আমেরিকান সাহিত্য ও সাহিত্যিক।। আজ পঞ্চম পর্বে উইলিয়াম ফকনার (১৮৯৭-১৯৬২) সম্পর্কে লিখেছেন: প্রদীপ মাশ্চরক - শৃণ্বন্তু আমেরিকান সাহিত্য ও সাহিত্যিক।। আজ পঞ্চম পর্বে উইলিয়াম ফকনার (১৮৯৭-১৯৬২) সম্পর্কে লিখেছেন: প্রদীপ মাশ্চরক - শৃণ্বন্তু
বুধবার, ১৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:৫৮ পূর্বাহ্ন

আমেরিকান সাহিত্য ও সাহিত্যিক।। আজ পঞ্চম পর্বে উইলিয়াম ফকনার (১৮৯৭-১৯৬২) সম্পর্কে লিখেছেন: প্রদীপ মাশ্চরক

আপডেট করা হয়েছে : রবিবার, ১৬ জুন, ২০২৪, ১০:৫২ পূর্বাহ্ন
আমেরিকান সাহিত্য ও সাহিত্যিক।। আজ পঞ্চম পর্বে উইলিয়াম ফকনার (১৮৯৭-১৯৬২) সম্পর্কে  লিখেছেন: প্রদীপ মাশ্চরক

William Faulkner (1897-1962) 

উইলিয়াম ফকনার

   প্রদীপ মাশ্চরক

 

উইলিয়াম ফকনার (১৮৯৭-১৯৬২) 

সময়ের সঙ্গে আমেরিকায় প্রগতি দেশের সব অঞ্চলে একসময়ে আসে নি। বিশেষ করে উনবিংশ শতাব্দীতে দেশের দক্ষিণপূর্ব অঞ্চল (যেমন Oklahoma, Mississippi, Louisiana, Alabama, Georgia, Tennessee স্টেট ইত্যাদি) খুবই পিছিয়েছিল। দাসপ্রথার সমর্থক ও প্রধানত কৃষিকর্মে নিযুক্ত এই অঞ্চলের মানুষদের মনোবৃত্তি সময়ের থেকে অনেক পিছিয়ে ছিল। বেশির ভাগ মানুষ ছিল অশিক্ষিত ও কুসংস্কারগ্রস্থ, দৈনন্দিন জীবনে ছিল অরাজকতা, নারীসমাজ ছিল উপেক্ষিত আর পুরুষের আধিপত্য উঠেছিলো চরমে। আমেরিকার ইতিহাসের এই অন্ধকার যুগের গল্প উইলিয়াম ফকনারের লেখায় লিপিবদ্ধ রয়েছে। সমালোচকদের মতে “William Faulkner is the greatest southerner novelist” আর পৃথিবীর মানুষের কাছে “he one of the most celebrated writers of American literature”। 

William Cuthbert Faulkner

ইলিয়াম ফকনার ১৮৯৭ সালে মিসিসিপি ষ্টেটের New Albany শহরে জন্মগ্রহণ করেন। তার শৈশব কাটে মিসিসিপির Oxford শহরে। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় তিনি Canadian Air Forceএ যোগ দেন। যুদ্ধের পর ফিরে এসে তিনি Mississippi Universityতে ভর্তি হন, কিন্তু অল্প সময়ের মধ্যেই পড়া ছেড়ে Louisianaর New Orleans শহরে চলে যান। সেখানেই তিনি তার প্রথম নভেল Soldier’s Pay (১৯২৫)প্রকাশ করেন। এরপর তিনি আবার ফিরে আসেন মিসিসিপির Oxford শহরে।  

জীবনের বেশির ভাগ সময় উইলিয়াম এই মিসিসিপি ষ্টেটেই কাটান আর সেই কারণেই তার লেখায় তিনি এক কল্পনার Yoknapatawpha County-র সৃষ্টি করেন। লেখকের বেশিরভাগ গল্পেই এই কল্পনার অঞ্চলের মানুষ ও তাদের রোজকার জীবনযাত্রার বর্ণনা রয়েছে। Oxford শহরে লেখা তার Sartoris (১৯২৭নভেলে এই Yoknapatawpha Countyর প্রথম উল্লেখ রয়েছে। ১৯২৯ সাল থেকে পরপর তার লেখা আত্মপ্রকাশ করে। যেমন ১৯২৯ সালে The Sound and the Fury, ১৯৩০ সালে As I Lay Dying।  ১৯৩১ সালে তার Santuary প্রকাশিত হবার পর পাঠক সমাজ উইলিয়ামকে ভীষণ ভাবে আপন করে নেয়। এই গল্পটি প্রথমে The Story of Temple Drake (১৯৩৩) ও পরে Santuary (১৯৬১) নামে দুটি চলচিত্রে রূপায়িত হয়েছে।    

ফকনারের এই Santuary বইটিই তার লেখার সাথে আমার প্রথম পরিচয় করায়। এই বইয়ে ১৯২৯ সালের গ্রীষ্মকালে Yoknapatawpha Countyর এক ধনী মিসিসিপি কলেজ গার্লের অপহরণ ও রেপএর গল্প বলা হয়েছে। আমেরিকায় “Prohibition” আইনজারির কারণে ১৯২০ সাল থেকে ১৯৩৩ সাল পর্যন্ত মদ উৎপাদন আর পরিবেশন করা আইনত দণ্ডনীয় ছিল যদিও দেশের মানুষ (বিশেষ করে দাক্ষিণাত্যের অধিবাসীরা) লুকিয়ে লুকিয়ে মদ উৎপাদন (যাদের bootlegger বলা হতো) ও মদ্যপান করত। সেই রকম কিছু মানুষের গল্প এই বইটিতে পাওয়া যায়।  

গল্প শুরু হয় যখন Horace Benbow নামের Kinston শহরের এক উকিল তার পরিবারকে ছেড়ে এর ওর কাছে lift নিয়ে  Yoknapatawpha Countyর Jefferson শহরে চলে আসে। সেখানে তার বিধবা বোন Narcissa ছেলে আর বুড়ি ঠাকুরমাকে নিয়ে থাকে। Narcissa বেনবোর এই সংসার ছাড়া পছন্দ না করায় বেনবো তার পুরনো পৈত্রিক বাড়িতে ওঠে। Jeffersonএ আসার পথে বেনবো এক পরিত্যাক্ত ফরাসি জমিদারের জরাজীর্ণ পোড়োবাড়িতে জল খেতে থেমেছিল। সেই সময় তার সাথে সেই ভাঙ্গা বাড়িতে এক bootleggerএর (নাম Lee Goodwin) সাথে পরিচয় হয়। তার সাথে Popeye নামের এক গুন্ডা আর তার চেলাদের সাথেও বেনবোর পরিচয় হয়। 

এবার গল্পের দ্বিতীয় পর্ব পর্বের নায়ক Gowan Stevens নামের এক অবিবাহিত যুবক, বেনবোর বোন Narcissaর প্রেমিক। সে University of Virginiaর স্নাতক, ধনী পরিবারের ছেলে, কথাবার্তায় চৌকস। Narcissaর বাড়িতে বেনবোর সাথে দেখা হওয়ার পর Gowan Oxford শহরে এক নাচের dateএ যায়, তার date মিসিসিপি ইউনিভারসিটির ছাত্রী Temple Drake। Templeএর বাবা শহরের নামকরা বিচারপতি। Date এর পর Gowan তাকে নিয়ে আরও কয়েকজন বন্ধুর সাথে পরের দিন Starkville শহরে বেসবল খেলা দেখতে যাবার প্লান করে। কিন্তু টেম্পলে কে বাড়িতে নামিয়ে দিয়ে ফেরার পথে Gowan রাস্তার ধারের গোপন শুঁড়িখানা থেকে দেশী চোলাই মদ খেয়ে মাতাল হয়ে তার গাড়িতে ঘুমিয়ে পড়ে। পরের দিন সকালে অনেক দেরীতে ঘুম ভাঙলে সে Templeকে ট্রেন স্টেশন থেকে তুলে নিয়ে তার গাড়িতে Starkville –এ যাওয়া ঠিক করে। পথে আবার মদের টানে সে Goodwin এর আড্ডায় ঘুরে যেতে চায়। সেখানে যাবার পথে মাতাল Gowan এর গাড়ি গাছে ধাক্কা মারে। Popeye আর তার বন্ধু Tommy দুজনকে তুলে নিয়ে আসে Goodwin এর সেই ভাঙ্গা বাড়িতে। Temple একে স্কুলের নিয়ম ভেঙ্গে বাইরের ছেলের সঙ্গে Starkville এ যাওয়ার প্লান করেছে, তার মধ্যে ভাঙ্গা বাড়ির সব বদমাশ সাঙ্গপাঙ্গদের দেখে ভীষণ ঘাবড়ে যায়। Popeye Temple এর দিকে কুৎসিত ইঙ্গিত করলে মাতাল Gowan এর সঙ্গে তার মারপিট শুরু হয়। Goodwin এর মহিলা সঙ্গী Ruby আর ভালমানুষ বন্ধু Tommy Temple কে একটা ঘরে লুকিয়ে রাখে আর Popeye ও বাকি শয়তানগুলোকে বাড়ির বাইরে ভাগিয়ে দেয়। পরদিন সকালে কাউকে না জানিয়ে Gowan পালিয়ে যায়। Tommy ভয়ার্ত Templeকে বাগানের এক গুদামে লুকিয়ে রাখে যেখানে Popeye এসে হাজির হয়। Tommy কে গুলি করে মেরে Popeye Temple কে রেপ করে। তারপর Temple কে জোর করে ধরে নিয়ে Popeye Memphis শহরে পালিয়ে যায়। 

গল্পের তৃতীয় পর্বে পুলিশ Tommy ‘র মৃতদেহ আবিষ্কারের পর Goodwin কে গ্রেপ্তার করে Jefferson এর জেলে নিয়ে যায়। Popeyeএর ভয়ে Goodwin মুখ খোলে না। এই সময় বেনবো  Goodwin এর কেস হাতে নেয় যদিও সে জানে Goodwin খরচা  দিতে পারবে না। খোঁজখবর করে বেনবো Temple এর কথা জানতে পারে আর এও জানে যে Tommy ‘র খুনি কে। মিসিসিপির স্কুলে গিয়ে বেনবো জানতে পারে যে Temple কে স্কুল থেকে তাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। সংবাদপত্রের এক রিপোর্টার টাকা খেয়ে বেনবোকে জানায় যে Temple রয়েছে Memphis এর এক বেশ্যালয়ে, Popeye তাকে এক বুড়ি Miss Reba ‘র হেপাজতে সেখানে রেখে তার শরীর খাটিয়ে টাকা রোজগার করে। 

গল্পের শেষ পর্বে বেনবো Temple এর সাথে দেখা করে রেপের  ব্যপারটা জানতে পারে। কিন্তু Temple তখন তার নোংরা জীবনে অভ্যস্ত হয়ে গেছে। আচমকা একদিন সে Reba ‘র বাসা থেকে পালিয়ে যায় আর এক নতুন বেশ্যালয়ে গিয়ে Popeye এর বন্ধু Red এর সাথে সহবাসের ইচ্ছে প্রকাশ করে। Red ভয় পেয়ে তাকে আবার Reba ‘র বাড়িতে Popeye এর কাছে ফেরত নিয়ে আসে। কিন্তু রাগের মাথায় Popeye Red কে খুন করে, আর তারপর Temple কে নিয়ে আবার উধাও হয়ে যায়। এদিকে Jeffersonএ Narcissa বেনবোকে Goodwin এর ছায়া থেকে সরিয়ে নেবার জন্য DAএর অফিসে গিয়ে আনুরোধ করে যেন কেসে বেনবো হেরে যায়। কোর্টে কেস শুরু হলে বেনবো Temple আর Popeye কাউকেই বিচারকের সামনে আনতে পারে না। দ্বিতীয় দিন হঠাৎ Temple কোর্টে উদয় হয় আর Goodwin কে তার রেপ আর Tommy -‘র খুনী বলে সনাক্ত করে। মাত্র ৮ মিনিট আলোচনার পর জুরি Goodwin কে দোষী বলে স্যাবস্ত করে। সেদিন সন্ধ্যে বেলায় শহরের লোক Goodwin কে আগুনে পুড়িয়ে মারে। বেনবো অগত্যা তার বউয়ের কাছে ফিরে যায়। ঘটনাচক্রে কিছুদিন বাদে বেনবো খবর পায় যে Popeye এক মিথ্যা দোষারোপের শিকার হয়ে ফাঁসিতে প্রাণ হারিয়েছে। এই সব নোংরামির হাত থেকে বাঁচার জন্য Temple আর তার বাবা প্যারিসে গিয়ে sanctuary নেয়।  

সমালোচকদের মতে The Sound and The Fury নভেলটি উইলিয়াম ফকনারের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য বই যদিও ১৯২৯ সালে প্রকাশের পর বইটি তেমন সাড়া পায়নি। এই বইটিতে উইলিয়াম  মিসিসিপির Jefferson হরের সম্ভ্রান্ত Compson পরিবারের সময়ের সঙ্গে ভেঙ্গে যাওয়া আর অধঃপতনের আখ্যান এক নতুন চার বয়ানে চার অধ্যায়ের স্টাইলে লিখেছেন। গল্পটি বিংশ শতাব্দীর প্রথম ভাগে দক্ষিণ পূর্ব আমেরিকার অভিজাত সম্প্রদায়ের অবক্ষয়ের এক অপরূপ উপাখ্যান। গল্পের প্রথম অধ্যায়ের কথক Benjy Compson, পরিবারের মানসিক ভারসাম্যহীন এক ৩৩ বছরের যুবক। তার পরিবারের বিভিন্ন ঘটনার গল্প সে বলে অসংলগ্ন ভাবে, কখনো কখনো তার খেই হারিয়ে যায়,সময়ের দিনকাল গুলিয়ে ফেলে। তার তিনটে বিষয়ে আসক্তি, তাদের পুরনো বেচে দেওয়া বাড়ির পাশের জমিতে তৈরি এক golf course, আগুন, আর বোন Cady, যাকে অবৈধ সন্তান ধারণ করার কারণে বাড়ি থেকে বার করে দেওয়া হয়। জানলার ধারে বসে সে খেলা দেখে, তার মনে পড়ে ১৮৯৮ সালে যখন তার মৃত দিদিমার অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার সময় ছোট্ট Cady গাছে উঠে বড়রা কি করছে দেখছিলো, তখন Cady ‘র অন্তর্বাস তাকে কেমন নাড়া দেয়। তার কেবলই মনে হয় Cady ‘র শরীরে গাছের গন্ধ ছিল। Benjy ‘র মনে পড়ে ১৯০০ সালের সেই সময় যখন নির্বোধ Benjy পাড়ার এক মেয়েকে আক্রমণ করার পর তাকে হিজড়ে করে দেওয়া হয়।

গল্পের দ্বিতীয় আধ্যায়ের কথক Quentin, Compson পরিবারের সবচেয়ে বুদ্ধিমান মানুষ। সে Harvard –এ পড়াশোনা করেছে, নারীসমাজের সুরক্ষা তার ধর্ম। সে বোন Cady ‘র উচ্ছৃঙ্খল জীবন আর পরকীয়া প্রেম মেনে নিতে পারে না, তার প্রেমিক Dalton এর সাথে মারপিট করে। যখন বাড়ির কর্তা, তার বাবা, লুকিয়ে আসন্ন-প্রসবা Cady :র সাথে এক অমানুষ Herbert এর বিয়ে দেয়, সে কিছুতেই মানতে পারে না ধর্মভীরু Quentin বোনের পাপের কথা ভেবে আকুল হয়, তার কেবল আমেরিকার গৃহযুদ্ধের পর দেশের সামাজিক অধঃপতনের জন্য আক্ষেপ হয়। নিজের পরিবারের অর্থনৈতিক পতনের পর জমিজমা বিকিয়ে যাওয়া, পরিবারের মানুষদের বিভিন্ন কলঙ্কময় কার্যকলাপ তাকে অস্থির করে তোলে। সবশেষে Quentin জলে ঝাঁপিয়ে পড়ে আত্মহত্যা করে।

গল্পের তৃতীয় অধ্যায়ের কখক Jason, বাড়ির তৃতীয় ছেলে, মা Carolineএর ভীষণ প্রিয়, অথচ তার মার প্রতি কোন ভালবাসা বা টান নেই। সে সোজাসুজি মানুষ, টাকা পয়সা ছাড়া সে আর কিছু বোঝে না। টাকার লোভে খোঁজ খবর না নিয়ে সে দক্ষিণ আমেরিকার তুলোর ব্যবসায়ে টাকা ঢালে। দাসপ্রথা উঠে যাবার পর তুলোর বাজার মন্দা আর সেই কারণে সে অনেক টাকা হারায়। ১৯২৮ সালে বাবার মৃত্যুর পর তার হাতে সংসারের ভার পড়ে। মা, Benjy, Cadyর বাড়িতে রেখে যাওয়া কন্যা সন্তান Miss Quentin, আর বাড়ির চাকরবাকর সবাইকে নিয়ে সে হিমশিম। সে Cadyর কাছ থেকে জোর করে মেয়ের নাম করে টাকা আদায় করে আর সেই টাকা দিয়ে Memphis শহরে এক রক্ষিতাকে পোষে। মরিয়া হয়ে একসময় সে Miss Quentinএর প্রেমিকের বাড়িতে গিয়ে তাদের সিন্ধুক থেকেও টাকা চুরি করে। এসব বদ অভ্যাস থাকা স্বত্বেও Jason Compson পরিবারের ধারা অনুযায়ী cynic আর hypochondriac মাকে, অক্ষম ভাই Benjy কে দেখে রাখে। সব মিলিয়ে এই অধ্যায়ে Compson পরিবারের দৈনন্দিন জীবনযাত্রার এক নিখুঁত বর্ণনা পাওয়া যায়।

গল্পের চতুর্থ অধ্যায়ের শুরু ১৯২৮ সালের Easter Sunday ‘র দিনে। এই অধ্যায়ে লেখক নিজেই গল্প বলছেন, সে গল্পের নায়িকা Dilsy, বাড়ির ক্রীতদাসদের বয়স্কা মা। মহিলা গভীর ভাবে ধর্মে বিশ্বাসী, ক্ষয়িষ্ণু পরিবারের শেষ সদস্যা যিনি মাথা উঁচু করে Compson পরিবারের প্রাচীন ধারা রক্ষা করে চলেছেন। Easter Sunday ‘র দিন তিনি নিজের কালো পরিবারের সাথে Benjy কেও নিয়ে যান কালোদের গির্জায় (তখন সাদা আর কালো মানুষ ভিন্ন গির্জায় একই খ্রিস্টর আরাধনা করতো)। Dilsy ‘র পবিত্র জীবনযাত্রা আমাদের পরিষ্কার ভাবে দেখায় কিভাবে দীর্ঘদিনের অবক্ষয় আর হীনতার কারণে Compson পরিবার ক্রমশ শেষ হয়ে যাচ্ছে। গল্পে পরিবারের কলঙ্কিত কাহিনী এক তুঙ্গে ওঠে যখন Miss Quentin বাড়ির টাকাপয়সা সব নিয়ে এক জিপসির সাথে পালিয়ে যায়। Jason পুলিশ ডাকে, কিন্তু তার টাকা কোত্থেকে আসে সে ভালভাবে পুলিশকে ব্যাখ্যা করতে পারে না। অগত্যা Jason নিজেই Miss Quentinকে খুঁজতে বেরোয়, কিন্তু তার কোন হদিশ পাওয়া যায় না। 

১৯৪৫ সালে উইলিয়াম প্রকৃত Compson পরিবারের ১৬৯৯ থেকে ১৯৪৫ সাল পর্যন্ত ইতিহাস The Sound and The Fury বইটির Appendix হিসেবে যোগ করেন। মজার কথা, বইটির চার অধ্যায় উইলিয়াম প্রথমে চার রঙের কালিতে লিখবেন বলে স্থির করেছিলেন। দক্ষিণপূর্ব আমেরিকার বিভিন্ন পরিবারের অধঃপতন নিয়ে উইলিয়াম Snopes clan সিরিজে আরও তিনটি বই লেখেনঃ The Hamlet, The Town, আর The Mansion.

ফকনারের অসংখ্য ছোটগল্পের মধ্যে আমার প্রিয় তিনটি গল্পের কথা এখানে বলি। প্রথম গল্প Barn Burning, Harper ম্যাগাজিনে ১৯৩৯ সালে প্রকাশিত হয়। ১৯৮০ সালে গল্পটি নিয়ে ওই একই নামে একটি short film তৈরি হয়। গল্পের শুরু হয় ১৮৯৫ সালের এক সকালে, গ্রামাঞ্চলের এক ফার্মেসীতে অনুষ্ঠিত এক বিচার সভায়। এক রুগ্ন অভুক্ত কিশোর Sarty কে ডাকা হয়েছে তার বাবা Abner Snopes এর বিরুদ্ধে সাক্ষী দেবার জন্য, Abner জমিদার Harris এর শস্যাগার (Barn) আগুনে পুড়িয়ে দেবার দায়ে অভিযুক্ত। কিন্তু Sarty তার দুর্বৃত্ত বাবার ভয়ে মুখ খোলে না, বিচারক তাকে ছেড়ে দিয়ে Abner কে গ্রামের থেকে দুর করে দেয়। বাবাকে দোষী না বলা স্বত্বেও Abner ছেলেকে বেদম মারে, তার পর নিজের পরিবার আর স্বল্প ভাঙ্গা জিনিশপত্র এক ঘোড়ার গাড়িতে চাপিয়ে Snopes পরিবার গ্রামের বাইরে গিয়ে এক মাঠে আস্তানা গাড়ে। পরদিন তারা এক নতুন গ্রামে যায় ভাগচাষী কাজের খোঁজে। গ্রামের ধনী জমিদার Mr. de Spainএর বিশাল সাদা প্রাসাদের দরজায় ঢোকার আগে দুশ্চরিত্র Abner ইচ্ছে করে ঘোড়ার বিষ্ঠা মাড়িয়ে বাড়ির সাদা কার্পেট নোংরা করে। Sarty তার বাবার অত্যাচার আর দুর্ব্যবহার একেবারেই পছন্দ করে না। জমিদার সেই কার্পেট পরিষ্কার করার জন্য কার্পেট Abner এর আস্তানায় পাঠায়। Abner তার দুই মেয়েকে ঘাড় ধরে সেই কার্পেট পরিষ্কার করায়। তারপর আবার ঝামেলা করার উদ্দেশে পাথর দিয়ে পিটিয়ে ধোয়া কার্পেট নষ্ট করে জমিদারের বাড়িতে ফেরত পাঠায়। এই দুষ্কার্যের জন্য গ্রামের কোর্টের বিচারে Abner কে তার ভাগের শস্য থেকে ২০ মন শস্য ফাইন করা হয়। তিক্ত মনে Sarty সারা দিন এদিক ওদিক ঘুরে সন্ধ্যে বেলায় আস্তানায় ফিরে শুনতে পায় তার মা বাবাকে কিছু একটা দুষ্কর্ম করতে বারণ করছে। সে বুঝতে পারে যে তার বাবা এই জমিদারের শস্যাগার জ্বালাতে যাচ্ছে। সে পাগলের মত দৌড়ে গিয়ে জমিদারের প্রহরীকে শস্যাগারের কথা জানিয়ে অন্ধকারের মধ্যে জঙ্গলে পালিয়ে যায়। মাঝরাতে বন্দুকের শব্দ শোনা যায়, Sarty বুঝতে পারে যে তার দুষ্কৃত বাবার মৃত্যু হয়েছে জমিদার আর তার প্রহরীর হাতে। সব কিছু ভুলে গিয়ে Sarty ঘুমিয়ে পড়ে। পরদিন সকালে সব ছেড়ে Sarty দুরে কোথাও চলে যায় তার নিজের ভাগ্যের খোঁজে। 

দ্বিতীয় গল্পটির নাম A Rose for Emily. গল্পের শুরু হয় এক বুড়ি Emily Griersonএর শবযাত্রা দিয়ে, যে শবযাত্রা শহরের লোক দায়বোধে জনসাধরনের পয়সায় করতে চেলেছে। তারপর গল্পের কথক এই সেকেলে বিদঘুটে স্বভাবের বুড়ির গল্প শোনায় পাঠককে। এমিলি দক্ষিণপূর্ব আমেরিকার দাসপ্রথায় বিশ্বাসী অভিজাত পরিবারের শেষ মানুষ, তার বাবার মৃত্যুর পর সেই শুধু বেঁচে ছিল। এমিলির ৩০ বছর বয়েসে তার বাবা মারা গেলে সে সেই মৃত্যু মানতে পারেনি, বাবার দেহ কয়েকদিন আটকে রেখে বাবার অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া করতে দেয়নি যদিও শেষে শহরের মানুষ তাকে কাজ সম্পন্ন করাতে সক্ষম হয়। এমিলি বিয়ে করেনি, এক কালো চাকর Tobe তার দেখাশোনা করে। এমিলি বাবার মৃত্যুর পর কয়েক বছর কারো সাথে মেশে নি, কিন্তু পয়সার কারণে তার জীর্ণ বাড়িতে ছোট ছেলেমেয়েদের আঁকার স্কুল খোলে। ৪০ বছর বয়েসে এমিলি শহরে নবাগত এক যুবক Homar Barron এর সাথে বন্ধুত্ব পাতায় আর তাকে বাড়ি নিয়ে আসে। শহরে গুজব Homer সহকামি, সে শহরের ভাঁটিখানায় অন্য যুবকদের সঙ্গে মদ খায় আর ফষ্টিনষ্টি করে। এর মধ্যে একদিন এমিলি ফার্মেসীতে গিয়ে আর্সেনিক কেনে। দোকানের মালিক ভাবে বাড়ির ইঁদুর মারার জন্য এমিলি আর্সেনিক কিনেছে। শহরের লোক সন্দেহ করে এমিলি কাউকে খুন করতে চায়, তাই তারা এমিলির এক দূরসম্পর্কের বোনকে ডেকে আনে। এদিকে সবাই দেখে এমিলি বাজারে গিয়ে বিয়ের সরঞ্জাম কিনছে। বোন চলে যাওয়ার পর একদিন সবাই আবার Homer কে এমিলির বাড়িতে ঢুকতেও দেখে। এই ঘটনার পর এমিলির গতিবিধি ও ব্যবহার আবার বিদঘুটে হয় যায়, তাকে বা Homer কে আর বাইরে দেখা যায় না। তারপর তার বাড়ি থেকে এক বদগন্ধ বেরোতে শুরু করলে শহরের mayor Sartoris বাড়ির চারপাশে চুন ছড়িয়ে সে গন্ধ দুর করে। বুড়ির অদ্ভুত ব্যবহার আর বাড়ি থেকে না বেরোনোর ব্যপারটাও শহরের লোক ক্রমে মেনে নেয়। এমিলির মৃত্যুদিনে কৌতূহলী শহরের লোক বাড়ির বাইয়ে ভিড় করে। Tobe নিঃশব্দে বেরিয়ে যাবার পর সবাই বাড়ির মধ্যে ঢুকে দেখে এমিলির বেডরুম তালা দেওয়া। তালা ভাঙ্গার পর সেই ঘরে বিয়ের সরঞ্জাম ছাড়া বিছানার ওপর আবিষ্কৃত হোলো Homer এর গলিত শব, আর তার পাশে বিছানায় আরও কেউ একজনের নিয়মিত শোয়ার চিহ্ন রয়েছে। শুধু তাই নয়, বালিশে কয়েকটি রুপোলী চুলও লেগে আছে। এমিলি Homer এর মৃতদেহের সঙ্গে নিয়মিত রাত কাটিয়েছে, সে কোনো পরিবর্তন কোনোদিনই চায় নি,সময়কে ধরে রাখতে চেয়েছে আজীবন।

তৃতীয় গল্পের নাম The Spotted Horses. এই গল্পে উইলিয়াম কৌতুকের ভাষায় প্রতারকেরা সেই সময়ে কি ভাবে নানা ছলে মানুষের দুর্বলতা আর অজ্ঞতার সুযোগ নিত,তার সুন্দর বর্ণনা দিয়েছেন গল্পটি ১৯৩১ সালে Scribner’s Magazineএ প্রকাশিত হয়। গল্পের শুরু মিসিসিপির সেই Yoknapatawpha County তে, যেখানে ঘোড়ার নিলামের বাজারে এক অচেনা ঠগবাজ Texan (Texas ষ্টেটের মানুষ) কয়েকটি বুনো ঘোড়া নিলামের জন্য হাজির করেছে। ঘোড়াগুলো দেখতে ভারী সুন্দর, কিন্তু ট্রেনিং এর অভাবে তারা বেশ বিপদজ্জনক। গুজব রটেছে যে এই ঘোড়াগুলোর মালিক Flem Slopes নামে এক স্থানীয় হোমরাচোমরা মানুষ। Texan জোর গলায় ঘোড়াদের গুণগান গাইছে কিন্তু এলাকার মানুষ Ratliff ভুল করে তাদের একটু কাছে এলে বুনো ঘোড়ার জোর লাথি খায়। চতুর Texan তখন Eck Snopes নামের এক মানুষকে একটি ঘোড়া বিনে পয়সায় দিয়ে তার ভুয়ো নিলামে সবাইকে অংশগ্রহণ করতে প্ররোচিত করে। নিলামে Henry Armstid লোভে পড়ে বউয়ের অবশিষ্ট শেষ ৫ ডলার দর হেঁকে একটি ঘোড়া কেনে। বউ সঙ্গে ছিল, তার সাধ ছিল সেই টাকা দিয়ে সে তার ছেলেমেয়েদের শীতের জুতো কিনে দেবে।  তার আকুল মিনতি শুনে Texan তাকে ঘোড়ার টাকা ফেরত দিতে গেলে Flem Slopes সেই টাকা বাজেয়াপ্ত করে, সে জানায় পরের দিন সকালে Armstid এর বউ সেই টাকা ফেরত পাবে। Flem আর Texan বিদায় নেবার পর Eck, Henry আর বাকি ঘোড়ার ক্রেতারা তাদের নিলামে কেনা ঘোড়া ধরতে গেলে এক মহা হইচই শুরু হয়, বুনো ঘোড়ারা লাথি মেরে বেড়া ভেঙ্গে এদিক ওদিক দৌড় দেয়, Henri লাথি খেয়ে অজ্ঞান, আর অবাধ্য ঘোড়ার দল বাজারের পাশে দাড় করানো ওয়াগনগুলো ভেঙ্গে তছনছ করে। Eck আর তার ছেলে তাদের কেনা নতুন ঘোড়ার পেছনে ধাওয়া করলে সেই বুনো ঘোড়া Tull পরিবারের ওয়াগনে বসা Mr. Tull কে ধাক্কা দিয়ে গুরুতর আহত করে। তারপর বুনো ঘোড়ার দল উধাও হয়ে যায়। পরের দিন শহরের লোকজনের এক জমায়েতে প্রশ্ন উঠল Flem কি আসল ঠগবাজ আর সেই কি দায়ী? নানা মতামত প্রকাশের মাঝে Flem হাজির হলে Henry ‘র বউ তার ৫ ডলার ফেরত চায়। চতুর Flem মিষ্টি কথা বলে তাকে ৫ সেন্টের এক চকলেটের ব্যাগ দিয়ে চুপ করায়। অনেক গোলযোগের পর কোর্টে দুটি কেস ওঠে, Flem vs. Mrs. Henri আর Mrs. Tull vs. Eck Snopes।  এইবার শুরু হয় বিচারের যুক্তি নিয়ে উইলিয়ামের বিদ্রূপ আর ভুয়ো যুক্তির প্রহসন। কেউ প্রমাণ করতে পারছে না যে Flem-ই আসলে নিলাম ডেকেছিলো (সেই Texan তখন হাওয়া) বা তার কাছে সেই ৫ ডলার আছে। তাই বিচারকের রায় Mrs. Henri –র কোন কেস নেই, অন্তত Flem এর বিরুদ্ধে নয়! আর যেহেতু Eck কে সেই নাম-না-জানা Texan বিনে পয়সায় ঘোড়া দিয়েছিলো, Eck ঘোড়ার মালিকই নয়, তাই সে Mr.Tull এর আঘাতের জন্য দায়ী নয়! দায়ী সেই ঘোড়া যার টিকির দেখা নেই! অবাক লাগে আজও কোর্টের বিভিন্ন কেসে এই রকম প্রহসন চোখে পড়ে। 

উইলিয়াম তার সাহিত্যিক জীবনে অনেক নভেল ও ছোটগল্প লিখেছিলেন। The Sound and The Fury আর Sanctuary ছাড়া আরও পাঁচটি বইয়ের নাম উল্লেখ না করলেই নয়, তারা হোল As I Lay Dying, Light in August, The Wild Palms, Go Down, Moses আর Intruder in the Dust। সব মিলিয়ে ২০টি নভেল, একশর ওপর ছোটগল্প (যা ৬টি গল্পসঙ্কলনে একত্রিত আছে), ৫টি কবিতা সঙ্কলন এবং অসংখ্য প্রবন্ধের লেখক এই মানুষটিকে নোবেল কমিটি ১৯৪৯ সালে সাহিত্যের নোবেল পুরস্কার প্রদান করেন। কমিটির মতে “This prize is awarded for his powerful and unique contribution to modern American novel”। এছাড়া তার দুটি লেখা A Fable (১৯৫৪) and The Reivers (১৯৬২) Pulitzer prize for Fiction পুরস্কার পায়। The Reivers বইটি উইলিয়ামের শেষ বই, তার মৃত্যুর এক মাস আগে প্রকাশিত হয়।     

উইলিয়াম তার লেখক জীবনে ১৬ টি সিনেমার screen play ও লেখেনযেমন Hamingway ‘র To Have and Have Not বইটির screen play উইলিয়ামের লেখা। ভাবলে অবাক লাগে যে দুজন নোবেল পুরস্কার বিজয়ী লেখকের লেখার কারিগরি দিয়ে এই screen play লেখা হয়েছিল! বাংলা সাহিত্যে শরদিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায় আর সত্যজিৎ রায় এমন দুটি উদাহরণ যারা লেখার সাথে screen play ও লিখেছিলেন।  

১৯৬২ সালে উইলিয়াম ফকনার তার ঘোড়া থেকে পড়ে যাবার পর হার্ট অ্যাটাকে মারা  যান। সমালোচকদের মতে “Faulkner is the greatest artist the South has ever produced”। 

 


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগ থেকে আরোও
Theme Created By FlintDeOrient.Com
error: Content is protected !!
error: Content is protected !!