‘কি রে দিদি আজকের এই স্পেশাল দিনে তুই জামাইবাবুর কাছে না থেকে আমার বাড়ীতে চলে এলি ? ‘ বোন টিয়ার কথায় রিয়া অবাক হয়ে ভাবতে শুরু করলো আজকের দিনের বিশেষত্ব।
‘আজ তো আমাদের বিবাহবার্ষিকী নয় , আবার তোর জামাইবাবুর জন্মদিনও নয় । কি ব্যাপার বলতো , আমি তো কিছুই বুঝতে পারছি না। ‘
‘ আরে , না না , সেসব কিছুই না। আজ ভ্যালেন্টাইনস ডে ‘
‘সেটা আবার কি! ‘
‘শোন দিদি , আজ ভালোবাসার দিন । তুই বাড়িতে ঢোকার আগে একটা গোলাপ ফুল অবশ্যই কিনে নিয়ে যাস । জামাইবাবু চমকে যাবে।’
সঙ্গে সঙ্গে রিয়ার মাথায় একটা দুষ্টু বুদ্ধি জন্মগ্রহণ করলো।
‘শোন বুনু , আমি চললাম।’
বোনের বাড়ি থেকে বেরিয়ে কোনোদিকে না তাকিয়ে রিয়া ফুলের দোকানে এসে একটা গোলাপ কিনে সোজা চলে এলো সুভাষ ক্লাবে , সেখানে তখন সম্রাট মানে রিয়ার পতিদেব কিছু বুদ্ধিমান বন্ধুর সাথে দেশের সাম্প্রতিক সমস্যার সমাধান খোঁজায় ব্যস্ত।
রিয়াকে দেখে সবাই হৈ হৈ করে উঠলো।
‘ কি খবর বৌদি ? ‘
‘কেমন আছেন ? ‘
‘ হঠাৎ এখানে । বাড়িতে সবাই ঠিক আছে তো ? ‘
প্রশ্নমালার উত্তর দেওয়ার চেষ্টা না করে রিয়া সবার উদ্দেশ্যে বলে উঠলো , ‘ আজকের এই বিশেষ দিনে আপনারা এখানে আড্ডা দিচ্ছেন , আশ্চর্য ! আজ নিজের ভালোবাসার মানুষের সঙ্গে না থেকে বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা , এ ভারী অন্যায় । সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে শিখুন। আজ ভ্যালেন্টাইনস ডে , ভালোবাসার দিন । এখানে আড্ডা দিয়ে সময় নষ্ট না করে সবাই নিজের স্ত্রীর সাথে সময় কাটান। ‘
এরপর সবাইকে অবাক করে সেই গোলাপ ফুল সম্রাটের হাতে তুলে দিলো রিয়া।
হাততালি দিয়ে উঠলো সবাই , ‘ সাবাস বৌদি’।
লজ্জায় লাল হয়ে গোলাপ ফুলটি রিয়ার হাত থেকে নিলো সম্রাট।
সবার দিকে তাকিয়ে এবার রিয়া বলে উঠলো ,
‘ আপনাদের শুধু বাক্যেন মারিতং জগত । আগে নিজের ঘর ঠিক রাখুন , তারপর জগৎ সভার উন্নতি করবেন । সবাই বাড়ি যান।’
সবাই তখন বাড়ি যাওয়ার জন্য তৈরি , রিয়া বলে উঠলো , ‘ সবাই গোলাপ ফুল কিনে নিয়ে বাড়িতে ঢুকবেন’।
হঠাৎ সম্রাটের দিকে ফিরে রিয়া বলে উঠলো ,
‘ আমি বাড়ি যাচ্ছি , তুমি চারটে রুটি কিনে বাড়ি এসো । ওবেলা আলুর দম বানিয়েছিলাম । এবেলা
রুটি – আলুর দম খাবো’।
হতভম্ব সম্রাটের দিকে না ফিরে বিনুনি দুলিয়ে রিয়া বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দিলো ।