তার প্রতিদ্বন্দ্বীকে চেয়ে দেখে। সে জানে আর একটা ঘুষি Sandelকে শেষ করে দিতে পারে, কিন্তু “in a flash of bitterness, he remembered the piece of steak and wished that he had it then behind that necessary punch he must deliver”, তার ঘুষির জোর অন্তর্হিত। Sandel সুযোগ বুঝে ঘুষির পর ঘুষি চালিয়ে Tomকে ধরাশায়ী করে। লড়াইয়ের বাজির সব টাকা Sandelএর পকেটে যায়। কপর্দকহীন Tom বিক্ষিপ্ত মনে বাড়ির পথে হেঁটে রওয়ানা হয়, তার ট্যাক্সিতে যাবার পয়সা নেই। চোখভরা জল নিয়ে পরাজিত ক্ষুধার্ত মানুষটা দু মাইল রাস্তা হেঁটে যায় অন্ধকার রাতে।
সমালোচকের ভাষায় “A Pound of Steak shows the sickening nature of poverty, the issue of aging and the inevitability of declining toward an eventual death”। এই সময়ের কাছে মানুষের হেরে যাওয়ার ব্যাপারটা সত্যিই পাঠকের মনে ভীষণ আলোড়ন তোলে। আর মন মুচড়ে ওঠে যখন Sandelকে পরাজিত করার শেষ ঘুসিটা মারতে না পারায় বাজিতে হেরে ক্ষুধার্ত Tom মাটিতে পড়ে যায়, তার সেই পরাজয়ের কারণ সামান্য A Pound of Steak।
১৯০৫ সালে ক্যালিফোর্নিয়ার Sonoma এলাকার পাহাড়ি অঞ্চলে এক খামার বাড়ি কিনে লন্ডন স্যান ফ্রানসিসকো ছেড়ে চলে আসেন এবং চাষবাসে মননিবেশ করেন। দুর্ভাগ্যবশত তার এই নতুন উদ্যোগ সফল হয় না, উপরন্তু প্রচুর অর্থব্যায়ে তৈরি তার প্রাসাদটিও আগুনে পুড়ে ছাই হয় যায়। এই সব দুর্ঘটনার মধ্যেও লন্ডনের লেখা চলতে থাকে। যেমন Sonoma এলাকা তার The Valley of the Moon উপন্যাসের প্রেক্ষাপট। বইটিতে Billy আর Saxton Roberts নামের এক মজুর শ্রেণীর দম্পতি Oakland শহর ছেড়ে Sonoma অঞ্চলে চলে আসার কাহিনী বলা হয়েছে। গল্পের শুরু Oakland শহরে, যেখানে Billy এক শ্রমিক সংগঠনের নেতা আর তার বউ Saxton এক লন্ড্রিতে কাজ করে। Billy বক্সিংএ কিছু নাম করেছে কিন্তু সে জানে এই জীবিকায় তার কোন ভবিষ্যৎ নেই। এলাকার কারখানাগুলোর স্ট্রাইক নিয়ে মারপিট আর অশান্তির এই দম্পতির জীবনে ঝামেলা লেগেই আছে। Billy স্ট্রাইকের মারপিটের কারণে জেলে যায় আর দাঙ্গার হুড়োহুড়ির ধাক্কায় Saxtonএর গর্ভপাত হয়ে সে তার পেটের শিশু হারায়। Billy জেল থেকে বার হবার পর তারা দুজনে চাষবাসের ইচ্ছে নিয়ে Sonoma valleyতে চলে আসে। এলাকার ফুল আর তরিতরকারি চাষের কাজে কিছুদিন কাজের পর Billy ঘোড়া কেনাবেচার কাজে হাত লাগায়। তারা লক্ষ্য করে সেই অঞ্চলের ধনী মানুষেরা ফুল আর তাজা তরিতরকারি পছন্দ লড়ে। Jack Hastings নামের এক লেখকের পরিবারের সাথে তাদের পরিচয় হয়। গল্পে লেখক লন্ডন তার নিজের পরিবারের প্রতীক হিশেবে এই পরিবারের চিত্রায়ন করেন। এই লেখক Jackএর কাছে Billy sustainable কৃষিকর্মের ধারা সম্পর্কে শিক্ষা নিয়ে কম নষ্ট করে, কম জল ব্যবহার করে উন্নত মানের সবজি আর ফল ফলাবার কাজে হাত লাগায় এবং অল্প সময়ের মধ্যেই তারা সুদিনের মুখ দেখে। আমেরিকার আদি অধিবাসীদের ভাষায় Sonoma valley মানে চাঁদের উপত্যকা আর সেই চাঁদের উপত্যকাই Billy আর Saxtonকে তাদের ভালভাবে বাঁচার সুযোগ করে দেয়। বস্তুত লন্ডন নিজে শ্রমিক আন্দোলন ও সংগঠন থেকে বিদায় নিয়ে Sonoma এলাকায় এসে যে নতুন ধরনের চাষবাস প্রথার প্রবর্তন করেছিলেন তার শিক্ষাই তিনি এই বইটির মাধ্যমে পাঠক সমাজকে উপহার দিয়ে যান। এই দিক দিয়ে জ্যাক লন্ডন ক্যালিফোর্নিয়ার বৈজ্ঞানিক ভিত্তিতে চাষবাসের প্রথম পথপ্রদর্শক।
জ্যাক লন্ডন তার লেখক জীবনে ৫০টির ওপর বই প্রকাশ করেন। কয়েকটি উল্লেখযোগ্য বইয়ের নাম A Daughter of the Snows, The Call of the Wild, The Sea Wolf, Tales of the Fish Patrol, John Barleycorn, South Sea Tales, Theft, The Iron Heel, The Valley of the Moon, আর The Acorn Planter. লেখক জীবনের বেশ কিছু সময় জ্যাক লন্ডন নিজের চোখে পশুদের প্রতি দুর্ব্যবহার ও অত্যাচার দেখেছিলেন। এই কারণে জীবনের শেষের দিকে লন্ডন পশু পুনর্বাসনের কাজে উদ্যোগী হন। Society for the Prevention of Cruelty to Animalsএর সাথে হাত মিলিয়ে তিনি জ্যাক লন্ডন ক্লাবের উদ্বোধন করেন এবং সার্কাসে পশুদের প্রতি দুর্ব্যবহারের বিরুদ্ধে অভিযান চালান। এই বিষয় নিয়ে তিনি দুটি বইও লিখেছিলেন। এছাড়া আমেরিকায় ইউরোপিয়ান উপনিবেশকারীরা আসার পর স্থানীয় আদিবাসীদের জীবনযাত্রার তোলপাড় আর শ্বেত সম্প্রদায়ের সাথে তাদের সংঘর্ষের নিদারুণ ফলাফল নিয়ে লন্ডন ভীষণ ভাবে প্রভাবিত হন। তার সর্বশেষ বই The Acorn Planterএ এই বিষয়ে তার মতামত প্রতিফলিত রয়েছে। বইটি লন্ডনের মৃত্যুর বছরেই প্রকাশিত হয়।
১৯১৬ সালে তার Sonomaর খামার বাড়িতে এই অস্থির মানুষটির মৃত্যু হয়। যদিও জ্যাক লন্ডন বড়সড় চেহারার মানুষ ছিলেন, যৌবনে Yukon অঞ্চলে স্কার্ভি রোগে আক্রান্ত হবার পর তার স্বাস্থ্য ভেঙ্গে পড়ে। তাছাড়া শেষ বয়েসে অত্যধিক মদ্যপান ও কিডনির রোগের কারণে তার শরীর খারাপ হয়ে যায়। ব্যথা ভুলে থাকার জন্য তিনি মরফিন আর আফিম (দুটি “ওষুধ”ই তখন দোকানে পাওয়া যেত) যথেচ্ছাচারে ব্যবহার করতেন। অনেকের ধারনা এই ব্যথার “ওষুধ”এর অত্যধিক ব্যবহারই তার মৃত্যুর কারণ।