আমেরিকান সাহিত্য ও সাহিত্যিক(পর্ব-২)। এই পর্বে 'ওয়াশিংটন আরভিং'। লিখেছেন প্রদীপ মাশ্চরক।। - শৃণ্বন্তু আমেরিকান সাহিত্য ও সাহিত্যিক(পর্ব-২)। এই পর্বে 'ওয়াশিংটন আরভিং'। লিখেছেন প্রদীপ মাশ্চরক।। - শৃণ্বন্তু
মঙ্গলবার, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:৩১ পূর্বাহ্ন

আমেরিকান সাহিত্য ও সাহিত্যিক(পর্ব-২)। এই পর্বে ‘ওয়াশিংটন আরভিং’। লিখেছেন প্রদীপ মাশ্চরক।।

আপডেট করা হয়েছে : মঙ্গলবার, ২৮ মে, ২০২৪, ৬:৩৯ অপরাহ্ন

আমেরিকান সাহিত্য ও সাহিত্যিক: পর্ব-২; ওয়াশিংটন আরভিং 

লেখক: প্রদীপ মাশ্চরক 

ওয়াশিংটন আরভিং (এপ্রিল ৩, ১৭৮৩ – নভেম্বর ২৮, ১৮৫৯)

উনবিংশ শতাব্দীর আমেরিকান লেখকদের মধ্যে ওয়াশিংটন আরভিং (এপ্রিল ৩, ১৭৮৩ – নভেম্বর ২৮, ১৮৫৯)  – এর নাম বিশেষ ভাবে উল্লেখযোগ্য। নিউ ইয়র্কের এক ধনী স্কটিশ-ইংলিশ পরিবারে আরভিং জন্মগ্রহণ করেন। নিউ ইয়র্কের বাসিন্দা এই মানুষটি কিন্তু ওই এলাকার অধিবাসীদের পান্ডিত্যাভিমানী আচরণ প্রথম থেকেই ভালো চোখে দেখেননি। তাদের জীবনধারা নিয়ে পরিপূর্ণ সাহিত্যিক ভাষায় বিদ্রূপ আর মশকরা আরভিংএর লেখায় বারবার হাজির হয়েছে। বস্তুত, আরভিং আমেরিকার প্রথম“neoclassical satirist with polished bright style”. 
প্রথম জীবনে আরভিং ছদ্মনামে নিউ ইয়র্ক শহরের Morning Chronicle পত্রিকায় তার লেখা শুরু করেন। কয়েক বছর পর ভাইয়ের সাথে তিনি Salmagundi নামে এক পত্রিকার সূচনা করেন আর এই পত্রিকাতেই বিভিন্ন ছদ্মনামে নিউ ইয়র্কের বাসিন্দাদের নিয়ে মশকরা করে অনেক গল্প লেখেন। Salmagundi নামটা মজার, যার অর্থ কুচো মাংস, ডিম আর পেঁয়াজ দিয়ে তৈরি এক ডিনার আইটেম। আরভিং এর A History of New York বইটিতে গল্পগুলি একত্রিত করা আছে। এই সময়ে আরভিং অনেক নতুন শব্দ আর phrase সৃষ্টি করেন। যেমন নিউ ইয়র্ক শহরের নাম দেন Gotham;  Gotham শব্দটির অর্থ “ছাগলের শহর”, কথাটা এসেছে মধ্যযুগীয় ইংল্যান্ডের এক বোকাসোকা মানুষের শহরের নাম থেকে। অবশ্য আজকের Batman সিরিজের ভক্তরা জানে গথাম এ সেই মুখোশধারী কাল্পনিক মানুষ বাস করে। এছাড়া The Almighty Dollar, Knickerbocker, এসব phrase বা শব্দের উৎপত্তি হয় আরভিংএর লেখায়।  
১৮১২-১৪ সালে ইংল্যান্ডের সাথে আমেরিকার যুদ্ধের পর অর্থনৈতিক দুরবস্থার কারণে আরভিং ১৮১৫ সালে ইংল্যান্ডে চলে যান আর পরের ১৭ বছর ওখানেই তার লেখক জীবন কাটান। ১৮১৯ সালে আরভিং এর দ্বিতীয় প্রসিদ্ধ বই The Sketch Book of Geoffrey Crayon, Gent প্রকাশিত হয়। এই বইটিতেই Rip van Winkle আর The Legend of Sleepy Hollow গল্পদুটি রয়েছে যা পৃথিবীর সব দেশের ছেলেমেয়েরা পড়েছে।   
Rip van Winkle গল্পের শুরু যখন গ্রামের অলসমানুষ Rip বউয়ের খিঁচানি এড়াবার জন্য তার কুকুর নিয়ে জঙ্গলে কাঠবিড়ালি শিকার করতে যায়। সেখানে এক অচেনা ডুতছমান এর সাথে দেশী মদ খেয়ে Rip ঘুমিয়ে পড়ে। তার ঘুম ভাঙ্গে দীর্ঘ ২০ বছর বাদে। ঘুম ভাঙ্গার পর এক ফুট লম্বা দাড়ি নিয়ে Rip জেগে ওঠে যেন এক সম্পূর্ণ অন্য দেশে। তার চেনাজানা কেউ বেঁচে নেই, বউ মারা গেছে। কেবল গ্রামের এক বুড়ো তাকে সনাক্ত করতে পারে। Rip আমেরিকার বিপ্লবের মত ঐতিহাসিক ঘটনা মিস করেছে, আমেরিকা ইংল্যান্ডের রাজার অধীনে আর নেই। গল্পটির moral হোল জীবন তার নিজের নিয়মে বয়ে চলে, কারও জন্যে অপেক্ষা করে না। যে মানুষ ঘুমিয়ে থাকে সে অনেক কিছু হারায়, যা আর কোনদিন ফিরে আসে না। এই গল্পের পাতায় পাতায় রয়েছে আরভিংএর satire – যেমন Rip খিটখিটে বউয়ের সাথে তার দুর্বিষহ জীবনকে প্রায়ই Petticoat government এর শাসন বলে উল্লেখ করে। এই sexist কৌতুকের লক্ষ্য তৎকালীন ইংল্যান্ডের রানীর ব্রিটিশ শাসন। Rip এর আবসাদগ্রস্ত, অভাবে জর্জরিত জীবন বস্তুত ব্রিটিশ শাসনের অধীন আমেরিকার নাগরিকের রোজকার জীবনের এক ব্যঙ্গাত্মক বিবরণ। 
The Legend of Sleepy Hollow নিউ ইয়র্ক ষ্টেটের Sleepy Hollow শহর এলাকার কবরখানার এক ভুতের গল্প। রোগা, লম্বা, কুসংস্কারাচ্ছন্ন Ichabod Crane স্থানীয় স্কুলের শিক্ষক। সে ধনী চাষীর মেয়ে Katrina কে বিয়ে করতে চায়। এদিকে ধনী ঘরের ছেলে Brom Bones স্থির করেছে সেই বিয়ে করবে Katrina কে। প্রায়ই Brom তামাসার নানা কৌশল প্রয়োগ করে বেচারা Crane এর ওপর। একদিন এক আড্ডায় সে Crane কে বলল আমেরিকার লড়াইয়ের সময় এক ধাবমান অশ্বারোহীর মাথা কামানের গোলায় উড়ে যায়। তাকে Sleepy Hollow কবরখানায় সমাধিস্থ করা হয়। এখনো অন্ধকার রাতে অনেকে দেখে সেই মুণ্ডুহীন অশ্বারোহী কবরখানার আশেপাশে তার মাথার সন্ধানে ছুটে বেড়াচ্ছে। আড্ডা থেকে গভীর রাতে বেড়িয়ে বাড়ি যাবার পথে Ichabod হঠাৎ দেখে তার পিছনে ধাওয়া করেছে এক কালো অশ্বারোহী! শুধু তাই নয়, মাঝে মধ্যে নরমুণ্ডু ছুঁড়ে মারছে তার দিকে। প্রাণের ভয়ে ভীরু Ichabod সেই রাতেই শহর ছেড়ে কোথাও উধাও হয়ে যায়। Brom Katrina কে বিয়ে করার সময় সবাই জানতো Brom ই ভুত সেজে নকল নরমুণ্ডু ছুঁড়ে Ichabod কে দেশছাড়া করেছে! এই প্রসঙ্গে বলে রাখা দরকার ১৮৫৯ সালের ২৮শে নভেম্বর আরভিংর মৃত্যুর পর তাকে Sleepy Hollow শহরের কবরখানাতেই সমাধিস্থ করা হয়।  

ওয়াশিংটন আরভিং

আরভিং এর Tales of a Traveller বইটিতে The Devil and Tom Walker গল্পটি অতুলনীয়। আরভিং নিজেই বলেছিলেন সেটি তার লেখার অন্যতম নিদর্শন। এই গল্পের শুরু William Kidd নামে এক জলদস্যুর ম্যাসাচুসেটসের কোথাও বহুমূল্য রত্নসম্ভার লুকিয়ে রাখার লোককথা দিয়ে। ১৭২৭ সালে মহা কিপটে Tom Walker আর তার লোভী বউ এক ভগ্ন দুর্গের মধ্যে ভূতকালো এক অশীতিপর বৃদ্ধের (বস্তুত Devil) সাথে হাত মেলায় এবং এক পরিতাক্ত জলার থেকে সেই ধনসম্পদ উদ্ধার করে। গোপন শর্ত অনুযায়ী লোভী Tom তার বউএর আত্মা দ্বিধাহীনভাবে Devil এর হাতে তুলে দেয়। এরপর বিশাল সম্পদের মালিক Tom সুদের ব্যবসা শুরু করে আর নির্দয় ভাবে সাধারণ মানুষকে শোষণ করার নেশায় মত্ত হয়ে যায়। অবশেষে Devil আসে Tom এর প্রাসাদে,এক কালো ঘোড়ায় Tom কে চড়িয়ে নিয়ে চারপাশে আগুণের ঝড় তুলে সে কোথায় মিলিয়ে যায়। লোভী Tom এর প্রাসাদ, ধন সম্পত্তি সব ধুলোয় মিশে যায়। আজও Tom এর অতৃপ্ত আত্মা তার প্রাসাদের ধ্বংসাবশেষের আশপাশে ঘুরে বেড়ায়। এই গল্পটিতেও আরভিং মানুষ লোভের জন্য কতদূর যেতে পারে তাই নিয়ে ব্যঙ্গ করেছেন। আর ব্যাঙ্কের মালিককে তুলনা করেছেন Devilএর সাথে যে অন্যের দুর্ভাগ্য থেকে নিজের লাভ বাড়ায়।    
আরভিং এর বইয়ের সংখ্যা প্রচুর, কয়েকটির উল্লেখ রইল এখানে।  ১৮২২ সালে তার Bracebridge Hall (ছোটগল্প সঙ্কলন) বইটি  ইংল্যান্ডে প্রকাশিত হয়। ১৮২৬ সালে স্পেনে থাকাকালীন The History of the Life and Voyages of Christopher Columbus প্রকাশিত হয়। উনবিংশ শতাব্দী শেষ হওয়ার আগেই বইটির বহু এডিশন বিক্রি হয়ে যায়! পরবর্তী কালে স্পেন থেকে প্রকাশিত Chronicle of the Conquest of Granada আর ১৮৩২ সালে Tales of the Alhambra পাঠক সমাজে ভীষণ সমাদৃত। এই শেষের বইটি স্পেন দেশের সাথে পশ্চিমের মানুষদের ভালভাবে পরিচয় করিয়ে দেয়। 
এই জনপ্রিয়  লেখকের জীবনের তিনটি ঘটনার কথা দিয়ে নিবন্ধ শেষ করি। ১৮০৮ সালে Matilda Hoffmanএর সাথে বিয়ের কথা ঠিক হবার পর আচমকা Matilda র মৃত্যু হওয়ায় আরভিং আজীবন অবিবাহিত থেকে যান। ১৮৪২-৪৬ সালে আরভিং স্পেনে আমেরিকার রাষ্ট্রদূত পদে নিযুক্ত ছিলেন। ৭৬ বছর বয়েসে মাত্র ৮ মাস সময়ের মধ্যে এই মানুষটি জর্জ ওয়াশিংটনের এক দীর্ঘ জীবনী (৫ ভলিউম) লিখেছিলেন। লেখায় এই মানুষটির ক্লান্তি ছিল না। ১৯৪০ সালে আমেরিকার Famous Author পোস্টাল স্ট্যাম্পের সিরিজের প্রথম ডাকটিকিটে ওয়াশিংটন আরভিং এর ছবি ছাপা হয়।
© লেখক


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগ থেকে আরোও
Theme Created By FlintDeOrient.Com
error: Content is protected !!
error: Content is protected !!