পাপিয়া অধিকারী
বীজ থেকে মাথা তুলেই ছোট্ট চারাটা বুঝলো, ঐ বীজটুকুই রসদ। স্বাবলম্বী হবার দুর্মর আকাঙ্ক্ষায় প্রাণপনে মাথা উঁচু করে শিকড় ছড়াতে থাকে সবার অলক্ষ্য অন্ধকারে চুপি চুপি।
সংঘর্ষ তো শিকড়েরও থাকে – প্রতিমুহূর্তে। মৃত্তিকা কণা সহজে পথ ছাড়ে না। দেয় না বিনা পরীক্ষায় এক বিন্দু জীবন বারি। কে খোঁজ নেয় সে যুদ্ধ ইতিহাসের ! অন্ধকারে একা একা সে রক্ত আর ঘামকে বাজি রাখে। সেই যুদ্ধে পরাজিতের সংখ্যাও নেহাত কম নয়। মৃত্যুর ফাঁদে কখন কার পা পড়ে, কে বলতে পারে ? শত শত মৃত্যু মিছিল দেখেছে সে। কখনও চেনা, কখনও অজানা হাত বয়ে এনেছে মৃত্যু পরোয়ানা। রাতটাকে বড়ো ভয়। অন্ধকারে কতো অন্যায় এসে জড়ো হয়। মদমত্ত হস্তির পদদলিত হয় জীবন – স্বপ্ন। তবু কোনো আশঙ্কা কোনো ভ্রান্তিই তাকে মোহগ্রস্ত করতে পারে না। প্রচন্ড ঝড়ে, পায়ের তলার আঁকড়ে ধরা মাটিটাকেই শুধু বিশ্বাস তার। কতো কীট পতঙ্গ আসে, দংশন করে, ঢেলে দেয় বিষ। মনের জোরে সে বিপদ কাটিয়ে ওঠে, মোচন করে গরল-জর্জরিত বিষাক্ত হলুদ পাতা।
সত্যি, ভালো লাগে না – মহীরুহ-বনস্পতির ঘন সন্নিবিষ্ট পত্রপল্লবের ফাঁক দিয়ে কৃপণের দানের মতো চুঁইয়ে আসা জল ও আলো। মাথার উপর একটুকরো নিজস্ব আকাশ, রোদ, আলো ও হাওয়ার সঙ্গে একটু প্রাপ্য সম্মান অর্জনের দুর্গম পথটা আর ভয় দেখায় না। একটু আত্মবিশ্বাস তার কাঁধটা চাপড়ে দেয়। বলে, “মাথা তোল”।
স্বপ্ন দেখে পত্রসম্ভারের, পুষ্প সজ্জার ! সে তখন পথ চাইবে – প্রজাপতি আর অলিদলের ! আশ্রয় দেবে পক্ষীনীড়ে – পক্ষী আর তাদের ভালোবাসার সন্তানদের ! তাদের সকলের প্রতি ভালোবাসা সরস হয়ে দেখা দেবে তার ফলসম্ভারে!
স্বপ্নে মোহগ্রস্ত চোখদুটি হঠাৎ বিস্ফারিত হয় অজানা এক আতঙ্কিত অনুভবে । চারিদিকে কেমন এক আজানা বুনো গন্ধ ছড়িয়ে পড়ে। বাতাস ভারী হয়ে ওঠে। বিষাক্ত হয়ে ওঠে। চারিদিকে কচি কচি চারা আর মহীরুহের বিষণ্ণ বিহ্বল নির্বাক চাহনি। তবে কি……!
কয়েক মুহূর্ত ধরে চলে জান্তব নিষ্পেষণের অনন্ত বর্বরতা । অসহায়ের আর্তনাদ, তলিয়ে যায় রাত্রির অন্ধকার নীরব সমুদ্রে । একটি জীবন-যুদ্ধ ও একমুঠো নিষ্পাপ স্বপ্নের ছিন্ন ভিন্ন শরীর – মুখ থুবড়ে পড়ে মাটির উপর।