লেখক: প্রদীপ মাশ্চরক
Mark Twain, মার্ক টোয়েন
Mark Twain, মার্ক টোয়েন
মার্ক টোয়েন (১৮৩৫-১৯১০) একজন আমেরিকান লেখক ও প্রাবন্ধিক। এই নামটি একটি ছদ্মনাম, লেখকের আসল নাম Samuel Langhorne Clemens। তবু আমরা আজকের লেখায় মার্ক টোয়েন নামটিই ব্যবহার করবো কারণ এই নামেই তিনি পাঠকমহলে পরিচিত। মার্ক টোয়েন আমেরিকার অন্যতম কৌতুককাহিনী রচয়িতা। William Faulkner তাকে “the father of American Literature” বলে অভিহিত করেন। মার্কের বইয়ের মধ্যে দুটি বই পৃথিবীর বেশির ভাগ মানুষের পড়া, The Adventure of Tom Sawyer (১৮৭৬) আর তার পরের গল্প Adventures of Huckleberry Finn (১৮৮৪)। আরও দুটি বই A Connecticut Yankee in King Arthur’s Court (১৮৮৯) আর Pudd’nhead Wilson (১৮৯৪) পাঠকসমাজে বিশেষ ভাবে সমাদৃত। এছাড়া Charles Warnerএর সঙ্গে মিলে তিনি The Gilded Age: A Tale of Today (১৮৭৩) বইটিও প্রকাশ করেন।
Missouri ষ্টেটের গ্রামীণ পরিবেশে মার্ক বড় হয়ে ওঠেন আর সেই সঙ্গে কয়েক বছর মিসিসিপি নদীতে বজরার সহকারী মাঝির কাজ করেন। এই অভিজ্ঞতা মার্ক টোয়েনের Life on Mississippi বইয়ে সুন্দর ভাষায় বর্ণিত আছে। যৌবনে মার্ক সংবাদপত্রের রিপোর্টার হিসেবে যোগ দেন এবং ১৮৬৫ সালে তার প্রথম হাসির গল্প The Celebrated Jumping Frog of Calaveras County প্রকাশিত হয়। গল্পটি সমালোচকদের নজরে আসে আর মার্কের নাম পাঠক মহলে ছড়িয়ে পরে। গল্পটি ক্যালিফোর্নিয়ার সোনার খনির শ্রমিকদের বস্তির গল্প, যেখানে Jim Smiley নামে এক মাতাল থাকে। Jim সব কিছুতেই চল্লিশ ডলারের বাজি ফেলে, সে ঘোড়ার দৌড়ই হোক বা কুকুরের লড়াই হোক। এই বাজি ফেলার ব্যপারটা আরও মজার করার জন্য সে একটা কোলাব্যাঙ ধরে তাকে খুব লম্বা লাফ দেওয়া শেখায়। সে ব্যাঙ সব বাজিতেই অন্যের ব্যাঙকে লাফে হারিয়ে দেয় আর Jim বাজি জেতে। একদিন এক অচেনা আগন্তুক বস্তিতে এসে বাজি ফেলে। কথার ফাঁকে Jim যখন কোনো কাজে বাইরে যায়, আগন্তুক Jimএর ব্যাঙটিকে একগাদা সীসের গুলি খাইয়ে দেয়। পরে বাজির সময়, Jimএর ভারী ব্যাঙ বড় লাফ দিতে পারে না আর Jim নিজের টাকা হারায়। একটু বাদে সন্দেহের কারণে সে তার ব্যাঙকে ঝাঁকিয়ে তার পেট থেকে সীসের গুলি বার করে আর রাগের মাথায় সেই আগন্তুককে খুঁজে বেড়ায়। সেই আগন্তুক অবশ্য তখন পগার পার। সোজা সরল কৌতুকপূর্ণ ভাষায় ক্যালিফোর্নিয়ার Gold Rushএর সময় অশিক্ষিত মাতাল শ্রমিকদের বেপরোয়া উচ্ছৃঙ্খল জীবনযাত্রার বর্ণনা গল্পটির মুল আকর্ষণ।
এই সময়ের পর থেকে মার্ক নানা ধরনের লেখায় মনোনিবেশ করেন। তার সাথে তিনি বিভিন্ন সভা সমিতিতে হাস্য কৌতুকের ভাষায় বক্তৃতা দেওয়াও শুরু করেন। তার লেখায় satireএর এক অপরূপ উদাহরণ পাওয়া যায় King Leopold’s Soliloquy বইটিতে যেখানে তিনি আফ্রিকার কঙ্গোতে বেলজিয়ামের রাজার নৃশংস অত্যাচারের বিরুদ্ধে কৌতুকের ছলে তীব্র প্রতিবাদ জানান। এই লেখা আর বক্তৃতার মাধ্যমে তার সাথে দেশের লেখক ও শিল্পিসমাজ, প্রতিপত্তিশালী অভিজাত সম্প্রদায়, এমন কি দেশের প্রেসিডেন্টের সঙ্গেও পরিচয় হয়ে যায়।
১৮৬১ সালে Nevada ষ্টেটে রুপোর খনিতে কিছুদিন কাজ করার পর ১৮৬৪ সালে মার্ক San Francisco শহরে এসে বসবাস শুরু করেন। এই শহর থেকেই জাহাজে তিনি ইউরোপ ভ্রমণে যান আর The Innocents Abroad (১৮৬৯) বইটিতে তার সেই ভ্রমণের অভিজ্ঞতা লিপিবদ্ধ আছে।
১৮৭০ সালে Olivia Langdonএর সাথে বিবাহের পর মার্ক টোয়েন Connecticut ষ্টেটের Hartford শহরে বাড়ি নির্মাণ করে বসবাস শুরু করেন। পরবর্তী ১৭ বছর (১৮৭৪-১৮৯১) তার লেখক জীবনের উল্লেখযোগ্য সময়। এই সময়েই The Adventures of Tom Sawyer (১৮৭৬), The Prince and the Pauper (১৮৮১), Life on Mississippi (১৮৮৩), Adventures of Huckleberry Finn (১৮৮৪) আর A Connecticut Yankee in King Arthur’s Court (১৮৮৯) লেখা হয়।
Tom Sawyer নামে একটি ছেলের মিসিসিপি নদীর ধারে বড় হয়ে ওঠার গল্প The Adventures of Tom Sawyer বইটির মুল কাহিনী। সে তার বন্ধু Huckleberry Finnএর সাথে নানা বিপদজ্জনক অভিযানে যায়। টম এক অনাথ ছেলে, তার কাকিমা Aunt Pollyর সাথে থাকে। সে প্রায়ই স্কুল ফাঁকি দিয়ে নদীতে সাঁতার কাটে, সমবয়সী বন্ধুদের সাথে মারপিট করে, মিথ্যে কথা বলে এর ওর কাছ থেকে ছোটখাটো জিনিশ আদায় করে। Becky Thatcher নামের এক তরুণীর সাথে পরিচয়ের পর বন্ধু Huckleberryর সাথে সে এক কবরখানায় মুখের বড় আঁচিল দূর করার মন্ত্র শিখতে যায়। সেখানে তারা দেখে কবর থেকে তিন জন দুর্বৃত্ত Robinson, Potter আর Injun, মানুষের মৃতদেহ চুরি করছে। সেখানে মারপিটের সময় Potterকে Injun খুন করে, টম আর হাকলবেরি চুপ থাকার শপথ নিয়ে সেখান থেকে পালায়। এর পর দুই বন্ধু বাড়ি থেকে পালিয়ে মিসিসিপি নদীতে জলদস্যুদের সাথে যোগ দেয়। বাড়ির লোকে ভাবে ছেলে দুটো জলে ডুবে মরেছে। এদিকে কিছুদিন বাদে Potterএর খুনের মামলায় টম শপথ ভেঙ্গে Injunকে খুনি হিশেবে সনাক্ত করে। স্বভাবতই টম আর হাকলবেরি প্রাণের ভয়ে থাকে। এরপর দুই বন্ধু নদীর ধারের পোড়ো বাড়িগুলোয় জলদস্যুদের লুকোনো সম্পদ খুঁজতে শুরু করে। ওদিকে কারাগার থেকে বেরিয়ে Injun আর তার শাগরেদ সেই সম্পদ সরিয়ে এক গুহায় নিয়ে লুকিয়ে রাখে। টম তার বন্ধু Beckyর সাথে সেই গুহায় সম্পদ খুঁজতে গিয়ে অনেক গহ্বরের মাঝে পথ হারায়। তাদের উদ্ধার করার পর গুহা বিপদজ্জনক বলে শহরের বিচারক গুহার প্রবেশের দ্বার বন্ধ করে দেন। দুর্ভাগ্যবশত Injun তখন গুহার মধ্যের এক গুপ্তঘরে মধ্যে জলদস্যুদের সম্পদের সাথে থাকায় সেখানে সে বন্দি হয়ে যায় আর খাবার ও জলের অভাবে শুকিয়ে মরে। সবশেষে টম আর হাকলবেরি নিজেরা গুহায় গিয়ে জলদস্যুদের সেই সম্পদ উদ্ধার করে। সম্পদ ভাগাভাগির পর হাকলবেরি শহরের এক ধনী বিধবা মহিলার বাড়িতে আশ্রয় নেয়, আর টম নিজে ভালভাবে বড় হওয়ার চেষ্টায় রপ্ত হয়। টম আর হাকলবেরির এই গল্পে সেকালের আমেরিকার দুই কল্পনাপ্রবণ কিশোরের বেপরোয়া স্বাধীন জীবনযাত্রার নিখুঁত বর্ণনা রয়েছে, সঙ্গে আছে মার্ক টোয়েনের কৌতুকপূর্ণ কথোপকথন আর তৎকালীন সামাজিক অব্যবস্থার হাল্কা সমালোচনা।
Adventures of Huckleberry Finn বইটিতে উনবিংশ শতাব্দীর আমেরিকার গ্রামাঞ্চলের মানুষের সামাজিক ব্যবহার, বর্ণবিদ্বেষ আর কুসংস্কারের বিস্তৃত বর্ণনা পাওয়া যায়। যেমন এই বইয়ে কৃষ্ণকায় মানুষদের nigger (একটি বর্ণবিদ্বেষী গালি) বলে বারবার উল্লেখ করা হয়েছে। গল্পের শুরু Petersburg শহরে যেখানে Huckleberry Finn আগের অভিযানের সম্পদ এবং তার বিধবা পালিকার ধনসম্পত্তির মালিক হয়ে ধনী জীবনযাপনে উদ্যোগী হয়েছে। বাদ সেধেছে হাকলবেরির মাতাল বাবা Pap, যে তাকে বন্দি করে তার সম্পত্তি গ্রাস করতে চায়। প্রাণের দায়ে হাকলবেরি একজন ক্রীতদাস Jimএর সঙ্গে Illinois ষ্টেটে পালিয়ে যায়। সেখানে বন্যায় উথলে পড়া নদীতে ভেসে যাওয়া এক কাঠের ভেলায় দুই বন্ধু আশ্রয় নেয়। শহরে রটে গেছে Jimএর পালানোর খবর, কাজেই দুজনে নদীতেই ভেসে থাকে। ঘটনাক্রমে তাদের সাথে নদীর পাড়ে এক পরিতাক্ত বজরায় দুই চোরের দেখা হয়, তাদের সঙ্গে বচসার পর দুই বন্ধু আবার ভেলায় এসে আশ্রয় নেয়। পাশ দিয়ে চলে যাওয়া বড় নৌকোর ধাক্কায় ভেলা উলটে গেলে দুই বন্ধুর ছাড়াছাড়ি হয়ে যায়। হাকলবেরি সাঁতরে পাড়ে ওঠার পর সে গিয়ে পড়ে গ্রামের দুই চিরশত্রু Grangerford আর Shepherdson পরিবারের ঝগড়ায় মধ্যে। বহু ঝামেলার পর হাকলবেরি আবার Jimএর সাথে মিলিত হয়। নতুন বিপদ শুরু হয় যখন দুই বন্ধু আবার দুজন প্রতারকের পাল্লায় পড়ে। এই দুজন প্রতারক হাকলবেরিকে সেই এলাকার এক মৃত Peter Wilksএর উত্তরাধিকারি সাজিয়ে তাদের জমিজমা দখলের চেষ্টা করে। কথা ফাঁস হয়ে গেলে হাকলবেরি পালায়, কিন্তু Jimকে তারা Phelpse পরিবারের কাছে বিক্রি করে দেয়। হাকলবেরি প্রতিজ্ঞা করে যে সে Jimকে আবার মুক্তি দেবে। Phelpse পরিবার টমের আত্মীয় হয়, তাই প্রথমে হাকলবেরি নিজেকে টম বলেই পরিচয় দেয়। পরে আসল টম Phelpseএর বাড়িতে হাজির হলে, সে নিজেকে টমের ভাই Sid বলে প্রাণ বাঁচায়। কিছুদিন বাদে হাকলবেরি, টম আর Jim একসাথে পালাবার সময় টম আহত হয়, Jim বিপদ জেনেও টমকে শুশ্রূষা করতে থাকে আর Phelpse পরিবারের হাতে ধরা পড়ে। সবশেষে টমের Aunt Poly এসে সবাইকে বাঁচায় এবং Jimকে মুক্ত করে দেয়। সেই সময় Jim হাকলবেরিকে জানায় যে সে নদীতে এক ভেসে যাওয়া বাড়িতে হাকলবেরির দুশ্চরিত্র পিতা Hapএর মৃতদেহ দেখেছিল। ক্লান্ত হাকলবেরি এরপর সবার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে আমেরিকার Indian territoryতে বাস করার সিদ্ধান্ত নেয়।
সহজ কৌতুকের ভাষায় কিশোরদের নানা অভিযানের গল্প বলার ছলে মার্ক টোয়েন এই বইটিতে তৎকালীন আমেরিকার গ্রামীণ সমাজের বর্ণবিদ্বেষ, ক্রীতদাস প্রথার দুর্ব্যবহার, আর নৈতিক সংকীর্ণতার বিশ্লেষণ ও সমালোচনা করেছেন। যেমন, গ্রামাঞ্চলের মানুষের বংশ পরম্পরায় শত্রুতার বর্ণনা রয়েছে Grangerford আর Shepherdson পরিবারের ঝগড়ার মধ্যে। দাসপ্রথার অন্ধকার দিক বারবার গল্পে এসেছে, যেমন Jimএর ভয় যে তাকে তার পরিবারের কাছ থেকে ছিনিয়ে নিয়ে আবার বিক্রি করা হবে আর এক মালিকের কাছে, বা ক্রীতদাস বলে Jim একজন মানুষ নয়, সে এক “property”!
মার্ক টোয়েনের A Connecticut Yankee in King Arthur’s Court বইটি science fictionএর ধাঁচে লেখা। কল্পনা, কৌতুক, আর বাঙ্গক্তির মাধ্যমে তিনি পশ্চিমী সমাজের বীরত্ব (chivalry) আর অভিজাত সম্প্রদায়ের কপটতাকে নানাভাবে বিদ্রূপ করেছেন। গল্পটির নায়ক Connecticutএর এক আমেরিকান ইঞ্জিনিয়ার Hank Morgan, যে মাথায় ভয়ঙ্কর এক চোট পেয়ে হঠাৎ কিভাবে অনেক সময় পিছিয়ে King Arthurএর সভায় হাজির হয়। এই পঞ্চম শতাব্দীতে ফিরে যাওয়ার time travelএর পর Hank রাজার সভায় নিজেকে এক ম্যাজিশিয়ান বলে জাহির করে আর তার নিজের উনবিংশ শতাব্দীর জ্ঞানের ব্যবহার করে লোকের তাক লাগিয়ে দেয়। রাজার সভার আর এক চাটুকার Merlin, আসলে এক প্রতারক, তার ভবিষ্যৎ বাণীর চমক হারায় এবং Hankএর চক্ষুশূল হয়ে ওঠে। Hank সেই সময়ের অভিজাত সম্প্রদায়ের ভণ্ডামি, শাসক সমাজের শোষণ, আর Knightদের নিরর্থক বীরত্ব নিয়ে অনেক মজা করে। সমালোচকদের মতে মার্ক এই বইটিতে রাজতন্ত্র আর শিল্পবিপ্লবের ক্ষতিকর প্রভাবের দিকে সমাজের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চেয়েছেন।
মার্ক ছোটগল্প লেখায় পারদর্শী ছিলেন, নানা বিষয় নিয়ে তিনি এসব গল্প লেখেন। যেমন, The Stolen White Elephant গল্পটি Siam থেকে আনা এক সাদা হাতীর গল্প। ভারতবর্ষে ব্রিটিশ শাসনের সময় এক উচ্চপদস্থ অফিসার ট্রেনযাত্রার পথে মার্ককে এই গল্পটি বলেন। ইংল্যান্ডের রানীর উপহার এই হাতিটি (নাম Jambo) সেই অফিসারের জিম্মায় নিয়ে আসার পথে নিউ ইয়র্ক শহরে চুরি হয়ে যায়। বাঘা ইনসপেক্টর Bluntএর তত্ত্বাবধানে পুলিশ অনুসন্ধানের শুরু করে। এই ইনসপেক্টর Blunt আসলে এক হামবাগ অকর্মণ্য পুলিশ, তার বিশ্বাস, “We (মানে পুলিশ) don’t prevent crime, we investigate”। গল্পে এর পর থেকে লেখক পুলিশের তদন্তের যাবতীয় ধরন ধারণ নিয়ে বিদ্রূপের চূড়ান্তে পৌঁছেছেন, যেখানে ডিটেকটিভরা অবাস্তব আর অবান্তর সূত্র ধরে এগোয়, প্রতি পদক্ষেপে নিজেদের মূর্খামির আর মিথ্যা দম্ভের পরিচয় দেয়, পুরস্কার ডলারের অঙ্ক কেবলই বাড়িয়ে যায়, দুবছর আগে মৃত কোন অপরাধীর নামে হুলিয়া জারি করে। তিন সপ্তাহ ধরে ৬০-৭০ জন “expert” ডিটেকটিভের “intensive investigation”এর পর সেই হাতির মৃতদেহ পুলিশ অফিসের নিচের বেসমেন্টেই আবিষ্কৃত হয়। জনতার গুলিগোলার আঘাতে আহত পশুটি শীতের হাত থেকে বাঁচার জন্য ওই বেসমেন্টে এসে লুকোয় এবং খাদ্যাভাবে মারা যায়। পুলিশের অপদার্থতার প্রতি কটাক্ষ ছাড়াও গল্পটিতে সাদা হাতি সরকারের বিভিন্ন projectএ খরচের অপব্যবহারের উপমা হিশেবে ব্যবহৃত হয়েছে।
ছোটবেলায় কোন এক পত্রিকায় আমি একটা গল্প পড়েছিলাম। মজার কথা এই যে আমি গল্পটা ভুলে গেছি কিন্তু গল্পটার একটা আজব ছড়া আমার এখনো মনে আছে। ছড়ার প্রথম দু লাইন ছিল এই রকম, “কন্ডাক্টার যখন তুমি ভাড়া কোন পাবে, প্যাসেঞ্জারের সামনে টিকিট পাঞ্চ করিয়ে নেবে”। বেশ কিছু বছর পরে মার্ক টোয়েনের A Literary Nightmare ছোটগল্পটি পড়তে গিয়ে আবিষ্কার করেছিলাম আমার সেই ছোটবেলার গল্পটা টোয়েনের লেখা। ছোট্ট এই গল্পটি বেশ অদ্ভুত, লেখক নিজের বয়ানে গল্পটা বলেছেন। মার্ক হঠাৎ একদিন সংবাদপত্রের পাতায় একটা ছড়া পড়ে, আর মজার কথা, ছড়াটা একটা jingle ভাইরাসের মত তার মাথায় ঢুকে যায়। তার পর থেকে দিনরাত তার মাথার মধ্যে সেই jingle, তার আর অন্য কিচ্ছু মনে থাকে না, এমন কি সকালে সে কি খেয়েছে তার মনে পড়ে না! সে আর কিছুতে মনোনিবেশ করতে পারে না, গল্প লিখতে পারে না। মহা মুশকিল! রবিবারের দিন গির্জায় গিয়ে সে পাদ্রীকে তার বিপদের কথা বলে। আর অবাক কাণ্ড, মার্ক বোধ করে যে সে jingle ভাইরাসটি দিয়ে পাদ্রীকে সংক্রমিত করেছে, আর সে নিজে ভাইরাস মুক্ত হয়েছে। পরের তিন দিন মার্কের মাথায় সেই jingle নেই, সে মহা খুশি। চতুর্থ দিন বিকেলে পাদ্রী এসে হাজির, তার পাগলের মত অবস্থা! সে কোন কাজ করতে পারছে না, তার মাথায় শুধু সেই jingle, সে তার ধর্মোপদেশ দেওয়া ভুলেছে! এই ঘটনার পর মার্ক পাদ্রীকে রেহাই দেবার জন্য পাদ্রীকে নিয়ে যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের এক বড় ক্লাসে যেখানে পাদ্রী সেই jingle ভাইরাস দিয়ে ছাত্রদের সংক্রমিত কোরে নিজেকে ভাইরাস মুক্ত করে। গল্প এখানেই শেষ, কিন্তু আভাষ মেলে যে ছড়া এর পর চলতেই থাকে। গোটা jingle, মানে ছড়াটি এখানে রইল।
Conductor, when you receive a fare,�Punch in the presence of the passenjare!�A blue trip slip for an eight-cent fare,�A buff trip slip for a six-cent fare,�A pink trip slip for a three-cent fare,�Punch in the presence of the passenjare!��CHORUS�Punch, brothers! Punch with care!�Punch in the presence of the passenjare!
মুল ছড়াটি মার্কের লেখা নয়, ১৮৭৬ সালে চার যুবক রাতের এক ট্রামে বাড়ি আসার পথে বাসের গায়ে টিকিটের দামের লিস্ট দেখে এই jingleটি লেখে। মজার কথা, jingleটি পরে নানা ভাষায় অনুবাদিত হয়। আমি তো জানি, বাংলাতেও এই ছড়া অনুবাদিত হয়েছে আর আমি ওই jingle ভাইরাসের কবলে পড়েছি!
মার্ক টোয়েন তার লেখক জীবনে অসংখ্য গল্প, প্রবন্ধ, এবং বই লিখেছিলেন। তার বইয়ের তালিকা দীর্ঘ, কয়েকটি উল্লেখযোগ্য বই হোল The prince and the Pauper, The Mysterious Stranger, A Horse’s tale, The Gilded Age: A Tale of Today, Eve’s Diary. এছাড়া Tom Sawyer আর Huckleberry Finn সিরিজে বইয়ের সংখ্যা ৯, ছোটগল্পের সংখ্যা ৫০এর ওপর, ছোটগল্প সঙ্কলনের সংখ্যা ১৫ আর প্রবন্ধের সংখ্যা ১০০র ওপর।
জীবনের শেষ ১৫ বছর মার্ক টোয়েন নিউ ইয়র্ক শহরে কাটান। এই সময় তার প্রিয় কন্যা Susy মারা যায়। পরিবারের আরও কয়েকজন এবং বন্ধু মহলের কিছু মানুষেরও মৃত্যু হয় এই সময়। এর সাথে বইয়ের প্রকাশকদের সঙ্গেও মার্কের নানা বিষয় নিয়ে গোলমাল বাধে। সব মিলিয়ে মার্ক এক নিদারুণ বিষণ্ণতার কবলে পড়েন। তা সত্ত্বেও তিনি এই সময়ে নিজের আত্মজীবনী লিখতে বসেন যা North American Reviewএ প্রকাশিত হয়।
মার্ক টোয়েন ১৮৩৫ সালে হ্যালির ধূমকেতুর আবির্ভাবের সপ্তাহ দুয়েক পর জন্মগ্রহণ করেন। অবাক কথা, ১৯০৯ সালে মার্ক কৌতুকের ভাষায় লিখেছিলেন,
I came in with Halley’s Comet in 1835. It is coming again next year, and I expect to go out with it. It will be the greatest disappointment of my life if I didn’t go out with the Halley’s Comet. The Almighty has said, no doubt: “Now here are these two unaccountable freaks; they came in together, they must go out together”.
আর ১৯১০ সালে হ্যালির ধূমকেতু আসার এক মাস আগে ২১শে এপ্রিল মার্ক টোয়েন হার্ট অ্যাটাকে মারা যান।